আমিন মুনশি::
গণতন্ত্রের দৃষ্টিকোণ থেকে- ভোটারাধিকার প্রয়োগ করা এবং ভোটের মূল্যমানের দিক থেকে ড. জাফর ইকবাল নিতান্তই একজন রিকশাচালকের সমান। তার গুরুত্ব এবং মর্যাদা চর এলাকার নিরক্ষর মানুষের পর্যায়ে। তার মূল্যায়ন তো গাঁজাখোর, সুইপার, পকেটমার এবং আর দশজন সাধারণ জনগণের মতই হওয়ার কথা! কিন্তু আমরা তাকে নিয়ে কেমন হইচই করলাম?
তার উপর হামলা হলে আমাদের মিডিয়াপাড়া কিভাবে লাফিয়ে উঠে?? তার নিরাপত্তা এবং চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশ নামক ছোট্ট রাষ্ট্রটি কতটা তৎপর হয়ে উঠে???
(উত্তরগুলি আপনার চোখের সামনেই বিদ্যমান!)
২.
উপরের কথাগুলো অনেকটা নেতিবাচক হয়ে গেল? অনেকে ভাবছেন আমি সংকীর্ণবাদী, সাম্প্রদায়িক। কট্টরপন্থী বা জঙ্গিদের পক্ষ নিয়ে কথা বলছি; আসলে ব্যাপারটি তা নয়। আমি আমার ভাবনার বিষয়গুলো নিয়ে জাস্ট আপনাদের সাথে মত বিনিময় করতে চাচ্ছি। এখানে সাম্প্রদায়িক বলে যে শব্দটি লিখলাম সেটিও লেখা বোধয় ঠিক হয়নি। ভেবে দেখুন তো, এই পৃথিবীতে সাম্প্রদায়িক নয় কে? সবারই কোন না কোন সম্প্রদায় আছে। দল আছে। মতবাদ আছে। গ্রুপিং আছে। সুতরাং অসাম্প্রদায়িক হওয়ার কোন চান্স জগতে নেই। তবে হ্যাঁ, কেউ কেউ উদার হয়ে উঠতে পারেন। অন্যের ধর্ম, অন্যের কর্মকে সম্মান জানিয়ে সহনশীল দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে চলফেরা করতে পারেন। মূলত এই কিসিমের মানুষদের আমরা বলতে পারি মুক্তমনা। উদারপন্থী। আলোকিত মানুষ।
(অভিধান মতে, জঙ্গি অর্থ যোদ্ধা। জঙ্গি হতে পারাটা গৌরবের বিষয়। সুতরাং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সবাই জঙ্গি; অথচ বাংলাদেশের মৌলবাদী গণমাধ্যমগুলো ভুলবশতঃ সন্ত্রাসীদেরকে সম্মান জানিয়ে জঙ্গি বলে আসছে!)
৩.
আচ্ছা, বিজ্ঞান আমাদেরকে ঠিক কী শেখায়? ঘৃণার চর্চা?? নিরীশ্বরবাদ???
পৃথিবী প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। বিবর্তনের এই পরিক্রমায় কারো থিউরীই কিন্তু স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। বিজ্ঞানীরা চাঁদে গেলেন। মহাকাশ জয় করলেন। নিত্যনতুন গবেষণা চালিয়ে টেকনোলোজি আবিষ্কার করেই যাচ্ছেন- তারা কি কখনো একযোগে ঘোষণা করেছেন যে, স্রষ্টা বলে আসলেই কিছু নেই। তামাম সৃষ্টিজগত নিজে নিজেই তৈরি হয়েছে এবং নিজে নিজেই আসমান-জমিনের সবকিছু নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে চলছে? তারা তো বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি নির্মাণ করছেন, তাহলে তাদের সামনে এসে কেউ যদি বলে- এই প্রযুক্তিগুলো এমনি এমনি কারো সাহায্য ছাড়াই নিজে নিজে তৈরি হয়েছে- তখন ঐ বিজ্ঞানীদের প্রতিক্রিয়া কী হবে?
দুনিয়াবাসী ঐ লোকটিকে কীভাবে দেখবে?? পাগল বা কূপমণ্ডূক উপাধি দিবে তো আধুনিক শিক্ষিতসমাজ???
(সেক্যুলাররা এক্ষেত্রে এসে পাগলদের সাপোর্ট করতে চাইবে!)
৪.
আমাদের দেশে খুন-গুম, হামলা-ধর্ষণ নতুন কোন বিষয় নয়। এগুলো দৈনিক বিভিন্ন জায়গায় নিয়মিত হচ্ছে। স্বাভাবিক পদ্ধতিতে এগুলোর প্রতিবাদও হচ্ছে প্রতিদিন সড়কে-মহাসড়কে, প্রেসক্লাবে বা প্রেস কনফারেন্সে। যেখানে পত্রিকার পাতায় নিত্যনৈমিত্তিক এতোসব দুর্ঘটনার সংবাদ আমাদের গা সওয়া হয়ে গেছে সেখানে ড. জাফর ইকবালদের উপর হামলার ঘটনা কেন আমাদের মাঝে এতো আলোচনার জন্ম দেয়? কেন এই সম্প্রদায়ভুক্ত লোকজন আক্রান্ত হলে মিডিয়া এতো শোরগোল সৃষ্টি করে?? এরা কি এদেশের বিশেষ কোন অভিভাবক নাকি বিদেশী প্রভুদের বিশেষ ডিস্ট্রিবিউট???
(বৈষম্য রয়েই গেলো! স্বাধীন দেশ পেলেও স্বাধিকার পায়নি আম জনতা। নাগরিক সুযোগ-সুবিধা সবার ক্ষেত্রে আজও সমান হলোনা!)
৫.
মতের অমিল থাকাটা দোষের কিছু নয়। ক্ষেত্র বিশেষে এটা মানুষের কৃতিত্বেরও পরিচয়। তবে কথা হলো, যার সাথে আমার মতের মিল হবেনা তার সাথে আমার আচরণ কী হবে? আমি কি পারবো কোন নাস্তিকের ধর্মবোধ নিয়ে কটূক্তি করতে?? ঘৃণা বা উপহাস ছড়াতে পারবো কি কোন ভিন্ন চিন্তার শ্রেণী-গোষ্ঠিকে নিয়ে???
(সেক্যুলারিজমও এক ধরণের মতবাদ বা ধর্ম। ঘৃণার চর্চা করাই হয়তো পূণ্যের কাজ এই ধর্মে!)
৬.
ড. জাফর ইকবালরা নিজেদেরকে বিজ্ঞানমনষ্ক, অত্যাধুনিক মানুষ দাবি করেন। ওনারা সবসময় কল্পজগতে বসবাস করেন। লেখক হিসেবে তাদের আরো অনেক কাজ কারবার থাকে আড়ালে- আবডালে। আমরা সাধারণ নাগরিক কি আর অতোসব জানার সুযোগ পাই!
আমাদের কেউ কেউ হয়তো ওনাদেরকে পশ্চাৎপদ, পামর, জ্ঞানপাপী বলে আখ্যা দেন। তবে ওনারা সমাজে ঘৃণার চর্চা করে যাবেন; আমরা হাততালি দিবো! ওনারা অন্যান্য নাগরিকের অনুভূতিকে অসম্মান করবেন; আমরা সংবর্ধনার আয়োজন করবো!! ওনারা সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের আশা-আকাঙ্খার বিরুদ্ধাচরণ করবেন; আমরা ওনাদের হাইলাইড করবো!!!
আমাদের এতো এতো ঠেকা কেন ওনাদের কাছে? বিদ্বেষ ছড়ানো, উস্কানিমূলক লেখা বা বক্তব্য না দিলে কি ইহজনম বৃথা হয়ে যায়??কোন জাতিগোষ্ঠীর চিন্তা- চেতনাকে হেয় বা আঘাত করে বিনিময়ে তাদের দ্বারা আক্রমণের শিকার হওয়াটা কি অস্বাভাবিক কোন বিষয়???
(যদিও এসব কাম্য নয়!)
[ব্যক্তিগত প্রশ্ন বা ভাবনাগুলো আপনার ভাবনাগুলির কতটা কাছাকাছি সেটাই মিলিয়ে দেখুন! এই লেখা কাউকে ছোট করা বা আঘাত করার উদ্দেশ্যে মোটেই নয়]
০৫.০৩.২০১৮