শনিবার, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ ভোর ৫:২২
Home / পরামর্শ / ইসলামী সংগঠনগুলোর ঐক্য সময়ের অপরিহার্য দাবী

ইসলামী সংগঠনগুলোর ঐক্য সময়ের অপরিহার্য দাবী

Fujail_Komashisha

ফুজায়েল আহমাদ নাজমুল ::

বাংলাদেশ একটি মুসলিম রাষ্ট্র।শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের বসবাস।ইসলামী রাজনীতির জন্য উর্ব্বর লাল সবুজের এ দেশ।এ ভূখণ্ডে লক্ষ লক্ষ আলেম উলামা,পীর মাশায়েখ,দ্বীনদার বুদ্ধিজীবীদের বসবাস।হাজার হাজার দ্বীনি প্রতিষ্ঠান বিদ্যমান।দেশের সর্বস্তরের মানুষ,দ্বীনদার আলেম-উলামা,ও দ্বীনি প্রতিষ্ঠান মসজিদ-মাদ্রাসাকে প্রাণভরে ভালবাসে।জাতি সত্য ও সুন্দরের শেষ ভরসার স্থল হিসাবে ঐ সকল লোকদেরকে মনে করে,যারা কুরআন সুন্নাহর ভিত্তিতে জীবন পরিচালিত করে,যারা সৎ কাজের আদেশ আর অসৎ কাজের নিষেধ করে প্রতিনিয়ত মানুষদের্।এ মহৎ গুণের অধিকারীরা হচ্ছে এদেশের সমস্যা পীড়িত ও হতাশাগ্রস্ত জাতির আশার প্রতীক।দিশেহারা মানুষের পথ নির্দেশক।দুঃখজনক হলেও সত্য যে,বাংলাদেশ একটি স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র হওয়ার পরও এদেশের দ্বীনদার আলেম উলামারা ইসলামী রাজনীতির ক্ষেত্রে গ্রুপে গ্রুপে বিভক্ত ও বিচ্ছিন্ন।শত চেষ্টার পরও তারা এক প্লাটফর্মে আসতে ব্যর্থ হচ্ছেন।একশ্রেণীর আলেম উলামা ও ইসলামী সংগঠন গুলোর প্রথম সারির নেতৃবৃন্ধ প্রতিনিয়ত ইসলামী ঐক্য গঠনের আহ্বান জানিয়ে চললেও বাস্তবে রূপ নিচ্ছে না।নিশ্চয়ই তাদের প্রচেষ্টায় কোন ত্রুটি রয়েছে বলে মনে হচ্ছে।সব ইসলামী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ চান মুসলিম উম্মাহর ঐক্য,মজলুম মুস্তাদআফীন শ্রেণীর মুক্তি।দেশের প্রায় ১৬ কোটি মানুষের কল্যাণ ও সমৃদ্ধির জন্য ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে সমাজের বিপ্লবাত্মক পরিবর্তন তথা একটি সফল ইসলামী বিপ্লবের জন্য সকলেই তৎপর্।তারপরও কেন উম্মাহর অভিভাবকদের মধ্যে বিভক্তি? মুসলিম উম্মাহর এই সংকটময় মুহুর্তে ঐক্য না হওয়ার কারণ কি? এক ব্যানারে ঐক্যবদ্ধ হতে বাধা কোথায়? ঐক্য হলে ক্ষতি কি? যদি ক্ষতির আশংকা না থাকে তাহলে কেন ঐক্যবদ্ধ হন না? কেন ব্যক্তিগত স্বার্থকে পরিহার করতে পারেন না? নিজেদের ব্যক্তিগত ধ্যান ধারনাকে কেন সবচেয়ে বড় মনে করেন? কেন নিজেদেরকে একাই আহলে হক বলে মনে করেন? এই প্রশ্নগুলো আজ সহজ সরল ধর্মপ্রাণ সব মানুষের্।
ইসলামের ইতিহাসের দিকে নজর দিলে দেখা যায় যে,খেলাফতে রাশেদার পর ইসলামী রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থায় বিচ্যুতির সূচনালগ্ন থেকেই খেলাফত ব্যবস্থাকে সঠিক পথে রাখার জন্য এবং সমাজের নানাবিধ অবক্ষয় রোধ করার জন্য যুগে যুগে উম্মতের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিগণ কঠোর সংগ্রাম,অপরিসীম আত্মত্যাগ এমনকি জীবনের ঝুকি নিয়েও সকলকে ঐক্যবদ্ধ করে এক প্লাটফর্ম থেকে অবিরাম প্রচেষ্ঠা চালিয়ে গেছেন।যুগে যুগে মুজতাহিদ,মুজাদ্দিদ ও হক্বপন্হী উলামায়ে ক্বেরাম,সুফী সাধক ও ইসলামী চিন্তাবিদগণ এ পথে ঐক্যবদ্ধভাবে অব্যাহত আন্দোলনের ধারা বজায় রেখেছেন।কিন্তু আজকে যারা হ্ক্বপন্হী,যারা নিজেদের আহলে হক্ব বলে দাবী করেন,খাটি ইসলামের সৈনিক বলে নিজেকে উপস্থাপন করেন,মিটিংয়ে বক্তব্য দিতে গেলে সর্বপ্রথম নিজের দোষ ঢেকে অপর সংগঠনের বিরুদ্ধে কাদা ছুড়াছুড়ি করতে একটুও দ্বিধা করেন না,কেউ কেউ তারই সহযোগী হক্বপন্হী বন্ধু সংগঠনের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে কুৎসামূলক বিরূপ আলোচনা ও আক্রমনাত্মক বক্তব্য দিয়ে বেড়ান,দেখাযায় তিনি নিজেকে বা নিজের সংগঠনকে একমাত্র হক্ব বলে দাবী করে বাকি সকলকে বাতিলের পাল্লায় রেখে চলেছেন।নিজের বিবেচনায় নিজেকে হক্ব,অন্যান্য সব বাতিল এই ধরনের বক্তব্যদাতার ধ্যান ধারণার মধ্যে মূলত ; ইসলামী ঐক্যের যথাযথ রূপরেখা নেই।সবসময় নিজেকে নেতৃত্বের যোগ্য মনে করে অপর নেতৃত্বকে দুরে ঠেলে দিয়ে ইসলামী ঐক্য আশা করা যায় না।উদার মন নিয়ে ইসলামের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে ঐক্যের ডাক দিলে অবশ্যই ইসলামী ঐক্য সময়ের ব্যাপার মাত্র।কিন্তু তা হচ্ছে না।নেতৃত্বের লড়াইয়ে হেরে যাচ্ছে ঐক্যের সব প্রক্রিয়া।ঐক্য হলে নেতৃত্ব হাতছাড়া হয়ে যাবে।নিজের ক্ষুদ্র যোগ্যতা পরাজিত হবে বিশাল যোগ্যতাসম্পন্ন নেতৃত্বের কাছে।মুলত এ সকল কারণেই আমাদের দেশের ইসলামী দলগুলোর অনৈক্য ব্যাপক আকার ধারণ করছে।গ্রুপ থেকে গ্রুপ জন্ম নিয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে।ইসলামী সংগঠন সমুহের এ আচরণে জাতি আজ হতাশ।যাদের কাছ থেকে অনেক ভালো কিছু আশা করে এ জাতি,সে আশা আজ আর বাস্থবায়ন হচ্ছে না।সোনালী স্বপ্ন হারিয়ে যাচ্ছে এক অজানা পথে।অনৈক্যের কারণে ক্ষত – বিক্ষত মঞ্জিলে মকসুদের পথ।জানিনা কবে যে,সুস্থ হবে জাতির প্রত্যাশিত এপথ।কবে যে ঐক্যের মিশন আলোর মুখ দেখবে।কবে যে বাংলাদেশের সবুজ ভুখন্ডের বুকে পত পত করে উড়বে কালেমা খচিত লাল সবুজের শান্তির পতাকা,এই আলোচনা আজ মুখে মুখে।
সংগঠন হচ্ছে মানুষের্।সব নেতাকর্মীরা কিন্তু এক পরিবার থেকে আসেনি।এখানে ভিবিন্ন পরিবার ও ভিবিন্ন বংশের লোকের অংশগ্রহণ রয়েছে।ভিবিন্ন মত থকতে পারে।ভিবিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।মানুষের বাস যেখানে আছে সেখানে সমস্যা থাকবে সাথে সমাধানও থাকবে।হ্যা,তবে সমাধানের পথে হাটতে হবে।আমরা লক্ষ্য করেছি অনেক নেতৃবৃন্ধের সামান্য সমস্যাটুকু মুকাবেলা করার মতো ধৈর্য শক্তি নেই।নিজের মতের একটু বিপরীত হলেই আমি আর নই।আমি আমীর বা মহাসচিব হলে আমার মতামতকে চূড়ান্ত হিসাবে মেনে নিতেই হবে।যে সিদ্ধান্ত হলে আমার ব্যক্তিগত ফায়দা হাসিল হবে সেটাই নিয়ে আমি ব্যস্থ।এখানে ইসলামের ফায়দা কতটুকু হবে সেটা আমার দেখা বা চিন্তার বিষয় নয়।এরকম মনমানসিকতা থাকার কারণেই ইসলামী সংগঠন গুলোর বেহাল দশা।ঐক্যের বিরুদ্ধে বিভক্তির সুর জাতি বারবার শুনে।সংশ্লিষ্টরা নিজেকে নিয়ে নিজে হিসাব করেন না।আছেন অপরকে নিয়ে চুলচেরা বিশ্লষণে।খুঁজে খুঁজে দোষ বের করতে একেবারে মরিয়া।অপর ভাই বা সংগঠনের ভালো কাজের স্বীকৃতি দিতে জানেন না।বরঞ্চ দু’একটা ছোট খাটো ভুল পেলে আর রেহাই নেই।সংশোধনের উদ্দ্যেশ্যে নয় নাজেহাল করার টার্গেটে কমর বেধে নামেন মাঠে।
স্বাধীনতার চার দশক পার হয়েগেলেও এখন পর্যন্ত জাতীয় সংসদের কোন একটি নির্বাচনে জোটবদ্ধ ছাড়া একক ভাবে নিজস্ব দলীয় প্রতীক নিয়ে একমাত্র জামায়েতে ইসলামী ছাড়া দেওবন্দী তরিকার কেউ বিজয়ী হতে পেরেছেন বলে জানা নেই।খালেদা জিয়ার ধানের শীষ আর এরশাদের লাঙ্গল নিয়ে দু’একজন ভাগ্যের জোরে এমপি হয়ে ছিলেন।পরের কাধে ভর করে এ ধরনের বিজয়ী হওয়া কৃতিত্ব হিসাবে ধরে নেয়া যায় না।মিছিল মিটিং দিয়ে ইসলামী সংগঠন সমুহকে শক্তি ওজন করলে তো আর হবে না।বিগত উপজেলা নির্বাচনে প্রায় সবকটি ইসলামী সংগঠনই অংশগ্রহণ করেছে।চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে কয়টিতে বিজয়ী হতে পেরেছে,সংশ্লিষ্টদের একটু হিসাব মিলানো প্রয়োজন।চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যন পদে দু’একটিতে বিজয়ী হয়েছেন তাও একক শক্তি দ্বারা নয়,অন্যের কাধে ভর করে।ভোটের রাজনীতিতে ইসলামী সংগঠনগুলোর অবস্তান একেবারে নিম্নে এ কথা মেনে নিতে হবে।বর্তমান সময়ে ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীদের যেভাবে মনমানসিকতা গড়ে উঠছে তা মোটেই কল্যাণকর নয়।দেশ ও জাতি অনেক প্রত্যাশা রাখে তাদের উপর্।এক ঘরের মানুষ ( খেলাফত মজলিস,জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম,ইসলামী আন্দোলন,বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস,খেলাফত আন্দোলন)।সকলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এক।এক কালেমার মিশন নিয়ে পথচলা।কেন ভাইয়ে ভাইয়ে এতো হিংসা,বিদ্ধেষ? কেন একে অপরকে সহযোগী হিসাবে ধরে নিতে পারেন না? এ উত্তরগুলো আজ খুজে বের করে সংশ্লিষ্টদের সমাধানের পথে যাওয়া সময়ের অপরিহার্য দাবী।
ব্যক্তিকে নয়,আন্দোলন ও আদর্শকে গুরুত্ব দেয়া জরুরী।ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীদের হৃদয় হওয়া প্রয়োজন অপর ভাইয়ের জন্য কোমল ও প্রেমময়।দ্বীনি আন্দোলনের পথে আহ্বানকারীদের হৃদয়ে বিদ্ধেষের কোন স্তান নেই।আজকের সময়ে দুনিয়ার সব মানবরচিত মতবাদ প্রমানিত ভাবে মানবজীবনের সার্বিক প্রয়োজন পূরণে শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছে।তাই ইসলামই আজ বিশ্ব মানবতার শেষ আশা।বিপন্ন মানবতার শেষ অবলম্বন।বিপর্যস্ত,আশাহত ও বঞ্চিত মানুষের শেষ প্রত্যাশা।ইসলামকে আজ মানুষের কাছে উপস্তাপন করার সময় এসেছে।এর প্রয়োজনীয়তা তীব্র ভাবে আমরা অনুভব করছি।এ প্রয়োজনীয়তা মেটানোর জন্য উম্মাহর অভিভাবকদের জেগে উঠতে হবে।আর বিভেদ সৃষ্ঠি নয়।ইসলাম,দেশ ও জাতির কল্যাণে সব মতভেদ ভুলে গিয়ে এক টেবিলে বসার উদ্যোগ নিতে হবে।ইসলামী সংগঠনগুলোর ঐক্য আজ সময়ের অপরিহার্য দাবী।ইসলামের বৃহত্তর স্বার্থে এদাবীকে পুরণ করতে এগিয়ে আসা প্রয়োজন উম্মাহর অভিভাবকদের।আর এ ঐক্য হবে এক কালেমার মিশন নিয়ে।হতাশার ঘাড় অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া মানবতাকে উদ্ধারের লক্ষ্যে।আল্লাহ সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দ্বীনের কাজ করার তাওফিক দিন।আমীন।

About Abul Kalam Azad

এটাও পড়তে পারেন

বিকৃত যৌনতায় দিশেহারা জাতি: সমাধান কোন পথে?

শাইখ মিজানুর রাহমান আজহারী: বাংলাদেশে প্রায় প্রতিদিন কোথাও না কোথাও ধর্ষণ হচ্ছে। নারীকে বিবস্ত্র করা ...