বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ৮:৩১
Home / অনুসন্ধান / হেফাজতের হঠাৎ আন্দোলনে সন্দিহান বিএনপি!

হেফাজতের হঠাৎ আন্দোলনে সন্দিহান বিএনপি!

সালমান তারেক শাকিল : দেশের সর্বোচ্চ আদালত—সু্প্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে গ্রিক দেবীর ভাস্কর্য স্থাপনকে কেন্দ্র করে হঠাৎ করেই হেফাজতে ইসলাম কর্মসূচি দেওয়ার ঘটনাকে সন্দেহের চোখে দেখছে বিএনপি। দলটির নেতারা মনে করছেন, ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলে শাপলা চত্বরে ‘ব্যর্থ সমাবেশের’ পর থেকে ঝিমিয়ে পড়া এ সংগঠনটি ভাস্কর্যবিরোধী কর্মসূচি দিয়ে মূলত গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি, রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনসহ গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুকে আড়াল করতে চাইছে। এর পেছনে সরকারের উস্কানি রয়েছে বলেও কেউ কেউ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

ভাস্কর্যকে কেন্দ্র করে হেফাজতের হঠাৎ কর্মসূচিকে ‘নন-ইস্যুকে ইস্যু’ তৈরির প্রবণতা বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রবীণ সদস্য ও সাবেক সেনাপ্রধান মাহবুবুর রহমান।

দলটির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তারা (হেফাজতে ইসলাম) তাদের মতো আন্দোলন করছেন। এটি নিয়ে বিএনপির আগ্রহের কী আছে?’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি একজন বিচক্ষণ ব্যক্তি। সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে ভাস্কর্য স্থাপনের বিষয়ে যে বিরোধিতা তৈরি হয়েছে, সেটি তিনিই সমাধান করতে পারবেন। হেফাজত নেতারা তাদের রাজনৈতিক ব্যাখ্যা কিভাবে দেবেন, সেটা তারাই বলতে পারবেন। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, সরকার নিজেই ইস্যুটি তৈরি করেছে।’

বিএনপি নেতাদের এমন মন্তব্যের বিরোধিতা করে হেফাজতের অন্যতম কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক আহমদ আবদুল কাদের বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিএনপির যেসব বলেন আমরা বিক্ষিপ্ত, তাদের ধারণা ভুল। আশা করি, বিএনপির হাইকমান্ড এ নিয়ে পজেটিভ। তারা সমর্থন দিলে ভালো, না দিলেও ভালো।’

উল্লেখ্য, ১০ মার্চ গ্রিক ভাস্কর্য স্থাপনের প্রতিবাদে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে হেফাজত। ওই সমাবেশে ঘোষণা করা হয়, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভাস্কর্য না সরালে ফের শাপলা চত্বরে অবস্থান নেবে হেফাজত।  এই ঘোষণার পর বিষয়টি নিয়ে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটেও আলোচনা শুরু হয়েছে। জোটের একাধিক নেতা জানান, হঠাৎ করেই হেফাজতের শাপলা অবস্থান করার ঘোষণার মধ্যে সরকারের সহযোগিতা থাকতে পারে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, হেফাজতের সঙ্গে নিয়মিত সরকারের কয়েকজন কর্মকর্তা যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন। গত বছর ইসলামী ঐক্যজোট ২০ দলীয় জোট ছাড়ে। সম্প্রতি বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস এই ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে দেখা করে আন্দোলনের সমর্থন চেয়েছে। এরশাদও খেলাফত মজলিসের কর্মসূচির প্রতি সমর্থন দিয়ে বলেছেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে গ্রিকদেবীর ‘মূর্তি’ বসানো হয়েছে। মুসলমান হিসেবে এটা মেনে নিতে পারি না।’’ তিনি হেফাজতের আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানান।

বিএনপির একাধিক নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ভাস্কর্য স্থাপনের আন্দোলন এক অর্থে সরকার বিরোধীও। সেক্ষেত্রে সরকারের একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির কাছে হেফাজতের নেতারা সমর্থন চান কিভাবে?

দলের একজন ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘কোর্ট প্রাঙ্গণে ভাস্কর্য স্থাপন জরুরি কিনা? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে। কেউ মনে করে ভাস্কর্য, কেউ ‘মূর্তি’। কারও কাছে সম্মানের হলেও কারও কাছে বিষয়টি ভিন্ন ধর্মের। ফলে, হেফাজতের আন্দোলনের রাজনৈতিক মতাদর্শগত বৈধতা থাকলেও নেপথ্যে অন্য কারণ রয়েছে।’’

শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে অন্য জায়গায় নেওয়ার জন্যই হেফাজতের কর্মসূচিকে সামনে নিয়ে আসা হয়েছে।’

হেফাজত ও সরকারের প্রভাবশালী গোয়েন্দাসূত্র জানিয়েছে, হেফাজতের অন্তত ১২-২০ জন নেতা গত তিন বছর ধরেই সরকারের দু’টি প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছেন। বিগত আড়াই বছরে ওয়াজ মাহফিল ছাড়া কোনও সভা-সমাবেশ করতে পারেনি এই সংগঠনটি। এর মধ্যে পাঠ্যপুস্তক সংশোধনেও কওমি মাদ্রাসা ভিত্তিক সংগঠনটি প্রভাব বিস্তার করেছে।

এ বিষয়ে মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমি মনে করি, ভাস্কর্যটি একজন শাড়ি পরা নারীর। এর মধ্য দিয়ে না ভাস্কর্যের, না ইসলামের অপমান হয়েছে। সিম্বলিক একটি বিষয়কে ইস্যু করার মধ্যে কী আছে, আমি জানি না। এটা কোনও অবস্থাতেই বিগ ডিল নয়।’

হেফাজত নেতা ও খেলাফত মজলিসের মহাসচিব অধ্যাপক আহমদ আবদুল কাদের বলেন, ‘‘প্রথমত ভাস্কর্য বা ‘মূর্তি’, একই জিনিস। তার ওপর এটি গ্রিক দেবির ‘মূর্তি’। ভারতেও এসব ‘মূর্তি’ স্থাপনের রেকর্ড নেই। ইরানে ছিল, সেটিও সরানো হয়েছে। তাই সরকার বলবে, কেন তারা ‘মূর্তি’ স্থাপন করল। এখানে সরকারের সঙ্গে হেফাজতের যোগাযোগের কিছু নেই। আলেমরা এ বিষয়ে কনসার্ন। যারা কনসার্ন থাকে, তারাই তো কথা বলবে। এটাই স্বাভাবিক।’

বাংলা ট্রিবিউনের সৌজেন্য

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...