রশীদ জামীল
সমীকরণটি মাথায় ঢুকছে না আমার। হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন, শাহরিয়ার কবির অথবা এই তরিকার জনবিচ্ছিন্নরা কোথায় কী বলল, সেটা নিয়ে এত মাতামাতির দরকারটা কী ছিল? চাঁপা আর দাপা ছাড়া আর কী আছে তাদের! আওয়ামীলীগের দয়ার উপর ভর করে হামকে-তুমকে করে চলা এই লোকগুলোকে এত গুরুত্বের সাথে নেয়ার তো কোনো কারণ থাকা উচিত ছিল না। কেনো নেয়া হয়! ইনু-মেনন-কবির এবং এই ক্যাটাগরির আরো যত চা থেকে পেয়ালা গরম ক্যারেকটার, এদের নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে কেনো! কেনো তাদের কথার রেফারেন্স টেনে তাদেরকে গুরুত্ব দিতে হবে! কী মুরোদ আছে তাদের? এরা আওয়ামীলীগের নৌকায় উঠে সংসদে না গেলে কিয়ামতের আগে তাদের চৌদ্দ গোষ্ঠীরও কি ক্ষমতা ছিল জাতীয় সংসদে গিয়ে লম্বা লম্বা কথা বলার। এর আগে এরা যখনই কোনো নির্বাচনে দাঁড়ানোর ধৃষ্টতা দেখিয়েছে, কোনোবার জামানত রক্ষা করতে পেরেছিল? তাহলে কাকে নিয়ে কথা বলে সময় নষ্ট করা হয়!
সারা দেশের সাড়ে তিন ডজন মানুষও যাদের সাথে নেই, তাঁরা টেলিভিশনে গিয়া উলটা-পাল্টা বাতচিত করলে কী আসে যায়! নাচানাচি তো তাদের পুরনো স্বভাব। আজকাল হাসানুল হক ইনু তো টেলিভিশনের ভেতরে নাচানাচি করছেন। টেলিভিশনের উপরে উঠে শুরু করলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। যে লোক বঙ্গবন্ধুকে হত্যার আনন্দে ট্যাংকের উপরে উঠে নৃত্য করতে পারে, তারপক্ষে অসম্ভব বলে কিছু নেই।
২.
আমার ফেইসবুক বন্ধু তালিকায় প্রগতিশীলতার ধ্বজাধারী অনেকেই আছেন, যারা ইনু-মেনন-শাহরিয়ারদের কথার প্রতিধ্বনি করতে ভালোবাসেন। তাদের প্রায় সকলের সাথেই আমার ব্যক্তি পরিচয় আছে। আপনাদের বলছি। আপনার প্রগতি যদি উতলে উঠে থাকে আর বলবার চেষ্টা করেন, আপনারা অথবা আপনাদের পুরোহিতরা বাংলাদেশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য, তাহলে গুরুদের নিয়ে মাঠে আসুন। বাংলাদেশের যে কোনো প্রান্থে নিজের পরিচয়ে আপনাদের একজন গুরু নির্বাচনে দাঁড়াক। সেই আসনে আমরা একজন আলেমকেও দাঁড় করাই। কারো কোনো দলীয় পরিচয় বা প্রতীক থাকবে না। আর কোনো প্রার্থীও থাকবেন না। আপনারা আপনাদের সর্বস্ব নিয়ে ক্যাম্পেইনিং চালাবেন, কোনো সমস্যা নাই। তারপর দেখেন কত গমে কত আটা হয়! দেখেন বলে-কয়ে রাজি করাতে পারেন কিনা।
আমি জানি, আর এটাও জানি যে, আপনারাও জানেন তাঁরা কখনো এমন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসতে রাজি হবেন না। কারণ, তাহলে জনমের মত মুখে চুনকালি পড়ে যাবে। ‘বাংলাদেশের মানুষ এটা চায় ওটা চায়’ বলে বলে নিজেদের নষ্ট চিন্তার সওদা আর করতে পারবেন না তাঁরা। আর লাজ-লজ্জার মাথা খেয়ে করেনও যদি, তখন জনগণ তাদের দিকে একদলা থু থু ছুড়ে দিয়ে বলবে, ‘ব্যাটা অফ যা। দেশের মানুষ কী চায় সেটা নিয়ে তর কথা বলার কোনো অধিকার নেই। কারণ, দেশের মানুষ তোকে যে চায় না, এটা তো প্রমাণীত’।
দয়াকরে এখন অফ যান। অনেক ভাঙা রেকর্ড বাজিয়েছেন। ইরিং-বিরিং-তিরিং-তা অনেক করেছেন। এবার বাদ দিন। সেই দিন আর নাই। দিন বদলাইছে। আপনারাও বদলান। নিজের স্বার্থে। দেশের জন্যে। ধ্বংস হয়ে যাওয়া থেকে কি খাসলত বদলে ফেলাটা ভালো না?
আর যদি কওমি সনদের যৌক্তিকতা নিয়ে কথা বলতে জিহ্বা চুলকায়, তাহলে বলবেন। এই খাহেশও মিটিয়ে দেয়া হবে, ইনশাআল্লাহ। শর্ত শুধু একটাই, ত্যানা প্যাচাতে পারবেন না। কথা বলবেন সাবজেক্টওয়াইজ, যুক্তির আলোকে, পরিসংখ্যান সামনে রেখে। রাজি থাকলে আওয়াজ দিয়েন। সময় ঠিক করে নেয়া যাবে। আমরা দেখতে চাই তলানিতে কোন ক্যাটাগরির কত বস্তা যোগ্যতা নিয়ে বসে আছেন আপনি অথবা আপনারা।
৩.
বামদের মধ্যেও কোয়ালিটি আছে দুইটা।
– প্রকৃত বাম
– চুপা বাম।
প্রকৃত বামদের অবস্থান পরিস্কার। খাওয়া-দাওয়া এবং প্রাকৃতিক ক্রিয়াকর্ম সম্পাদনের পর তাদের মূল কাজ হল ইসলামের সমালোচনা করা এবং দেশের বারোটা বাজানো। তাদের কর্মকাণ্ড তাদের উদ্দেশ্যের প্রতিনিধিত্ব করে বলে তাদের নিয়ে দেশবাসীর মাঝে কোনো বিভ্রান্তি কাজ করে না। তাদের চরিত্র জাতির সামনে পরিস্কার। সমস্যা হয়ে যায় চুপা রুস্তুমদের নিয়ে। এরা নিজেদের মুসলমান বলে প্রকাশ করে কিন্তু ইসলামের ব্যাখ্যা তাদের কাছে তাদের নিজের মতো করে।
এরা কতবেশি মুর্খতায় নিমজ্জিত, প্রমাণ তাঁরা নিজেরাই।
– মানুষের স্বাস্থ্যগত বিষয়ে প্রেসক্রাইভ করতে হলে মেডিক্যাল সাইন্সের নির্ধারিত সিলেবাস নিয়মতান্ত্রিকভাবে অধ্যয়ন করে অভিজ্ঞ শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে প্রাকটিক্যাল ওয়েতে ডাক্তার হতে হয়। নিজে নিজে ডাক্তারি বই মুখস্ত করে কেউ যদি প্রেসক্রিপশন দিতে শুরু করে, তাহলে রোগির সাড়ে বারোটা যে ভোর ছয়টার সময়ই বেজে যাবে, এটা তাঁরা বুঝে।
– পদার্থ বিজ্ঞানের ক্লাস না করেই কোনো অপদার্থ যদি পৃথিবীর আহ্নিক গতি ও বার্ষিক গতি নিয়ে সূত্র কচলাতে শুরু করে, তাহলে হাঁটু পানিতে সাঁতার কাটা ছাড়া তার আর কোনো গতি থাকে না। তাঁরা এটাও বুঝে।
– কেউ ইঞ্জিনিয়ার হয়ে যদি কারো অপেন হার্ট সার্জারি করতে চায়, তাহলে তাকে ধরে অবশ্যই হেমায়েতপুর পাঠিয়ে দেয়া উচিত, ব্যাপারটি তারাও স্বীকার করে কিন্তু কোরআন-হাদিসের বেলায় এসে তাদের লজিক ঢিলে হয়ে যায়। এমন ভাব দেখায় যে, যেনো কোরআন-হাদিস বোঝা এবং সে অনুযায়ী ইসলামের ব্যাখ্যা করা তাদের কাছে তাদের বা-হাতকা খেল মাত্র। আমড়া কাঁঠে ঢেকি ছাড়া আর কী কী তৈরি হয়, তার একটা তালিকা তৈরি করার সময় হয়েছে। অবশ্য আমড়াও একটা ফল! এখন কথা হল, ফাওতাবাজ কাহাকে বলে?