শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ১:৩০
Home / খোলা জানালা / শৈলীর আড্ডা (ভিডিও সহ)

শৈলীর আড্ডা (ভিডিও সহ)

সৈয়দ মবনু,

Komashisha _ Mobnuচিন্তার পাঠশালা বিভিন্ন বিষয়ে নতুন করে ভাবনার দুয়ার খুলে দিচ্ছে : যা স্থিতিশীল বাংলাদেশ গঠনের জন্য খুবই জরুরী

শৈলীর নিয়মিত সাপ্তাহিক আড্ডা ‘চিন্তার পাঠশালা’য় ২ অক্টোবর ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ শুক্রবারে মূল আলোচ্য বিষয় ছিলো ; ১) বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক চিন্তা এবং বাংলাদেশের বাম ও ইসলামিকদের রাজনীতি ২) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামের পূর্বে ‘শহিদ’ এবং নামের শেষে ‘রাহমাতুল্লাহ’ শব্দ যুক্ত করতে শরিয়তের কোন আপত্তি আছে কি? ৩) বঙ্গবন্ধুকে বাঙালী জাতির পিতা বলতে ইসলামি শরিয়তে কি কোন আপত্তি আছে? ৪) পবিত্র হজ্বের সময় মক্কা ও মিনায় ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনাগুলোর পর্যালোচনা। বালুচরস্থ জামিআ সিদ্দিকিয়ায় অনুষ্ঠিত আড্ডায় নিয়মিত সভ্য ছাড়াও অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় এবং মাদরাসার ভিন্ন মতাদর্শের ছাত্র-শিক্ষক। বিষয়গুলো নিয়ে সমত-দ্বিমতে বেশ তর্ক-বিতর্ক হয়। উপস্থিত অনেকের মতামত থেকে বেরিয়ে আসে যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিভিন্নভাবে প্রচার-অপপ্রচারের শিকার হয়ে অনাকাঙ্খিতভাবে আজ বেশ বিতর্কিত। জাতীয়ভাবে আমাদের মনুষ্যত্বের অভাবে আজ শুধু শেখ মুজিবুর রহমান নয়, আমাদের এই অঞ্চলের প্রায় সকল মর্যাদাশীল মানুষদেরকে আমরা যথার্থ মর্যাদা দিতে ব্যর্থ হচ্ছি। আর এসব ঘটছে মূলত সবকিছুকে অতি দলীয়করণ করার কারণে। আমরা দলীয় লেজুরভিত্তিকতার কারণে কাউকেই যথাযোগ্য মর্যাদা দিতে পারছি না। দলীয় দৃষ্টি ভঙিকে আমরা আজ শুধু দুনিয়ায় নয়, আখেরাতের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করছি। আমরা মনে করি যিনি আমাদের দল বা মতে নেই তিনি কিয়ামতের বিচারেও নাজাত পাবেন না। বেহেস্ত-দোযখ পর্যন্ত এখন দলীয়ভাবে বিতরণ হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুকে শুধু তাঁর শত্রু পক্ষই বিতর্কিত করছে না, ক্ষেত্র বিশেষ তাঁর দলের লোকেরাও অতি দলীয় করণ বা ব্যক্তিগত স্বার্থে বিতর্কের চূড়ান্তে নিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে সবার উর্ধ্বে, কিন্তু আওয়ামীলীগ তাঁকে এনে করেছে এমন একজন মানুষের প্রতিযোগি যিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর অধিনস্থ একজন সেনাপতি এবং যুদ্ধের সময় ১৩টি সেক্টরের মধ্যে একটির কামান্ডার। একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে বঙ্গন্ধুর মর্যাদা সবার উপরে থাকার পরও আজ আওয়ামীলীগের কিছু নেতার অতিকথনে বঙ্গবন্ধুকে মনে হয় তিনি যেন অসংখ্য সেক্টরের মধ্যে একটির দায়িত্বশীল ছিলেন। আওয়ামীলীগকে প্রথমে এগিয়ে আসতে হবে ভিন্নমতের মুক্তিযোদ্ধাদেরকে নিজ নিজ স্থানে মর্যাদা দিতে। অতঃপর বাকীরা এমনি এগিয়ে আসবে। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক চিন্তা কি ছিলো তা থেকেও বড় কথা তাঁর নেতৃত্বে এদেশ স্বাধীন হয়েছে। বঙ্গবন্ধু যেমন ইসলামী আন্দোলনের কর্মী ছিলেন না, তেমনি তিনি বাম বা কমিউনিস্ট আদর্শেরও বিশ্বাসী ছিলেন না। তাঁর পরিবারিক ধর্মচর্চাকে পর্যলোচনা করলে স্পষ্ট যে তারা বাঙালী সাধারণ মুসলমানদের মতো ধর্মকে মানতেন এবং পালন করতেন। বাংলাদেশের কায়মীস্বার্থবাদি একশ্রেণীর বাম এবং ইসলামপন্থীরা তাঁর সম্পর্কে শুধু শুধু বিভ্রান্তির প্রচার করে যাচ্ছে। তবে তাও সত্য, একশ্রেণী নব্য আওয়ামীলীগার প্রতিপক্ষকে এই সুযোগ করে দিচ্ছে। আমাদের স্মরণ রাখতে হবে, আমরা যে স্বাধীনতা আজ উপভোগ করছি তার বেশিরভাগ অংশই শেখ মুজিবের কৃতিত্ব। তাঁর ত্যাগই তাকে নেতৃত্বের আসনে বসিয়েছে। আজ বিশ্বব্যাপী বাঙলা ভাষা ও বাঙালী জাতির যে পরিচিতি এসেছে তা লাভ হতো না যদি বাংলাদেশ নামে একটি দেশ স্বাধীন না হতো। এই স্থান থেকে আড্ডায় উপস্থিত অনেকে মনে করেন, তাঁকে বাঙালী জাতির পিতা মেনে নেওয়া যায়। এখানে ইসলামের সাথে কোন সংঘাত নেই। অনেকে যখন জাতির পিতা প্রসঙ্গে হযরত ইবরাহিত (আ.)-এর কথা বলেন তখন অন্যরা বলেন, রাষ্ট্র প্রধান আর স্কুল প্রধানে যে ব্যবধান, সেই ব্যবধান রয়েছে মুসলিম জাতির পিতা আর বাঙালী জাতির পিতায় মধ্যে। এবিষয়ে বিতর্কের কোন সুযোগ নেই। অনেকে বলেন, নেতা তো হযরত রাসুল (স.), তারপরও সময়ে সময়ে নেতা হন, এই নেতা দিয়ে রাসুলকে বুঝায় না। আমরা প্রায় দোয়ায় দেখি দোয়া করি আল্লাহকে উদ্দেশ্য করে ‘মাওলানা’ শব্দ ব্যবহার করেন, যার অর্থ হে আমার প্রভু। এখন যে আলেমদের নামের সাথে ‘মাওলানা’ লাগানো হচ্ছে তা কি শিরিক হচ্ছে না? আলেমরা বলেন এখানে শিরক হয় না, কারণ এই মাওলানা দিয়ে সেই মাওলানা বুঝায় না। এখানে মাওলানা অর্থ পথপ্রদর্শক। তেমনি বাঙালী জাতির পিতা আর মুসলিম জাতির পিতায় ব্যবধান রয়েছে। বাঙালী জাতির জন্ম হাজার বছরের বলে যারা বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা বলতে নারাজ তাদের বক্তব্যের বিরুদ্ধে বিতর্ককারীদের কথা হলো ইসলাম তো আদম থেকেই শুরু হয়েছে, তবে কীভাবে ইবরাহিম হলেন মুসলিম মিল্লাতের পিতা? এখানে দুটাই প্রতীকি এবং দুটাই নেতা অর্থে। অবশ্য তা নিয়ে অনেকের কোন আগ্রহ নেই। তাদের বক্তব্য হলো বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা হলেই কি, আর না হলেই কি? অনেকের কাছে জাতির পিতা প্রসঙ্গটিই ফালতু বলে মনে হয়। জীবিত কিংবা মৃত যেকোন মুসলমানের নামের সাথে রাহমাতুল্লাহ বলার ব্যাপারে কারো কোন আপত্তি নেই যখন সবাই জানলেন এর অর্থ-আল্লাহ তোমার উপর রহমত বর্ষিত করুন। তবে যে কাউকে ‘শহিদ’ বলার ব্যাপারে অনেকেরই আপত্তি আছে। তাদের মতে যারা ধর্মের পথে প্রাণ দিবেন তারাই শুধু ‘শহিদ’। এখানে সরাসরি ‘শহিদ’ এবং ‘শহিদের মর্যদা লাভ’-এর মর্যাদা যে সমান নয়, তা নিয়েও কথা হয়। বঙ্গবন্ধুকে যারা শহিদ বলার পক্ষে তাদের প্রশ্ন হলো-দ্বীন এবং ধর্মের মধ্যে ব্যবধান কি? ইসলাম কি শুধু ধর্ম, তা দ্বীন? এসব নিয়েও তর্ক চলে। যারা ইসলামকে দ্বীন বলছেন তাদের কথা হলো, বঙ্গবন্ধু হত্যার পিছনে যে ষড়যন্ত্র ছিলো সেগুলো পর্যারোচনা করলে তাঁকে শহিদ বলা যাবে। শুধু বঙ্গবন্ধু নয়, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকেও শহিদ বলার পক্ষে অনেকে মতামত প্রকাশ করেন। আর যারা ইসলামকে রাজনীতিমুক্ত ধর্ম মনে করেন তাদের মতে ধর্মীয় যুদ্ধ ছাড়া অন্য কোথাও মারা গেলে কাউকে শহিদ বলা যাবে না। পবিত্র হজ্বের সময় মক্কা ও মিনায় ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনাগুলোর পর্যালোচনাকালে বিভিন্ন প্রচার প্রচারিত রিপোটগুলোকে সামনে রেখে পর্যালোচনা চলে। এ বিষয়টি নিয়ে সবার মধ্যে কৌতুহল রয়েছে। সবার প্রশ্ন ঘটনাটা কি ঘটলো। মক্কার ঘটনাকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলা হলেও বিষয়টি যে সৌদি কর্তৃপক্ষের অসতর্কতা, তা সবাই একমত। লাখ লাখ মানুষ যখন যেখানে সমবেত হবে সেখানে আরও সতর্ক হওয়া উচিৎ ছিলো। অবশ্য মিনার ঘটনার পর অনেকেই মনে করছেন তা শিয়াদের ষড়যন্ত্রও হতে পারে। কারো কারো দৃঢ় মত হলো বর্তমান সৌদি যুবরাজকে বিতর্কিত করার জন্য তা শিয়ারা ঘটিয়েছে। তারা মনে করেন, সেখানে এই ঘটনা ঘটানোর জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিয়ারা গিয়েছিলো এবং ইরানের দাবী বেশিরভাগ শিয়ার মৃত্যু ঘটেছে তাও একটা চালাকি। ইরানী মিডিয়ায় প্রচারিত যুব রাজের গাড়ি বহর পর্যবেক্ষণ করে অনেকে বলেন তা সাজানো সংবাদ। এই ভিডিও প্রমাণ করে না এইদিন যুব রাজ এদিকে গিয়েছেন। তবে বেশির ভাগের মত তা তদন্তের প্রয়োজন। অনেকে মনে করেন, ওআইসি’কে বাদ দিয়ে ইরান কর্তৃক জাতিসংঘকে তদন্তের দায়িত্ব দানের দাবীও ষড়যন্ত্রের অন্যতম একটি লক্ষণ। বিকাল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত আড্ডা চলে। আড্ডায় নতুন আগতরা তাদের মতামতে বলেন, চিন্তার পাঠশালা আমাদেরকে বিভিন্ন বিষয়ে নতুন করে ভাবনার দুয়ার খুলে দিচ্ছে। আমরা যদি গোটা বাংলাদেশে এমন পাঠশালা চালু করতে পারি তবে এখানের সমাজে, ধর্মে, রাজনীতিতে প্রতিপক্ষের সাথেও একটি সহ-অবস্থান তৈরি হবে। যা স্থিতিশীল এবং দয়াময় বাংলাদেশ গঠনের জন্য খুবই জরুরী।

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

তথ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চাইলেন চলচ্চিত্রকর্মীরা!

কমাশিসা ডেস্ক:: তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর পদত্যাগ দাবি করেছে চলচ্চিত্রকর্মীদের সমন্বিত সংগঠন ‘চলচ্চিত্র স্বার্থ সংরক্ষণ ...