কমাশিসা : ৯/১১’র পর ওসামা বিন লাদেনকে খুঁজে বের করতে প্রায় বছর দশেক ধরে লক্ষ লক্ষ ডলার খরচ করে আমেরিকা । ২০১১-র মে মাসে পাকিস্তানে এক গোপন জায়গায় ঢুকে মেরে ফেলা হয়েছিল ওসামা বিন লাদেনকে। মার্কিন সেনার যে টিম এই কাজ করেছিল, তার মধ্যে ছিলেন রবার্ট ও’নীল। তিনিই নিজে হাতে খতম করেছিলেন লাদেনকে।
তাঁর লেখা একটি বইতে রবার্ট ও’নীল লিখেছেন বিশ্বের ভয়ঙ্করতম এই মোস্ট ওয়ান্টেডের মুখোমুখি হওয়ার অভিজ্ঞতার কথা। তিনি লিখেছেন, ‘যে মুহূর্তে পাকিস্তানে পৌঁছেছি, তখনই জানতাম যে কোনও সময় মরে যেতে পারি। শুধু মতে হত হেলিকপ্টার বিস্ফোরণ হলে কেমন লাগে? মরতে ঠিক কতটা সময় লাগে?’ এরপরই কপ্টারের দরজা খুলে তাঁরা নেমে পড়েন লাদেনের বাড়ির কমপাউন্ডের সমানে। চারদিক তখন অন্ধকার। তাঁরা ভেবেছিলেন ওই বিল্ডিংটা উড়িয়ে দিতে হবে। তখনই রেডিওতে বার্তা আসে যে দরজাটা খুলে ঢুকতে হবে, ওড়াতে নয়। দরজা খুলে ঢুকে পড়েন মার্কিন সেনার ওই দল। ও’নীল বলছেন, তিনি বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না যে তাঁরা লাদেনের বাড়িতে। আর ভাবছিলেন, ‘হয়ত বাঁচব না। কিন্তু একটা ইতিহাসের সাক্ষী থাকলাম।
গুলি লড়াইয়ের পর আসল দরজা দিয়ে ঢুকে পড়েন তাঁরা। একটা বড় হলঘরের মত জায়গা। ব্যারিকেড করা দরজা। মহিলা ও শিশুর কান্নার আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল। পরে জানা যায়, ওই বাড়িতে চারজন স্ত্রী ও ১৭ জন সন্তানকে নিয়ে বাস করছিল লাদেন। হলঘরের ডানদিকের শেষের ঘরটায় ঢুকে পড়েন ও’নীল। সেখানে দাঁড়িয়েছিল একটা ছোট্ট মেয়ে। চোখে-মুখে ভয়: তাকে পেরিয়ে আরও একটা ঘর। সেখানে কয়েকজন মহিলা ও শিশু। এরপর সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে শুরু করেন তাঁরা। মহিলা গোয়েন্দা তখন নির্দেশ দিচ্ছে, এবার হয়ত অস্ত্র হাতে দেখা যাবে লাদেনের ছেলে খালিদ বিন লাদেনকে। আর ঠিক উপরের তলাতেই রয়েছে লাদেন। এরপর খালেদের নাম ধরে কাছে ডাকে এক সেনা। নিজের নাম শুনে চমকে যায় খালিদ। মার্কিন সেনা বলে বুঝতে পারে না। সে এগিয়ে এসে বলে ‘হোয়াট?’ ব্যস, তার মুখে গুলি করে মার্কিন সেনা।
রবার্ট লিখেছে, এরপর উপরের ফ্লোরে গিয়ে দেখি সবথেকে ছোট স্ত্রী অমলের কাঁধে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ওসামা বিন লাদেন। তার শীর্ণকায় চেহারা দেখে চিনতে কিছুটা অসুবিধা হয়। সোজা তাকিয়ে লাদেনের দিকে তাক করে পরপর দুটো গুলি চালাই । মাটিতে লুটিয়ে পড়ে বিশ্বের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’। এরপর মাথায় আরও একটা গুলি করি। অজ্ঞান হয়ে যান স্ত্রী। তাঁকে তুলে বিছানায় শুইয়ে দিই আমি নিজেই। তাঁর একটি দু’বছরের সন্তান রয়েছে। রবার্ট বলছেন, এটা আমার সাহসিকতা নয়। বরং মরার ভয় পেতে পেতে ক্লান্ত হয়ে ভেবেছিলাম, ‘যা হয় হোক’। সূত্র: কলকাতা টুয়েন্টিফোর, আ.ই
ইআম/০১