রবিবার, ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ বিকাল ৫:২০
Home / প্রতিদিন / পাঁঠার ইন্টার্ভিউ

পাঁঠার ইন্টার্ভিউ

মূলঃ যুবাইর তায়্যিব ::

komashisha 01_Kutaybaঈদুল আযহা ঘনিয়ে এসেছে। পশুহাঠের সংবাদ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে শহরের সবচেয়ে বড় হাঠটির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম।
হাঠে পৌঁছে একেবারে হতাশ হয়ে পড়লাম। গতবার এ সময়ে হাঠে যে পরিমাণ পশু উঠেছিল এবার তার অর্ধেকও নেই।
বেশ কিছুক্ষণ ঘোড়াঘুড়ি করেও পসন্দসই কোনো গরু বা উট খুঁজে পেলাম না যেটির ছবি আগামীকালের প্রকাশিতব্য নিবন্ধের সাথে জুড়তে পারি।
হঠাৎ হাঠের এক কোণে একটা গাছের ছায়ায় সত্তরোর্ধ এক বৃদ্ধকে দেখতে পেলাম বেশ কতকগুলো খাসি আর বিশালদেহী একটা তরতাজা পাঁঠা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।
ভাবলাম লোকটার একটা সাক্ষাতকার নিয়ে চলে যাই। কাছে গেলাম, নিজের সাংবাদিকতার পরিচয় দিয়ে একটা ইন্টার্ভিউ দেয়ার আবেদন করলাম। কিন্তু ঘোমরামুখো বুড়োটি রাজি হলো না। অনেক সাধলাম, লোভও দেখালাম কিন্তু তার একই কথা সে অযথা কথা বলে সময় নষ্ট করতে রাজি নয়। ব্যর্থ মনে ফিরে আসছিলাম।
আমাকে চলে আসতে দেখে বুড়োর পাঁঠাটি হঠাৎ বলে উঠলো মিঃ জার্ণালিস্ট এদিকে আসুন আমি ইন্টার্ভিউ দিচ্ছি।
বিস্ময় আর আনন্দ নিয়ে তার দিকে এগিয়ে গেলাম। দ্রুত ব্যাগ থেকে প্যাড আর কলমটা নিয়ে প্রশ্ন করলাম
… আপনার নাম?
পাঁঠা: এমপি, মানে মিস্টার পাঁঠা।
…… বয়স?
… যৌবনের মধ্য গগনে।
…… আপনার পছন্দনীয় খাদ্য?
… গোশত ছাড়া যে কোনো ধরণের কচি ঘাস।
…… পানীয়?
… ন্যাচারাল ওয়াটারের পাশাপাশি রুহে আফজা, কোক, আইসক্রিম ইত্যাদি।
…… জীবন সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত অভিজ্ঞতা?
… জীবনটাকে আমি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখিছি অতীত আর বর্তমানের মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাৎ এসে গেছে। আগে জীবনটা এতো লৌকিকতাপূর্ণ আর ব্যয়বহুল ছিল না। আগে জীবনটা ছিল সমৃদ্ধ যেখানে সেখানে প্রচুর ঘাস পাওয়া যেত। এখন সে সব ঘাসের জায়গায় বড় বড় অট্টালিকা শোভা পাচ্ছে। আগে মালিকরা আমাদেরকে ঈদের বাজারের কয়েকমাস আগে থেকেই বেশি বেশি করে সুস্বাদু খাবার খাইয়ে মোটা তাজা করতো। আর এখন আমাদেরকে ইণ্ডিয়ান তেঁতো বড়ি গিলিয়ে মোটাতাজা করা হয়। ক্ষেত্র বিশেষে আমাদের পাঁছায় পাম্প ঢুকিয়ে ভেতরে পানি আর বাতাস চালান দিয়ে মোটাতাজা দেখানোর কসরত করা হয়। এই আমাকেই ধরুন। আপনি আমাকে যে পরিমাণ বড় দেখতে পাচ্ছেন তা মূলত কৃত্রিম উপায়ের ফসল। যাক, তবুও আল্লাহর শুকরিয়া আমি ছোটকাল থেকেই চুরি চামারি করে হলেও প্রচুর মজাদার ঘাস খেয়েছি।
…… জীবনে কোনো ইচ্ছা আছে?
… একটা ইচ্ছে আছে, আর তাহলো পাঁঠাদের নিয়ে এমন একটা সংগঠন গড়ে তোলা যাদের তীব্র আন্দোলনের ফলে চারণভূমি জবরদখল করে আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা বন্ধ করা যায়। কিন্তু কী করি। যখনই আমাদের দল কিছুটা ভারী হয় ওমনি ঈদে আমাদেরকে কোরবানী দেয়া হয়। যাক তবুও আল্লাহর শুকরিয়া আমরা তো আল্লাহর রাস্তাই প্রাণ দিচ্ছি। কুকুর আর বিড়ালের মতো জীবন দিচ্ছি না। …… কোনো অভিযোগ অনুযোগ আছে?
… ঠিক অভিযোগ নয় তবে কিছুটা অভিযোগের মতই। এই ধরুণ এখন আমার যৌবনকাল চলছে, অতএব পাঁঠিদের পেছনে ঘুর ঘুর করা স্বভাবের দাবী। মালিক আমাকে যে ঘরে থাকতে দেয় সে জায়গাটা প্রয়োজনের তুলনায় সংক্ষীর্ণ। অনেক সময় এমন হয় নিজেকে কন্ট্রাল করতে না পেরে দড়ি ছিঁড়ে কোনো পাঁঠির উপর ঝাপিয়ে পড়েছি। ফলে আমাদের ধ্বস্তাধ্বস্তিতে ঘরের বেড়া ভেঙে যাচ্ছে। মালিক এতে জব্বর না খোশ। তাই আমাকে বিক্রয়ের জন্য ঈদের হাটে নিয়ে এসেছেন।
…… শৈশবের কোনো ঘটনা মনেরপড়ে?
… তখন আমি খুবই ছোট। একদিন রাখালের অজান্তে পাল থেকে বেরিয়ে পড়লাম। রাখালের হম্ভি তম্বি আমার মোটেও ভালো লাগতো না। তাই ওর আওতার বাইরে বেরিয়ে আসতে পারায় আমিতো খুশিতে বাকবাকুম। এখন আমি স্বাধীন। কোনো কিছুতে মুখ লাগাতে কোনো বাধা নিষেধ নেই। কিন্তু সন্ধ্যায় যখন মায়ের কথা স্মরণ হলো তখন আমি কতকটা কাতর হয়ে পড়লাম। ফিরে এলাম সেই চারণভূমিতে। কিন্তু ততক্ষণে রাখাল মা দের নিয়ে বাড়িতে চলে গিয়েছিল। আমি তখন মে মে করে কাঁদছিলাম। এক বুড়ি আমাকে এ অবস্থায় দেখে পরম মমতায় কোলে তুলে তাঁর ঘরে নিয়ে গেলেন। তিনি আমাকে অত্যন্ত মায়া করতেন। আদর করে মুখে খাবার তুলে দিতেন। আমি মোট তিনদিন তাঁর ওখানে ছিলাম। চতুর্থ দিন সকাল ১০টার দিকে আমাদের রাখালকে বুড়ির বাড়িতে দেখতে পাই। ওরা কি বলাবলি করছিলেন জানি না, একসময় বুড়ি আমাকে কোলে করে নিয়ে এসে তার হাতে তুলে দিলেন। জীবনের সেরা আদরমাখা সে তিনটি দিনের কথা আমি কখনো ভুলতে পারব না।
…… স্মরণীয় ঘটনা?
… এক রাতে আমার গলা থেকে রশিটা খুলে পড়েছিল। আর যায় কোথায় চাঁদনি রাতে বাড়ির সবকিঝু সার্চ করতে লেগে গেলাম। যেখানে যা পেলাম সবকিছুরই স্বাদ পরখ করতে লাগলাম। এভাবে ঘুরতে ঘুরতে একসময় এক ফাঁক গলে মালিকের কিচেনে ঢুকে পড়লাম। ওখানে যে জিনিষটি আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছিল এবং তৃপ্তি মিঠিয়ে খেয়েছিলাম তাহলো ডেকছি ভরা দুধ। এতো সুস্বাদু হবার কারণটা হলো তাতে চিনি মেশানো ছিল।
…… এমন একটি ঘটনা স্মরণ করুন যেটি মনে পড়লে এখনো চোখ দিয়ে জল পড়ে।
… জ্বী, সে ঘটনা হলো এমনই একদিনে এক কসাই আমার মরহুম পিতার স্যরি শহীদ পিতার গলায় ছুরি চালিয়েছিল। আজও সে ঘটনাটি স্মরণ হলে আমার চোখ থেকে অশ্রুর প্রপাত বইতে থাকে।
…… আপনার কোন অভ্যাসে অন্যরা বিরক্ত হয় বলে মনে করেন?
… জ্বী, আমি খুব বেশি মে মে করি, অর্থাৎ বেশি কথা বলে থাকি। এজন্যে অনেকেই বিরক্ত হয়। আবার অনেকে এটা আমার মুদ্রাদোষ মনে করে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে।
…… এমন কোনো আকাঙ্খা ছিল যা পূর্ণ হয়নি।
… স্যরি স্যার! এটা আমার প্রাইভেসির ব্যাপার স্যাপার। দয়া করে আপনি অন্য কোনো প্রসঙ্গে যান।
…… ঈদ উপলক্ষে নিজের প্রাণ বিসর্জনের ব্যাপারে আপনার অনুভূতি?
… স্যার আল্লাহ বলেছেনঃ “কুল্লু নাফসিন যা-ইকাতুল মাউত”। মানে প্রত্যেক জীবনকেই মৃত্যুর স্বাদ উপভোগ করতে হবে। আমার অনুভব হলো মরতেই যখন হবে তাহলে আল্লাহর পথে জীবন দিতে কোনো অাফসুস নেই। রোগে ভোগে মরার চেয়ে বরং আমাদের সৃষ্টি যে উদ্দেশ্যে আল্লাহর সেই মর্জি মোতাবেক মরণই ভালো।
তবে স্যার একটা কথা! আমাদেরকে যখন কুরবানি দেবেন তখন আল্লাহর সন্তুষ্টিই যেন মুখ্য থাকে। আমাদেরকে হারাম পথের উপার্জন দ্বারা কেনার চেষ্টা করবেন না। আমাদের শরীরের কাটা গোশত মাসের পর মাস ফ্রিজে রেখে পঁচাবেন না। যে সমস্ত গরীব বৎসরে একদিনও গোস্তের স্বাদ উপভোগ করতে সক্ষম হয় না তাদেরকে রেখে আমাদেরকে আপনাদের পেটে ঢুকাবেন না। এতটুকু বলার পরই পাঁঠা তার পিছনের ট্যাং উঁচিয়ে বুঝাতে চাইল এবার ইতি।
আমিও তখন পাঁঠাটিকে ঈদ মোবারক জানিয়ে চলে আসলাম।

অনুবাদঃ কুতায়বা আহসান

About Abul Kalam Azad

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...