সম্পাদনায়: মাকসোদ আহমাদ
আকাবির আসলাফ – ৪৬
তুমি ছিলে নির্ভীক নিঃস্বার্থ মানবীয় এক খাদিম
ইসলাম ও মানবতার ফিকিরে ব্যস্ত থাকিতে রাতদিন
কুসংস্কারের প্রতি ছিলে তুমি আপোষহীন
রাহমাতুল্লাহি আলাইহি হে শহীদ মুয়ীনুদ্দীন।
? শহীদ মাওলানা শায়খ মুয়ীনুদ্দীন আহমাদ (রাহঃ) এর সংকিপ্ত জীবনী।
✍ মাওলানা সিরাজুল হক সাহেবের লেখা অবলম্বনে, সম্পাদনায়ঃ মাকসোদ আহমাদ
? হযরত মাওলানা শায়খ মুয়ীনুদ্দীন আহমাদ (রাহঃ) সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর থানাধীন কুবাজপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম জনাব হাজী রোয়াইতুদ্দীন আহমাদ ওরফে হাজী রোয়াইতুল্লাহ। মাতা পিতার তত্ত্বাবধানে তাঁর প্রাথমিক শিক্ষার হাতে খড়ি। এরপর বাড়ীতে উস্তাদের কাছে লেখাপড়া করার পর গ্রামের পাঠশালা, এম,ই, স্কুল পাশ করে পাইলগাঁও হাই স্কুলে ভর্তি হয়ে দশম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। তাঁর ইলমে দ্বীন হাসিলের ব্যাপারে একটি চমৎকার ইতিহাস রয়েছে। অলৌকিকভাবে আদিষ্ট হয়ে তিনি ইলমে ওহী হাসিল করতে বেরিয়ে পড়েন এবং একজন সাধক ও সংস্কারক হিসেবে জন্মভূমিতে প্রত্যাবর্তন করেন ঘটনাটি এরকমঃ-
লেখাপড়ার ইতি টেনে তিনি জীবিকার সন্ধানে সুদূর কলিকাতা যান। সিলেটের বরইকান্দির জনাব মাস্টার হরমুজ আলী সাহেব বাড়ীওয়ালা ছিলেন। ব্যবসায়ী ও ভ্রমণকারীদের সেখানে (জাহাজী) থাকার জন্য তাঁর হোটেলের ব্যবস্থা ছিল। জনাব মুয়ীনুদ্দীন আহমাদ সে প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজার পদে চাকুরী নেন এবং প্রায় তিন বছর চাকুরী করেন। কাজ শেষে তিনি মসজিদে গিয়ে এশার নামাজ আদায় করতেন। এক রাতে নামাজ শেষে ফেরার সময় মসজিদের সামনেই একজন শশ্রুধারী সাদা পোশাক পরিহিত লোক তাকে বললেন “তুমি লেখাপড়া বাদ দিয়ে এগুলো কি করছ, যাও ইলমে দ্বীন হাসিল করো।”
এই মুহূর্তেই তিনি কলকাতা থেকে অজানার উদ্দেশ্যে ছুটে যান। তিনি মোহাবিষ্ট হয়ে পড়ায় একটি মুহূর্তও দেরী করতে পারেননি এবং কাউকে বলেও যাননি। যে কারণে বোর্ডিং এর মালিক চিন্তিত হয়ে পড়েন এবং তাঁর নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ বাড়ীতে পাঠান।
তাঁর মা-বাবা, বড় ছেলের নিখোঁজ সংবাদ শুনে ভেঙ্গে পড়েন, অবশেষে দুজনেই ছুটে যান কলিকাতায়। সেখানে মাস্টার হরমুজ আলী সাহেবের সাথে বাদানুবাদ করে কোন সমাধা না হওয়ায় তার উপর মামলা করার চিন্তা ভাবনা করেন। এ ঘটনা মাস্টার সাহেবের ইতিপূর্বে নিজ মেয়েকে জনাব মুয়ীনুদ্দীন আহমাদ এর সাথে বিবাহ দানের ইচ্ছা পোষণ করে সফল না হওয়ার জের কিনা তারা এই সন্দেহ করছিলেন। এ সময় সিলেট জিলার বালাগঞ্জ থানার খাশিকাপনের, জনাব মুয়ীনুদ্দীন আহমাদ এর পূর্বপুরুষের জনৈক একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি জনাব মুয়ীনুদ্দীন আহমাদ এর মা-বাবাকে নিবৃত্ত করেন এবং সবর করার পরামর্শ দেন। অপরদিকে জনাব মুয়ীনুদ্দীন আহমাদ যেতে যেতে মুরাদাবাদের এক মাদরাসায় ভর্তি হয়ে ইলম অর্জনে মনোনিবেশ করেন।
এভাবে দীর্ঘদিন যেতে থাকে। তাঁর মাতা-পিতা ভাই-বোন সকলেই নিরাশ হয়ে পড়েন এবং তিনি দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন ভেবে শোকাবিভূত হয়ে পড়েন।
প্রায় দশ বছর পর বাড়ীর ঠিকানায় জনাব মুয়ীনুদ্দীন আহমাদের কাছ থেকে একখানা উর্দ্দু চিঠি আসে। চিঠি নিয়ে তাঁর ছোট ভাই জনাব হাজী ধন মিয়া সৈয়দপুরের মাওলানা জমিলুল হক (রাহঃ) সাহেবের কাছে যান। তিনি চিঠি পড়ে বলে দিলেন জনাব মুয়ীনুদ্দীন আহমাদ মুরাদাবাদে লেখাপড়া করছেন। চিঠির উপরে মুরাদাবাদের ঠিকানা লিখা না থাকলেও পোস্ট অফিসের শীলের লেখা পড়ে তিনি মুরাদাবাদ মাদরাসার কথা ধারণা করেন এবং জনাব মাওলানা জমিলুল হক (রাহঃ) নিজে চিঠির মাধ্যমে সন্ধান বের করার দায়িত্ব নেন। এভাবে মাদরাসা কর্তৃপক্ষের নিকট চিঠি লিখে সত্যিই তাঁর সন্ধান পান।
মা-বাবা এবং আত্মীয় স্বজনের কাছে তাঁর যেন পূনর্জনম হয়। জনাব মুয়ীনুদ্দীন আহমাদের খোঁজ পেয়ে, সকলেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েন। মাওলানা জমিলুল হকের পরবর্তী চিঠিতে জনাব মুয়ীনুদ্দীন আহমাদ এর মা-বাবার মর্মান্তিক অবস্থা জানালে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ তাঁহাকে বাড়ীতে পাঠিয়ে দেন।
জনাব মুয়ীনুদ্দীন আহমাদ তখন বাংলা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলেন। কিছুদিন পর লেখাপড়া সমাপ্তির জন্য আবার সেখানে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলে তাঁর মা বাবা অতীত আতংকের কারণে তাঁহাকে যেতে দিতে চাননি। তিনি নানাভাবে পীড়া-পীড়ি শুরু করলে অবশেষে তাঁহারা যাওয়ার অনুমতি দেন। জনাব মুয়ীনুদ্দীন আহমাদ মুরাদাবাদ থেকে টাইটেল পাশ করে দ্বীনের উচ্চতর তালীম নিয়ে এলাকায় ফিরেন।
তিনি নিজ গ্রামের জামে মসজিদে ইমাম ও মুতাওয়াল্লী নিযুক্ত হন এবং সম্পূর্ণ অবৈতনিকভাবে প্রায় ৩০ বৎসরের ও বেশী সময় নিষ্ঠার সাথে এ দায়িত্ব আঞ্জাম দেন। উল্লেখ্য যে, তিনি প্রতি শুক্রবারে মসজিদের আয় ব্যয়ের হিসাব মুসল্লিদের কাছে পেশ করতেন। মসজিদের সকল দায়িত্ব তাঁর হাতেই ন্যস্ত ছিল। (উল্লেখ্য মারহুম মুয়ীনুদ্দীন আহমাদ এর ছোট দুই ভাই আলহাজ মোঃ ধন মিয়া ও মারহুম আলহাজ মোঃ পরাছ মিয়া ব্যবসায়ী ও প্রবাসী ছিলেন। তাঁহারা তাঁহাদের বড় ভাই মারহুম মুয়ীনুদ্দীন আহমাদকে সর্ব ক্ষেত্রে আন্তরিক সহযোগিতা করিয়াছেন।)
হযরত মাওলানা মুয়ীনুদ্দীন আহমাদ (রাহঃ) টাইটেল পাশ করে দেশে ফেরার পর নিজ এলাকায় ইসলামী শিক্ষা বিস্তারের তীব্র প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। এলাকা থেকে অজ্ঞতা ও কুসংস্কার দূর করতে ইসলামী শিক্ষার বিকল্প নেই ভেবে প্রতিকূল পরিবেশে তিনি নিজ গ্রামে ১৯৫০ সালে মাদরাসা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ তথা দ্বীন দরদী মুরব্বিয়ান এবং যুব সম্প্রদায়ের সমর্থন ও সার্বিক সহযোগিতায় তিনি দ্বীনের এ বাগানটি তৈরীতে সক্ষম হন। দ্বীনের আলো ছড়াতে একটি দ্বীনি মাদরাসার গুরুত্ব যে কত বেশী তা সাধারণ জ্ঞান সম্পন্ন মানুষ মাত্রই বুঝেন।
শহীদ হযরত মাওলানা মুয়ীনুদ্দীন আহমাদ (রাহঃ) আজ আর আমাদের মাঝে নেই। তাঁকে আর এই জগতে দেখব না আমরা। সকলকে শোক সাগরে ভাসিয়ে তিনি চলে গেছেন। আমরা সকলে ময়দানে মাহশরে যেন তাঁকে আবার ফিরে পাই এবং সবাই হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর ঝান্ডার নিচে একত্রিত হয়ে বেহেস্তে পৌঁছতে পারি এই দোয়া রাব্বুল আলামীনের দরবারে।
হযরত মাওলানা শায়খ মুয়ীনুদ্দীন আহমাদ (রাঃ) এর শাহাদাতে মর্মাহত, আধ্যাত্মিক জ্ঞান পিপাসু মহলে দেখা দিয়েছে চরম হতাশা। বিশেষ করে ইসলামী সমাজে তাঁর শাহাদাতে যে অপুরণীয় ক্ষতি হয়েছে, সে ক্ষতি পূরণ করার মত ব্যক্তিত্ব আমরা খুঁজে পাই না। হাদীস, তাফসীর, ইলমে ফেক্বাহ ইত্যাদিতে ছিল তাঁর অগাধ পাণ্ডিত্য। আধ্যাত্মিক আকাশের তিনি ছিলেন এক উজ্জ্বল জ্যোতি, যার কাছ থেকে হাজার হাজার আধ্যাত্মিক জ্ঞান পিপাসু পিপাসা নিবারণ করেছে। শান্তি লাভ করেছে।
নিজের আরাম ত্যাগ করে ঘুম নিদ্রা এমন কি আহার বিহার জলাঞ্জলী দিয়েও মানুষের চিন্তায় দিবারাত্রি ভ্রমণ করেছেন বাংলাদেশ ও প্রতিবেশী রাষ্ট্রের আনাচে-কানাচে, হেদায়েতের মশাল নিয়ে ইসলামের নিঃস্বার্থ খাদিম হয়ে। কোথাও যানবাহনের অভাবে পায়ে হেটে, উপবাস করে অতিক্রম করেছেন সুদুর পথ, আমরা তাঁর কাছে চির ঋণী। সেই ঋণ পরিশোধ হবে কি?
রাসূলে মাকবুল (সাঃ) এর নীতির অনুসরণে দেখিয়ে দিয়েছেন মানুষে মানুষে প্রীতি। যে তোমাকে গালি দেয় তাকে মিষ্টি খাইয়ে দাও আর যে তোমাকে আঘাত করে তার হাত টিপে দাও। এই বাণীর আলোকে তাঁর কাছে দোস্ত দুষমনের ছিল না কোন ভেদাভেদ। মহা পরাক্রমশালী আল্লাহপাকের ভয়ে ছিল যার হৃদয় সদা কম্পমান। যার কারণে মানুষের ভবিষ্যত চিন্তায় আত্মভুলা হয়ে কখনও রয়েছেন ঘন্টার পর ঘন্টা সিজদায়, অন্তরের গহীন থেকে বের হয়েছে নিপীড়িতের করুণ আর্তনাদ। আল্লাহর দ্বীন ইসলামকে তথা সাহাবায়ে কেরামের আদর্শকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে এবং মুসলমান জন সাধারণের প্রতি তাঁর অগাধ মহব্বত ও তাঁর দ্বীনি মেহনতের উজ্জ্বল নিদর্র্শন স্বরূপ সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর থানার ৬নং রানীগঞ্জ ইউনিয়নের কুবাজপুর গ্রামে ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান “কুবাজপুর জমহুরিয়া ইসলামিয়া হাফিজিয়া মাদরাসা” প্রতিষ্ঠা করেন।
এদিকে যেমন তিনি ছিলেন একজন ইলমে এলাহির একনিষ্ঠ খাদিম, তেমনি কবিত্ব শক্তিও ছিল তাঁর মধ্যে অপরিসীম। এই মহামান্য দেশ দরদীকে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে যে প্রাণভরে ভালবাসত সে কথা আমরা তাঁর অন্তর্ধানের পরই তিলে তিলে অনুভব করেছি। আমরা এই ক্ষণজন্মা মহামানবের বিচিত্র জীবনের কি পরিচয় দিব। তা থেকে অধিক জানা আছে শহীদ মুয়ীনুদ্দীন আহমাদ (রাহঃ) এর ভক্ত মানুষের। আমরা আল্লাহপাকের দরবারে আবেদন করি হে পরপরওয়ার দিগারে আলম আমাদিগকে তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করার তওফিক দান কর। তাঁর আদর্শ মুসলিম সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত কর। অসীম করুণাময় আল্লাহপাক হযরত মাওলানা শায়খ মুয়ীনুদ্দীন আহমদ (রাহঃ) এর কবরকে নূর দিয়ে ভর্তি করে দাও, তাঁকে তোমার জাওয়ারে রহমতে স্থান দাও। তাঁর বংশ ধরগণকে চির সুখে ও দ্বীন ইসলামের খেদমতে নিয়োজিত রেখো।
মাওলানা মুয়ীনুদ্দীন আহমাদ (রাহঃ) দ্বীনের যে আলোকে প্রজ্জলিত করেছিলেন আজ তাঁর সঠিক উত্তরসূরীরা এ আলোকে ছড়িয়ে দিচ্ছেন সবখানে। একজন হক্কানী আলেমের প্রতিকৃতি হিসেবে আমরা তাঁকে দেখতে পাই। দেশ ও জাতির অধঃপতিত অবস্থা দেখে তাঁর আত্মা কেঁদে উঠেছিল। মানুষের নৈতিক চরিত্র সংশোধনে তিনি যুগপৎ আন্দোলন শুরু করেন। তা’লীম, তাবলীগ, ওয়াজ-নসীহত এবং আধ্যাত্মিক সাধনার মাধ্যমে তিনি জাতির পটপরিবর্তনে আমরণ সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। তাঁর হাতে গড়া ছাত্র-শিষ্যরা আজ তাঁর অবশিষ্ট কাজ আঞ্জাম দিচ্ছেন। তাঁর বাগানের ফুলগুলো এখন দেশে-বিদেশে সুবাস ছড়াচ্ছে। তাঁর সাথী এবং উত্তর সূরীরা তাঁর রেখে যাওয়া প্রতিষ্ঠানের হাল ধরেছেন।
হযরত মাওলানা শায়খ মুয়ীনুদ্দীন আহমাদ (রাহঃ) ১৯৮০ ইংরেজির ২৬ শে মে ভোর রাতে অজ্ঞাতনামা আততায়ীদের হাতে নির্মমভাবে শাহাদাত বরণ করেন। এ সময় তিনি তাঁর চিরাচরিত আমল অনুযায়ী তাহাজ্জুদ পড়ার জন্য মসজিদের দিকে যাচ্ছিলেন।
(ফজরের ঈমামতি করার জন্য মসজিদে যাওয়ার প্রাক্কালে পুকুরের পাকা ঘাটে যিকর-আযকার করার তাঁহার নিয়মিত আমল ছিল। বিশ্বাস করা হয় তাহাঁকে যিকিরের হালতে অথবা নামাজের হালতে শহীদ করা হইয়াছে!) –
মাওলানা মুয়ীনুদ্দীন আহমাদ (রাহঃ) এর ইন্তেকালের পর এই মাদরাসার হাল ধরেন (সৈয়দপুরের) সুন্দর পুর নিবাসী মাওলানা সৈয়দ আহবাব সাহেব (রাহঃ)। অতঃপর মুহতামিমের দায়িত্ব পালন করেন, একই থানার সামারগাঁও নিবাসী মাওলানা ইকরাম উদ্দিন (রাহঃ) এরপর এই মাদরাসার হাল ধরেন অত্র মাদ্রাসারই সাবেক ছাত্র, মাওলানা মুয়ীনুদ্দীন আহমাদ (রাহঃ) এর হাতে গড়া ব্যক্তি মাওলানা গিয়াস উদ্দিন আহমাদ (দাঃবাঃ) আর বর্তমানে মাওলানা মুয়ীনুদ্দীন আহমাদ (রাহঃ) এর সুযোগ্য দ্বিতীয় ছেলে মুফতি মাওলানা Mousuf Ahmed ও মাওলানা গিয়াস উদ্দিন আহমাদ (দাঃবাঃ) যৌথভাবে মুহতামিমের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
মাদরাসাটি আজাদ দ্বীনি এদারায়ে তা’লীম বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত। প্রতি বছর ফাইন্যাল পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে ছাত্ররা কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হচ্ছেন। দ্বীনি শিক্ষার এ কেন্দ্রটিকে একটি আদর্শ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে সুযোগ্য উস্তাদ সাহেবান প্রাণপণে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
মাওলানা মুয়ীনুদ্দীন আহমাদ (রাহঃ) হযরত মাওলানা শায়খ লুৎফুর রহমান বর্ণভী (রাহঃ) এর কাছ থেকে আধ্যাত্মিক সবক হাসিল করেন। অবশেষে ইযাজত লাভের মাধ্যমে একজন হক্কানী পীরে কামেল হিসেবে আবির্ভূত হন। অন্ধকারে ঢেকে থাকা সমাজে ইসলামী শিক্ষা সহ দ্বীনের আলোর বিচ্ছুরণ ঘটাতে তিনি প্রাণপণ চেষ্টা চালান। তাঁর আত্মনিয়োগের ফলে জগন্নাথপুরের একটা বৃহৎ অংশ সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মানুষ হেদায়তের আলো পায়। দ্বীনের প্রচার প্রসার ও জাতির সেবায় আত্মোৎসর্গকারী এমন লোকের সংখ্যা সমাজে কম। মাওলানা মুয়ীনুদ্দীন আহমাদ (রাহঃ) সমাজের যে খেদমত করে গেছেন তার ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব নয়। জাতি তাঁকে যুগ যুগ ধরে স্মরণ রাখবে।
একটি ঘটনাঃ কুতবে বাঙ্গাল আল্লামা শায়খ আমিন উদ্দীন শায়খে কাতিয়া (রাহঃ) এবং শহীদ মাওলানা শায়খ মুয়ীনুদ্দীন আহমাদ (রাহঃ) এর মধ্যে খুবই আন্তরিকতা ছিল। যেমন এক দিন গভীর রাতে শায়খে কাতিয়া শায়খ মুয়ীনুদ্দীনের বাড়ীতে গিয়ে জোরে জোরে ডাকতে থাকেন “মুয়ীনুদ্দীন, মুয়ীনুদ্দীন” শায়খ মুয়ীনুদ্দীন ডাক শুনে দরজা খুলে সামনের বারান্দায় আসেন এবং দুনুজন মিলে বারান্দায় বসে এক সাথে জোরে জোরে জিকির করতে থাকেন। শায়খ মুয়ীনুদ্দীনের আহলিয়া বলেন, “তাঁহাদের জাহিরী ও ক্বালবী যিকিরের সুমধুর সুর ধ্বনিতে আমি বিস্মিত হয়ে গিয়েছিলাম কিন্তু ভয় পাইনাই কেননা শায়খ মুয়ীনুদ্দীনের কাছ থেকে শায়খে কাতিয়ার জাযবায়ী হালাতের কথা এর আগে শুনেছি। আল্লাহ্ আমাদের মারহুমীনদেরকে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করুন! আমীন