বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ সন্ধ্যা ৬:২৩
Home / প্রতিদিন / মেয়র আরিফ আবারও বরখাস্ত

মেয়র আরিফ আবারও বরখাস্ত

কমাশিসা ডেস্ক : দীর্ঘ আইনি লড়াই চালিয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়রের পদ ফিরে পেয়েছিলেন আরিফুল হক চৌধুরী। আজ রবিবার সকালে রীতিমতো শোডাউন করে গিয়েছিলেন নগর ভবনে। বসেন মেয়রের চেয়ারে। কিন্তু মেয়রের চেয়ারে বসার মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ‘দুঃসংবাদ’ এসেছে আরিফের জন্য। ফের মেয়রের পদ থেকে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সিটি করপোরেশন অ্যাক্ট উপ-সচিব মো. মাহমুদুল আলম কর্তৃক সিলেট সিটি করপোরেশনে একটি ফ্যাক্স বার্তা প্রেরণ করা হয়েছে।

ওই বার্তায় বলা হয়েছে, ‘আরিফুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল মামলা-৪/২০০৯ এর সম্পূরক অভিযোগপত্র গত ২২ মার্চ আদালতে গৃহিত হয়েছে। সেহেতু সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে স্থানীয় সরকার বিভাগ আইন ২০০৯ এর ১২ উপধারা প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। ’

ওই বিশেষ ট্রাইব্যুনাল মামলাটি হচ্ছে প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের জীবদ্দশায় দিরাইয়ে একটি জনসভায় বোমা হামলার মামলা।

২০০৪ সালের ২১ জুন দুপুরে সুনামগঞ্জের দিরাই বাজারে একটি জনসভায় বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। সভায় প্রধান অথিতি ছিলেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। এ বোমা হামলায় এক যুবলীগ কর্মী নিহত হয় ও  ২৯ জন আহত হয়। পরদিন পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা করে। প্রথমে পুলিশ, পরে সিআইডি মামলার তদন্ত করে। গত বছরের ২০ জুলাই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির হবিগঞ্জ জোনের তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার বসু দত্ত চাকমা আরিফ ও হবিগঞ্জ পৌর মেয়র জি কে গউছকে গ্রেফতারের আবেদন জানান আদালতে। পরে ১৫ সেপ্টেম্বর আদালতে মামলার চার্জশিট দাখিল করা হয়। চার্জশিটে আরিফ-গউছসহ ১৩ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। গত বছরের ২৭ নভেম্বর ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় আরিফ ও গউছকে। পরে চলতি বছরের ২২ মার্চ মামলার চার্জশিট আদালতে গৃহিত হয়।

২০১৩ সালের ১৫ জুন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিজয়ী হন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী। নির্বাচনের দেড় বছরের মাথায় তিনি জড়িয়ে পড়েন সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএম এস কিবরিয়া হত্যা মামলায়। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে সিআইডির সম্পূরক চার্জশিটে ওই মামলায় আসামি করা হয় তাকে। ওই বছরের ৩০ ডিসেম্বর হবিগঞ্জ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন প্রার্থনা করেন আরিফ। আদালত তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।

কারাগারে যাওয়ার পরই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন আরিফ। পরে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকায়। সেখানে প্রায় ৬ মাস হাসপাতালে থেকে তার চিকিৎসা চলে। সিলেট কেন্দ্রীয় কারগারে আসার পরও কয়েক দফায় তিনি ভর্তি হন ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। মামলার নির্ধারিত তারিখে হুইল চেয়ারে বসিয়ে তাকে নিয়ে আসা হতো আদালতে। কিবরিয়া হত্যার পর তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয় সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের জনসভায় বোমা হামলার মামলায়।

এদিকে, কারান্তরিণ হওয়ার একসপ্তাহের মধ্যে ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ থেকে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এরপর ভারপ্রাপ্ত মেয়রের পদ নিয়ে আইনী লড়াইয়ে অবতীর্ণ হন প্যানেল মেয়র রেজাউল হাসান কয়েস লোদী ও এডভোকেট সালেহ আহমদ। অবশেষে মামলার জালে আটকা পড়ে মেয়রের চেয়ারে বসা হয়নি কারো। আরিফের অনুপস্থিতিতে দু’বছরই শূন্য থাকে মেয়রের চেয়ার।

কিবরিয়া হত্যা ও সুরঞ্জিত সেনের জনসভায় বোমা হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত ৪টি মামলায় পর্যায়ক্রমে উচ্চ আদালত থেকে জামিন লাভ করেন আরিফ। ২ বছর ৪ দিন পর চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি সবকয়টি মামলায় জামিনে মুক্ত হন তিনি। গত ১৩ মার্চ আরিফের রিটের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বরখাস্তের আদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন। রাষ্ট্রপক্ষ এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করলে গত ২৩ মার্চ হাইকোর্টের দেওয়া আদেশই বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।

ওই আদেশের প্রেক্ষিতে আজ রবিবার স্বাড়ম্বরে নগর ভবনে গিয়ে ফের মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। নতুন করে তার দায়িত্ব গ্রহণ উপলক্ষে নগর ভবনে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

রবিবার সকাল সাড়ে ১০টায় দলীয় নেতাকর্মী ও এলাকার লোকজনদের নিয়ে বাসা থেকে নগর ভবনের উদ্দেশ্যে বের হন আরিফ। পায়ে হেঁটে নগরীর চৌহাট্টা হয়ে সকলকে নিয়ে নগর ভবনে সোয়া ১১টার দিকে পৌঁছান তিনি। এসময় সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আরিফকে ফুলেল অভর্থ্যনা জানান।

তবে সোয়া ১১টা থেকে বেলা ২টা, এই প্রায় তিন ঘণ্টা সময় মেয়র পদে থাকার পর ফের বরখাস্ত হয়েছেন আরিফ।

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...