বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ৯:২২
Home / আকাবির-আসলাফ / মুনাযিরে ইসলাম হাফিজ মাওলানা মুফতি আব্দুল হান্নান রহ.

মুনাযিরে ইসলাম হাফিজ মাওলানা মুফতি আব্দুল হান্নান রহ.

Komashisha-Logo 01(আকাবির আসলাফ -৮)

জাকারিয়া গালিব ::

ভারতের আসাম প্রদেশের করিমগঞ্জ থানাধীন জাফরগড় প্রতাপগড়ের সম্ভ্রান্ত মুসলিম জমিদার পরিবারের সন্তান মাওলানা শাহাদাত ওরফে শাদাই মোল্লা পরিবারের মধ্যে প্রথম আলিম ছিলেন। বৃটিশ বিরোধী সংগ্রামের কারণে তিনি পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হতে বাধ্য হন। পরবর্তীতে ধর্মপ্রচারে আত্মনিয়োগ করে দেশব্যাপী সফর করতে থাকেন। একপর্যায়ে হবিগঞ্জের দিনারপুর পরগনার বালিদ্বাড়া (দেবপাড়া) গ্রামে বসতি স্থাপন করে স্বীয় পুত্র মাওলানা নাজিম উদ্দিন ওরফে নাজিম মোল্লাকে নিয়ে দ্বীনি খেদমতের মহান ব্রতে মনোনিবেশ করেন। মাওলানা নাজিম উদ্দিন রহ.-এর নাতি বিশিষ্ট সমাজসেবক জনাব হাশমত উল্লাহ সাহেবের আট সন্তানের মধ্যে ৭ম সন্তান মুফতি আব্দুল হান্নান রহ. ১৯৪১ ঈসায়ীর ২৫ শে মার্চ জন্মগ্রহণ করেন।
তাঁর বড় ভাই হযরত মাওলানা শাইখ আব্দুল হাই রহ. দারুল উলূম দেওবন্দ থেকে উচ্চ শিক্ষা সমাপন করে বাড়িতে এসে ডানপিটে স্বভাবের ছোট ভাই আব্দুল হান্নান-এর বাল্য চঞ্চলতা ও চপলতার মধ্যে তীক্ষè মেধা ও বুদ্ধিমত্তা দেখতে পান। শিশুসুলভ আচরণের পাশাপশি বিপরীত আরেকটি স্বভাব-নামাজের প্রতি তাঁর অনুরাগ দেখে তিনি চমৎকৃত ও মুগ্ধ হন। তাই তিনি তাঁর এ ভাইটিকে নিজের বিশেষ তত্ত্বাবধানে রেখে মাদরাসায় ভর্তি করেন। বড় ভাই হযরত শাইখ আব্দুল হাই রহ.-এর কামালতপূর্ণ বরকতময় প্রচেষ্টায় তিনি প্রতি বছরে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের তিন চার শ্রেণীর পড়া সমাপ্ত করতে থাকেন। মাত্র ১৮ মাসেই হিফজে কুরআন সম্পন্ন করেন। হযরত শাইখ আব্দুল হাই রহ.-এর নিকটই তিনি দক্ষতার সঙ্গে আরবী, উর্দু ও ফার্সির মাধ্যমিক জ্ঞান লাভ করেন। ১৯৬০ ঈসায়ীতে উচ্চতর দ্বীনি শিক্ষা অর্জনের লক্ষ্যে ঐতিহ্যবাহী মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসায় ভর্তি হন। হাটহাজারীতে অধ্যয়নকালে ইলমে ওহীর নানান বিষয়াবলিতে মেধা ও প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন। সেখানে দাওরায়ে হাদীস পর্যন্ত প্রতিটি পরীক্ষায় প্রথম স্থান লাভের গৌরব অর্জন করেন। তারই স্বীকৃতি স্বরূপ হাটহাজারীর প্রখ্যাত শিক্ষক হযরত মাওলানা হাফিজুর রহমান সাহেব ১৯৬৪ ঈসায়ীতে বলেছিলেন “এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিগত এক যুগের মধ্যে আব্দুল হান্নান সিলেটীর মত এত প্রখর তীক্ষè মেধাবী ছাত্র আর আসেনি”। এরই পুরনাবৃত্তি করে ১৯৯৪ ঈসায়ীতে জালালাইন শরিফের উদ্বোধনী দরসে তিনি আরও বলেন, “আমার দীর্ঘ ৪৫ বছরের শিক্ষকজীবনে ৩ জন তালিবে ইলিম আব্দুল হান্নান সিলেটী, মুহা. হারুন (বর্তমান শায়খুল আদব) ও শায়েখ আহমদকে এরূপ পেয়েছি যারা অধ্যয়নকালেই আমার চেয়েও বেশি বুঝেছে। তাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ছিল আব্দুল হান্নান সিলেটী”। ছাত্রাবস্থায় “মরেঙ্গে হাম কিতাবো পর ওরক হোগা কাফন আপনা” এই আপ্তবাক্য বুকে ধারণ করেছিলেন। পাঠ্য তালিকার অনেক কিতাব তাঁর আজীবন মুখস্থ ছিল। হাটহাজারীর শিক্ষা সমাপন করে করাচীতে হযরত আল্লামা ইউসুফ বিন্নুরী রহ.-এর মাদরাসায় ভর্তি হন। আল্লামা ইউসুফ বিন্নুরী রহ.-এর সান্নিধ্যে থেকে বহুদিন ফতোয়ার অনুশীলন করেন এবং মাসিক “বায়্যিনাত” পত্রিকায় ‘মুসলিম মিল্লাতের তাহযিব, তামাদ্দুন কী হওয়া চাই’ বিষয়ের উপর ধারাবাহিক প্রবন্ধ লেখেন। তিনি হযরত বিন্নুরী রহ., হযরত মাওলানা রসুল খান রহ., হযরত মাওলানা ইদ্রিস কান্দলভী রহ.-এর নিকট থেকে হাদিসের মুবারক সনদ অর্জন করেন। তথায় অধ্যয়নকালে তাঁর মেধা ও প্রতিভার কথা অবগত হয়ে হযরত মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী রহ. তাঁকে খুঁজে বের করেন এবং বলেন- “তোমার শিক্ষা সমাপ্ত হলে দ্বীনের খেদমতের জন্য লালবাগ মাদরাসায় চলে আসবে”। শিক্ষা সমাপন করে অল্প কিছুদিন হযরত শাইখ মাওলানা আব্দুল হাই রহ.-এর প্রতিষ্ঠিত জামেয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া দিনারপুর মাদরাসায় শিক্ষকতা করেন। অতঃপর ১৯৬৫ ঈসায়ীতে হযরত মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী রহ-এর তাসনীফ বিভাগের সহকারী হিসাবে যোগদান করেন। লালবাগে অবস্থান কালে তাঁর সুখ্যাতি চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের গর্ভনর আব্দুল মুনঈম খান তাঁকে দাওয়াত করে অনুরোধ করেন- আপনি প্রতিদিন গভর্নর হাউসে এসে আমাকে তরজমাসহ কুরআন শরীফ শিক্ষা দিন। আমার প্রাইভেট গাড়ি প্রতিদিন আপনাকে নিয়ে আসবে এবং পড়ানো শেষে পুনরায় দিয়ে যাবে। গর্ভনর সাহেবের আবেদনের উত্তরে তিনি বলেছিলেন- “আপনার আকাক্সক্ষা খুবই নেক ও মোবারক, তবে আমাকে ইমাম বুখারী রহ.-এর আদর্শ আপনার আবেদন মানতে বাধা দিচ্ছে, তাই গভর্নর হাউসে গিয়ে পড়ানো সম্ভব নয়। আপনি মাদরাসায় আসলে স্বাগত জানিয়ে পড়াব”। জামিয়া কুরআনিয়া লালবাগে শিক্ষকতা করার পর হযরত মাওলানা আতহার আলী রহ.-এর অনুরোধে কিশোরগঞ্জের সুবিখ্যাত মাদরাসা ‘জামিয়া এমদাদিয়া’য় মুহাদ্দিস হিসাবে যোগদান করেন। সেখানে জামেয়ার ইফতা ও প্রচার বিভাগের দায়িত্বও গ্রহণ করেন। কিশোরগঞ্জে অবস্থানকালে হযরত মাওলানা আতহার আলী রহ.-এর পৃষ্ঠপোষকতায় রাজনীতি, সমাজসেবা ও লেখালেখিতে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করেন। মননশীল বাংলা মাসিক “মুনাদী” পত্রিকার সম্পাদনাসহ ছোট-বড় কিছু বইও রচনা করেন। তন্মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হচ্ছে-হযরত ইসমাঈল শহীদ রহ.-এর জীবনী ‘মুজাহিদে মিল্লাত’, ‘উলামায়ে ইসলাম কো দা’ওয়াতে ফিকর’ এবং ‘বাস্তব ক্ষেত্রে সমাজতন্ত্র’। শেষোক্ত বইটিতে তিনি ভবিষ্যদ্ববাণী করেছিলেন- “২০০০ সালের মধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে”। তিনি ইতিহাস, বইপুস্তক ও শিলালিপি ঘাঁটাঘাঁটি করে হযরত শাহ জালাল রহ. সম্পর্কেও গ্রন্থ লিখেছেন। কিন্তু প্রচলিত স্পর্শকাতর বিশ্বাসের বিপরীত কিছু বিষয়াবলি তাঁর গবেষণায় দেখতে পান। যার প্রচার নিরর্থক ফিতনা-ফ্যাসাদের কারণ হত। তাই হযরত শাহ জালাল রহ. সম্পর্কে লিখিত গবেষণাধর্মী গ্রন্থটি প্রকাশ করেননি এবং কখনো উক্ত বিষয়াবলির প্রচারও করেননি। হযরত মুফতি সাহেব ১৯৭০ ঈসায়ীতে পাকিস্তান অ্যাসেম্বলীর সদস্য হযরত আহতার আলী রহ.-এর পৃষ্ঠপোষকতায় “নেজামে ইসলাম পার্টির” মনোনীত প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ব্যাপক সমর্থন লাভ করেন।
১৯৭৩ ঈসায়ীতে প্রখ্যাত বুজুর্গ আরিফ বিল্লাহ হযরত মাওলানা হাফিজ আকবর আলী রহ.-এর প্রতিষ্ঠিত “জামেয়া ক্বাসিমুল উলূম দরগাহ হযরত শাহ্ জালাল রহ. সিলেট”-এ শাইখুল হাদিস, মুফতি ও নায়বে মুহতামিম হিসাবে যোগদান করেন। অল্প দিনেই তাঁর অক্লান্ত প্রচেষ্টায় মাদরাসার সার্বিক উন্নতি সাধিত হয়। ইন্তেকালের পূর্ব পর্যন্ত এই দায়িত্বসমূহ সুচারুরূপে পালন করে গেছেন। যতদিন জীবিত ছিলেন ততদিন সিলেটের ইসলামী আন্দোলনের সংগ্রামী নেতৃত্ব দিয়েছেন। শিরক, বিদআত, রেজভী ফিৎনার সফল মোকাবেলা করেন। লেখা-লেখি, তর্কযুদ্ধ বা মুনাজারা, আইনি লড়াই তথা মামলা মুকাদ্দমার মাধ্যমে সিলেট অঞ্চলের রেজভী ফিৎনা দমাতে সফল হন। তর্কযুদ্ধ বা মুনাজারার চ্যালেঞ্জে বেদআতীরা যতবারই মোকাবেলার দুঃসাহস দেখিয়েছে ততবারই তাদের পরাজয় বরণ করতে হয়েছে। ফলে পরবর্তীতে বেদআতীরা তাঁর সাথে তর্কযুদ্ধ বা মুনাজারার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে সাহস পেত না। কখনো কখনো তর্কযুদ্ধ বা মুনাজারায় সম্মত হলেও সম্মেলনস্থলে উপস্থিত হত না। ১২ই ফেব্রুয়ারী ১৯৭৬ ঈসায়ী মোতাবেক ৪ঠা চৈত্র হবিগঞ্জ জেলার আজমীরিগঞ্জের শিবপাশা গ্রামের বিতর্কসভা থেকে আলী আকবর রেজভীর পলায়ন এরই উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত। ১৯৭৬ ঈসায়ীতে নরওয়েজীয় গির্জার পক্ষ থেকে উচ্চশিক্ষিত, নেশাগ্রস্তদের আরোগ্যদানে সক্ষম ও সম্মোহনে পারদর্শী ছোট একটি খৃষ্টধর্ম প্রচারকদল বিভিন্ন কলেজে “বর্তমান খৃষ্টধর্ম সঠিক, ইসলাম মিথ্যা, মুহাম্মদ ভ-” (নাউযুবিল্লাহ) ইত্যাদি বক্তব্য প্রচার করতে থাকে। প্রখ্যাত কবি আফজাল চৌধুরীর সঙ্গে দু’টি ধর্মের সত্যতা নিরূপনের জন্য তারা তর্কযুদ্ধের সম্মতি জ্ঞাপন করে। কবি সাহেব তর্কযুদ্ধের জন্য সিলেটের শ্রদ্ধেয় আলিমগণের শরণাপন্ন হন। শ্রদ্ধেয় আলিমগণ সর্বসম্মতিক্রমে তর্কবিদ হিসাবে মুফতি আব্দুল হান্নান রহ. কে মনোনীত করেন। নির্ধারিত তারিখে নয়াসড়ক গির্জায় বিতর্ক শুরু হয়। সন্ধ্যালগ্ন থেকে রাত বারোটা পর্যন্ত মুফতি আব্দুল হান্নান রহ. (দোভাষী হিসাবে কবি আফজাল চৌধুরী সাহেবের মাধ্যমে) বিতর্কযুদ্ধ চালিয়ে যান। যুক্তি ও প্রামাণ্যদলিল দ্বারা ইসলামের সত্যতা ও বর্তমান খৃষ্টধর্মের ভ্রান্ততা প্রমাণিত ও ঘোষিত হতে থাকে। ইউরোপীয় শ্বেতাঙ্গ ধর্মপ্রচারকগণ লা-জাওয়াব হয়ে চতুরতার সঙ্গে এই বলে সভা মুলতবী ঘোষণা করে যে, আরও বর্ধিত পরিসরে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে বড় আকারে গণসমাবেশে বির্তকসভা অনুষ্ঠিত হবে। মুফতি সাহেব এই প্রস্তাব সাদরে গ্রহণ করেন। দিনক্ষণ ও তারিখ নির্ধারণ হয়, স্থান নির্ধারিত হয় প্রাক্তন জিন্নাহ হল (বর্তমান সুলেমান হল) কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ। কিন্তু পরে গির্জার শ্বেতাঙ্গ পাদ্রীগণ তাদের প্রস্তাবিত বির্তকসভায় অংশগ্রহণে অনীহা প্রকাশ করে। টালবাহানা করতে থাকে। এই ঘটনার পর বৃহত্তর সিলেটে আজ পর্যন্ত পাদ্রীরা তর্কযুদ্ধ বা মুনাজারার সাহস দেখায়নি। অনেক দিন পর অধ্যাপক কবি আফজাল চৌধুরী সাহেব বার্ণাবাসের বাইবেল অনুবাদ করেন। তিনি একদিন আমাকে বলেছিলেন- মুফতি সাহেবের গীর্জা স্বীকৃত বাইবেলের বিশেষ বিশেষ অধ্যায় ও বার্ণাবাসের বাইবেলের প্রয়োজনীয় অধ্যায়সমূহ মুখস্থ ছিল। তিনি বাইবেলের অসংলগ্নতা ও স্ববিরোধী বক্তব্য সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখতেন। এ জন্য পাদ্রীগণ বিপর্যস্ত ও বিব্রত হয়ে পড়েছিল।
হযরত আব্দুল হান্নান রহ. ছিলেন প্রচ- ব্যক্তিত্বের অধিকারী। তাঁর শারীরিক আকৃতি দীর্ঘ ও বলিষ্ঠকায়, বাবরি দোলানো চুল, দেখতে যেন একজন বাহাদুর বীর সিংহ। তাঁর দর্শনে ভয়মিশ্রিত শ্রদ্ধার উদ্রেক হত। কিন্তু তাঁর আলাপচারিতায় ও সদাসয় অমায়িক ব্যবহারে সকলেই মুগ্ধ হতেন। আমলে আখলাকে সদা সুন্নতের অনুসারী। রমযান মাসে তিনি নিজেই খতমে তারাবীহ পড়াতেন। দ্বীন ও আধুনিকতার মধ্যে সংঘাতপূর্ণ বিষয়াবলিতে ছিল তাঁর অগাধ পা-িত্য। তাঁর বড় সাধ, বড় স্বপ্ন ছিল-মানুষের মধ্যে আল্লাহর দ্বীন ও রাসুল সা. এর সুন্নত প্রতিষ্ঠিত হোক। এজন্য আজীবন গবেষণা ও প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন। কওমী মাদরাসার শিক্ষা-দীক্ষার উন্নয়নের জন্য তিনি ছিলেন খুবই উচ্চাকাক্সক্ষী, ছিলেন গবেষণায় মগ্ন। সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজের জিয়া ছাত্রাবাস, সুবিদবাজারের মরহুম সুলেমান খান রহ.-এর মসজিদসহ বিভিন্ন মসজিদে তিনি নিয়মিত পবিত্র কুরআনের তাফসীর পেশ করতেন যা ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। বিশেষ করে উচ্চশিক্ষিত ও ছাত্র সমাজে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা ছিল অতুলনীয়।
এ মহান জ্ঞানতাপস ১৯৮০ ঈসায়ীর ২রা নভেম্বর পবিত্র হজ্জব্রত পালন শেষে মক্কা শরীফে মাত্র ৪০ বৎসর বয়সে পরকালের স্থায়ী জীবনের দিকে শেষ সফর করেন। নামাজে জানাযার পূর্বে বিশেষ মর্যাদায় তাঁর কফিন হাতিমে কা’বায় রাখা হয় এবং জানাযার সময় মাক্বামে ইব্রাহীমে রেখে সদ্য হজ্জব্রত পালনকারী হাজী সাহেবানদের জানাযার নামাজ আদায়ের পর সৌভাগ্যবানদের কবরস্থান মক্কার “জান্নাতুল মু’আল্লায়” তাঁকে সমাহিত করা হয়। আল্লাহপাক তাঁর এই বান্দাকে জান্নাতের সুউচ্চ মর্যাদা দান করুন।
ভাবতে অবাক লাগে, লেখাপড়া শেষ করে তিনি মাত্র পনের বৎসরের কর্মজীবন পেয়েছিলেন। দ্বীনি খেদমত, রাজনীতি, সমাজসেবা, বাতিলের মোকাবেলা, বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি, সর্বোপরি হাদিস, তাফসীর ও ফিক্বাহ-এর সুচারু শিক্ষাদান ইত্যাদিতে (নিজস্ব দু’টি বিখ্যাত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক ব্যস্ততা সত্ত্বেও) আল্লাহপাক তাঁর জীবনে অবাক করা বরকত দিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন চার ছেলে ও দুই মেয়ের জনক। সুষ্ঠু অভিভাবকত্বের অভাবে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান দু’টি ধ্বংস হওয়ার পাশাপাশি তাঁর মূল্যবান রচনাসমূহ লাপাত্তা হয়ে যায়। কেউ কেউ চতুরতার সঙ্গে তা হাতিয়ে নেন। উপরোক্ত লাইন দু’টি কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ হিসাবে নয়; বরং অনেক শুভাকাক্সিক্ষর কৈফিয়তের জওয়াব হিসেবে লিখলাম।

লেখক: হযরত মাওলানা আব্দুল হান্নান রহ.-এর বড় সাহেবজাদা।

আরও পড়ুন :

আকাবির আসলাফ-১, শায়খুল হাদীস আল্লামা ইসহাক রাহ.

আকাবির আসলাফ-২, আলোর দিশারী : মাওলানা জমশেদ আলী

আকাবির আসলাফ-৩, আরিফ বিল্লাহ মাওলানা আকবর আলী রাহ.

আকাবির আসলাফ-৪, হযরত মাওলানা কুতুবুদ্দীন রহ.

আকাবির আসলাফ-৫,  শহীদ ড. আব্দুল্লাহ আযযাম রহ.

আকাবির আসলাফ-৬, আল্লামা আশরাফ আলী বিশ্বনাথী রাহ.

আকাবির আসলাফ-৭, মাওলানা আব্দুল করীম শায়খে কৌড়িয়া রাহ.

About Abul Kalam Azad

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...