মুহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান
লেন্দুপ দর্জি আলোচিত নাম। আলোচিত চরিত্র। বিশ্বাসঘাতকতার প্রতীক। ভারতীয় আধিপত্যবাদের সেবাদাস। ২০০২ সালে ভূষিত হন ভারতের ‘পদ্মবিভূষণ’ খেতাবে। এক সময়ের জনপ্রিয় এই নেতাকে দেশের মানুষ সম্মানের সাথে ডাকত কাজীসাব বলে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ও ইন্দিরা গান্ধী নয়াদিল্লিতে তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাতেন। কিন্তু শেষ জীবনে ভারতের দ্বিতীয় সারির নেতাদের সাথে সাক্ষাৎ করতেও তাকে সপ্তাহের পর সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হয়েছে। বেঁচে ছিলেন ১০২ বছর। দীর্ঘ দিন লিভারের জটিল রোগে ভুগছিলেন তিনি। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে নিঃসঙ্গ, নিন্দিত ও ভীতসন্ত্রস্ত জীবনযাপন শেষে লেন্দুপ দর্জি মৃত্যুবরণ করেন।
তার পুরো নাম কাজী লেন্দুপ দর্জি খাং শেরপা। জন্মেছিলেন ১৯০৪ সালের ১১ অক্টোবর পূর্ব সিকিমের পাকিয়ং এলাকায়। মারা যান ২০০৭ সালের ২৮ জুলাই।
৪০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী স্বাধীন সিকিম এখন ভারতের দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম রাজ্য। আয়তন সাত হাজার ৯৬ বর্গকিলোমিটার। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী লোকসংখ্যা ছয় লাখ সাত হাজার। সিকিমের ভূ-কৌশলগত অবস্থান অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এ রাজ্যের উত্তরে চীন, পশ্চিমে নেপাল, পূর্বে ভুটান ও দক্ষিণে পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং। সিকিম-তিব্বত (চীন) বাণিজ্যপথ ‘না থুলা পাস’ আন্তর্জাতিক গুরুত্ব বহন করে। সামরিক গুরুত্বপূর্ণ শিলিগুড়ি করিডোর সিকিমের কাছেই। বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম দিকে সিকিমের অবস্থান। ঢাকা থেকে সড়কপথে রাজধানী গ্যাংটকের দূরত্ব ৬৫৪ কিলোমিটার। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের বিদায়ের পর মনিপুর, ত্রিপুরা, কুচবিহারসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো ভারতীয় ইউনিয়নে যোগদান করে অথবা যোগদানে বাধ্য করা হয়।
ব্রিটেনের কাছে সিকিম স্বাধীনতার নিশ্চয়তা লাভ করেছিল
সিকিমের স্বাধীন রাজাদের বলা হতো চগওয়াল। ভারতে ব্রিটিশ শাসন শুরুর আগে সিকিম তার পার্শ্ববর্তী নেপাল আর ভুটানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে স্বাধীন অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছিল। ব্রিটিশরা আসার পর তাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে নেপালের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় সিকিম। এ সময় রাজা ছিলেন নামগয়াল। কিন্তু ব্রিটিশরা তিব্বতে যাওয়ার জন্য এক সময় সিকিম দখল করে নেয়, ১৮৮৮ সালে রাজা নামগয়াল আলোচনার জন্য কলকাতা গেলে তাকে বন্দী করা হয়।
১৮৯২ সালে তাকে মুক্তি দিয়ে সিকিমের স্বাধীনতাকে মেনে নেয়া হয়। প্রিন্স চার্লস ১৯০৫ সালে ভারত সফরে এলে চগওয়ালকে রাজার সম্মান দেয়া হয়। চোগওয়ালপুত্র সিডকং টুলকুকে অক্সফোর্ডে লেখাপড়া করতে পাঠানো হয়। টুলকু নামগয়াল ক্ষমতায় বসে সিকিমের ব্যাপক উন্নতি করেন। ব্রিটিশের কাছে সিকিম তার স্বাধীনতার নিশ্চয়তা লাভ করেছিল।
গণভোটে সিকিমের মানুষ ভারতের বিরুদ্ধে রায় দেয়
ব্রিটিশরা ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ ছেড়ে যাওয়ার সময় গণভোটে সিকিমের মানুষ ভারতীয় ইউনিয়নে যোগদানের বিরুদ্ধে রায় দেয়। ফলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নেহরু সিকিমকে স্বাধীন রাজ্য হিসেবে মেনে নিতে বাধ্য হন। ১৯৬২ সালে ভারত-চীন যুদ্ধের পর সিকিমের গুরুত্ব বেড়ে যায়। ১৯৬৩ সালে থাসি নামগয়াল এবং ১৯৬৪ সালে নেহরু মারা গেলে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। চগওয়াল হন পাল্ডেন থন্ডুপ নামগয়াল। এ সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সিকিম দখল করার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করেন। তিনি কাজে লাগান লেন্দুপ দর্জিকে।
সিকিম ছিল ব্রিটেনের আশ্রিত রাষ্ট্র
হিমালয়ের পাদদেশে ছোট্ট স্বাধীন দেশ সিকিমকে ভারতীয় ইউনিয়নের অঙ্গীভূত করার বিল ভারতীয় পার্লামেন্টে আনা হয় ১৯৭৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর। ওই বিল পাস হয় ৩১০-৭ ভোটে। কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (সিপিআই-এম) বিপক্ষে ভোট দেয়। এবং সংবিধান পরিবর্তনের মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের মে মাসে সিকিমকে পাকাপোক্তভাবে একটি অঙ্গরাজ্য করা হয়। এর আগে ব্রিটিশ ভারতে সিকিম ছিল একটি আশ্রিত রাষ্ট্র।
স্বভূমিজাত লেপচা উপজাতীয়রা সিকিমের জনসংখ্যার গরিষ্ঠ অংশ। তাদের রয়েছে নিজস্ব ভাষা ও পোশাক। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে এবং বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে তিব্বত থেকে ভুটিয়ারা ও নেপাল থেকে নেপালিরা এসে বসতি স্থাপন করে। সিকিমের তিনটি ভাষা এখন প্রধান-লেপচা, ভুটানি ও নেপালি।
চতুর্দশ শতক থেকে নামগিয়াল বংশ সিকিমে রাজত্ব করে আসছিল। প্রথম শাসক পুনটমং নামগিয়াল। ১৬৪২ সালে তাকে চগিয়াল উপাধিতে ভূষিত করা হয়, যার অর্থ ধর্মীয় অনুশাসন অনুসরণ করে যিনি রাজকার্য পরিচালনা করেন। সর্বশেষ চগিয়ালকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয় ১৯৭৫ সালে।
প্রথমে ভারত প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র বিভাগের নিয়ন্ত্রণ নেয়
৭২৯৮ বর্গকিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট এই ছোট্ট দেশটির রাজধানী গ্যাংটক। ১৮৮৬ সালে এক চুক্তির অধীনে সিকিম আশ্রিত রাষ্ট্রের মর্যাদায় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে যোগ দেয়। ১৮৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারত ছেড়ে চলে গেলে ওই চুক্তি অকার্যকর হয়ে পড়ে। ১৯৫০ সালে ভারতের সাথে সিকিমের চুক্তি হয়। এই চুক্তিতে সিকিমকে ভারতের আশ্রিত রাষ্ট্রের মর্যাদা দেয়া হয়। চুক্তির অধীনে প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র ও গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ স্থাপনা দেখাশোনার পুরো কর্তৃত্ব ভারত নিয়ে নেয়।
চগিয়াল ২৪ সদস্যের কাউন্সিলের মাধ্যমে দেশের শাসনকাজ পরিচালনা করতেন। এর মধ্যে ১৮ জন নির্বাচিত এবং ছয়জন চগিয়াল মনোনীত। কাউন্সিলে তিনটি দলের প্রতিনিধি ছিল ন্যাশনাল পার্টি, সিকিম ন্যাশনাল কংগ্রেস ও সিকিম জনতা কংগ্রেস।
ভারতীয় পুলিশকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব দিতে বাধ্য হন চগিয়াল
১৯৭৩ সালের মার্চ-এপ্রিলে ন্যাশনাল কংগ্রেস ও জনতা কংগ্রেস রাজনৈতিক সংস্কারের দাবি তোলে। এই দাবিতে আন্দোলন দিনে দিনে তুমুল হতে থাকায় চগিয়ালের অনুরোধে ভারতীয় পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ করে। ওই ১৯৭৩ সালের ১৩ এপ্রিল ঘোষণা করা হয় যে, চগিয়াল রাজনৈতিক সংস্কার মেনে নিতে রাজি আছেন। এ ছাড়া তার আর কোনো উপায়ও ছিল না। কারণ তিনি স্পষ্টই অনুধাবন করেন এই আন্দোলনের পেছনের শক্তি কে? পরে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা স্বীকার করেছে যে, আন্দোলনে তাদের ভূমিকা ছিল। সংস্কারে রাজি না হলে সিংহাসন থেকে উৎখাত করা হবে, এ ব্যাপারে তিনি ছিলেন নিশ্চিত। তাই সিকিমের স্বাতন্ত্র্য রক্ষার চেষ্টায় রাজনৈতিক সংস্কারের অঙ্গীকার করেন। অঙ্গীকার মোতাবেক ১৯৭৪ সালের জুন সিকিম রাষ্ট্র আইনে পরিবর্তন আনা হয়। ওই আইনের অধীনে চগিয়ালের সার্বভৌম ক্ষমতা বিলুপ্ত হয়ে যায়। তিনি হন নিয়মতান্ত্রিক প্রধান। অবশ্য আইন পরিষদে পাস হওয়া আইন অনুমোদনে ক্ষমতা তাকে দেয়া হয়। এতেও শেষ রক্ষা হয়নি। তাকে বিদায় নিতে হয়েছে।
সিকিম হত্যার উদ্যোগ নেন লেন্দুপ দর্জি
রাজনৈতিক সংস্কার অধীন ১৯৭৪ সালের ১ জুলাই সিকিমে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে সিকিম ন্যাশনাল কংগ্রেস বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়। দলটি আইন পরিষদের ৩২টি আসনের মধ্যে ৩১টি আসন পায়। দলের প্রধান কাজী লেন্দুপ দর্জি হন প্রধানমন্ত্রী। ভারত এটাই চেয়েছিল। কারণ কাজী লেন্দুপ দর্জি তো তাদেরই লোক।
এই নির্বাচনের পর সিকিমকে ভারতকে অঙ্গীভূত করার প্রস্তুতি নেয় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু এর জন্য একটা বৈধতার প্রলেপ দরকার। সেটা করে দেন কাজী লেন্দুপ দর্জি। ১৯৭৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর তিনি বললেন, ভারতের দুই পরিষদ লোকসভা ও রাজ্যসভায় সিকিমের প্রতিনিধি রাখার ব্যবস্থা করেও সিকিমকে আশ্রিত রাষ্ট্রের মর্যাদায় রাখা যেতে পারে।
কাজী লেন্দুপ দর্জি
লেন্দুপ দর্জি যেহেতু ৩২টি আসনের ৩১টি আসনের নেতা, তার মতামতই তো সিকিম জনগণের মতামত। সুযোগটা হাতছাড়া করল না ভারত। কেন্দ্রীয় সরকার ১৯৫০ সালের চুক্তি, যাতে সিকিমকে ভারতের আশ্রিত রাষ্ট্রের মর্যাদা দেয়া হয়, তা বাতিল করল। সিকিমকে ভারতের অঙ্গরাজ্য করার বিল আনা হলো পার্লামেন্টে। এই বিল সম্পর্কে চগিয়াল এক বিবৃতিতে বললেন, ‘সিকিমের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব, যার নিশ্চয়তার আশ্বাস দেয়া হয়েছিল ১৯৫০ সালের চুক্তিতে, তা সিকিম জনগণের সম্মতি ছাড়াই এবং অজ্ঞাতে ভারতের পার্লামেন্টে সিকিমের প্রতিনিধি নেয়ার ত্বরিত পদক্ষেপে অস্বীকার করা হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধীর কাছে পাঠানো এক বার্তায় চগিয়াল বলেছেন, বর্তমান পদক্ষেপ, যা হবে ‘১৯৫০ সালের চুক্তির একপার্শিক বাতিলের শামিল এবং ভারতের সাথে সিকিমের একীকরণ।’
তিনি বলেন, ‘ভারত-সিকিম সম্পর্কের সর্বোচ্চ আশ্বাস দেয়া হয় ভারত প্রদত্ত সিকিমের অস্তিত্ব বজায় রাখার রক্ষাকবচের মাধ্যমে।’ তার এই বিবৃতিটি কলকাতা থেকে প্রকাশিত অধুনালুপ্ত ইংরেজি দৈনিক আমৃতবাজার পত্রিকা ১৯৭৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর, সোমবার প্রকাশ করে।
চগিয়ালের বার্তা ছিল অরণ্যে রোদন
চগিয়ালের এই বার্তা অরণ্যে রোদনের শামিল। অত্যন্ত চাতুর্যের সাথে সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে ফেলে সিকিমকে ভারতের অংশ করে নেয়া হলো। এ ঘটনায় ভারত তখন সারা বিশ্বে নিন্দাবাদ কুড়ায়। প্রতিবাদ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, সোভিয়েত ইউনিয়ন, ব্রিটেনসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। প্রতিবাদে সিকিম দখল করে নেয়ার অভিযোগ করা হয়। কিন্তু চীন ছাড়া জাতিসঙ্ঘের বেশির ভাগ সদস্যরাষ্ট্র সিকিমের এ পরিবর্তনকে দ্রুত অনুমোদন করে।
রাজতন্ত্র বিলোপ হয় বিনা বিরোধিতায়
নিরঙ্কুশ ম্যান্ডেটের ওপর ভর করে লেন্দুপ দর্জি নতুন গভর্নর নিয়োগের ক্ষমতা পান। চগিয়াল আর লেন্দুপ দর্জির সাপে নেউলে সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে ভারত পৃথিবীর মানচিত্র থেকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের মানচিত্র মুছে ফেলার মোক্ষম সুযোগ কাজে লাগাতে এক মুহূর্তও দেরি করেনি। কাউন্সিল অব মিনিস্টারের নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী লেন্দুপ দর্জির ইচ্ছায় পার্লামেন্টে বিনা বিরোধিতায় রাজতন্ত্রের আনুষ্ঠানিক অবসান করা হয়। সিকিমের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে লেন্দুপ দর্জি ভারতীয় পার্লামেন্টে প্রতিনিধিত্ব করার এবং স্টেটহুড স্ট্যাটাস পরিবর্তন করার আবেদন জানান। ১৪ এপ্রিল ১৯৭৫ সিকিমে ভারতীয় সেনাদের ছত্রছায়ায় এক গণভোট হয়। লেন্দুপের ইচ্ছার প্রতিফলন দেখানো হয় সাজানো গণভোটের ফলাফলে। ২৬ এপ্রিল ১৯৭৫ সিকিম ভারতের ২২তম অঙ্গরাজ্যে পরিণত হয়। মৃত্যু হয় একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের। ১৬ মে ১৯৭৫ সরকারিভাবে ভারত ইউনিয়নভুক্ত হয় এবং লেন্দুপ দর্জিকে করা হয় সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী। রাজতন্ত্রের পতনের ফলে ‘চগিয়াল’ পদের অবসান ঘটে। একটি স্বাধীন দেশ হত্যা করে লেন্দুপ দর্জি প্রধানমন্ত্রী থেকে হলেন মুখ্যমন্ত্রী। ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত লেন্দুপ দর্জি সিকিমের প্রথম মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। আর ভারতের অঙ্গীভূত হওয়ার সাথে সাথে তার দলও ভারতীয় ন্যাশনাল কংগ্রেস দলে বিলীন হয়ে যায়।
পুরো নিয়ন্ত্রণের জন্য নেয়া হয় সামরিক অভিযান
সিকিমে ভারত সামরিক অভিযান শুরু করার আগে দেশটিতে অরাজক পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল। ইন্দিরা সরকার ভারতীয় বাহিনী পাঠানোর অজুহাত হিসেবে রাজার নিরাপত্তার কথা জানিয়েছিল। পরিকল্পনা অনুযায়ী রাজপ্রাসাদের সামনে দাঙ্গা ছড়িয়ে দেয়া হয়। এ কাজে তারা ব্যবহার করে লেন্দুপ দর্জিকে।
রাজতন্ত্র অবসানের পর সিকিম দখলে ভারতীয় সেনারা মুহুর্মুহু গুলি চালায়। প্রকাশ্য দিবালোকে সামরিক ট্রাকের গর্জন শুনে সিকিমের চগিয়াল দৌড়ে এসে দাঁড়ান জানালার পাশে। তিনি দেখেন, ভারতীয় সৈন্যরা রাজপ্রাসাদ ঘিরে ফেলেছে। মেশিনগানের মুহুর্মুহু গুলিতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। রাজপ্রাসাদের ১৯ বছর বয়সী প্রহরী বসন্ত কুমার ছেত্রি ভারতীয় সেনাদের গুলিতে নিহত হন। আধা ঘণ্টার অপারেশনেই ২৪৩ প্রহরী আত্মসমর্পণ করে। বেলা পৌনে ১টার মধ্যেই ‘অপারেশন সিকিম’ শেষ হয়। প্রহরীদের কাছে যে অস্ত্র ছিল তা দিয়ে ভারতীয় সৈন্যদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু সময় লড়াই করা যেত। কিন্তু রাজা ভুগছিলেন সিদ্ধান্তহীনতায়। তিনি আরেকটি সুযোগ হারালেন। বেইজিং ও ইসলামাবাদের কাছে জরুরি সাহায্য চাওয়ার জন্য রাজপ্রাসাদে ট্রান্সমিটারও বসানো ছিল। তিনি সাহায্য কামনা করে বার্তা পাঠালে চীনা সৈন্যরা প্রয়োজনে সিকিমে ঢুকে চগিয়াল লামডেনকে উদ্ধার করতে পারত। কিন্তু রাজা সেটাও করতে ব্যর্থ হন। আত্মসমর্পণকারী রাজপ্রহরীদের ভারতীয় সেনাদের ট্রাকে তোলা হয়। প্রহরীরা তখনো গাইছিল ‘ডেলা সিল লাই গি, গ্যাং চাংকা সিবো’ (আমার প্রিয় মাতৃভূমি ফুলের মতো ফুটে থাকুক)। কিন্তু ততক্ষণে সিকিমের রাজপ্রাসাদে উড়িয়ে দেয়া হয়েছে ভারতীয় জাতীয় পতাকা। নামগিয়াল সাম্রাজ্যের ১২তম রাজা চগিয়াল লামডেন তখন প্রাসাদে বন্দী।
বহির্বিশ্বের সাথে সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়, বি এস দাশকে ভারত সরকার সিকিমের প্রধান প্রশাসক নিয়োগ করে।
সিকিমের ঘটনা বিশ্বকে জানান এক মার্কিন পর্বতারোহী
ভারতীয় আমেরিকান এক পর্বতারোহী গোপনে সিকিম প্রবেশ করে দেশটির স্বাধীনতা হরণের খবর বিশ্বের কাছে তুলে ধরেন। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। স্বাধীনতা হারানোর সময় সিকিম জাতিসঙ্ঘের সদস্য পদভুক্তিরও প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
১৯৭১ সালেই সিকিম দখলের সিদ্ধান্ত ছিল ভারতের
চমকপ্রদ একটি বিষয় হলো সিকিম সেনাবাহিনীকে সহায়তা ও প্রশিক্ষণ দিয়েছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী। ভারতীয় সাংবাদিক সুধীর শর্মা ‘পেইন অব লুজিং এ নেশন’ (একটি জাতির হারিয়ে যাওয়ার বেদনা) নামে একটি প্রতিবেদনে জানান, ভারত ব্রিটিশদের কাছ থেকে তার স্বাধীনতা লাভের গোড়া থেকেই সিকিম দখলের পরিকল্পনা করেছিল। ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু অনেকের সাথে কথোপকথনে তার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর সাবেক পরিচালক অশোক রায়না তার বই ‘ইনসাইড স্টোরি অব ইন্ডিয়াস সিক্রেট সার্ভিস’-এ সিকিম সম্পর্কে লিখেন, ভারত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ১৯৭১ সালেই সিকিম দখল করবে। সে লক্ষ্যে সিকিমে প্রয়োজনীয় অবস্থা সৃষ্টির জন্য আন্দোলন, হত্যা ও রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করা হয়। তারা ছোট ছোট ইস্যুকে বড় করার চেষ্টা করে এবং সফল হয়। তার মধ্যে হিন্দু-নেপালি ইস্যু অন্যতম। সাংবাদিক সুধীর শর্মা লিখেন, লেন্দুপ দর্জি নিজেই শর্মাকে বলেছেন, ভারতের ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর লোকেরা বছরে দু-তিনবার তার সাথে দেখা করে পরামর্শ দিতেন কিভাবে আন্দোলন পরিচালনা করা যাবে। তাদের এক এজেন্ট তেজপাল সেন এ আন্দোলন পরিচালনার জন্য ব্যক্তিগতভাবে তাকে অর্থ দিয়ে যেতেন। এ অর্থ দিয়ে রাজনৈতিক সন্ত্রাস পরিচালিত হতো। শর্মা আরো লিখেছেন, এই ‘সিকিম মিশনের’ প্রধান চালিকাশক্তি ছিল ‘র’।
দ্বৈত খেলা খেলেছে ভারত
ভারত সিকিমের ক্ষেত্রে দ্বৈত খেলা খেলেছে। চূড়ান্ত মুহূর্ত আসার আগে পর্যন্ত চগিয়াল লামডেনকে কী ঘটতে যাচ্ছে, তা বুঝতে দেয়নি। তারা তাকে বলেছে, সিকিমে রাজতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে হবে। চগিয়ালকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অনারারি মেজর জেনারেল পদবিও প্রদান করা হয়েছিল। অপর দিকে লেন্দুপ দর্জিকে বলেছে, যেকোনো মূল্যে রাজতন্ত্র উচ্ছেদ করতে হবে।
চীন, নেপাল ও পাকিস্তানের পরামর্শে কান দেননি চগিয়াল
ভারত অন্তর্ভুক্তির সময় সিকিমে কর্মরত তৎকালীন ভারতীয় দূত (পলিটিক্যাল অফিসার) বি এস দাস তার গ্রন্থ ‘ঞযব ঝরশশরস ঝধমধ’-এ লিখেছেন, ভারতের জাতীয় স্বার্থেই সিকিমের অন্তর্ভুক্তি প্রয়োজন ছিল। আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করেছি। চগিয়াল যদি বিচক্ষণ হতেন এবং তার কার্ডগুলো ভালোভাবে খেলতে পারতেন, তাহলে ঘটনা যেভাবে ঘটেছে তা না হয়ে ভিন্ন কিছু হতে পারত।
চীন, নেপাল ও পাকিস্তানের পরামর্শে কান দেননি সিকিমের চগিয়াল। তিনি ভারতীয় নেতৃবৃন্দ বিশেষ করে করম চাঁদ গান্ধী ও জওহরলাল নেহরুর প্রতি ছিলেন খুবই শ্রদ্ধাশীল। ১৯৭৪ সালে সিকিমের তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যেই চগিয়াল কাঠমান্ডু গিয়েছিলেন নেপালের রাজা বীরেন্দ্রর অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে রাজা বীরেন্দ্র, সফররত চীনা উপপ্রধানমন্ত্রী চেন লাই ইয়ান এবং পাকিস্তানি দূত চগিয়ালকে সিকিমে না ফিরতে পরামর্শ দেন। ক্যাপ্টেন সোনাম এ প্রসঙ্গে বলেন, এই তিন দেশের নেতৃবৃন্দ সিকিমকে ভারতীয় আগ্রাসন থেকে বাঁচাতে একটি মাস্টার প্ল্যান উপস্থাপন করেন। কিন্তু চগিয়াল লামদেন তাতে সম্মতি দেননি। এর কারণ তিনি নাকি স্বপ্নেও ভাবেননি, ভারত সিকিম দখল করে নিতে পারে।
চীন সীমান্তে ৩ স্বাধীন রাষ্ট্র নয়াদিল্লির জন্য অস্বস্তিকর ছিল
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ও ১৯৭৪ সালে ভারতের পারমাণবিক বোমার সফল বিস্ফোরণ ইন্দিরা গান্ধীর আত্মবিশ্বাস বহু গুণে বাড়িয়ে দেয়। কংগ্রেস নেত্রী নয়াদিল্লিতে তার ক্ষমতাকে সুসংহত করেন। নয়াদিল্লি উদ্বিগ্ন ছিল সিকিমের স্বাধীন সত্তার বিকাশ নিয়ে। ভুটানের পথ ধরে সিকিম যদি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে জাতিসঙ্ঘের সদস্যপদ লাভ করে ফেলত, তাহলে তা হতো নয়াদিল্লির পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে বড় রকম বাধা। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে চীন সীমান্তে তিন হিমালয়ান স্বাধীন রাজ্য নেপাল, সিকিম ও ভুটান গায়ে গা লাগিয়ে অবস্থান করুক এটাও কৌশলগত কারণে দিল্লি নিরাপদ মনে করেনি।
লেন্দুপ দর্জির শেষ জীবন ছিল অভিশপ্তের
ভারতে যোগদানের পর লেন্দুপ দর্জি হন সিকিমের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী। ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত তিনি এই পদে আসীন ছিলেন। তবে স্বর্গসুখের যে খোয়াব তিনি দেখেছিলেন, সেটা দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছিল। তার দলের প্রতি জনগণের আস্থা পুরোপুরি বিলীন হয়ে যায়। ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে লেন্দুপ দর্জির এসএনসি একটি আসনও পায়নি। নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়ে লেন্দুপ দর্জি দেখেন ভোটার তালিকায় তার নামটিও নেই। নেপথ্য শক্তি তার রাজনৈতিক জীবনের পরিসমাপ্তি টেনে দেয়।
সমকালীন ইতিহাসে সমালোচকদের কাছে লেন্দুপ দর্জি বিশ্বাসঘাতক হিসেবে চিহ্নিত। তার সমর্থকেরাও পরবর্তী সময়ে তাকে ত্যাগ করেন। ১৯৯৬ সালে কালিমপংয়ে স্বেচ্ছা নির্বাসিত জীবন লেন্দুপ দর্জি দুঃখ করে বলেছিলেন, ‘সবাই আমার দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে বলছে, আমি নাকি নিজের মাতৃভূমি সিকিমকে বিক্রি করে দিয়েছি। তা যদি সত্যও হয় সে জন্য কি আমি একাই দায়ী?’ কিন্তু এই অভিযোগ এতই গুরুতর ছিল যে, লেন্দুপ দর্জি আর কখনোই সিকিমে সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরে যেতে পারেননি। চাকুং হাউজে আমৃত্যু তাকে নিঃসঙ্গ দুর্বিষহ জীবনযাপন করতে হয়। তার মৃত্যু সিকিমবাসীর মনেও কোনো সহানুভূতি বা বেদনার উদ্রেক করতে পারেনি।
লেন্দুপ দর্জি মনে করতেন, কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পর দিল্লি তাকে ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে তার আক্ষেপভরা মন্তব্য, ‘সিকিমকে ভারতের হাতে তুলে দিতে হেন চেষ্টা নেই যা আমি করিনি। কিন্তু কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পর নয়াদিল্লি আমাকে এড়িয়ে চলতে শুরু করে।’ সাপ্তাহিক জন আস্থা পত্রিকায় সাক্ষাৎকার দিয়ে লেন্দুপ দর্জি বলেন, ‘আগে নয়াদিল্লিতে আমাকে লালগালিচা সংবর্ধনা দিয়ে বরণ করা হতো। এখন ভারতের দ্বিতীয় সারির নেতাদের সাথে সাক্ষাৎ করতেও আমাকে সপ্তাহের পর সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হয়।
ভারতে অন্তর্ভুক্তি ছিল ভুল সিদ্ধান্ত
ভারতের সিকিম দখলের বিরুদ্ধে চীন গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে। ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সিকিমের রাজপথে কোনো গণপ্রতিরোধ দেখা যায়নি। তাই বেইজিংয়ের ভূমিকা সীমিত ছিল জাতিসঙ্ঘে প্রতিক্রিয়া জানানোর মধ্যেই। ১৯৭৭ সালে ভারতে ইন্দিরা গান্ধীর টানা ১১ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। ১৯৭৮ সালে প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাই সিকিম সম্পর্কে মুখ খোলেন। তার মতে, সিকিমের ভারতে অন্তর্ভুক্তি ছিল ভুল সিদ্ধান্ত। এমনকি সিকিমের যেসব রাজনৈতিক নেতা ভারতে যোগদানের পক্ষে কাজ করেছিলেন, তারাও বলেছেন, এটা ছিল ঐতিহাসিক ভুল। কিন্তু তত দিনে অনেক পানি গড়িয়ে গেছে।
ভারতের রাজ্য হিসেবে স্বীকৃতি সিকিমের বড় অর্জন
ভারতের এ কাজকে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ সমর্থন না দিলেও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে ভুলটা এ ব্যাপারেই করলেন তাজউদ্দিন আহমদ। ব্যক্তিগতভাবে মন্তব্য করলেন সিকিম সম্পর্কে এবং অজুহাত এসে গেল শেখ মুজিবের হাতে।
সিকিম সম্পর্কে তাজউদ্দিন আহমদের বক্তব্যটি প্রকাশিত হয় ১৯৭৪ সালের ১৪ অক্টোবর সোমবার দ্য অমৃতবাজার পত্রিকায়। বাংলাদেশের কোনো পত্রিকায় সংবাদটি আসেনি।
ইংরেজি দৈনিক দ্য অমৃতবাজার পত্রিকার সেই খবর : ‘‘বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী মি. তাজউদ্দিন আহমদ গত রোববার ‘ভারত-বাংলা বন্ধুত্ব বিনাশে বৃহৎ শক্তিবর্গের পাকানো’ আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সজাগ থাকার জন্য ভারতীয় জনগণের প্রতি আবেদন জানিয়েছেন।
ওয়াশিংটন থেকে ঢাকা ফেরার পথে কলকাতা বিমানবন্দরে স্বল্প বিরতিকালে মি. আহমদ রিপোর্টারদের বলেন যে, সিকিম ইস্যু নিয়ে টোকিও, সিঙ্গাপুর ও হংকংয়ে ভারতের বিরুদ্ধে প্রচার চলছে। এসব জায়গায় কিছু সংবাদপত্র মন্তব্য করেছে যে, নিকট ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।
ব্যক্তিগতভাবে মি. আহমদ মনে করেন যে, ভারতের একটি সহযোগী রাজ্য হিসেবে সিকিমের স্বীকৃতি ‘সিকিম জনগণের একটি অর্জন’।” এই ঘটনার কিছুদিন পর অবশ্য তাজউদ্দিন আহমদকে পদত্যাগ করতে হয়।
ভারতের নেতৃবৃন্দ বরাবরই অখণ্ড ভারত গড়ার স্বপ্নে বিভোর
ভারতের নেতৃবৃন্দ বরাবরই অখণ্ড ভারত গড়ার স্বপ্নে বিভোর। আর সে লক্ষ্যে ভারত চায় এর প্রতিবেশী দেশগুলোকে নানাভাবে বিপর্যয়ের মুখে ফেলে দুর্বল থেকে দুর্বলতর করে সেখানে লেন্দুপ দর্জির মতো তাঁবেদার সরকার বসিয়ে দেশটিকে ভারতের সাথে একীভূত করে নিতে। সিকিম তার বড় প্রমাণ। ভারতের প্রতিটি প্রতিবেশী দেশের মানুষকে এ অন্তর্নিহিত সত্যটি উপলব্ধিতে রেখে দেশ পরিচালনা করতে হবে। নইলে বিপর্যয় অবধারিত।
বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ‘সিকিমফোবিয়া’
সিকিমের ঘটনা বাংলাদেশেও ঘটতে পারে। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের প্রতিরক্ষা ভারত দিনের পর দিন জোরদার করায় এই আশঙ্কা আরো জোরালো হচ্ছে। এই কার্যক্রমের আওতায় বাংলাদেশের সাথে যুক্ত সীমান্ত আউট পোস্টগুলোর (বিওপি) একটি থেকে আরেকটির দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার থেকে কমিয়ে ৪-৫ কিলোমিটারে নিয়ে আসা হচ্ছে। এগুলোতে বিএসএফের শক্তিও বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
বিএসএফ এই সীমান্তে থারমাল নাইটভিশন ডিভাইস, টেলিস্কোপিক বন্দুকসহ উচ্চমানের হাতিয়ার মোতায়েন রেখেছে। সেই সাথে প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার এলাকাকে কাঁটাতারের বেড়াসহ ফ্লাডলাইটের আওতায় আনার এবং প্রশিক্ষিত কুকুর মোতায়েন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এসব কার্যক্রম বাস্তবায়নে অনেকটা এগিয়েছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশের সাথে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তের বেশির ভাগ এলাকা ফ্লাডলাইটের আওতায় আনা ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।
১৯৭৪ সালের ভারত-বাংলাদেশ চুক্তি অনুযায়ী সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে কোনো প্রতিরক্ষা কাঠামো নির্মাণ নিষিদ্ধ হলেও ভারত মানছে না। বলাবাহুল্য, কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ ও সড়ক তৈরি প্রতিরক্ষা কাজের মধ্যেই পড়ে। বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত দুই দেশের বৈঠকে বিষয়টি আলোচিত হলেও তা কোনো ফল দেয়নি। ভারতের বর্তমান প্রস্তুতি অনুযায়ী সীমান্ত সড়ক দিয়ে অনায়াসে সামরিক যান চলাচল করতে পারবে। এর ফলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভারত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও জোরদার করতে পারবে।
এ কারণেই বাংলাদেশের জনসাধারণের মধ্যে ‘সিকিমফোবিয়া’ কাজ করছে প্রবলভাবে। ভারতের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের অবিশ্বাসের অন্যতম কারণ হলো বাংলাদেশও সিকিমের পরিণতি বরণ করে কি না।