খবরটা আমি হত্যাকাণ্ডের পরের দিনই পেয়েছিলাম আমার ফেসবুক বন্ধু জর্দান প্রবাসী ইরাকের একজন হানাফী আলেম শায়খ লুওয়াই আবদুর রঊফ খলীলির কাছে। তিনি জানিয়েছিলেন আইএস তার বন্ধু ইরাকের বিশিষ্ট হানাফী ফকীহ শায়খ অহমদ আল-কাইসীকে أحمد القيسي হত্যা করেছে। তার অপরাধ, তিনি আইএসকে বাইয়াত দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। ব্যাস, এতেই তিনি রক্তপিপাসু বাথিষ্ট-সালাফীদের দৃষ্টিতে শীয়াদের এজেন্ট ও মুরতাদ হয়ে গেলেন। অতঃপর তাকে নির্যাতন ও হত্যা করে ছবি প্রকাশ করে আইএস। অথচ তিনি ছিলেন শিয়া জঙ্গিদের প্রকাশ্য বিরোধী। ফেসবুকে তিনি তাদের বিরুদ্ধে অনেক স্ট্যাটাসও দিয়েছেন।
আইএস যে তাকে ২০০১ সালের বুশতত্ত্ব ‘যে আমাদের সাথে নেই, সে আমাদের শত্রুদের পক্ষে’ অনুসারে হত্যা করেছে, তাতে কোন সন্দেহ নেই। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের ন্যায় ইরাকেও হানাফী মাযহাব অনুসৃত হয়। ইরাকের প্রতিবেশী সিরিয়া ও তুরস্কেও হানাফী মাযহাব প্রচলিত। ইসলামের ইতিহাসের প্রধান দুই খেলাফত ‘আব্বাসী’ ও ‘উছমানী’তেও কেন্দ্রীয়ভাবে হানাফী মাযহাব অনুসৃত হতো। যে কারণে ইরাক ও তুরস্কের মুসলমানদের ফিকহী মাযহাব সেই থেকে এখনও হানাফীই থেকে গেছে। মিসরে বর্তমানে শাফেয়ী মাযহাবের প্রাধান্য থাকলেও একসময় সেখানে কেন্দ্রীয় ভাবে হানাফী মাযহাব অনুসৃত হয়েছিল। বর্তমানে হানাফীরা সেখানে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে।
আমি নিশ্চিত, আমাদের দেশে যারা বর্তমানে সালাফী/দায়েশী চিন্তাকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে, একসময় তারা তার ভয়াবহতা টের পাবে এবং আক্ষেপ করবে। কারণ, বেয়াদবকে প্রশ্রয় দেওয়া মানে হলো নিজেকে ধ্বংসের দিকে টেলে দেওয়া। এক বুড়ি এক নেকড়ের বাচ্চাকে তার ছাগলছানার দুধে ভাগ দিয়েছিল। একটু বড় হয়েই ওই নেকড়েছানা তার সব ছাগলছানা মেরে ফেলেছিল। তখন বুড়ি বলেছিলঃ
قتلتَ شُويهتي وفجعتَ قلبى
وأنت لشاتنا ابن ربيب
‘তুমি আমার ছাগলছানাকে হত্যা করে আমার হ্রদয়ে ব্যাথা দিয়েছো।
অথচ তুমিতো আমার ছাগলের দুধ খেয়েই বড় হয়েছো।’
(২৪ বছর আগে পড়েছিলাম। বাকী লাইনগুলো পুরোপুরি মনে নেই। কারো জানা থাকলে জানাইয়েন)।
আইএসের হাতে শাহাদত বরণকারী শায়খ আহমদ আল-কাইসী ছিলেন সেখানকার জামেয়ার উসূলে ফিকাহ অনুষদের ডীন ও শায়খুল আহনাফ عميد كلية أصول فقه وشيخ المذهب الحنفي
দয়াময় আল্লাহ শায়খ আহমদ আল-কাইসীকে ইমাম আযম আবু হানীফা রহঃ- এর সাথে জান্নাতে স্থান দান করুক- এই কামনা করছি।
নীচে কমেন্টে ডঃ আবদুল্লাহ আযযামের ছেলে ডঃ হুযাইফার বক্তব্যসহ আইএসের শায়খ আহমদ আল-কাইসীকে হত্যার সচিত্র সংবাদ সম্বলিত কিছু আরবী পত্রিকার লিঙ্ক দেওয়া হলো।
লেখক : আবুল হুসাইন আলেগাজী, অনুসন্ধানী লেখক, অনলাইন এক্টিভিস্ট
২৯. ১০. ২০১৫