শনিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ দুপুর ২:১২
Home / প্রতিদিন / এ কেমন অসত্য প্রচার (৪র্থ পর্ব)

এ কেমন অসত্য প্রচার (৪র্থ পর্ব)

সহীহ হাদীসের নামে মুযাফফর বিন মুহসিনের কারসাজি।

Abrarরেজাউল করীম আবরার ::

 বইয়ের নাম দিয়েছেন “জাল হাদীসের কবলে রাসূলুল্লাহ এর নামাজ”।হানাফীদের নামাজ সহীহ হাদীস অনুসারে হয়না, পুরোটাই জাল এবং জয়ীফ হাদীসে ভরপুর! একথা প্রমাণের জন্য বেচারা কত কসরত করেছেন! কিন্তু নিজের মতকে প্রমাণিত করতে তিনি নিজে দেদারসে জাল এবং জয়ীফ হাদীস দ্বারা দলীল দিয়েছেন। এ যেন হঠকারিতার চুড়ান্ত পরাকাষ্টা প্রদর্শন। জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করার সুক্ষ কুটচাল! কারন পাবলিকতো আর তাহকীক করে বের করতে পারবেনা যে, কোনটা সহীহ, কোনটা জাল?
দেখুন উনি নিজের মত প্রমানত করতে কিভাবে জাল হাদীস দ্বারা দলীল দিয়ে থাকেন। “মানসূখ কাহিনী: ঐতিহাসিক মিথ্যাচার” শিরোনামে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি লিখেন- রাফ’উল ইদায়েনের সুন্নাতকে প্রতিরোধ করার জন্য হুকুম রহিত হওয়ার যে কাহিনী পেশ করা হয় তা মুলত মিথ্যাচার। কারণ রাসূল সাঃ যদি পরবর্তীতে উক্ত আমল ছেড়ে দিতেন, তাহলে সাহাবায়ে কেরাম কেন করবেন? বরং রাসূল সাঃ নিজেই মৃত্যু পর্যন্ত উক্ত আমল অব্যাহত রেখেছিলেন।
এরপর তিনি রাসূল সাঃ যে মৃত্যু পর্যন্ত রফয়ে ইয়াদাইন করেছেন, সেটা প্রমাণিত করার জন্য ইবনে ইমর রাঃ এর হাদীস দলীলস্বরুপ পেশ করেছেন।হাদীসটি হল:

عَن ابْن عمر كَانَ رَسُول الله صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم َ إِذا افْتتح الصَّلَاة رفع يَدَيْهِ وَإِذا ركع وَإِذا رفع رَأسه من الرُّكُوع وَكَانَ لَا يفعل ذَلِك فِي السُّجُود فَمَا زَالَت تِلْكَ صلَاته حَتَّى لَقِي الله تَعَالَى

(জাল হাদীসের কবলে রাসূলুল্লাহর নামাজ,২০২.২০৩.আস ছিরাত প্রকাশনী)
হাদীসটি ইমাম বায়হাকী উল্লেখ করেছেন। সনদের একজন বর্ণনাকারী হলেন, আব্দুর রহমান বিন কুরাইশ। তার ব্যাপারে ইমাম যাহাবী রহঃ বলেন:

عبدالرحمن بن قريش بن خزيمة، هروى. سكن بغداد. اتهمه السليمانى بوضع الحديث.

অর্থাৎ:তিনি বাগদাদে অবস্থান করতেন।সুলাইমানি তাকে হাদীস জাল করার অভিযোগে অভিযোক্ত করেছেন। (মীযানুল ই’তিদাল,২/৫৮২.৪৯৪১.)
হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ ও যাহাবীর বক্তব্যকে সমর্থন করে বলেন:

عبد الرحمن بن قريش بن خزيمة هروي سكن بغداد اتهمه السليمان بوضع الحديث انتهى وقد ذكره الخطيب في تاريخه وقال روى عن محمد بن إسماعيل الصائغ وأصرم بن مالك وجماعة وعنه محمد بن مخلد وجعفر الخلدي ومخلد بن جعفر وعلي بن محمد المصري وآخرون قال الخطيب في حديثه افراد وغرائب .

অর্থাৎ:তিনি সাথে সাথে খতীবে বাগদাদীর কথাকে বৃদ্বি করেছেন। খতীবে বাগদাদী তার ব্যাপারে বলেন:তার বর্ণনাকৃত হাদীসে অচেনা এবং গারিব রয়েছে। (লিসানুল মিযান,৩/৪২৫.১৬৭১.)
*সনদের অপর বর্ণনাকারী হল ঈসমা বিন মুহাম্মাদ আল আনসারী। তার সম্পর্কে ইমামদের বক্তব্যগুলো তুলে ধরছি।

عصمة بن محمد. عن (2) هشام بن عروة.قال أبو حاتم: ليس بقوى.وقال يحيى: كذاب، يضع الحديث.وقال العقيلى: حدث بالبواطيل عن الثقات.وقال الدارقطني وغيره: متروك.

অর্থাৎ: ইমাম আবু হাতেম তার ব্যাপারে বলেছেন: সে শক্তিশালী বর্ণনাকারী নয়। ইয়াহইয়া বিন মায়ীন বলেছেন:সে মিথ্যুক। হাদীস জাল করত। উক্বায়লি তার ব্যাপারে বলেছেন:সে গ্রহণযোগ্য বর্ণকারী থেকে বাতিল হাদীস বর্ননা করত। ইমাম দারা কুতনী সহ আরো অনেকে বলেছেন, সে পরিত্যাজ্য। (মীজানুল ই’তিদাল, ৩/৬৮.৫৬৩১.লিসানুল মিযান, ৪/১৭০.৮১৮)
ইমাম ইবনে আদী তার ব্যাপারে বলেন: وكل حديثه غير محفوظ.وهو منكر الحديث.
অর্থাৎ:তারসব হাদীসই ভুল। সে আপত্তিকর হাদীস বর্ণনাকারী। (আল কামিল,৩/৩৯০.শামেলা)
কারবার দেখছেন! নিজের কথাকে প্রমাণিত করতে এ ধরণের জাল হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করেছেন! আরো মজার কথা হল,মুযাফফার সাহেব আরবীও ভালো করে জানেনা। যরার কারণে জায়গায় জায়গায় তিনি হাদীসের ভুল অনুবাদ করেছেন। সেগুলো আগামীতে আপনাদের সানে তুলে ধরব ইনশাআল্লহ। অথচ আহলে হাদীদরা এমন মূর্খ লেখকের বই বগলে নিয়ে চেচামেচি করে। আপনারা তো তাকলীদকে শিরক বলেন,তাহলে এধরণের দাগাবাজদের বইয়ে যা পান, তা গোগ্রাসে গিলেন কেন? তখন কোথায় থাকে সহীহ হাদীসের দোহাই !

লেখক : মুফতি ও মুহাদ্দিস, আবু বকর সিদ্দক রা., ঢাকা।

আরও পড়ুন :

১ম পর্ব- এ কেমন অসত্য প্রচার?

২য় পর্ব- এ কেমন অসত্য প্রচার?

৩য় পর্ব- এ কেমন অসত্য প্রচার? 

৪র্থ পর্ব- এ কেমন অসত্য প্রচার?

About Abul Kalam Azad

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...