বুধবার, ১১ই ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ ভোর ৫:১৪
Home / কওমি অঙ্গন / বেফাক, জমিয়ত, দেওবন্দিয়ত ও স্বীকৃতি…

বেফাক, জমিয়ত, দেওবন্দিয়ত ও স্বীকৃতি…

সৈয়দ আনোয়ার আবদুল্লাহ ::

বিএনপি সরকারের আমলে কওমি সনদের স্বীকৃতির দাবীতে শায়খুল হাদীস রাহ. যখন রাজপথে অনশন করলেন, তখন সরকারের সাথে স্বীকৃতি নিয়ে চূড়ান্ত কথা বলার জন্য বেফাকের একটি প্রতিনিধি দল তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ড. ওসমান ফারুকের বাসভবনে বৈঠকে বসলেন। বৈঠক শেষে আলাপ-আলোচনা, সিদ্ধান্ত যখন চূড়ান্ত; তখন শিক্ষামন্ত্রী আলেমদের একটি অনুরোধ করে বললেন, “আমি চাই কওমি সনদের স্বীকৃতি বাস্তবায়নের চূড়ান্ত কমিটিতে মাওলানা মুহিউদ্দীন খান যেন থাকেন”। মন্ত্রীর কথা শেষ হতে না হতেই বেফাকের একজন কর্ণধার, সবোর্চ্চ পলিসি নির্ধারক বলে উঠলেন, তিনি তো দেওবন্দি আলেম নন স্যার। সাথে সাথে সমস্বরে সবাই বলে উঠলেন, “জি স্যার, জি স্যার, তিনি আমাদের লোক নন। কওমির লোকজন ছাড়া কওমি সনদের স্বীকৃতি কাজে এখানে বাহিরের লোক রাখা যাবে না”।

পরদিন বাদ মাগরিব পল্টনের নোয়াখালি টাওয়ারে মদীনা অফিসে খান সাহেবের কাছে বসা। এমন সময় ঢাকার দু’জন বড় আলেম আসলেন। একজন বড় মাপের শায়খুল হাদীস। (গতকাল যিনি মন্ত্রীর সাথে বৈঠকে ছিলেন) তারা গতকালকে মন্ত্রীর সাথে কতোপকথনের বিস্তারিত ঘটনা কবলেনন। শুনে নিজের অজান্তেই মুহিউদ্দীন খান রাহ. চোখ থেকে পানি ছেড়ে দিলেন।

শিক্ষামন্ত্রীকে সরাসরি ফোন দিলেন। কিছুক্ষণ পর মন্ত্রী ফোন ব্যাক করলেন। গতকালের ঘটনা জানতে চাইলেন। অনেক ব্যাথা, কষ্ট আর কান্নাভেজা কণ্ঠে দীর্ঘশ্বাস ফেলে মন্ত্রী সব ঘটনা বললেন। বললেন, আপনার মেধাকে আমরা অনুভব করি কিন্তু আপনার স্বগ্রোত্রীয়রা বুঝেন না। তবে আমি চাইলে এদের কাকে কিনতে পারব না? তখন দেখবেন, কবির চৌধুরীকেও কমিটিতে এঁরা মানবে। এদের কোন স্বকীয়তা বা নিজেস্বতা নেই। জানিনা হুজুর, এই জাতির ভাগ্যে আগামিতে কী আছে?”

মন্ত্রীর ফোন রেখে মাওলানা মুহিউদ্দীন খান মন্ত্রীর কখাগুলো আমাদের কাছে বলে বললেন, “আজীবন জমিয়ত করলাম, এদেশে জমিয়তকে দাঁড় করালাম, কওমি মাদরাসা ও কওমি আলেমদের নিযে এক ধ্যানে কাজ করলাম, আজীবন মাদানী সিলসিলার বুর্জুগদের সোহবতে কাটালাম, চারজন আকাবিরে দেওবন্দের ত্বরিকতের ইজাজত পেলাম। আমি জানি না,  দেওবন্দি হতে হলে আমাকে আর কি কি সাধনা করতে হবে?”

আজ মুহিউদ্দীন খান রাহ. নেই। এখন নাকি জমিয়ত করলে দেওবন্দি হওয়া যায়। কিন্তু ইতিহাস হল, তিনি আমৃত্যু জমিয়তি ছিলেন কিন্তু তাহদের কাছে দেওবন্দি ছিলেন না। ফলে তিনি বেফাকের কমিটিতে থাকার যোগ্য ছিলেন না। দেওবন্দি না হবার অভিযোগে যোগ্য ছিলেন না কওমি স্বীকৃতির কমটিতে থাকার।

আজ মন্ত্রীর কথা ঠিক হল, মাত্র ৩ একর জমি আর ৩০টি আসনে সব বিক্রি হয়ে গেল। কওমির হাজার বছরের ঐত্যিহ্য নিলামে দেয়া হল। ভণ্ডের হাতে তুলে দেয়া হল কওমি সনদের কারিকুলাম। আজ দেওবন্দিয়তের প্রশ্ন কোথায় হারিয়ে গেল? কোন স্বার্থের মোহে চেতনা বন্ধক দেয়া হল। জানতে বড় ইচ্ছে করে আকাবির আসলাফের কাছে। ক্ষমা করুন মুহিউদ্দীন খান রাহ. (আল্লাহ আপনার কবরকে নূর দিয়ে ভরে দিন)

আমাদের হৃদয়ের স্পন্দন যে মুহিউদ্দীন খান, দেওবন্দি নন অভিযোগে কওমি স্বীকৃতির কাজ করতে পারেননি। তবে মাজারপুজারী, বেদআতি, ভণ্ডরা আজ কীভাবে দেওবন্দিদের স্বীকৃতির ড্রিইভিং আসনে। তাহলে কি সমরখন্দ, বোখারা, রোহিঙ্গার পথে হাটছেন আমাদের নীতিনির্ধারক আলেমগণ?

তবে মনে রাখবেন, সেই দিন অনেক আগেই পুরিয়ে গেছে। আপনারা মুরুব্বির দোহাই দিয়ে নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য, যখন মনে যা চায় তাই করবেন আর চোখ বুঝে বেয়দব তকমা পাবার ভয়ে কওমির ছেলেরা সব কিছু দেখেও না দেখার ভান করবে সে দিন আর নেই। প্রযোজনে প্রতিবাদের ঝড় উঠবে । কিন্তু কওমির ঐতিহ্য কোন মাজারপুজারীর হাতে বিকৃতি হতে দেবে না কওমির সন্তানরা।

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...