মঙ্গলবার, ২৮শে জানুয়ারি, ২০২৫ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ সকাল ৮:৩৮
Home / অনুসন্ধান / চরমোনাই মাহফিলে মুফতী মিযানুর রহমান সাঈদ সাহেব আসলে কী বলেছেন?

চরমোনাই মাহফিলে মুফতী মিযানুর রহমান সাঈদ সাহেব আসলে কী বলেছেন?

মুফতী আবুল হাসান শামসাবাদী::

মুফতী মিযানুর রহমান সাঈদ সাহেব সম্প্রতি চরমোনাই মাহফিলে যে বাতিল সম্পর্কে সতর্ককারী বয়ান পেশ করেছিলেন, তার সেই বয়ানকে বিকৃতভাবে বুঝে কিছু লোকের ফেসবুকে বিষোদগারের ব্যাপারে গতকাল একটি পোস্ট দিয়েছিলাম। সেই পোস্টের প্রেক্ষিতে কয়েকজন কমেন্টকারী তাদের মূল আপত্তির বিষয় প্রকাশ করে বললেন–

“মুফতী মিযানুর রহমান সাঈদ সাহেব জাকির নায়েককে ‘শয়তান’ বলেছেন এবং আহলে হাদীসগণকে ‘বেঈমান’ বলেছেন। বেঈমান মানে তো কাফের। অথচ আহলে হাদীসগণ ভ্রান্ত হলেও কাফের তো নন। আর মাসআলা হলো–কেউ যদি কাউকে কাফের বলেন, তিনি যদি কাফের না হন, তাহলে যিনি কাফের বলেছেন, তিনি নিজেই কাফের হয়ে যাবেন। সেই হিসেবে তো মুফতী মিযানুর রহমান সাঈদ সাহেব নিজেই কাফের গণ্য হচ্ছেন। তাই তার জন্য সেই বয়ান প্রত্যাহার করে তাওবা করা এবং নতুন করে ঈমান আনা জরুরী হয়ে পড়েছে।”

তাদের এ বক্তব্য সম্পূর্ণ অমূলক অপবাদ ও বে-ইনসাফী প্রসূত। এখানে মুফতী মিযানুর রহমান সাঈদ সাহেবের সেই বক্তব্য হুবহু তুলে দিচ্ছি, দেখুন তিনি প্রকৃতপক্ষে সেখানে কী বলেছেন :

মুফতী মিযানুর রহমান সাঈদ সাহেব তার সেই বয়ানে বড় বড় অপরাধীদের অপরাধ-কার্যকলাপ তুলে ধরেন। অতঃপর পরকালে মহান আল্লাহর একচ্ছত্র আধিপত্যের আদালতে সেই অপরাধীদের বিচারের কথা উল্লেখ করে বলেন–

“কোন নাস্তিককে আল্লাহ পাক ছাড় দিবেন না। কোন খৃস্টান বে-ঈমানদেরকে আল্লাহ ছাড় দিবেন না। কোন বৌদ্ধ অং সান সূচিকে আল্লাহ ছাড় দিবেন না। ট্রাম্প প্রশাসনকে আল্লাহ ছাড় দিবেন না। ডব্লিউ বুশকে ছাড় দিবেন না। দেওয়ানবাগী বেঈমানদেরকেও ছাড় দিবেন না। কবরপূজারীরা ছাড় পাবে না। বেদ‘আতীরা ছাড় পাবে না। খোদার কসম, জাকির নায়েকের মতো শয়তানও ছাড় পাবে না। তথাকথিত আহলে হাদীস বেঈমানরাও ছাড় পাবে না। সব বাতিলকে সেই দিন বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে বিচার করে জাহান্নামের মধ্যে নিক্ষেপ করবেন আল্লাহ।”

মুফতী মিযানুর রহমান সাঈদ সাহেবের সেই বক্তব্য শুনুন নিম্নোক্ত লিঙ্কে–
https://www.facebook.com/100006512326188/…/2269616223265433/

মুফতী মিযানুর রহমান সাঈদ সাহেব তার এ বয়ানে ইসলামী নীতিমালা রক্ষা করেই বাতিলপন্থীদের পরকালীন পরিণতির বিষয় স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। এখানে তিনি নাস্তিক, আগ্রাসী-জালিম খৃস্টান-বৌদ্ধ, শিরককারী, বিদ‘আতী সকলের পরকালীন পরিণতির কথা বর্ণনা করে সাবধান করেছেন। এভাবে এটা মূলত তার বাতিল সম্পর্কে সতর্ক করে তাদেরকে হিদায়াতের পথে আহবানকারী বয়ান।

তিনি এ বয়ানে “জাকির নায়েকের মতো শয়তান” বলে জাকির নায়েকের ঈমানধ্বংসী কার্যকলাপের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। বিশেষত ডাক্তার জাকির নায়েকের কুফরী মতবাদ হলো– “জান্নাতে যাওয়ার জন্য রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উপর ঈমান আনা অপরিহার্য নয়। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উপর ঈমান না আনলেও জান্নাতে যাওয়া যাবে (.০০১ পার্সেন্ট সম্ভাবনা রয়েছে)।” (নাউযুবিল্লাহ)

বলা বাহুল্য, এমন কথা কেউ বিশ্বাস করলে বা বললে তার ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে। অথচ ডাক্তার জাকির নায়েক এমন কথা বলে মানুষের ঈমানকে নষ্ট করে তাদের মনে কুফর ঢুকিয়ে দিচ্ছেন।
এ সম্পর্কে বিস্তারিত দলীল-প্রমাণসহ তথ্য দেখুন নিম্নোক্ত লিঙ্কে–
https://muftishamsabadi.wordpress.com/…/%e0%a6%a1%e0%a6%be…/

এ ধরনের যারা ‘খাননাস’ হয়ে মানুষের অন্তরের মধ্যে গোমরাহীর ওয়াসওয়াসা দেয়, তাদের থেকে আল্লাহর নিকট ইবলিস শয়তান থেকে পানাহ চাওয়ার মতো করে পানাহ চাওয়ার শিক্ষা দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা সূরাহ নাস-এর মধ্যে ইরশাদ করেছেন–“বলুন, আমি পানাহ চাইতেছি মানুষের পালনকর্তা, মানুষের অধিপতি ও মানুষের মা’বুদের নিকট কুমন্ত্রণা দানকারী খাননাসের অনিষ্ট থেকে– যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে। সেই খাননাস জ্বিনের মধ্য থেকে এবং মানুষের মধ্য থেকে হয়।” (আল-কুরআন, সূরাহ নাস, আয়াত : ১–৬)

অপরদিকে মুফতী মিযানুর রহমান সাঈদ সাহেব তার সেই বয়ানে সকল আহলে হাদীসগণকে মেনশন করেননি। বরং তিনি আহলে হাদীসদের মধ্যে যারা তথাকথিত বে-ঈমান (সীমা লংঘন করে ঈমান হারিয়েছেন), তাদের কথা উল্লেখ করে বলেছেন যে, তারা পরকালে আল্লাহর আদালতে ছাড় পাবেন না। এ ব্যাপারে মুফতী সাহেবের শব্দ চয়ন কত দায়িত্বপূর্ণ তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

সুতরাং যারা মুফতী সাহেবের বয়ানকে বিকৃতভাবে বুঝে তার উপর ‘কাফের’ তকমা লাগাতে চাচ্ছেন, এটা সেই তকমা তাদের নিজেদের উপর লাগানোর প্রয়াস নয় কি? (নাউযুবিল্লাহ) আশ্চর্য লাগে, এমন দেশবরেণ্য স্বনামধন্য একজন মুহাক্কিক মুফতী সাহেব সম্পর্কে কিছু বলতে তারা একটুও চিন্তা-ভাবনা করেন না।

আল্লাহ তা‘আলা সকলকে সহীহ বুঝ দান করুন। সকলকে দ্বীনের সহীহ পথে রাখুন। আমীন।

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি কল্যাণ ট্রাস্ট- বাস্তবতা ও প্রয়োজনীয়তা

খতিব তাজুল ইসলাম: ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...