আমেরিকা বিগত ১৫ বছর ধরে আফগান, ইরাক ও লিবিয়ায় যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে বিশ্বব্যাপী যে অস্থির পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে, তাতে তাদের অর্থনৈতিক ভীত অনেকটা নড়বড়ে হয়ে গেছে। বর্তমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে ধারণা করা যায় যে, আমেরিকার একক রাজত্বের দিন ফুরিয়ে আসছে।
অন্যদিকে চীন যেভাবে অতিদ্রুত উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তাতে ধারণা করা যায় যে, বিশ্ব রাজত্বে আমেরিকার জায়গা হয়তো চীনাদের দখলে আসতে যাচ্ছে।
তবে আমেরিকার দিন যে শীঘ্রই ফুরিয়ে আসছে এমনটি বলা কঠিন। কারণ বাহ্যিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে আমরা কেবল ধারণা করতে পারি, নিশ্চিত সিদ্ধান্তে পৌঁছা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
একবিংশ শতাব্দীর পূর্ব থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত আমেরিকার বিভিন্ন কর্মসূচীকে সামনে রাখলে একটি বিষয় বুঝতে পারা যায় যে, তাদের প্রতিটি যুদ্ধ অনেক দূরের ভাবনাকে ঘিরে পরিচালিত হয়েছে। আফগানিস্তানের যুদ্ধের বিষয়টিই একটু ভাবি। আমরা ভাবছি তারা আফগান যুদ্ধে ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু পেন্টাগন কর্তৃপক্ষ (যাদের মাধ্যমে মূলত আমেরিকা পরিচালিত হয়) যে উদ্দেশ্যে যুদ্ধের সূচনা করেছিলো, তাতে হয়তো তারা সফল হয়ে পড়েছে। তাই তো প্রেসিডেন্ট ওবামা ২০১৭ সালের শুরুতে অল্প কিছু রেখে বাকী সৈন্যদের প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন। স্বার্থ হাসিলের পর কেটে পড়ার দৃষ্টান্ত তো বিরল নয়।
তবে যাই হোক, এতো সহজে আমেরিকা বিশ্ব-মোড়লের পদ ছাড়বে না। বাহ্যিক-ভাবে মনে হয়, নিজেদের প্রভাব প্রতিপত্তি বহাল রাখতে তাদের অর্থনৈতিক উন্নতি জরুরী। আর এই কারণেই হয়তো বুশের মতো ওবামা প্রশাসন নতুন করে যুদ্ধে লিপ্ত হয়নি। এছাড়া সুপার পাওয়ার হিসেবে নিজেদের অবস্থান বহাল রাখতে বিশ্বের সবকটি রাষ্ট্রের সব কার্যক্রমে নাক গলানোর কাজটিও ভালোমতো সম্পন্ন করে যাচ্ছে। এই জায়গায় অন্তত চীন আমেরিকা থেকে অনেক পিছিয়ে আছে। তবে মৃত লাশ রাশিয়া জেগে উঠতে চাইছে। কিন্তু সম্ভবত তাদের পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হবে না।
সময়ের সাথে সাথে বিশ্ব পরিস্থিতি কি ঘটবে বলা কঠিন। দক্ষিণ এশিয়ার ব্যাপারে ধারণা করা যায় যে, ভারত সাগরে চীন যেভাবে আধিপত্য বিস্তার করছে তাতে আগামী দিনে থাইল্যান্ড, মিয়ানমারের সমুদ্র অঞ্চল ব্যবহার করে ভারতকে দুর্বল করে রাখবে। বাংলাদেশ তো হিসেবেই আসবে না। যদিও চীন সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের প্রস্তাব দিয়ে সুসম্পর্ক রাখতে চেয়েছিলো। কিন্তু ভারতের চাপে হোক আর ভিন্ন কারণে, চুক্তি সম্পন্ন হয়নি। বাহ্যিক-ভাবে এখন মনে হচ্ছে, আম যাবে ছালাও যাবে।
বর্তমানে আমেরিকার আধিপত্যের তুলনায় চীন কিছু না হলেও তাদের নীরবে প্রস্তুতি বিশ্ব সম্পর্কে নতুনভাবে ভাবতে উৎসাহিত করছে। অনেকক্ষেত্রে দেখা গেছে নীরব ঘাতক তুলনামূলক ভয়ানক হয়ে। বিজ্ঞানে অগ্রগতি, বিশ্ববাজার দখলসহ চীন অনেকদিন যাবত যেভাবে নীরবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে অনেক কিছু নতুনভাবে ভাবতে হচ্ছে। আসলে ভাবতে বাধ্য হচ্ছি। যাই হোক, চীন অথবা আমেরিকা কেউই আমাদের বন্ধু নয়। সুতরাং সবার আগে আমাদের উন্নতি নিয়ে ভাবা উচিৎ।
*বিশ্ব রাজনীতি সম্পর্কে যাদের আগ্রহ আছে লেখাটি তাদের জন্য। অন্যরা প্লিজ এড়িয়ে যান।