মুফতী মুতাসিম আল-মাদানী-
আমার কওমি মাদরাসা সংস্কার সম্পর্কিত বিভিন্ন লেখা দ্বারা অনেকেই মনে করতে পারেন যে, আমি মনে হয় ওই শিক্ষা দ্বারার মৌলিক বিষয়ের সংস্কার চাই- তা কিন্তু নয়। কারণ কওমি মাদরাসার মূল টার্গেট কিন্তু কুরআন হাদিস ও ফেকহে ইসলামি তথা দ্বীন বুঝা ও সংরক্ষণের ব্যবস্থাকরণ। আমি নয় কোন পাগলও একথা বলবে না যে, কওমি মাদরাসা থেকে কুরআন হাদিস তথা ফেকহে ইসলামিকে উঠিয়ে দেওয়া হউক। বরং আমি একথা বলতে চাচ্ছি কুরআন হাদিস তথা ফেকহে ইসলামি বুঝতে সহায়ক বিষয়াবলিতে পরিবর্তন করতে। যাকে علوم آلية বলা হয়। علوم أصلية তথা মৌলিক বিষয়াবলিতে পরিবর্তন নয়, তবে হ্যাঁ, علوم أصلية এর পাঠদান পদ্ধতিতে অবশ্যই সংস্কার প্রয়োজন। আর علوم آلية এর কিতাবাদিতে আনতে হবে পরিবর্তন। বর্তমান সময়ে লিখিত সহজ সরল কুরআন-হাদিস নির্ভর অনুশীলনীওয়ালা পুস্তিকাদি নেসাবের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এর অর্থ এটা নয় যে, কওমি মাদরাসাসমূহের নেসাব থেকে সারফ, নাহব, বালা গত মানতিক এসব বিষয়াদি তুলে দেওয়া হবে। তবে এসব বিষয়াবলির পুরাতন লিখিত কিতাবাদির পরিবর্তে নতুন নতুন লিখিত কিতাবাদি যা বর্তমান সময়ের মন মেযাজের উপযোগী, তা লাগাতে হবে; যেখানে স্বয়ং আরবি বিশ্ব তাদের দেশসমূহের পাঠ্যসূচিতে নতুন ভাবে লিখিত সহজ সরল কিতাবাদি সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত করছে। সেখানে আমরা কি এখনো সেই পুরনো কিতাবাদিকে আকড়িয়ে ধরব।
পরিশেষে বলতে চাই, আমাদেরকে বর্তমান সময়ের দ্বীন বিরোধী চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করে দ্বীন ও ইসলামকে টিকিয়ে রাখতে হলে দ্বীনের মৌলিক বিষয়াবলিকে যথাযথভাবে আয়ত্ব করে সঠিকভাবে মানুষের কাছে পৌঁছাতে হলে নেসাবে আংশিক সংস্কার যা মৌলিক বিষয়াবলিতে নয়; বরং উপকরণসমূহে করেতে হবে। যা প্রায় শতাব্দীকাল পূর্বে বলে গেছেন শায়খ মাদানি রাহ.। দয়া করে আমরা তার নাম ব্যবহার করে ফায়দা লুটার চিন্তা না করে তার নির্দেশিত পথ ও মতকে ধীর-স্থিরভাবে সুস্থ মনে বুঝার চেষ্টা করে অনুসরণ করতে এগিয়ে আসি। পরিশেষে বিনীত অনুরোধ ভারত ও পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় মাদরাসাগুলোর নেসাবসমূহ দেখে পর্যালোচানা করে আমরা আমাদের ভবিষ্যত চলার পথ ঠিক করি। আমরা যাদের অনুসরণ করি। যাদের নামে উচ্চকণ্ঠ তারা যদি নেসাবে পরিবর্তন করতে পারে তাহলে আমরা কেন পারব না?
দারুল উলুম দেওবন্দ যদি বর্তমান বিশ্বের তাগুতি শক্তির মোকাবেলার লক্ষ্যে যদি ইংরেজি বিভাগ খুলতে পারে তাহলে আমরা কেন পিছিয়ে থাকব। তারা যদি অনেক অনেক বিষয়ে সংস্কার করতে পারে, তাহলে আমরা কেন পারব না? দারুল উলুমের শায়খুল হাদিস সাহেব যদি কাফিয়ার মতো কিতাব পড়ানোর জন্যে নতুন পদ্ধতিতে শরাহ লিখতে পারেন তাহলে আমরা কেন পুরাতন পদ্ধতিতে পড়ানো বাদ দিতে পারি না।
সংস্কার সম্পর্কে যারা লেখালেখি করে, আলোচনা করে তারা কিন্তু কওমি মাদরাসার শত্র“ নন। আপনাদের নয় দুশমন। তাদের কথা একটু ধীরস্থিরভাবে বুঝার চেষ্টা করে তাদের সাথে আলোচনা পর্যালোচনা করে সঠিক দিক নির্দেশনা দিয়ে কওমি মাদরাসাসমূহের ঐতিহ্য রক্ষায় এগিয়ে আসি। অন্যথায় আমার আপনার দ্বারা যদি দ্বীনের সামান্যতম ক্ষতি সাধিত হয়, তাহলে অবশ্যই এর জন্যে কাল কিয়ামত দিবসে আমাদেরকে জবাবদিহী করতে হবে। আল্লাহ সঠিক পথে পরিচালনাকারী। ভুলত্র“টি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার আকুতি রেখে বিদায় নিচ্ছি। আল্লাহ আমাদেরকে এখলাসপূর্ণ কাজ করার তাওফিক দিন। আমীন।