ফাহিম বদরুল হাসান::
![](http://komashisha.com/files/asset/uploads/2017/05/18302507_636013303276349_395386790_n-300x147.jpg)
শাব্দিক বিশ্লেষণঃ ليلة (লাইলাতুন) অর্থ- রাত, এবং البراءة (বারা’আতুন) অর্থ- মুক্তি (Freedom)। বিভিন্ন ডিকশোনারিতে এছাড়াও বেশকিছু অর্থ পাওয়া যায়। যেমনঃ absolution- ক্ষমা, clearance -খালাস, being free- মুক্ত, exemption- দায়মুক্তি, Freedom from obligations-অভিযোগমুক্ত, Blamelessness- অপবাদমুক্ত, Innocence- পাপমুক্ত/ নিষ্পাপ ইত্যাদি। শব্দদ্বয়ের মিলনে লাইলাতুল বারাআত অর্থ দাঁড়ালো- মুক্তির রাত,ক্ষমার রাত, পাপমোচনের রাত ইত্যাদি।
ইসলামে লাইলাতুল বারাআতের অস্তিত্বঃ শবেবরাত/ লাইলাতুল বারাআত/মুক্তির রাত- যে নামেই ডাকা হোক, হাদিসে “লাইলাতুন নিসফি মিন শা’বান” বা শাবান মাসের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতের ফযিলত অস্বীকারের কোনো সুযোগ নেই । কারণ, রাতটিতে আল্লাহ (ﷻ) যে মুশরিক এবং বিদ্বেষী ব্যতিত সকলকে ক্ষমা করে দেন- এবিষয়ে বিভিন্ন বর্ণনায় বহু হাদিস এসেছে। যেমনঃ (১) মুআয ইবনে জাবাল (রাঃ) বলেন- রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা অর্ধ শাবানের রাতে (শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে) সৃষ্টির দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত আর সবাইকে ক্ষমা করে দেন।’-সহিহ ইবনে হিব্বান [সনদের মান সহিহ। হাদিস নং ৫৬৬৫। এ ছাড়া ইমাম বাইহাকি (রহঃ) শুআবুল ঈমানে (৩/৩৮২, হাদিস ৩৮৩৩); ইমাম তাবরানি আলমুজামুল কাবির ও আলমুজামুল আওসাতে বর্ণনা করেছেন।]
(২) হযরত আলা ইবনুল হারিস (রহঃ) থেকে বর্ণিত, হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (ﷺ) রাতে নামাযে দাঁড়ান এবং এত দীর্ঘ সেজদা করেন যে, আমার ধারণা হল তিনি হয়ত মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি তখন উঠে তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল। যখন তিনি সেজদা থেকে উঠলেন এবং নামায শেষ করলেন তখন আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আয়েশা অথবা বলেছেন, হে হুমাইরা, তোমার কি এই আশংকা হয়েছে যে, আল্লাহর রাসূল তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি উত্তরে বললাম- না, ইয়া রাসূলুল্লাহ। আপনার দীর্ঘ সেজদা থেকে আমার এই আশংকা হয়েছিল, আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কিনা। নবীজী জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি জানো এটা কোন রাত? আমি বললাম- আল্লাহ ও তার রাসুলই ভাল জানেন। রাসুলুল্লাহ (ﷺ) তখন ইরশাদ করলেন: ‘এটা হল অর্ধ শাবানের রাত (শাবানের চৌদ্দ তারিখের দিবাগত রাত)। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা অর্ধ-শাবানের রাতে তার বান্দার প্রতি মনযোগ দেন এবং ক্ষমাপ্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহ প্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই।‘ (শুআবুল ঈমান, বাইহাকি ৩/৩৮২-৩৬৮)। হাদিসটির সনদের মান বিশ্লেষণ করতে গিয়ে ইমাম বাইহাকি (রহঃ) ‘মুরসাল’ বলে উল্লেখ করেছেন।![](http://komashisha.com/files/asset/uploads/2017/05/18309102_636013323276347_1231585667_n-300x225.jpg)
![](http://komashisha.com/files/asset/uploads/2017/05/18309102_636013323276347_1231585667_n-300x225.jpg)
(৩) সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে, হযরত আলি বিন আবু তালেব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, নিসফ-এ শাবানের রাত (চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত) যখন আসে তখন তোমরা রাতটি ইবাদত-বন্দেগীতে কাটাও এবং দিনের বেলা রোযা রাখ। কেননা, এ রাতে সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তাআলা প্রথম আসমানে আসেন এবং বলেন, কোন ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করব। আছে কি কোন রিযিক প্রার্থী? আমি তাকে রিযিক দেব। এভাবে সুব্হে সাদিক পর্যন্ত আল্লাহ তা’আলা মানুষের প্রয়োজনের কথা বলে তাদের ডাকতে থাকেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ১৩৮৪)
এই বর্ণনাটির সনদ যইফ। কিন্তু মুহাদ্দিসগণের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হল, ফাযাইলের ক্ষেত্রে যইফ হাদিস গ্রহণযোগ্য। তাছাড়া শাবান মাসে বেশি বেশি নফল রোযা রাখার কথা সহিহ হাদিসে এসেছে এবং আইয়ামে বিয অর্থাৎ প্রতি চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোযা রাখার বিষয়টিও সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।
রাতযাপনঃ এতো মহিমান্বিত রাত কীভাবে অতিবাহিত করা উচিত- এখানে এসে শয়তান এসে উভয়মুখী কৌশল অবলম্বন করেছে। একদলকে বলে দিয়েছে- “হাদিসে তো (এ রাতে) কোনো আমলের কথা আসেনি, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন। খাক বা ঘুমাক”। কী আশ্চর্য যুক্তি দাঁড় করিয়েছে! একজন মানুষ যদি যাকাতের পয়সা দান করবে ঘোষণা দেয়, অভাবী লোকেরা তখন হন্যে হয়ে দৌড়ে। কারণ, তার প্রয়োজন। অথচ আল্লাহ বলছেন- ক্ষমা করে দেবেন, আর আমরা ঘুমিয়ে থাকলেও হবে। আরেকদল আমলের নামে যা তা করে শুধু নির্ঘুম রাত-ই কাটান না, বরং নানাবিধ বিদআত করে উল্টো পাপ কামান। “আল্লাহ ক্ষমা করবেন’- এই শুনে কোথায় নিবৃত্তে আঁখিজল ফেলে ক্ষমা চাবেন, তা নয় বরং এই রাতে আড্ডা, খানাপিনা, ওয়াজ-নসিহত, শিরনি-জিলাপি ইত্যাদি নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়েন। আল্লাহ আমাদেরকে মধ্যপন্থা অবলম্বন করার তাওফিক দিন। খেয়াল রাখতে হবে যে, এ রাতে আমলের নামে ভিত্তিহীন কিছু করে যেন পাপ না করি। এবং রাসুলুল্লাহ (ﷺ)’র ভাষায় ليلة النصف من شعبان তথা লাইলাতুল বারাআতে যেন নিবৃত্তে বিভিন্ন আমলের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট থেকে পাপ মোচন করে আনতে পারি। আমিন।