শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ৪:০৩
Home / অনুসন্ধান / একটি গুরুতর প্রশ্ন ও ভয়ানক আশংকার কথা

একটি গুরুতর প্রশ্ন ও ভয়ানক আশংকার কথা

Musa Al Hafiz:

light of quran 1গতকাল প্রায় দুই ঘন্টা সময় কলেজ পড়ুয়া তরুণ মাওলানাদের নিয়ে কাটালাম। তাদের উদ্দীপনা আমাকে সাহস দিয়েছে। মুক্তালোচনা হলো। ওদের মধ্যে আছে কাজের পিপাসা। জ্ঞানের অভিপ্রায়। বলে দিয়েছি, সময় পেলেই এসো। মৃত অক্ষরের চেয়ে জীবন্ত মানুষকে সময় দিলে সুফল ফলবে বেশি। কিন্তু মুশকিল হলো মানুষ যে হারে বাড়ছে, জীবিত মানুষের পরিমান তার সাথে পাল্লা দিয়ে কমছে! মরা মানুষের যোগ্যতা হলো সমস্যার জন্ম দেয়া। আমরা প্রতিনিয়ত সমস্যার জন্ম দিচ্ছি।
কে একজন প্রশ্ন করেছিলেন মাজহাবগত সমস্যা কি এই পর্যায়ে পড়ে? গুরুতর প্রশ্ন। আমি আন্তঃমাজহাবে জটিল কোনো সমস্যা দেখি না। যখন তলিয়ে দেখি, দেখি – এটা কোনো সমস্যাই নয়। কারণ শরীয়ার লাখো মাসআলার মধ্যে মতভেদ আছে খুব অল্পতেই। যে সব জায়গায় মতভেদ,তাও গুরুতর কিছু নয়। যেমন সালাতের কথাই ধরুন। বিপুল সং্খ্যক মাসাইল এতে। অধিকাংশে সকল ফকীহ একমত। হানাফী মতে সালাতে আহকাম আরকান তেরটি ফরজ। অন্য মাজহাবে ও এ তের ফরজ স্বীকৃত। অন্য মতে শুধু তাদিলে আরকান বাড়ে। যাকে হানাফী ফিকহ ফরজ না বললেও ওয়াজিব বলে। অর্থাৎ আদায় করতেই হবে।
হানাফী মতে সালাতে ওয়াজিব চৌদ্দটি। অন্য মতের সাথে এখানে এখতেলাফ সামান্যই। যেমন – আসসালামু আলাইকুম বলে সালাত শেষ করা অন্য মতে ফরজ। হানাফী মতে ওয়াজিব। এটা শুধু শব্দের ভিন্নমত। কারণ ওয়াজিব ও ফরজকে কেউ কেউ সমার্থক বলে ধরেছেন। যে সব কারণে সালাত ফাসেদ বা মাকরুহ হয়, তার অধিকাংশে কোনো মতভেদ নেই। রইলো সুন্নত -মুস্তাহাব। যে সব সুন্নত নিয়ে ভিন্নমত নেই, তার সং্খ্যাই অধিক। আবার ভিন্নমত যেগুলোতে, তার স্বরুপ অত্যন্ত স্পষ্ট। যেমন সুরা ফাতিহার শেষে আমিন বলা সুন্নত। এতে কোনো ভিন্নমত নেই। সুন্নতটি কীভাবে আদায় করা উত্তম, এ নিয়ে হাদীসের বক্তব্য ও ব্যাখ্যায় মাজহাবগত ভিন্নমত দেখা দিয়েছে। জোরে উত্তম না আস্তে উত্তম – এ তর্ক দানা বেঁধেছে। তেমনই আযানে তরজী করা, না করা,দুয়া কুনুত রুকুর আগে না পরে পড়া,ঈদের সালাতে বাড়তি তাকবির ছয় না এগারো না বারটি,- ইত্যকার ভিন্নমত কেবল পদ্ধতিগত। ইমাম ইবনে তাইমিয়া যাকে বলেন – ইখতেলাফে তনওউ ‘ বা পদ্ধতিগত মতভেদ।
আবার কিছু মতভেদ আছে গুরুতর। যেমন নাবালকের সম্পদে যাকাত ফরজ কী না,শরীর থেকে রক্ত বেরুলে ওজু থাকে কী না, পানাহারে সাওম নষ্ট করলে কাফফারা ওয়াজিব কী না,ভুল সংশোধনের জন্য কথা বললে সালাত ফাসিদ হয় কী না, ইমামের পেছনে মুক্তাদি কেরাত পড়বে কী না – এ সব বিষয়ে এক মত অন্য মতের বিপরিত। ইবনে তাইমিয়া একে বলেছেন ইখতেলাফে তাযাদ বা পরস্পর বিরোধী ভিন্নমত। এগুলোর সং্খ্যা খুবই কম। মূলত এ সব ভিন্নমত হাদিসের ইমাম এমনকি হাফিজুল হাদিসদেরকেও বাধ্য করেছে কোনো এক মাজহাব মেনে নিতে। কারণ প্রতিটি মাজহাব দলীল নিয়েই দাঁড়িয়েছে। ব্যক্তিগত পছন্দ -অপছন্দের স্থান এখানে নেই। ফলে ইসলামী জ্ঞানের সোনালি যুগেও এসব বিষয় নিয়ে সমাজ টুকরো টুকরো হয় নি। সবাই জানতেন সংবিধানের ব্যাখ্যা বিচারপতির কাজ। সাধারণ আইনজীবী সেই ব্যাখ্যাকে অবলম্বন করে পথ চলেন।
এখন,ইসলামী জ্ঞানের দারিদ্র ও রিক্ততার যুগে আমরা একে ঝগড়াঝাঁটির ক্ষেন্দ্রে নিয়ে এসেছি। মনে হচ্ছে, এগুলো নিয়ে তর্কবিতর্ক ইসলামের মহোত্তম কাজ। অথচ এ তর্ক ইসলামের কোনো প্রতিপক্ষের সাথে হচ্ছে না। বিরুদ্ধবাদী কোনো দলীলের মোকাবেলায় ও নয়।
তাহলে একটি মহল এ নিয়ে এতো উদ্যমী কেন? ইতিহাসের একজন ছাত্র হিসেবে বলছি, যখনই মুসলিম জাহানে গুরুতর বিপর্যয় এসেছে, সাথে সাথে এসেছে এমন কোনো ফেতনা, যা জাতির শ্রেষ্ঠ মেধাসমূহকে মূল বিষয় থেকে অনেক দূরে সরিয়ে রাখে।
সমাজের দৃষ্টিকে ব্যস্ত রাখে আত্মনাশা হানাহানিতে। আমি মুসলিম জাহানের চলমান চৈন্তিক বিপর্যয়ের প্রেক্ষাপটে উগ্রসালাফীদের সীমাতিক্রমী কাজে তারই ছায়া লক্ষ্য করছি।আবার আমাদের কিছু লোক উগ্রতায় লিপ্ত, সেটা ও দেখছি।ওরা মূলত ফেতনার সহায়তা করছে। দালিলিক ও যুক্তিগ্রাহ্য মোকাবেলাই বিভ্রান্তির মোকাবেলা। উগ্রতার বিপরিতে উগ্রতা বিভ্রান্তির ডালপালাই শুধু প্রসারিত করে। অনেকেই বিদগ্ধ প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন।যা
শ্রদ্ধাযোগ্য। কিছু শ্রমনিষ্ঠ যোগ্য আলিম ভারসাম্যের যে ভাষা ও বিক্রম নিয়ে বিভ্রান্তির সামনে দাঁড়িয়েছেন, এর ফলে তার গতিরোধ সম্ভব। কেউ গালি দিয়ে প্রতিরোধী আলেমদের মোটেও সহায়তা করেন না। বরং অন্যদের উগ্রতাকে বৈধতা দিয়ে বসেন। তারা তখন বলতে পারে, উগ্র আমরাই নই, তোমরাও। সাধরণ মানুষ সব দেখে, শুনে।তারা দলিল হয়তো কম বুঝে, কিন্তু আক্রমনাত্মক আচরণ মূহূর্তেই ধরে ফেলে।
।আহা! উম্মাহের কল্যাণকামী সালাফী বন্ধুগণ তাদের ভেতরের সীমাতিক্রমীদের যদি চিনতে পারতেন!! আহা! উম্মাহের কল্যাণকামী মুকাল্লিদ আমরা নিজেদের মধ্যে ঢুকে পড়া সীমাতিক্রমীদের যদি চিনতে পারতাম!!Musa al hafiz-4

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

সিলেটের পবিত্র মাটি আবারও কলংকিত হলো রায়হানের রক্তে!

পুলিশ ফাড়িতে যুবক হত্যা: সিলেটজোড়ে চলছে রহস্য! এলাকাবাসীর প্রতিবাদ!! সিলেট নগরীতে রায়হান নামক এক যুবকের ...