এনামুল হক মাসুদ ::
মিশরের রাজা স্বপ্ন দেখলেন আর হযরত ইউসুফ (আঃ) তার ব্যাখ্যা দিলেন, তোমরা সাত বছর দুর্ভিক্ষের কবলে থাকবে। ব্যাখ্যার সঙ্গে তিনি সেই দুর্ভিক্ষ মোকাবিলার পন্থা-পরিকল্পনাও বলে দিলেন। মিশরের রাজা সে মোতাবেক কাজ করে আপন প্রজাদেরকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করলেন।
এই উম্মতের মহান নেতা মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চৌদ্দশ বছর আগে সংবাদ দিয়ে গেছেন, দেখো, অমুক অমুক মুসলিম ভূখণ্ডের উপর এই এই বিপদ বয়ে যাবে। কাজেই তোমরা আগে থেকেই পরিকল্পনা ঠিক করে রাখো। কিন্তু মুসলমানরা তাদের নবীর কোন কথায়ই কর্ণপাত করছে না বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। বরং বিষয়টিকে তকদীরের লিখন মনে করে গাফেলতের ঘুম ঘুমিয়ে আছে।
অথচ আজ যদি পশ্চিমা দাজ্জালি মিডিয়া ঘোষণা করে যে, অমুক ভূখণ্ডে সুনামি আসছে কিংবা অমুক শহর ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে যাবে, ফলে মানুষ যেন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শহর ত্যাগ করে অন্যত্র সরে যায়, তখন আপনি ২৪ ঘণ্টা পর একটি কুকুরও খুঁজে পাবেন না। তখন মানুষ মৃত্যু থেকে এমনভাবে পলায়ন করবে, যেন অবধারিত মৃত্যুকেও এড়ানো সম্ভব।
কিন্তু এর কারণ কি যে, বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লল্লামের সতর্কবাণী শোনার পরও মুসলমানদের মাঝে কোন জাগরণ সৃষ্টি হচ্ছে না?
ইমাম মাহদির আমলে অনুষ্ঠেয় বিগ্রহ সম্পর্কে একটি কথা মনে রাখতে হবে যে, সে সময় মহাযুদ্ধ সংগঠিত হবে। অর্থাৎ সত্য ও মিথ্যার চূড়ান্ত লড়াই অনুষ্ঠিত হবে, যাতে উভয় পক্ষই ততক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাবে, যতক্ষণ না তার সবটুকু শক্তি শেষ হয়ে যাবে। সামান্য শক্তিও অবশিষ্ট থাকা পর্যন্ত কোন পক্ষ পিছ পা হবে না। কাজেই এ মহাযুদ্ধ হবে বড় বড় কয়েকটি যুদ্ধের সমষ্টি। তাছাড়া এই যুদ্ধ শুধু ইমাম মাহদির অঞ্চল পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকবে না। বরং এই যুদ্ধ একই সময়ে একাধিক অঙ্গনে লড়াই হবে। তার মধ্যে একটি অঙ্গন হবে সেটি, যাতে ইমাম মাহদি নিজে সেনাপতিত্ব করবেন।
ইসলামকে বিশ্বময় খেলাফতের আদলে (কালেমার একক পতাকার ছায়াতলে জাতীয়তাবাদহীন একক ভূখণ্ড) সুপ্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে তিনি পেছন দিককার শত্রুর সাথে যুদ্ধ, রোমানদের সাথে মহাযুদ্ধ, আন্তাকিয়ার যুদ্ধ, আমকের যুদ্ধ, ফোরাতের তীরে যুদ্ধ, হিন্দুস্তানের (ভারতীয় উপমহাদেশ) যুদ্ধ, কুস্তুন্তুনিয়ার (তুরস্কের ইস্তাম্বুল) রক্তপাতহীন যুদ্ধসহ অনেক ছোটবড় যুদ্ধ তাঁর খেলাফতকালে অনুষ্ঠিত হবে।
তবে সবকটি যুদ্ধক্ষেত্রের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দামেস্কের সন্নিকটস্থ আলগুতা নামক স্থানে ইমাম মাহদির হাতে থাকবে।
হযরত আবু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “মহাযুদ্ধের সময় মুসলমানদের তাঁবু (ফিল্ড হেডকোয়ার্টার) হবে সিরিয়ার সর্বোন্নত নগরী দামেস্কের সন্নিকটস্থ আলগুতা নামক স্থানে”। (সুনানে আবি দাউদ, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ১১১; মুসতাদরাকে হাকেম, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫৩২; আল মুগনী, খণ্ড ৯, পৃষ্ঠা ১৬৯)
সতর্ক ও সমগ্র উম্মতের দায়িত্বশীল বান্দা হিসাবে এমনই আমাদের বাসায় বিশ্বের মানচিত্র থাকা উচিৎ যাতে যখনই কোন মুসলিম ভূখণ্ডের উপর কাফের বাহিনীর আক্রমণের বা সেখানকার কোন রাজনৈতিক/সামাজিক/অর্থনৈতিক/
সামরিক বিপর্যয়ের কথা কানে আসবে, আমাদের মানচিত্র খুলে এর পার্শ্ববর্তী এলাকার দিকে তাকানো উচিৎ এবং হাদিসের সাথে মিলিয়ে দেখা উচিৎ।
লেখক : আলেম, অনলাইন এক্টিভিস্ট