শরতের শেষ প্রহর থেকেই বাতাসে মৃদু গুঞ্জন তোলে হেমন্তের রৌদ্রাঙ্কিত মোহনীয় প্রতিচ্ছবির নিবিড় তরঙ্গ। এভাবেই প্রকৃতি হেমন্তের গহন উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়, হয় অনুভূত। গ্রামের কৃষাণ-কৃষাণীরা হেমন্তকে এখন স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। হেমন্তকে তাঁরা বরণ করে নিতে উদগ্রীব। রৌদ্রৌজ্জ্বল আভায় আলোকিত প্রকৃতি মানেই হেমন্ত। সারা বাংলার সবুজ শ্যামল প্রতিকৃতিতে হেমন্ত ছড়িয়ে দেয় স্বর্ণঙ্কিত বর্ণময়তার গভীর আমেজ। শ্যামলিয়াম জমিনে এখন শোভা পাচ্ছে সোনালি বর্ণের উজ্ঝ্বলতর হেমন্তের আলোকরেখা। ধান ও ঘাসের ডগায় আলগোছে পা ফেলে নামছে কুয়াশা।
প্রকৃতিতে শীতের আগমনী বার্তা বয়ে নিয়ে এসেছে হেমন্ত। শিশির বিন্দু ঝরার টুপটাপ শব্দ আর মৃদু শীতলতা জানান দিচ্ছে ঋতু পরিবর্তনের খবর। শিশিরস্নাত সকাল, কাঁচাসোনা রোদমাখা স্নিগ্ধসৌম্য দুপুর, পাখির কলকাকলি ভরা ভেজা সন্ধ্যা আর মেঘমুক্ত আকাশে জ্যোৎস্না ডুবানো আলোকিত রাত হেমন্তকালকে যেন আরও রহস্যময় করে তোলে সবার চোখে; প্রকৃতিতে এনে দেয় ভিন্নমাত্রা। হেমন্তের এই মৌনতাকে ছাপিয়ে বাংলার মানুষের জীবনে নবান্ন প্রবেশ করে জাগরণের গান হয়ে, মানুষের জীবনে এনে দেয় সার্বজনীন উৎসবের ছোঁয়া। নবান্ন মানেই চারিদিকে পাকা ধানের মৌ মৌ গন্ধ, নতুন অন্ন, গ্রামের মাঠে মাঠে চলে ধান কাটার ধুম, হেমন্তে এই ফসল কাটাকে কেন্দ্র করেই ঘরে ঘরে শুরু হয় নবান্ন উৎসব। গৃহস্থবাড়িতে নতুন ধানে তৈরি পিঠাপুলির সুগন্ধ বাতাসে ভেসে বেড়ায়।
হেমন্তের অন্য নাম নবান্ন । শরৎকালের পর এই ঋতুর আগমন। এর পরে আসে শীত, তাই হেমন্তকে বলা হয শীতের পূর্বাভাস। এক সময় বাংলায়বছর শুরু হতো হেমন্ত দিয়ে। কারণ, ধান উৎপাদনের ঋতু হলো এই হেমন্ত। বর্ষার শেষ দিকে বোনা আমান-আউশ শরতে বেড়ে ওঠে। আর হেমন্তের প্রথম মাস কার্তিকে ধান পরিপক্ক হয়। হেমন্তের ফসল কাটাকে কেন্দ্র করেই নবান্ন উৎসবের সূচনা। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী শস্যোৎসব।
লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট