বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ বিকাল ৩:০৯
Home / অর্থনীতি / সামরিক সমঝোতা স্মারকসহ ২২ চুক্তি স্বাক্ষর

সামরিক সমঝোতা স্মারকসহ ২২ চুক্তি স্বাক্ষর

দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির শীর্ষ বৈঠক

কমাশিসা ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে শীর্ষ বৈঠকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে মোট ২২টি চুক্তি ও সামরিক সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। তবে বহুল আলোচিত ও বাংলাদেশের প্রত্যাশিত তিস্তা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে এবারও কোন সমঝোতা বা চুক্তি হয়নি। এ ব্যাপারে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অতীতের মতই আশ্বাসের বাণী শুনিয়েছেন। চুক্তি স্বাক্ষরের পর সংবাদ সম্মেলনে দেয়া বক্তব্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, খুব সহসাই দুই দেশ তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তিতে উপনীত হবে। আর সামরিক খাতে সহায়তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিশাল সীমান্তের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও জঙ্গী দমনে ভারত বাংলাদেশের স্বার্থে ওই সামরিক সহায়তা চুক্তি করেছে। এই চুক্তির আওতায় ভারত বাংলাদেশের কাছে সমরাস্ত্র বিক্রি করবে। এ জন্য ভারতের পক্ষ থেকে ৫০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তার কথাও বলেন নরেন্দ্র মোদী। এ ছাড়া অন্যান্য চুক্তির মধ্যে বিদ্যুৎ, ট্রানজিট, নৌ প্রটোকল, রেল যোগাযোগ ও ভারত থেকে পাইপ লাইন স্থাপন করে বাংলাদেশে জ্বালানি তেল আমদানির বিষয়টিও রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপস্থিতিতে গতকাল দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর হায়দ্রাবাদ হাউজে এসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকগুলো সই হয়েছে। সইয়ের পর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তা প্রকাশ করেছে। শেখ হাসিনার ভারত সফরের আগেই এই চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকগুলো প্রকাশের দাবি জানিয়ে আসছিল বিএনপি। গত সইয়ের পর বিএনপি তাদের প্রতিক্রিয়ায় এটাকে জাতির সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা বলে আখ্যায়িত করেছে।
এই চুক্তি ও সমঝোতাগুলো হচ্ছে-
১। বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের মধ্যে ‘প্রতিরক্ষা সহযোগিতা রূপরেখা’ সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক।
২। কৌশলগত ও ব্যবহারিক শিক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে ঢাকার মিরপুরের ডিফেন্স সার্ভিস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ ও ভারতের তামিলনাডু রাজ্যের ওয়েলিংটনে (নিলগিরি) ডিফেন্স সার্ভিস স্টাফ কলেজের মধ্যে সমঝোতা স্মারক।
৩। জাতীয় নিরাপত্তা, উন্নয়ন ও কৌশলগত শিক্ষার ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে ঢাকার ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ ও নয়া দিল্লির ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের মধ্যে সমঝোতা স্মারক। [প্রতিরক্ষা খাতের এই তিন সমঝোতা স্মারকে বাংলাদেশের পক্ষে সেনাবাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার ও ভারতের প্রতিরক্ষা সচিব সই করেন]।
৪। মহাকাশের শান্তিপূর্ণ ব্যবহারে সহযোগিতার বিষয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সমঝোতা স্মারকে সই করেন বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) ও ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশনের (আইএসআরও) চেয়ারম্যান।
৫। আণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারে সহযোগিতার বিষয়ে দুই দেশের সরকারের মধ্যে চুক্তিতে সই করেন বাংলাদেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব এবং ভারতের আণবিক শক্তি বিভাগের সচিব।
৬। পরমাণু নিরাপত্তা ও বিকিরণ নিয়ন্ত্রণে কারিগরি তথ্য বিনিময় ও সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ অ্যাটমিক এনার্জি রেগুলেটরি অথরিটি (বিএইআরএ) ও ভারতের অ্যাটমিক এনার্জি রেগুলেটরি বোর্ডের (এইআরবি) মধ্যে বন্দোবস্তোনামায় দুই সংস্থার চেয়ারম্যান সই করেন।
৭। বাংলাদেশে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে সহযোগিতার বিষয়ে বাংলাদেশ অ্যাটমিক এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিএইআরসি) ও ভারতের গেøাবাল সেন্টার ফর নিউক্লিয়ার এনার্জি পার্টনারশিপের (জিসিএনইপি) মধ্যে চুক্তিতে দুই সংস্থার চেয়ারম্যান সই করেন।
৮। তথ্যপ্রযুক্তি ও ইলেকট্রনিকসের ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং ভারতের ইলেক্ট্রনিকস ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক।
৯। সাইবার নিরাপত্তা ক্ষেত্রে বাংলাদেশ গভর্নমেন্ট কম্পিউটার ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিম (বিজিডি ই-জিওভি সিআইআরটি) ও ইন্ডিয়ান কম্পিউটার ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিমের (সিইআরটি-ইন) মধ্যে চুক্তি। [বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব ও ভারতের ইলেক্ট্রনিকস ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব এ দুটিতে সই করেন] ১০। বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তজুড়ে বর্ডার হাট স্থাপনের বিষয়ে সমঝোতা স্মারকে সই করেন দুই দেশের বাণিজ্য সচিব।
১১। বিচারিক ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতায় দুই দেশের সরকারের মধ্যে সমঝোতা স্মারকে বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সই করেন।
১২। ভারতে বাংলাদেশের বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা তৈরির কর্মসূচির বিষয়ে সমঝোতা স্মারকে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ও ভারতের ন্যাশনাল জুডিশিয়াল অ্যাকাডেমির (এনজেএ) পরিচালক সই করেন।
১৩। নৌবিদ্যায় সহায়তার বিষয়ে সহযোগিতা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারকে বাংলাদেশের নৌপরিবহন বিভাগের সচিব ও ভারতের লাইটহাউজ অ্যান্ড লাইটশিপসের মহাপরিচালক (ডিজিএলএল) সই করেন।
১৪। ভূবিদ্যা নিয়ে গবেষণা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে পারস্পরিক বৈজ্ঞানিক সহযোগিতার বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারকে জিওলজিক্যাল সার্ভে অব বাংলাদেশের (জিএসবি) মহাপরিচালক ও জিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার (জিএসআই) উপ-মহাপরিচালক সই করেন।
১৫। কোস্টাল ও প্রটোকল রুটে যাত্রী ও পর্যটন সেবায় দুই দেশের সরকারের মধ্যে সমঝোতা স্মারক ও স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউরস (এসওপি) দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বিনিময় করা হয়।
১৬। ভারত-বাংলাদেশ প্রটোকল রুটে সিরাজগঞ্জ থেকে লালমনিরহাটের দইখাওয়া এবং আশুগঞ্জ থেকে জকিগঞ্জ পর্যন্ত নাব্য চ্যানেলের উন্নয়নে সমঝোতা স্মারক। এই সমঝোতা স্মারক দুটিতে সই করেন দুই দেশের নৌসচিব।
১৭। গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে সমঝোতা স্মারকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব ও ভারতের তথ্য সচিব স্বাক্ষর করেন।
১৮। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে অডিও-ভিজ্যুয়াল সহ-প্রযোজনা চুক্তি স্বাক্ষর।
১৯। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৫০ কোটি ডলারের প্রতিরক্ষা ঋণ সহায়তা সমঝোতা স্মারকে সেনাবাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার ও ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সই করেন।
২০। মোটরযান যাত্রী চলাচল (খুলনা-কলকাতা রুট) নিয়ন্ত্রণের জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চুক্তি ও চুক্তির স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউরসে দুই দেশে সড়ক বিভাগের সচিব স্বাক্ষর করেন।
২১। তৃতীয় ঋণ সহায়তার আওতায় বাংলাদেশকে সাড়ে ৪০০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার বিষয়ে সমঝোতা স্মারকটিতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ও ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সই করেন।
২২। বাংলাদেশে ৩৬টি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণে অর্থায়নের চুক্তিতে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ও বাংলাদেশে ভারতীয় হাই কমিশনার সই করেন।
বিচার বিভাগের সহযোগিতা, সাড়ে চারশ’ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা, মহাকাশ গবেষণা এবং যাত্রীবাহী নৌ চলাচলে স্বাক্ষরিত সমঝোতাপত্রগুলো অনুষ্ঠানে বিনিময় হয়।

বাংলাদেশ-ভারত বন্ধন ভ্রাতৃত্বের, যৌথ ঘোষণা
ইনকিলাব ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর উপলক্ষে নেওয়া যৌথ ঘোষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ভারত ভাই ভাই। শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের মধ্য দিয়ে দু’দেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় উঠে আসলো।
ঘোষণায় আরো উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক যে ইতিহাস, সংস্কৃতি আর ভাষা দিয়ে গাঁথা তা আরও দৃঢ়তার দিকে যাবে। দুই দেশ একই অসা¤প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ দিয়ে পরিচালিত। দুই দেশের মধ্যে রয়েছে আরও অসংখ্য মিল।
তারা জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে অটুট, অংশীদারিত্বের। সব দিক এতে বিদ্যমান, আর তা সার্বভৌমত্ব, সমতা, পারস্পরিক বোঝাপড়া ও আস্থার ভিত্তিতে গঠিত। আর এই অংশিদারিত্ব যেকোনো কৌশলগত অংশিদারিত্বের চেয়েও বড় কিছু।
এই অঞ্চলে শান্তি, সবার সমৃদ্ধি ও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে দুই নেতা তাদের পুরনো অঙ্গীকারও পুনর্ব্যক্ত করেন এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে।
শনিবার সন্ধ্যায় এই যৌথ ঘোষণা প্রকাশ করে বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এর আনুষ্ঠানিক প্রকাশের ঘোষণা দিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক জানান, ঘোষণার ৬২টি অনুচ্ছেদে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সব বিষয়ের সমন্বয় ঘটানো হয়েছে।
তিনি বলেন, চিন্তার মধ্যে আসে এমন সব বিষয়াই এই যৌথ ঘোষণায় রয়েছে। এর মধ্য দিয়ে উভয় দেশ তাদের ভবিষ্যতে এগিয়ে যাওয়াার পথে এক সঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে।
ঘোষণায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির গতিশীল নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। ভারতের সার্বিক উন্নয়ানে তার নেওয়া দৃঢ় পদক্ষেপ ও উদ্যোগগুলোর কথাও বলেন তিনি।

মোদি একইভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করেন। বাংলাদেশের যে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটেছে তার কথা উল্লেখ করেন। এছাড়া শেখ হাসিনার নেয়া পদক্ষেপের কারণেই বাংলার যে উন্নয়ন তা সুনির্দিষ্ট করে উল্লেখ করেন। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে, শান্তি, স্থিতিশীলতাপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে শেখ হাসিনার সাহসী ভূমিকারও প্রশংসা করেন নরেন্দ্র মোদি। বাংলাদেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে শেখ হাসিনার দৃঢ় অবস্থান ও ভূমিকার কথাও তুলে ধরেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
যৌথ ঘোষণায় দুই প্রধানমন্ত্রী ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে যে ভয়াাবহ হত্যাযজ্ঞ চালানো হয় তার নিন্দা করেন এবং ২৫ মার্চকে একটি আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনে উভয় প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি আহŸান জানান।
এছাড়া যৌথ ঘোষণায় বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় নিহত ১৬৬১ জন সশস্ত্র ভারতীয় সেনার প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা জানাতে তাদের পরিবারের হাতে যে সম্মাননা তুলে দেয়ায় শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান নরেন্দ্র মোদি।

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...