কমাশিসা আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক: কাতারের মিডিয়া হ্যাক করার আয়োজন করেছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত। এর মধ্যে রয়েছে কাতার সরকারের সামাজিক মিডিয়া ও সংবাদভিত্তিক সাইট। গত মে মাসে এসব সাইট হ্যাক করে সেখানে কাতারের আমিরের ভুয়া বক্তব্য যুক্ত করে দেয়াই ছিল এর উদ্দেশ্য।
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে এ খবর প্রকাশিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা ওয়াশিংটন পোস্টে। তা নিয়ে রিপোর্ট করেছে অনলাইন আল জাজিরা। এতে বলা হয়েছে, ওই হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে মে মাসে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির মিথ্যা বক্তব্য প্রচার করা হয়েছে। ওই মিথ্যা বক্তব্যে তিনি হামাসের প্রশংসা করেছেন বলে বলা হয়েছে।
আরো বলা হয়েছে, তিনি বলেছেন, ইরান একটি ইসলামিক শক্তি। কাতারের বিরুদ্ধে এসব অভিযোওেগ ৫ই জুন এ দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিশর ও বাহরাইন সহ কয়েকটি দেশ। তারা অভিযোগ করে কাতার সন্ত্রাসে সমর্থন দিচ্ছে।
তবে এ অভিযোগ কাতার অস্বীকার করেছে। উল্লেখ্য, মে মাসের শেষের দিকে কাতার তাদের আমিরের মিথ্যা বক্তব্য পোস্ট করেছে হ্যাকাররা। কিন্তু কাতারের এ বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলো।
ওয়াশিংটন পোস্ট রিপোর্টে বলেছে, গত সপ্তাহে এ বিষয়টি জানতে পেরেছেন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। তারা দেখতে পেয়েছেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকারের সিনিয়র কর্মকর্তারা ২৩ শে মে পরিকল্পিত হ্যাক নিয়ে আলোচনা করেছেন। এন পরেই এ ঘটনা ঘটেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ওইসব কর্মকর্তা বলেছেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ওয়েবসাইট হ্যাক করেছিল কিনা অথবা এটা করার জন্য কাউকে অর্থ দেয়া হয়েছিল কিনা সে বিষয়ে তাদের অস্পষ্টতা রয়েছে।
তবে ওয়াশিংটন পোস্ট ওইসব গোয়েন্দা কর্মকর্তার পরিচয় প্রকাশ করে নি। ওয়াশিংটন পোস্ট বলেছে, এমন অভিযোগ সম্বলিত রিপোর্ট মিথ্যা বলে দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত ইউসেফ আল ওতাইবা। এ বিষয়ে তিনি একটি বিবৃতি দিয়েছেন।
তাতে বলেছেন, আসলে সত্য হলো কাতারের আচরণ। তারা তালেবান থেকে শুরু করে হামাস, গাদ্দাফির মতো উগ্রপন্থিদের অর্থায়ন করে। সমর্থন করে। সহিংসতা সৃষ্টি করে, উগ্রপন্থাকে উৎসাহিত করে তারা প্রতিবেশীদের স্থিতিশীলতা খর্ব করে।
এর আগে কাতারে হ্যাকিং অভিযোগ নিয়ে কাজ করছিল এফবিআই। ওয়াশিংটন থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক হেদি ঝোউ-ক্যাস্ত্রো বলছেন, যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা নতুন। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলে নি। উপসাগরীয় অঞ্চলে সৃষ্ট বিরোধ মীমাংসায় কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রে ফিরেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন।
তার মুখপাত্র বলেছেন, কাতার-উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে সমঝোতা স্থাপনে অভিন্ন ক্ষেত্র তৈরি করে সঙ্কট সমাধান হতে পারে একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। উল্লেখ্য, জুন মাসে কাতার বলেছে, রাষ্ট্র পরিচালিত সংবাদ সংস্থা ও সরকারি সামাজিক মিডিয়ার একাউন্টগুলো হ্যাকিংয়ে যেসব দেশ জড়িত সে বিষয়ে তাদের হাতে প্রমাণ আছে।
এক্ষেত্রে ২১ শে জুন কাতারের রাজধানী দোহা’য় এটর্নি জেনারেল আলী বিন ফেতিয়াইস আল মারি বলেছেন, কাতারের হাতে প্রমাণ আছে। কাতারের বিরুদ্ধে যেসব দেশ অবরোধ দিয়েছে সে সব দেশের আইফোন ব্যবহার করা হয়েছে হ্যাকিংয়ে। ওয়াশিংটনে আরব সেন্টারে নির্বাহী পরিচালক খলিল জাহশান আল জাজিরাকে বলেছেন, নতুন করে যে তথ্য বেরিয়ে এলো তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেছেন, সঙ্কট শুরুর সময় থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও বৃটিশ গোয়েন্দাদের হ্যাকিংয়ের বিষয়ে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন কাতার। এটা তাদের যথাযথ পদক্ষেপ। এখন সেই কথা প্রকাশ্যে বেরিয়ে এসেছে। সেই গোয়েন্দারা নিশ্চিত হয়েছেন যে, হ্যাকিং হয়েছিল।