কাজী হামদুল্লাহ
তথাকথিত সুন্নি সমাজ কওমী মাদরাসাকে সরকারী স্বীকৃতি প্রদানের প্রতিবাদ জানিয়েছে। সরকারের প্রতি বাষ্পীয় হুশিয়ারী উচ্চারণ করে ১৭ ও ১৮ তারিখ মানববন্ধন করার কথাও বলেছে তারা। তাদের এই প্রতিবাদের কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে মিডিয়াহীন সংবাদ সম্মেলনে।
১/ কওমীরা উগ্রপন্থী ও জঙ্গিবাদী।
২/ কওমীরা সরকারের আনুগত্য করেনি।
৩/ স্বীকৃতি প্রদানের ঘোষণায় জাতি স্তম্ভিত।
* তাদের সংবাদ সম্মেলনের নিউজ পড়ে এ তিনটি কারণের চেয়ে বেশি আর কিছু পাইনি। চিন্তা করে দেখুন, কতো বড় বাটপারের দল এরা! গত কয়েকদিন আগে বাম ঘরানার একটি অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামের উপ-পুলিশ কমিশনারকে পেয়েছিলাম। সেখানে তার স্পষ্ট বক্তব্য ছিলো, ‘দেশের কোন জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডেই কওমী মাদরাসার সম্পৃক্ততা আমরা পাইনি।’ খোঁজ নিলে দেখা যায়, ভার্সিটি এবং আলিয়া মাদরাসার ছাত্ররাই এসব কাজে জড়িত। গুলশান হামলা ও শোলাকিয়ার হামলা সেটা আমাদের কাছে স্পষ্ট করে দিয়েছে।
এ ছাড়া নিকট এবং দূরবর্তি ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, দেশে সাম্প্রদায়িক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে বেধর্মীদের চেয়েও তথাকথিত সুন্নিরা তথা মাজারপূজারী বিদআতীরাই অধিক জড়িত। গত কয়েকদিন আগে সিলেটের ঘটনা এর জলন্ত প্রমাণ।
তারা বলেছে, উগ্রবাদীদেরকে সরকার পুরুস্কৃত করেছে। তাহলে নিশ্চয়ই এ সরকারের মাথা খারাপ বা সরকারও উগ্রবাদী কিংবা উগ্রবাদীদের সহযোগী! তাহলে এতোদিন এই উগ্রপন্থী সরকারের গোলামী কেন করেছেন? আপনারাও কী উগ্রপন্থী, আইমিন জঙ্গিবাদী?
* তাদের দ্বিতীয় পয়েন্ট ছিলো, কওমীরা সরকারের অনুগত নয়। সরকারের আনুগত্য বলতে তারা কী বোঝাতে চায়? রাষ্ট্রীয় সঠিক বা ভুল যে কোন সিদ্ধান্তই মেনে নিতে হবে? তাহলে আমরা বলবো সুন্নিরাই সরকারের আনুগত্যশীল নয়। কারণ সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কওমী মাদরাসাকে সনদ দেয়া হবে, কিন্তু তারা তা মানতে চাইছে না।
যদি তাদের এই সরকারী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ সরকারের আনুগত্যে অন্তরায় না হয়, তাহলে ধর্মীয় স্বার্থে কওমী মাদরাসার অবস্থান কেন আনুগত্যের অন্তরায় হবে?
তারা যে কারণে, যে যুক্তিতে সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ইস্যুতে কওমী মাদরাসাও একই যুক্তিতে প্রতিবাদ করেছে। সুতরাং স্বাধীনতার (গণতান্ত্রিক) অধিকার নিয়ে সরকার বিরোধী; তা বলার কোন অবকাশ নেই।
দেশের আইনের প্রতি কারা অধিক শ্রদ্ধাশীল তা আশা করি সরকারকে বোঝাতে হবে না। কারণ সরকার খুব ভালো করেই হয়তো জানে, সুন্নি মাদরাসার ছেলেদের মতো কওমীর ছেলেরা ক্লাসে বসে আরেক মেয়েকে চোখ মারে না। সরকার খুব অবগত যে, ধর্মীয় পোশাকে পার্কে পার্কে লুলামী কারা করে, কারা পাঞ্জাবীটা খুলে চাপাতি-রামদা নিয়ে মানুষের রক্ত ঝরায়, আয়কর ছাড়াই কোটি টাকার অবৈধ মাজারী ব্যবসা করে। সারা বছর ক্লাসে না থেকেও বছর শেষে কিছু টাকা দিয়ে সার্টিফিকেট সুন্নি মাদরাসাতেই মেলে, সেটা আর সরকারকে বোঝাতে হবে না। সুতরাং এখান থেকেও বোঝা যায় কারা আনুগত্যশীল।
ভালোভাবে যাচাই করলে একটি বিষয় খুব পরিস্কার হয় যে, কওমী মাদরাসা সরকারের ওই কাজগুলোরই প্রতিবাদ করেছে, যেগুলো ইসলাম এবং মুসলামানদের জন্য ক্ষতিকর। মুসলমানদের অধিকার আদায়ের জন্যই কওমীদের যতো সংগ্রাম যতো সরকার বিরোধী অবস্থান। আমাদের প্রধানমন্ত্রী একজন মুসলমান হিসেবে, কওমীর আন্দোলন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর অধিকার আদায়ের আন্দোলনও বটে। এর বাস্তব প্রমাণ ক’দিন আগে গণভবনে পাওয়া গেছে। শুধুমাত্র কওমীরাই গ্রীকদেবীর মূর্তি সরানোর দাবী করে আসছিলো। পরে প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, এই মূর্তি স্থাপন একটি হাস্যকর বিষয়। এটা সরানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
এখান থেকেও স্পষ্ট হয় যে, কওমীর আন্দোলন-সংগ্রামে কারো আনুগত্যতার প্রশ্ন অমূলক। যাদের আন্দোলন মুসলমান; চাই সে প্রধানমন্ত্রী হোক বা পথের ফকীর, সবার ধর্মীয় অধিকার আদায়ের জন্য।এ ক্ষেত্রে ধর্মের বিরুদ্ধে গিয়ে কারো অনুগত হবার প্রশ্নই আসে না। এটা কওমীদের কাজ নয় বরং নামধারী সুন্নিরা এর দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বাংলাদেশে।
* তাদের আরেকটি অভিযোগ হলো, এই স্বীকৃতি প্রদানে জাতি স্তম্ভিত। কথাটা একেবারেই মিথ্যা এবং ফোলানো-ফাঁপানো। জাতি নয় বরং জাতির একাংশ তথা মাজারপূজারীরা সুন্নিরা স্তম্ভিত। কওমী বিদ্বেষী ও ইসলাম বিরোধীরা তম্ভিত।
যাদের সংবাদ সম্মেলনে দু’টি মিডিয়ার দেখা মেলে না, যাদের প্রতিবাদ সমাবেশ বা ওয়াজ মাহফিলে বক্তার পরে প্যান্ডেলে বসে পাছা চুলকানোর মতো মানুষ থাকে না, তারাই আবার জাতির কথা বলে!
দেশের কোটি মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে আছে কওমী মাদরাসা। মানুষের মনের গহীনে জড়িয়ে আছে কওমীর প্রতি ভালোবাসা। এর কোন প্রমাণ দিতে হবে না, সবার সামনে তা উন্মুক্ত।
সুতরাং এসব চুলকানীবাজ তথাকথিত সুন্নিদের ধোঁকায় সরকার আর পড়বে না, এটাই আমাদের বিশ্বাস। জাতিও তাদের থেকে সতর্ক থাকুক; এটাই কামনা।
বিঃদ্রঃ কওমী মাদরাসার সরকারী স্বীকৃতি প্রদানে রাষ্ট্রপ্রধানকে শুভেচ্ছা।
কাজী হামদুল্লাহ
হাটহাজারী, চট্টগ্রাম