বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর উপর গ্রেনেড হামলা মামলায় মুফতি আব্দুল হান্নান-সহ তিনজনকে আপিল বিভাগের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ করে দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।
এখন এই তিন জঙ্গির দণ্ড কার্যকরে আর কোনও আইনি বাধা রইল না। কিন্তু কে এই মুফতি হান্নান? কীভাবে তিনি হয়ে উঠলেন নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষ নেতা?
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা ও তিনজনকে হত্যার দায়ে হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নানের মৃত্যুদণ্ড দেয় হাইকোর্ট।
এরপর ডিসেম্বরে মামলার আপিলের রায়ে সে রায় বহাল রাখে সর্বোচ্চ আদালত। এরপর বিচারিক আদালত তার মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে, কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে সেই রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন মুফতি আব্দুল হান্নান।
এরপর আজ সেই মৃত্যুদণ্ডের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন সর্বোচ্চ আদালত খারিজ করে দেওয়ার পর মুফতি হান্নানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে আর কোনো আইনি বাধা নেই বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
নিয়ম অনুযায়ী তারা এখন রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারেন। এর নিষ্পত্তি হলেই সরকার কারাবিধি অনুযায়ী দণ্ড কার্যকর করবে।
২০০৪ সালের ২১শে মে সাবেক ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরী সিলেটে হযরত শাহজালালের মাজারে গ্রেনেড হামলার শিকার হন।
![](http://komashisha.com/files/asset/uploads/2017/03/10-5.jpg)
তার আগেই ২০০০ সালে, গোপালগঞ্জে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভামঞ্চের কাছে বোমা পুঁতে রাখার ঘটনায় প্রথম মুফতি আব্দুল হান্নান আলোচনায় আসেন।
কিন্তু কে এই মুফতি হান্নান? বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন সাংবাদিক টিপু সুলতান, তিনি জানান পড়াশোনা সূত্রে পাকিস্তানে গিয়েই জঙ্গি মতাদর্শে উদ্ধুদ্ধ হন মি. হান্নান।
টিপু সুলতান বলছিলেন, “গোপালগঞ্জে জন্মে তিনি সেখানকার মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন। এরপর ১৯৮৭ সালে পাকিস্তানের করাচিতে নিউ টাউন মাদ্রাসায় ভর্তি হন। সেখানে পড়াকালীন তিনি জঙ্গিবাদের জড়িত হন।”
“তার জবানবন্দিতে জানা যায়, ১৯৮৮ সালে তিনি পাকিস্তান ও আফগানিস্তান সীমান্তে রণাঙ্গনে যুদ্ধে অংশ নেন এবং আহত হন। বাংলাদেশে ফিরে ১৯৯৪ সালে হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশে যোগ দেন। শুরুতে কোটলীপাড়া থানার প্রচার সম্পাদক ছিলেন। কিন্তু দ্রুতই তার সাংগঠনিক দক্ষতা, তার দুধর্ষতার সুবাদে কেন্দ্রীয় নেতা হয়ে ওঠেন।”
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও মুফতি হান্নানকে দুধর্ষ জঙ্গি নেতা হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। সিআইডি অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক আব্দুল কাহার আকন্দ বলছিলেন মি. হান্নানের বিশেষত্ব হল তিনি সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও নিজে বিভিন্ন জঙ্গি হামলার প্রশিক্ষণ ও পরিকল্পনার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত থেকেছেন।
মি আকন্দ বলছিলেন, “তার বিশেষত্ব তিনি আফগান স্টাইলে বাংলাদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠার তৎপরতা চালচ্ছিলেন। প্রথমে দেশী বোমা ব্যবহার করলেও পরে পাকিস্তান থেকে গ্রেনেড সংগ্রহ করেন। এছাড়া বোমা বানানো এবং আক্রমণ বিষয়েও তার সামরিক প্রশিক্ষণ আছে এবং এ নিয়ে প্রশিক্ষণও দিতেন তিনি।”
![](http://komashisha.com/files/asset/uploads/2017/03/11-5.jpg)
বলা হয়ে থাকে, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের শুরুটা হয়েছিল হরকাতুল জিহাদের আক্রমণের মধ্য দিয়েই। সাংবাদিক টিপু সুলতান বলছেন, বাংলাদেশে বড় জঙ্গি হামলার অনেকগুলোই হয়েছে মুফতি আব্দুল হান্নানের নেতৃত্বে ও পরিকল্পনায়।
“হরকাতুল জিহাদই প্রথম বাংলাদেশে জঙ্গি হামলা শুরু করে। শুরুটা হয়েছিল ১৯৯৯ সালে যশোরে উদীচির অনুষ্ঠানে বোমা হামলার মাধ্যমে। সেই ঘটনার পরিকল্পনায় ও নেতৃত্বে মুফতি হান্নান নিজে ছিলেন। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত যতগুলো জঙ্গি হামলা হয়েছে, এককভাবে তার নেতৃত্বে সবচেয়ে বেশি হামলা হয়েছে।”
“এ পর্যন্ত মুফতি হান্নানের নেতৃত্বে ও পরিকল্পনায় সাত বছরে ১৩টি জঙ্গি হামলা হয়েছে। এসব ঘটনায় ১০১ জন মানুষ নিহত হয়েছেন আর আহত হয়েছেন ৬০০জনেরও বেশি মানুষ।”
মি. হান্নানের বিরুদ্ধে মোট ১৭ মামলা রয়েছে। এর মধ্যে দুটিতে তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে। এই মুহুর্তে মুফতি হান্নান আছেন গাজীপুরের কাশিমপুরে হাই সিকিউরিটি কারাগারে।
এ মাসের শুরুতে অপর একটি মামলায় আদালতে হাজিরা দিয়ে ফেরার পথে, মি. হান্নানকে বহনকারী প্রিজন ভ্যানের ওপর বোমা হামলা চালিয়ে তাকে ছিনিয়ে নেবার একটি চেষ্টা হয়েছিল। বিবিসি বাংলার সৌজন্যে