মঙ্গলবার, ৩০শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ২:৪২
Home / পরামর্শ / শিক্ষার্থীর পাথেয়-৩

শিক্ষার্থীর পাথেয়-৩

শিক্ষার্থীর পাথেয়এহতেশামুল হক ক্বাসিমী ::

নেযামুল আওকাত বা রুটিনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
নিয়মানুবর্তিতা সফল জীবনের চাবিকাঠি। রুটিনমাফিক চলাফেরা মানুষের জীবনে অনেক সাফল্য বয়ে আনে। তালিবে ইলমরা রুটিন অনুযায়ী পড়াশোনা করলে খুবই ভাল ফলাফল আশা করা যায়। নিয়মনীতি বা রুটিন ব্যতিরেকে পৃথিবীতে কোনো কাজই সুন্দর ভাবে সম্পাদন হয় না। হলেও তা হিতে বিপরীত হয়। তাই প্রত্যেক তালিবে ইলমকে রুটিনমত চলতে হবে। নতুবা সময়ের হেফাজত করতে পারবে না। অযথা অনেক সময় নষ্ট হয়ে যাবে। কারণ, পরিকল্পিত ও সুশৃঙ্খল ব্যবহার ছাড়া সময়ে বরকত হয় না। তাছাড়া সময়ের অপচয়ের ব্যাধি থেকে পরিত্রাণও পাওয়া যায় না। যার কাজ কর্মে সময়সূচি নির্ধারিত নেই তার মূল্যবান সময় হিসাব ছাড়া নষ্ট হতে থাকে। এরচেয়ে বড় ক্ষতি আর কী হতে পারে?
প্রতি যুগের দরদী উস্তাদগণ তাদের ছাত্রদেরকে নেযামুল আওকাতের উপর উৎসাহিত করেছেন এবং ছাত্ররাও গুরুত্বের সাথে তা অনুসরণ করেছেন। শায়খুল হাদীস যাকারিয়া রাহ.’র ‘আপবীতি’ মুতালাআ করলে দেখা যায় যে, তাঁর ওয়ালিদ সাহেব নেযামুল আওকাতের বিষয়ে কত যে তাকিদ করতেন! এবং সে সময়ের সচেতন তালিবে ইলমরা কীভাবে তাদের কর্মসূচি তৈরী করতেন।
আমাদের বর্তমান আকাবিরগণও এবিষয়ে সর্বদা তাকিদ করে থাকেন। লিখনী জগতের কিংবদন্তি মাওলানা আবূ তাহের মিসবাহ দা. বা. বলে থাকেন, ‘সব সময় নেযামুল আওকাত মেনে চলো। কারণ, নেযামুল আওকাত ছাড়া কোনো তালিবে ইলমের যিন্দেগী গঠন হতে পারে না’। (তালিবানে ইলমঃ পথ ও পাথেয়, পৃঃ ২৪৮)

অনিয়মিত পড়াশোনার কুফল
অনিয়মিত পড়াশোনা সাস্থ্যের জন্য চরম ক্ষতিকর। পরীক্ষার সময় এর প্রভাব পড়ে খুব বেশি। দেখা যায় অনেক ছাত্র সবকটি পরীক্ষা সুস্থবদনে দিতে পারে না। ফলে ভাল রেজাল্ট করতে ব্যর্থ হয়। কেউ কেউ মাঝপথে এসে পরীক্ষা থেকে একদম অক্ষম হয়ে পড়ে। তাই সফলতা ও ভাল রেজাল্ট প্রত্যাশী সকল তালিবে ইলমকে নিয়মতান্ত্রিক ও রুটিনমাফিক লেখাপড়া করা নেহায়েত প্রয়োজন।

রুটিন তৈরীর পদ্ধতি
রুটিন মূলতঃ কাজ ও সময়ের তালিকা তৈরীর নাম। প্রত্যেক ছাত্রকে নিজ সুবিধা -অসুবিধার দিকে লক্ষ্য রেখে রুটিন তৈরী করতে হবে। এক্ষেত্রে তালিমী মুরাব্বীর পরামর্শ গ্রহণ করা নিতান্তই প্রয়োজন। মাদরাসার রুটিনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এমন নিপূণভাবে দৈনন্দিন রুটিন তৈরী করতে হবে যেখানে দিবারাত্রির সকল কর্মকা- রুটিনের আওতাধীন এসে যায়। আমরা নমুনা স্বরূপ একটা বার্ষিক রুটিন পেশ করছি। এটা হয়ত সব জায়গার জন্য প্রযুজ্যমান হবে না। তদুপরি রুটিন তৈরীর ক্ষেত্রে এটা অবশ্যই সহায়ক হবে। ব্যাপক ভূমিকা পালন করবে। ইনশাআল্লাহ!

রুটিন পর্যবেক্ষণ
হযরত উমর রা. বলেন, তোমাদের হিসাব (পরকালে) নেওয়ার আগে তোমরা নিজেদের হিসাব (ইহকালে) কষে নাও।
এটি অতি মূল্যবান একটি সতর্কবাণী। যার গুরুত্ব ও তাৎপর্য অত্যান্ত ব্যাপক। পরকালে আমাদের কৃতকর্মের হিসাব দিতে হবে। আমাদের ভালমন্দ সকল আমল পরিমাপ করা হবে। নেক আমলের পাল্লা ভারী হলে আমাদের নাজাত মিলবে। আর বদআমলের পাল্লা ভারী হলে জাহান্নামের কঠিন আযাব ভোগ করা লাগবে। পরকালের এই হিসাবের উপর বিশ্বাস রেখে আমরা যদি ইহকালে নিত্য দিনের হিসাব কষার অভ্যাস গড়ে তুলি তাহলে পরকালের হিসাবটা আশা করি অনেক সহজ হয়ে উঠবে। কী করার কথা ছিলো আর কী করে বসলাম, এটা নিয়ে দৈনিক কিছুসময় পর্যবেক্ষণ করলে অবশ্যই নেক আমলের প্রতি আমাদের স্পৃহা বাড়বে। পাশাপাশি বদ আমলের পরিমাণটাও হৃাস পেতে থাকবে।
তালিবে ইলমরাও এই সতর্কবাণীর অন্তর্ভুক্ত। তাই দৈনন্দিন নিজেদের রুটিন অনুসরণ করা অত্যন্ত জরুরী। রুটিনের বরখেলাফ কোনো কাজ করা যাবে না। রাতে ঘুমানোর আগে প্রতিদিন রুটিন পর্যবেক্ষণ করতে হবে। এবং সততার সাথে রুটিনের অপশনগুলো পূরণ করতে হবে। প্রতি পনের দিন পর পর অথবা মাস শেষে তালিমী মুরব্বীকে রুটিন দেখাতে হবে। তিনি রুটিনের আগাগোড়ায় ভালোভাবে নজর বুলিয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে রুটিনের নিচে স্বাক্ষর করবেন। এভাবেই চলমান থাকবে রুটিনের কাজ সারা বছর, সারাজীবন।

লেখক : সিনিয়র মুহাদ্দিস ও চিন্তক

আরও পড়ুন :

শিক্ষার্থীর পাথেয়-১

শিক্ষার্থীর পাথেয়-২

About Abul Kalam Azad

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...