শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ বিকাল ৪:০০
Home / কওমি অঙ্গন / বাংলাদেশের মাদরাসা এবং রোহিঙ্গা মুহাজির শিশু

বাংলাদেশের মাদরাসা এবং রোহিঙ্গা মুহাজির শিশু

শামসীর হারুনুর রশীদ ::

রোহিঙ্গা থেকে আগত বিশ্বনবীর এতিম উম্মাতের ব্যাপারে চট্টগ্রামভিত্তিক মাদরাসাগুলোর দায়িত্ব ইনদাল্লাহ ও ইনদাল ইসলাম হাজার গুণ বড়ে গেছে। বাড়ারই কথা। এটাকে খোদাপ্রদত্ত নেয়ামত মনে করতে হবে। ইসলাম প্রচারের জন্য যেখানে তাদের কাছে যাওয়ার কথা ছিল, সেখানে তাঁরা যেকরেই হোক আমাদের কাছে এসেছে। আমাদেরকে তাদের দায়িত্ব নিতেই হবে।
খুব জরুরিভিত্তিতে মাদরাসাগুলো কিংবা কোনো বোর্ড ঐক্য ও সমন্বয়ে মিটিং ডেকে একটি দীর্ঘ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। এদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। ‘বর্মি-আরবি-ইংরেজি’ এবং একটু শক্ত কাগজের কায়দা সিপারা ছাপিয়ে শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে এবং এখনই করতে হবে। খুব স্মরণ রাখা দরকার, শুধু কায়দা-ছিপারা শিক্ষা দিতে থাকলে বেকায়দায় এনজিও ও মিশনারিরা ভাষা ও উন্নত শিক্ষার নামে আমাদের পিছনে ফেলে জায়গা তারা দখলে নিবে। তাই সতর্কতা অবলম্বন করেই এগোতে হবে।

তার আগে জানা দরকার যে, বাংলাদেশের মাদরসাগুলো কেন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে? এ প্রশ্নের উত্তর অনেকের হয়ত অজানা কিংবা জেনেও বেগাফিল।
যাঁরা মাদরাসায় পড়েছেন, পড়ছেন কিংবা পড়াচ্ছেন এসবের উদ্দেশ্যে আসলে কী? যদি মনে করা হয় দ্বীন ইসলামের প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করা তাহলে কথা আছে অনেক কথা।
আর যদি চাকরি কিংবা ব্যবসার উদ্দেশ্যে মাদরাসা প্রতিষ্ঠা বা পরিচালনা করা হয় তখন তো কথার শেষ নেই।
যাহোক ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ অথচ মুসলিম হওয়ার অপরাধে রোহিঙ্গা থেকে হিজরত করে আসা প্রায় ৬ লক্ষ শিশুদের ৫ লক্ষ এতিম। আল্লাহর রাসুল সা. বলেছেন ‘আনা কাফিলুল ইয়াতিম’ এখন তো নবী নেই তাহলে এদায়িত্বটা কে পালন করবে?
বাংলাদেশে আগত এই এতিম শিশুগুলো যদি ঈমান-ইসলাম লাভ না করে তাহলে এদেশে ৪০ হাজার মাদরাসা আর লাখ লাখ মাওলানা-আল্লামারা কাল কেয়ামতেরদিন রাসুলের সামনে মুখ দেখাবেন কোন হায়ায়?
আমার বুঝে আসছে না, চিন্তা-গবেষণা-পরিকল্পনা-বিজয়ের স্বপ্নে আমরা এতো এতো পিছু কেন? না ইসলাম সম্পর্কে আমাদের সুস্পষ্ট জ্ঞান নেই? না কী ইসলাম ধর্মকে নিজেদের সার্থ রক্ষার্থে শুধু ব্যবহার করছি?
যাহোক দ্বীনি মাদারিসের কাজ কী দ্বীন ইসলামকে সংরক্ষণ ও বিজয়ী করা না কী শুধু বৃত্তি-মোমতাজ আর বেশি ছাত্র দেখানো উদ্দেশ্যে? না অন্য কিছু?

রোহিঙ্গা বাচ্চাগুলো মুসলমান থাকবে না খ্রিস্টান হবে এ নিয়ে মাদরাসা অঙ্গনে তেমন মাথা ব্যাথা নেই! নেই কোনো কর্মপরিকল্পনা! নাই কোনো দরদ ও দায়িত্ববোধ!
মানে, সরকার কেন এদের ইসলাম শিক্ষা দিচ্ছে না পুরো দেশে আন্দোলন করার মতো খাইয়ে কাম নেই কাজটি করতে হবে ভাব।
আমি চট্রগ্রামের ক’টি মাদরাসা ঘুরে খুব খুব মর্মাহত হলাম! মাদরাসাগুলোর সামনে প্রথম সাময়িক পরীক্ষা তাই রোহিঙ্গা এতিম শিশুগুলো নিয়ে ফিকির করার সময় কোথায়? তাবলিগিওয়ালারা এদের পেছনে কাজ করে না কেন? এসব মূর্খের মতো অজুহাত সামনে রাখে অবস্থাটা এমন যেনো মাদরাসায় পরীক্ষা না হলে তো ঈমান-ইসলাম কিছুই থাকবে না! তাই লেখাপড়ায় ব্যাঘাত আসতে পারেনা! ভাল ফলাফল দেখানোর মতো প্রতিযোগিতা-ই এ মাদরাসাগুলোর মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে! এমন কল্পনার মাদরাসাগুলো তালাবন্ধ করা দরকার নয় কী?
যদি ৯০% মুসলিম দেশে আশ্রিত এমানুষগুলো ঈমান-ইসলাম লাভ করতে না পারে, তাহলে এদেশের বাসিন্দা হিসেবে নিজেকে ধিক্কার দেয়া ছাড়া কোনও উপায় সামনে নেই! এটিও কোন সমাধান নয়, অবশ্যই আমাদের এগিয়ে আসতে হবে।
যেহেতু রোহিঙ্গারা চট্টগ্রামের ভাষা বুঝে তাই ওখানকার মাদরাসাগুলোকেই এদায়িত্ব পালনে যতটা আগে অগ্রসর হবে ততো আগেই মানুষগুলোর ঈমান-ইসলাম রক্ষা করা যাবে। আমি আশাবাদী চট্টগ্রামের মাদরাসাগুলো সময় থাকতেই সময়ের সিদ্ধান্ত নিবেন। অন্য বিষয়ের মতো অসময়ে পস্তাবেন না। অবশ্যই এবাচ্ছাগুলোর ইসলাম শিক্ষার দায়িত্ব মাদরাসাগুলোকে নিতেই হবে। পেছনে পড়ার কোনো সুযোগ নেই।

হাটহাজারি, পটিয়া, দারুল মাআরিফ, নাজিরহাট, বাবুনগর, বি-বাড়িয়াসহ মাত্র ১৫-২০টি মাদরাসা উদ্যোগী হলে খুব সহজেই তাদের ইসলামসহ প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়া একদম সহজ। শুধু ইচ্ছা আর পরিকল্পনার অভাব। সেনাবাহিনীর পরামর্শ নিয়ে শৃঙ্খলা ও পরিকল্পনা মাফিক সানবি-ফজিলতের প্রতি ক্লাসের ছাত্রকে হালকা প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রতিটি মাদরাসা থেকে দু’জন শিক্ষকের নাগরানিতে ১৫দিন করে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে গ্রুপভিত্তিক কাজ করালে একদম সহজেই মাত্র ক’লাখ মানুষকে শিক্ষা দেওয়া খুব সহজ না হলেও তেমন কঠিনও নয়।

চট্টগ্রামের আলেমরা আর্মি অফিসার আর জেলা প্রশাসনের সাথে বসে তাদের শিক্ষা-দিক্ষার ব্যাপারে তড়িৎ সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার নয় কি? প্রশাসন শুধু সুযোগ ও সময় দিবে শিক্ষা দেওয়ার অন্যকিছু নয়। প্রয়োজনে হেফাজতের মিটিং ডেকে সমগ্র দেশকে সহযোগিতার জন্য ডাকতে পারেন। দেখবেন সারা দেশ আপনাদের পেছনে আছে এবং থাকবে।
খেয়াল রাখতে হবে, যাতে একটি শিশুও দ্বীন ইসলামের আলো থেকে বঞ্চিত কিংবা খ্রিস্টান হয়ে না যায়।
এ মাদরাসাগুলো যদি উদ্যোগী হয়ে যায় তাহলে তারাই যথেষ্ট। সকাল ৭টা থেক বিকেল ৫টা পর্যন্ত রুটিনমাফিক শিক্ষা দিতে পারলে তেমন বেগ পেতে হবে না এবং খুব সহজেই েই কাজটা করা যাবে। প্রয়োজনে ফান্ড প্রতিষ্ঠা করেই কাজটা দ্রুত এগিয়ে নেয়া দরকার।
আমি চট্টগ্রামের মাদরাসাগুলোর রোহিঙ্গা বিষয়ে দায়-দায়িত্বহীন মনোভাব দেখে খুব বিস্মিত! হতবাক!

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

বিকৃত যৌনতায় দিশেহারা জাতি: সমাধান কোন পথে?

শাইখ মিজানুর রাহমান আজহারী: বাংলাদেশে প্রায় প্রতিদিন কোথাও না কোথাও ধর্ষণ হচ্ছে। নারীকে বিবস্ত্র করা ...