বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ সন্ধ্যা ৭:১৩
Home / ইতিহাস ঐতিহ্য / সমুদ্র ঈগল ২৩

সমুদ্র ঈগল ২৩

কুতায়বা আহসান

পূর্ব প্রকাশের পর 

এদিকে অাফ্রিকার স্পেনিশ গভর্নর মুনকিডও জানতে পেরেছিল খাইরুদ্দীন বারবারুসা নতুন শক্তি নিয়ে আলজেরিয়ার দিকে ধেয়ে আসছেন। এ খবর জানার পরও মুনকিড ছিল খুবই নিশ্চিন্ত ও প্রশান্ত। কেননা, সে আফ্রিকান নেতাদের মধ্য থেকে একমাত্র আব্দুল আযীয ব্যতীত সবাইকে তার দলে ভিরিয়ে নিয়েছিল।
তিলমিসানের শাসক আবু হামু তার সহযোগী হলে কুকো অধিপতি ইবনে কাজি ছিল তার অন্তরঙ্গ সাথী। তিউনিসীয় বাদশাহ হাস্সান তার আস্তাভাজন হলে সুগরাভি কবীলার সর্দার একাংশের সর্দার আহমদ বিন কাজি ছিল তার পা চাটা গোলাম। সেই তালিকায় এবার যোগ হলো বারবারদের নেতা হাফসিও। তাই মুনকিডের যেন কোনোই পরোয়া ছিল না। সে খাইরুদ্দীনকে কোনো গুরুত্বই দিচ্ছিল না। সে দম্ভ করে বলে বেড়াচ্ছিল, বারবারুসাকে উপকুলের মাটিতে পা রাখতেও দেবে না।
অপরদিকে বারবারুসাও ছিলেন এসব ব্যাপারে পূর্ণ অবহিত। কিন্তু তার পরও একরাতে তিনি নিজ অবস্থান থেকে ঝড়ের বেগে ইবনে কাজির কেন্দ্রীয় শহর কুকোর উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন।
খাইরুদ্দীনের বেরিয়ে পড়ার সংবাদটা তাঁর শত্রুদের অজানা রইল না। খবর পেয়ে কেবল মুনকিড নয় বরং তার সকল সহযোগী আবু হামু, আহমদ বিন কাজি, হাস্সান এবং হাফসি কুকো শহর ও ইবনে কাজির নিরাপত্তার লক্ষে স্ব স্ব বাহিনীর একটা অংশ কুকোর দিকে পাঠিয়ে দেয়।
খাইরুদ্দীন বারবারুসা বিদ্যুৎ ক্ষিপ্র গতিতে দূরত্ব ঘোঁচিয়ে নিয়ে যমদূতের মতো ইবনে কাজির কেন্দ্রীয় শহর কুকোতে এসে পৌঁছান। খাইরুদ্দীন চাইছিলেন ইবনে কাজির ইত্তেহাদী সৈন্যরা এসে পৌঁছার আগেই তিনি এসে পৌঁছাবেন। কিন্তু অশ্বের গতিবেগের সাথে পাল আর দাড়ের গতিবেগ কুলিয়ে উঠতে পারল না। ফলে তিনি উপকুলে নেমেই দেখতে পেলেন ইবনে কাজি তার ইত্তেহাদী সৈন্য নিয়ে কুকো শহরের বাইরে ‘বাকদুরা’র মৃত্যুপ্রান্তরে প্রস্তুতি নিয়ে বসে আছেন।
খাইরুদ্দীন ওখানে পৌঁছা মাত্রই ইবনে কাজি তার বাহিনীতে যুদ্ধ প্রস্তুতির তবল বাজিয়ে দিলেন। তিনি চাইছিলেন যেহেতু তার সৈন্যরা সতেজ আর খাইরুদ্দীনের সৈন্যরা দীর্ঘপথ পাড়ি দেয়ার ধকলে ক্লান্ত, তাই এই সুযোগে তাদের উপর আক্রমণ করে কাবু করে ফেলবেন।
অপরদিকে খাইরুদ্দীনও তাঁর বাহিনীকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দিয়ে দিলেন। আদেশ পাওয়া মাত্রই তাঁর বাহিনী আল্লাহু আকবার-এর আওয়াজে প্রান্তর কাঁপিয়ে তুলল। বারবারুসা তাঁর সালার তুরগুত, হাসান ক্রুসু, সালেহ, কাকদ এবং সানআনদের দিয়ে বুহ্য রচনায় মনোযোগী হয়ে উঠলেন। কাজ যখন প্রায় শেষ, ঠিক সে মুহূর্তে সেখানে এসে উপস্থিত হলেন তাঁর টহলদলের ক’জন সদস্য। ওদেরকে দেখে বারবারুসা ও তাঁর সালারদের কান খাড়া হয়ে উঠল। না জানি ওরা কোন সংবাদ নিয়ে এসেছে।
খাইরুদ্দীন তাদেরকে প্রশ্ন করতে যাবেন সেই মুহূর্তে ওদের একজন কিছুটা এগিয়ে এসে চেহারায় আনন্দের আভা ফুটিয়ে তুলে বললেন: মুহতারাম আমীর! আমরা আপনার জন্য একটা খুশখবরি নিয়ে এসেছি। কথাটা শুনার সাথে সাথে সবার চেহারা বিকশিত ফুলের মতো ঝলমলিয়ে উঠল। খাইরুদ্দীন প্রায় অস্থির কন্ঠে বলে উঠলেন:
আমার প্রিয় সাথীরা! বলো তোমরা কী খুশখবরি বয়ে নিয়ে এসেছো?
আমীরে মুহতারাম! আমরা জানতে পেরেছি যদিও ইবনে কাজির সহায়তায় মাঠে আবু হামু, হাস্সান, আহমদ বিন কাজি, হাফসি এবং মুনকিডের ইত্তেহাদী বাহিনী প্রস্তুত কিন্তু খোদ ইবনে কাজির সেনাবাহিনীতে বিদ্রোহ জেগে উঠছে। কথাটা শুনে খাইরুদ্দীন ও তাঁর সালাররা অবাক বিস্ময়ে লোকটির চেহারার দিকে তাকিয়ে রইলেন। লোকটি না থেমে বলে যেতে লাগলো:
মুহতারাম আমীর! ইবনে কাজির উপযুক্ত ছেলে হুসাইন যিনি তার সেনাদলের একটি ইউনিটের কমান্ডারও তিনি মুসলমানদের বৃহত্তর ঐক্যের পক্ষে। তিনি এ যুদ্ধের পক্ষে নন। তিনি চান না আফ্রিকার মুসলমানরা পরস্পর যুদ্ধ করে নিজেদের মেরুদণ্ড ভেঙে ফেলুক আর এর ফায়দা স্পেনীয়রা ভোগ করুক। আমরা জানতে পেরেছি লশকরকে এখানে নিয়ে আসার পূর্বে তাঁর ও তাঁর পিতার মধ্যে তিক্ত বাদানুবাদ হয়েছে। তিনি তদীয় পিতাকে বুঝাচ্ছিলেন, দেখুন! এই স্পেনীয়রা আমাদের ভূখণ্ড দখল করে পড়ে আছে। খাইরুদ্দীন বারবারুসা মূলত এদেরকে আফ্রিকা থেকে তাড়িয়ে দেবার জন্য মাঠে নেমেছেন। তিনি আমাদের প্রতিপক্ষ নন। তাহলে আমরা কোন স্বার্থে ওদেরকে আফ্রিকায় টিকিয়ে রাখার জন্যে খাইরুদ্দীনের প্রতিপক্ষে দাঁড়াবো। বরং আমাদের উচিত খাইরুদ্দীনের সাথে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলে স্পেনের জালেমদেরকে আমাদের ভূখণ্ড থেকে তাড়িয়ে দেই।
লোকটি কথা বলে থামলে খাইরুদ্দীন বললেন: আমি ইবনে কাজির ছেলে হুসাইনের মনোভাবকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু একা একজন কী ভাবে বিদ্রোহ জাগাতে পারে?
জবাবে সেই লোকটি কন্ঠে মিষ্টি হাসি ফুটিয়ে তুলে বললেন: আমীরে মুহতারাম! তিনি একা নন। আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি ইবনে কাজির দুই জেনারেল উবাদা বিন তামাম ও আলকামা বিন সা’দ— সেনাবাহিনীতে যাদের প্রভাব ক্ষেত্র বিশেষে ইবনে কাজির চেয়েও বেশি, তাঁরাও হুসাইনের পক্ষে আছেন। তাঁরা হুসাইনকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, উম্মাহর এ ক্রান্তিকালে তাঁরা স্পেনিশদের সঙ্গ দিতে রাজি নন। মূলত তাঁদের পরামর্শেই হুসাইন তাঁর পিতার সাথে কথা বলেছিলেন।
মুহতারাম! আমরা আরো কিছু বিষয় জানতে পেরেছি, এসবের ভিত্তিতে প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যায়— ইবনে কাজির সেনাবাহিনীতে ভাঙন আসছে। বিদ্রোহ জাগছে।
কথাগুলো শুনে খাইরুদ্দীনের চেহারায় মুচকি হাসির দ্যুতি খেলে গেল। তিনি বললেন: তোমার মুখে ফুল চন্দন পড়ুক। খোদা করুন তা-ই যেন ঘটে, আর সে দিনটা যেন দ্রুতই চলে আসে।
এরপর খাইরুদ্দীন কিছুক্ষণ নীরব থেকে তাঁর সালারদের উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলেন: আমার প্রিয়তম সাথীরা শুনো! লড়াই শুরু হবার আগেই তোমরা নিজের অধীনের থাকা প্রতিটি সৈন্যের কানে এ কথাটা পৌঁছে দিও যে, কুকোর শাসক ইবনে কাজির সেনাদলের মধ্য থেকে তার ছেলে হুসাইন, সেনাপতি উবাদা বিন তামাম এবং সহকারী সেনাপতি আলকামা বিন সা’দের প্রতি যেন সবাই আলাদা নজর রাখে। কোনো অবস্থায়ই যেন তাঁরা আমাদের হাতে নির্যাতীত না হন। তাকলিফ না পান। যুদ্ধে যদি তারা বন্দী হয়ে যান তবুও যেন তাঁদের সাথে কোনো অশোভন আচরণ করা না হয়। সর্বাবস্থায় যেন তাঁদেরকে সম্মান করা হয়, সমীহ করা হয়। এরা মিল্লাতের কল্যাণের পাসবান, যদিও তারা বিরূপ পরিস্থিতির শিকার হয়ে বাহ্যত শত্রুদের সাথে। এঁদেরকে এ অবস্থা থেকে বের করে নিয়ে আসা আমাদের উপর ফরয।
এরপর খাইরুদ্দীন তাঁর বাহিনীকে চূড়ান্তভাবে বিন্যস্ত করে নেয়ার প্রতি মনোযোগী হয়ে উঠেন।
তিনি তাঁর বাহিনীকে চারভাগে বিভক্ত করে নিয়েছিলেন। মধ্যভাগ ছিল তাঁর নিজের কমান্ডে। আর তাঁর সহযোগী হিসেবে ছিলেন তাঁরই পুত্র হাসান। ডানবাহুর নেতৃত্ব দেয়া হয় আলমে ইসলামের আযীম জেনারেল তুরগুতের হাতে। সালেহকে করা হয় তাঁর নায়েব। বাম বাহুর নেতৃত্ব অর্পন করা হয় হাসান ক্রুসুর হাতে, আর কাকাদকে করা তাঁর সহকারী। অপরদিকে পশ্চাতের শিবির রক্ষার দায়িত্ব অর্পন করা হয় সানআনের হাতে।
কুকো অধিপতিও তার বাহিনীকে চূড়ান্তভাবে সাজিয়ে নিয়েছিলেন। তার ওদিকে তখন তবল আর নাকারার আওয়াজ উচ্চকিত হয়ে মাঠ জুড়ে ভীতি ছড়িয়ে দিচ্ছিল। আর সে সাথে তিনি তার বাহিনীকে নিয়ে অগ্রসর হতে লাগলেন। এরপর দেখতে না দেখতেই ইবনে কাজি তার বিশাল যৌথবাহিনীকে সাথে নিয়ে দ্রুতই ব্যবধান কাটিয়ে বিষাক্ত বাতাসের থাপ্পর, কিয়ামতের বিভিষিকা, আগুনের ন্যায় দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠা নফরতের লাবা উদ্গীরণের ন্যায় খাইরুদ্দীনের বাহিনীর উপর ঝাপিয়ে পড়লেন।
এদিকে পাহাড়-বুলন্দ ঢেউ সঞ্চারি তুফানের গতিপথ পরিবর্তনের অভিজ্ঞতায় হৃদ্ধ খাইরুদ্দীনও তাঁর শাহিনসাথীদের নিয়ে পূর্ণ প্রস্তুত হয়ে ছিলেন। তাঁর লশকরও তাকবিরে বুলন্দ আওয়াজে পুরো মাঠটাকে এমনভাবে কাঁপিয়ে তুলছিল যেন মাঠ জুড়ে ভূমিকম্প বইছে। যেন আকাশের সাথে কথা বলা অগ্নিকুণ্ডে হিংস্র সমুদ্র ঝাপিয়ে পড়েছে।
এরপর যখন উভয় বাহিনী পরস্পরের সাথে টক্কর খেল মনে হলো, লোহাড় হাতুড়ি যেন গ্রানাইডের চাটান ভাঙতে চাচ্ছে। যেন উত্তপ্ত মরুভূ বারুদের ফুলকি ওড়াচ্ছে। জিসিম থেকে রুহ বের করে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। চতুর্দিকে যেন নফতরে ধুলি ওড়ছে। আধার তাড়ানো চেরাগের সলতেটা যেন কাত হয়ে পড়ে গেছে। সেই বধ্যভূমিতে মৃত্যু যেন তখন আনন্দে নৃত্য করছিল।
ইবনে কাজি আর তার ইত্তেহাদী সৈন্যদের একীন ছিল তারা খুব তাড়াতাড়িই বিজয় ছিনিয়ে নিতে পারবে কেননা, সৈন্য ও অস্ত্র শক্তি তাদের সে একীনের পক্ষেই কথা বলছিল। তবে তাকদির কিন্তু তখন বারবারুসার ক্লান্ত সৈনিকদের চেহারার দিকে তাকিয়ে হাসছিল। ইবনে কাজির পক্ষে পুরো অাফ্রিকা থাকলেও বারবারুসার সাথে ছিলেন কেবল সুগরাভিদের একাংশের নেতা আব্দুল আযীয। কিন্তু ইবনে কাজি আশ্চর্য হয়ে দেখতে পাচ্ছিলেন আব্দুল আযীয যুদ্ধে নেই। আসলে বারবারুসা আব্দুল আযীযকে নিয়ে ইবনে কাজিকে ধোঁকায় ফেলেছিলেন। ইবনে কাজি মনে করেছিলেন আব্দুল আযীয যুদ্ধে নেই। অথচ আব্দুল আযীয ওঁত পেতে বসা ছিলেন।
বারবারুসার প্রতিঘাতে যখন ইবনে কাজির বাহিনীর সৈন্যদের প্রাণ ওষ্টাগত, যখন ক্রমে তাদের একীন টলে উঠছিল, ঠিক সে সময় ওঁত পেতে থাকা সুগরাভী কবিলার মুহতারাম সরদার আব্দুল আযীয তাঁর কাজ শুরু করে দেন। তিনি গগনবিদারী তাকবিরের আওয়াজ তুলে সিংহের মতো গুহা থেকে বেরিয়েই যেন শিকারের উপর ঝাপিয়ে পড়লেন। আব্দুল আজীজের তীব্র ঝটিকা আক্রমণে ইবনে কাজির যৌথবাহিনীর একটা বাহু যেন পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীর মতো নিশ্চল হয়ে পড়ল। যেন ধ্বংসের এক প্রচণ্ড জলোচ্ছ্বাস তাদের উপর আছড়ে পড়ল। ইবনে কাজির যৌথবাহিনী ইতোপূর্বেই বারবারুসার সালারদের আক্রমণের মুখে কাত হয়ে পড়ে যাচ্ছিল। কয়েকবার আগ্রাসনে আসার পর তারা আক্রমণ ছেড়ে প্রতিরোধের দিকে চলে গিয়েছিল। সেই অবস্থায় যখন সুগরাভী কবিলার সর্দার তাঁর বাহিনী নিয়ে ধ্বংসের তাণ্ডব তুলে ঝাপিয়ে পড়লেন তখন দ্রুতই তাদের অবস্থা অবনতির দিকে ধাবিত হতে লাগলো। তাদের মধ্যে হতাশা আর চোখের সামনে অন্ধকার ছড়িয়ে পড়তে লাগলো। এরপর বেশি সময় গেল না, বারবারুসা আর আব্দুল আযীযের যৌথ আক্রমণের মুখে টিকতে না পেরে ইবনে কাজির যৌথবাহিনী পালিয়ে প্রাণ বাঁচাতে লাগলো।
পরাজয়ের পর ইবনে কাজি চাইলেন আত্মরক্ষার জন্য তিনি তার কেন্দ্রীয় শহর কুকোতে অবরুদ্ধ হয়ে বারবারুসীয় ঝড় প্রতিহত করবেন। সেখানে অবস্থান করেই তিনি তার আফ্রিকি ও স্পেনীয় সাহায্যকারীদের কাছে নতুনভাবে সাহায্য চেয়ে পাঠাবেন। কিন্তু খাইরুদ্দীন বারবারুসা, তুরগুত, হাসান ক্রুসু, সালেহ, কাকাদ এবং সানআনরা মিলে তার সে আশাটা ধুলোয় মিলিয়ে দেন।
পরাজিত ইবনে কাজি যখন তার কেন্দ্রীয় শহর কুকোর দিকে অগ্রসর হতে চাইল তখন খাইরুদ্দীনের বাহিনী তাদের ও কুকোর মধ্যখানে আড়াল হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। ফলে ইবনে কাজি তাৎক্ষণিকভাবে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে কুকোর পরিবর্তে পার্শ্ববতী বূনা শহরের দিকে পালিয়ে যেতে লাগলো। খাইরুদ্দীন বারবারুসা কিছুক্ষণ পরাজিত সৈন্যদের ধাওয়া করে তাদের অন্তরে ত্রাশ জাগিয়ে আবার সেই জায়গায় ফিরে আসলেন যেখানে যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। ওকানে এসে শত্রু বাহিনীর শিবিরে যা কিছু পাওয়া গেল তা গনীমত হিসেবে তুলে নিলেন। এরপর কুকো শহরের দিকে এগিয়ে গেলেন। কুকোতে তখন প্রতিরোধ গড়ে তুলার মতো সৈন্য বিদ্যমাণ ছিল না। ফলে প্রায় বিনা প্রতিেিরাধেই তিনি শহরে ঢুকে পড়লেন।
ইবনে কাজি জঘন্যভাবে পরাজিত হবার পর বূনায় পৌছে তার বেঁচে যাওয়া সৈন্যদের একত্র করে শক্তি সংহত করে তুলতে মনোযোগ নিবদ্ধ করল। সে দ্রুত তার হালীফদের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে কাসেদ প্রেরণ করল।
তার ডাকে তার সাথীরা ভালোই জবাব দিয়েছিল। তারা সাহায্য পাঠাতে লাগলো।
এদিকে কুকো শহর দখলে নেয়ার পর খাইরুদ্দীন বারবারুসা এখানকার শাসনব্যাবস্থা এবং এর নিরাপত্তার দিকে বিশেষ মনোযোগ দেন। তিনি ইবনে কাজি ও যৌথবাহিনীকে পরাজিত করতে পেরে মোটামোটি আনন্দিত ছিলেন। কারণ তাঁর যে পরিকল্পনা ছিল সে পরিকল্পনা রঙ দেখাতে শুরু করছিল।
বাকদূরার মৃত্যুমাঠের সংবাদটা একদিকে যেমন তুর্কি সুলতান সুলায়মানকে উদ্দীপ্ত করে তুলেছিল তেমনি স্পেন সম্রাট চার্লস-এর জন্য তা বজ্রপাত হয়ে আপতিত হয়েছিল। খাইরুদ্দীনের উদীয়মান শক্তিকে সে তার ভবিষ্যতের জন্য খতরনাক হিসেবে দেখতে পাচ্ছিল। সুতরাং সংবাদপ্রাপ্তির পরপরই সে নিজ উদ্দোগে মুনকিযের কাছে বিশাল কয়েকটি যুদ্ধজাহাজের মাধ্যমে বিপুল সাহায্য পৌছিয়ে দেয়। যাতে এই অস্ত্র ও সৈন্য বলে মুনকিডরা জেগে ওঠা তুফানের মোকাবেলা করতে পারে। চলবে

আরও পড়ুন : সমুদ্র ঈগল ২২

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...