শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ বিকাল ৪:৪১
Home / আকাবির-আসলাফ / শায়েখ আব্দুল হক আজমি রহ. : অমর তুমি হৃদয়ে
শায়খ আবদুল হক আজমী রাহ.

শায়েখ আব্দুল হক আজমি রহ. : অমর তুমি হৃদয়ে

মাহদি হাসান সজিব

আকাবির আসলাফ – ৪৫

মা-মাটির মায়া ভুলে গেলো রমজানে আসি দেওবন্দে৷ আগের থেকেই এ স্থানটা ঘিরে বহুস্বপ্ন-কল্পনা ছিলো৷ শেষমেষ রাব্বুল আলামিনের অশেষ অনুগ্রহে পৌছোই বিশ্বখ্যাত এই সেরাদের সেরা প্রতিষ্ঠানে৷ হাজার হাজার ছাত্রের ইন্টারভিউ৷ সূযোগ পাবে সামন্যসংখ্যকই বলতে গেলে৷ চিন্তারসীমা ছিলো না আর৷ কি বা আছে আমার! নির্জন রাতের খানিক রোনাজারি, আকাবিরদের পদচারণায় মুখোরিত মাটির ঘ্রাণ নেওয়ার প্রবল ইচ্ছে, বিদ্যমান জ্ঞানসাগর সমতূল্য মুহাদ্দিসদের মুখনিসৃত তাকরির শোনা, তাদের থেকে বরকত হাসিল করা—এইতো! শেষ অবধি পেলাম দাখেলা৷ শুরু হলো ক্লাস যথারিত৷ স্বপ্ন পুরণের পথে এগুতে লাগলাম কল্পডানায়৷
দারুল উলুম দেওবন্দে যতো হাদিসের ওস্তাদ রয়েছেন শায়েখ আব্দুল হক আজমি রহ. ছিলেন সবার প্রবীন ও মাদানি রহ. এর সর্বাধিক সোহবাতপ্রাপ্ত৷ অন্যদের মাঝে বাহরুল উলুমখ্যাত আল্লামা নেয়ামাতুল্লাহ আজমি দাঃবাঃ ও আল্লামা কমারুদ্দিন গৌরাখপুরি দাঃবাঃ রয়েছেন৷ তবে অল্পসময়ের৷ তাই তো বিশেষ ইচ্ছেটা ছিলো তাকে ঘিরেই৷
প্রতিদিন বাদ জোহর ছাত্রদের মধ্যে হুড়াহুড়ি, ছোটাছুটি শুরু হতো সব ফেলে৷ এইতো হুজুর আসছেন৷ অধির আগ্রহে বসে রইতাম আমরা৷ এই বুঝি হুজুর এলেন৷ বিরল সব তাকরিরের মাধ্যমে মুগ্ধ করলেন আমাদের৷
শশমাহি পরিক্ষার পূর্বে শেষ করলেন কিতাবুল মাগাযি বা যুদ্ধের অধ্যায়৷ তখন কল্পনা করতে পেরেছিলাম কি(!)এটাই আমাদের শেষ ক্লাস৷ আর কোনদিনও দর্সগাহে আসবেন না হুজুর৷ মনোমুগ্ধকর তাকরিরের অপেক্ষা শেষ হবে চিরতরে! “বাচ্চু পড়হো পড়হো, বহুত ফায়দ দে’গা” বলে সতর্ক করবেন না আর৷
পরিক্ষা শেষ হলো মঙ্গলবার৷ বিশ্রামের আনন্দে আর খোঁজ রাখা হয়নি হজরতের৷ গল্পটি জুমা পেরিয়ে রাতের৷ ১৪৩৮ হিজরির রবিউস সানির ১ম তারিখ সেদিন৷ এশা বাদ এলো সংবাদটি৷ দারুল উলুম দেওবন্দের মসজিদে কদিমের মাইকে শোনা গেলো৷ বেশ মর্মাহত হলাম শুনে৷ শোকের ছায়া নেমে এলো দেওবন্দজুড়ে৷ সবার কানে কানে পৌঁছে গেলো হজরত আর নেই৷ হজরত মানে আমাদের শায়খের কথা বলছি৷ বিশ্বখ্যাত ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আযহারুল হিন্দখ্যাত দারুল উলুম দেওবন্দের শাইখুল হাদিসে সানি, যমানার ফকিহ ও মুহাদ্দিস, সর্বজন মান্যবর ব্যক্তি হজরতুল আল্লাম আবদুল হক আজমি চলে গেলেন৷
অন্তর মর্মাহত হওয়ার এ দুঃসংবাদ হঠাৎ শুনে শরীর থরথর করে কাঁপতে আরম্ভ করলো৷ এ অবস্থা শুধু আমার না, বরং উম্মতে মুসলিমার৷ প্রতিক্রিয়া এমন, যেনো প্রাণ ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে৷ অন্তরের অবস্থা এমন অনুভূত হলো, যা ব্যক্ত করার মতো শব্দভাণ্ডার থেকে কোনো শব্দ বের করতে পারলাম না৷ কাঁদতে কাঁদতে ফোন করলাম কয়েকজনের কাছে৷ জানালো এখনো আনেনি হজরতকে হাসপাতাল থেকে৷ সেদিন দুপুরে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন হুজুর৷ সাথে সাথে নেওয়া হয় দেওবন্দের ডিকে জেন হাসপাতালে৷ রিপর্ট এসেছে সন্ধ্যের পরে, ইনফেকশন হয়েছিলো পেটে৷ সেখানেই সাতটা সাইত্রিশ মিনিটে শেষ নিঃশাস ত্যাগ করেন তিনি৷

অতিভরাক্রন্ত হৃদয়ে ছুটলাম নওদারাখ্যাত ইহাতায়ে মুলসুরিতে৷ চোখের জল বাঁধা দিতে পারছিলাম না কিছুতেই৷ হাজারো ছাত্র ও ভক্তকুলের সমাবেশ পুরো প্রাঙ্গনজুড়ে৷ ভিড় ঠেলে লাইনে দাড়ালাম শেষবারের মতন দেখতে৷ বেশ চিন্তিত নজরে পড়লো মুফতি আবুল কাশেম নুমানি দাঃবাঃ এবং বাহরুল উলুম আল্লামা নেয়ামাতুল্লাহ আজমি দাঃবাঃ কে৷ সাথে ছিলেন আরো অন্যান্য উস্তাদগণ৷ গভীর মমতায় কি যেনো আলোচনা করতে ছিলেন তারা৷ ভিরের কারণে ভালোভাবে শুনতে পেলাম না৷
আখেরি নজর দেখার মুহূর্তে কলিজা ছিড়ে যাচ্ছিলো যেনো৷ এইতো শেষবারের মতো দেখছি “মুস্তাযাবুত দাওয়াহ” কে৷ যিনি গ্রহণযোগ্য দোয়ার মাধ্যমে দারুল উলুমের উস্তাদ-ছাত্র, এমনকি সাধারণ মানুষের কাছে ‘মুস্তাজাবুত দাওয়াহ’ নামে পরিচিত ছিলেন৷ উস্তাদ এবং ছাত্ররা হুজুরের কাছে বিশেষভাবে দোয়ার দরখাস্ত করতেন সর্বদা৷  ইজতেমার মোনাজতের জন্যও অংশ গ্রহণ করেছেন বিশেষভাবে বহুবার৷ এখন এমন গ্রহণযোগ্য দোয়া করবেন কে? সাক্ষাতে সাক্ষাতে দোয়া চাবেন কার কাছে? ক্লাসে মনকাড়া দোয়া করবেন কে? হে আল্লাহ ওরাতো বোঝে না৷ যদি বোঝতো তবে সময় অপচয় করতো না৷ এই অবুঝদের তুমি ইলম দিয়েই দাও৷ আল্লাহ ওরা না বুঝে গুনাহ করে৷ যদি বুঝতো তোমার ভয় কি জিনিষ তবে কখনো সাহস পেতো না৷ হে আল্লাহ তোমার ভয় সবার অন্তরে দিয়েই দাও৷ সবকিছুর হাকিকত বোঝার তৌফিক দান করো৷
আহ! “আয় আল্লাহ” নামক মধুর ডাকটিও শুনতে পাবো না আর পড়ার ফাঁকে ফাঁকে৷ যেনো মহাব্বাতের ঢেউ তুলতো তখন৷ ক্লাসশেষে আমার পাশ ঘেষে আর যাবে না হজরতে হুইল চেয়ার৷ অন্যান্য ক্লাসে ছুটি হওয়ার সাথে সাথেই বের হতাম৷ তবে হুজুরের ক্লাস শেষে কিসের একটা টানে ঠাঁয় দাড়িয়ে রইতাম আপনস্থানে৷ দেখতাম তাকে হৃদয় ভরে৷ তাকিয়ে থাকতাম যদ্দুর দেখা যায় তার চেয়ারখানা৷

জন্ম ও শিক্ষা
শাইখুল হাদিস আল্লামা আবদুল হক আজমি রহ. ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দ মোতাবেক ১৩৪৫ হিজরির রজব মাসের সোমবার আজমগড়ের জগদিশপুরে জন্মগ্রহণ করেন৷ প্রাথমিক শিক্ষা নিজগ্রামে মক্তবেই হাসিল করেন৷ ফার্সি এবং আরবির প্রাথমিক কিতাবগুলি সারায়ে মীর এলাকার বাইতুল উলুম এবং হাফতম তথা মেশকাত অবধি দারুল উলুম মেওয়াতে পড়েন৷ ফের উচ্চশিক্ষার খোঁজে আসেন ইলমের মার্কাজ দারুল উলুম দেওবন্দে৷ ১৯৪৮ সনে তিনি দারুল উলুম দেওবন্দে দাওরায়ে হাদিসে দাখেলা নেন৷ বুখারি ও তিরমিজি ১ম খণ্ড শাইখুল ইসলাম মাদানি রহ.,তিরমিজি ২য় খণ্ড, শামায়েলে তিরমিজি ও সুনানে আবু দাউদ ইমামুল মাকুলাত আল্লামা ইবরাহিম বালয়াবি রহ. সুনানে নাসায়ি, শরহে মায়ানিল আসার, মুয়াত্তায়ে ইমাম মালেক আল্লামা ফখরুল হাসান মুরাদাবাদি রহ., সুনানে ইবনে মাজাহ হজরত মাওলানা জহুর আহমদ দেওবন্দি এবং মুয়াত্তায়ে ইমাম মুহাম্মদ মাওলানা জলিল আহমদ সাহেবের কাছে পড়েন৷

১৯৪৯ সনে দারুল উলুমে পড়াশোনা শেষ করে যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিসদের ছাত্রত্বের মর্যাদা লাভ করেন৷ সঙ্গে লাভ করেন হাদিস অধ্যাপনার অনুমতি ও সনদপত্র৷ যাদের মাঝে অন্যতম মুহাদ্দিসে কাবির আল্লামা হাবিবুর রহমান আজমি, যিনি তাকে উসুলে সিত্তা ও আওয়ায়েলে সাঈদ ইবনে সাম্বল এবং শাইখুল হাদিস মাওলানা জাকারিয়া কান্ধলবি মুহাজিরে মাদানি রহ. থেকেও হাদিসের সনদ লাভ করেন৷  ছাত্র যমানায়ই হজরত গ্রহণযোগ্য ছাত্রত্বের পরিচয় দিয়েছেন এবং সাথিদের মাঝে ভালো মুকাররির, মোতালাকারী হিসেবে খ্যাত ছিলেন৷

শিক্ষকতা
হজরত বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করে দর্সের মসনদে বসেন৷ খণ্ডকালিন শিক্ষক হিসেবে বিভিন্ন স্থানে দক্ষতার সঙ্গে দর্সের আঞ্জাম দিয়ে বানারস আসেন৷ নিযুক্ত থাকেন ষোলো বছর অবধি৷ ঝাড়খাণ্ডের গাড়িদিহা জেলার কোলডিহা গ্রামে মাদরাসা হুসাইনিয়ায় ন’মাস, কিছুদিন দারুল উলুম মেওয়াতেও দর্সের কাজে নিযুক্ত থাকেন৷ ১৯৮২ সনে মজলিসে শুরার সিদ্ধান্তে দারুল উলুম দেওবন্দে বোখারি শরিফ ২য় খণ্ডের জন্য নির্বাচিত হন৷
হজরতের দারুল উলুমে আসার ব্যাপারে একটি প্রসিদ্ধ ঘটনা রয়েছে৷ যেদিন মজলিসে শুরার সিদ্ধান্ত নিয়ে চিঠি পাঠানো হয়৷ পরদিনই প্রয়োজনিয় আসবাব নিয়ে  চলে আসেন তিনি৷ সবাই তো অবাক! আপনি কী করে জানেন আপনাকে উস্তাদ হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে? হজরত বললেন কাল রাতেই তো রাসুল সাঃ আমাকে স্বপ্নে দারুল উলুম উলুম এসে বুখারি ২য় খন্ড পড়াতে বললেন৷ তাইতো মৃত্যুর আগ অবধি অনেক কষ্ট সত্তেও হুজুর এই মহান সেবায়ই জীবনটা ব্যায় করেন৷

দর্সের ধরন
হজরতের দর্স শাইখুল ইসলাম মাদানি রহ.-এর দর্সেরধরণ হতো৷ হজরত মাদানি রহ. এর মতো অযাচিত কথাবার্তা ছাড়াই জিহাদে নববিকে সামনে তুলে ধরতেন৷ অনেক বড় বড় প্রশ্ন অনেক ছোট শব্দে সমাধান করতেন, যা ছাত্রদের কাছে আয়নার মতো স্পষ্ট হয়ে যেতো৷ হজরত যখন কোনো যুদ্ধ সম্পর্কে আলোচনা করতেন, অনুভূত হতো যেনো সামনেই সংঘঠিত হচ্ছে৷ যখন কোনো স্থান বা ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট করতেন, অনুভূত হতো সেটা আমাদের চোখ দেখছে৷ হজরতের সহজিয়া আদলে তাকরিরের একটা প্রভাব ছাত্রদের ওপর পড়তো গভীরভাবে৷
সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার হলো কেউ কোনোদিন গুনাহ করে হুজুরের ইবারত পড়তে পারেনি৷ হাজার মুতালা সত্বেও মুখ চলতো না৷ হুজুর বুঝে পরিবর্তন করে নিতেন৷ তাছাড়া কেউ কোনোদিন মিথ্যা বলে পার পায়নি৷ হুজুর বুঝেই যেতেন৷ যতোবড়ই যুক্তি সমেত হোক সে কথা৷

দর্সের গুরুত্ব
হজরত শায়খ রহ. দর্সের সঙ্গে এমনভাবে মিশে গিয়েছিলেন, যেমন খুশবু গোলাপের সঙ্গে, বাল্ব বিদ্যুতের সঙ্গে৷ দর্স এবং তাদরিস ছাড়া অন্যকোনো কাজ ছিলো না৷ তিনি বলতেন, এভাবেই যেনো ‘পড়াতে পড়াতে আল্লাহর সঙ্গে মিলিত হই৷’ হজরতের বাসা ছিলো ছাত্তা মসজিদের ওপরে৷ দর্সের অতিগুরুত্বের জন্যই  দুর্বলতা ও চলন ক্ষমতা অনুকূলে না হওয়াসত্ত্বেও অতিকষ্টে হুইল চেয়ার করে দাওরায়ে হাদিসের দর্সে আসতেন৷  বোখারি শরিফের পাশাপাশি ইফতা বিভাগে শরহে আশবাহুন নাজায়ের কিতাবটিও পড়াতেন৷
হজরত শায়খ রহ. কোনো বিষয়ে স্বতন্ত্র কিতাব লিখেননি৷ কিন্তু দুনিয়ার আনাচে কানাচে হাজারো ছাত্র রেখে গেছেন৷ যাদের মাঝে উলামায়ে মুবাল্লিগিন, মুফাক্কিহিন, মুহাদ্দিসিন, মুসান্নিফিন, আসহাবে হাদিস ও ফিকাহসহ সব ময়দানেই রয়েছে৷ যা হজরতের জন্য সদকায়ে জারিয়া হয়ে থাকবে৷ যেসব লিখিত কিতাব থেকে কিছুতেই কম নয়৷ অবশ্যি  হজরত শেষবয়সে বোখারি শরিফের কিছু টিকাটিপ্পনি লিখেছেন৷ ইফতার ছাত্রদের প্রায় বলতেন, যেনো তোমাদের মধ্যে কেউ মুতালা_সমেত যাবতীয় সংশোধনীমূলোক কিছু পর্যালোচনা যুক্ত করে দেয়৷

বিয়েশাদি
হজরত তিনটে বিয়ে করেছিলেন৷ প্রথম বিয়ে আজমগড় জেলার  ফুলপুরের বাছিয়া গ্রামে৷ যার থেকে দু’মেয়ে সাইয়্যিদা, উনাইসা ও এক ছেলে আবদুল হাকিম৷ তারা সবাই এখন মুম্বইয়ে বসবাস করেন৷ দ্বিতীয় বিয়ে নিন্দো গ্রামে৷ তার থেকে এক মেয়ে আমাতুল্লাহ৷ দুই স্ত্রীর ইন্তেকালের পর ইউপির প্রসিদ্ধ নগরী বানারস শহরে আরেকটি বিয়ে করেন৷ যার থেকে ছয় ছেলে আবদুল বার, আবদুত তাওয়াব, আবদুল মুনইম, আবদুল মুতায়াল, আবদুল মুক্তাদির ও আহমদ জন্মগ্রহণ করেন৷ সবাইই বড় বড় আলেম৷

ফতোয়া ও বিচার
হজরত শিক্ষকতার পাশাপাশি কিছুদিন ফতোয়ার কাজও আঞ্জাম দিয়েছেন৷ যার অনেকই ফতোয়ার রেজিস্ট্রির মাঝে বিদ্যমান৷ বিচার কাজও করেছেন বহুদিন৷ একবার এক ব্যক্তি রাতের আঁধারে ঘুষ নিয়ে এলো বিচার কাজের জন্য৷ যেটা কারো কোনোদিনও অবগত হওয়া সম্ভব ছিলো না৷ কিন্তু হজরত তাকে ধমক দিয়ে বের করে দেন৷ এসব হাজারো ঘটোনা তাকওয়ার মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে৷ যেগুলো তার পবিত্রতার সাক্ষ্য দেয়৷

দাফন ও জানাযা
পরদিন বাদ জোহর জানাযার কথা থাকলেও হজরতের ছেলে ও জামাইয়ের আজমগার থেকে আসতে দেরি হওয়ায় চারটে বেজে যায় প্রায়৷  প্রিয় ওস্তাদ শাইখুল আরব ওয়াল আজম সাইয়্যেদ হুসাইন আহমাদ মাদানি রহ. এর ছেলে ওস্তাযে মুহতারম সাইয়্যেদ আরশাদ মাদানি দাঃবাঃ এর ইমামতিতে জানাযার জামাত অনুষ্ঠিত হয় এবং হাজারো ভক্তকুলের শ্রদ্ধা ও অশ্রুতে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে মাকবারায়ে কাসেমিতে দাফন করান৷

দু’দিন বাদে হয় দোয়া মাহফিল পুরাতন দাওরায়ে হাদিসের নিচতলায়৷ কথা বলেন সেখানে আল্লামা কমারুদ্দিন গৌরাখপুরি দঃবাঃ, হুজুরের সবচেয়ে কাছের লোক যুগের ইবনে হাজারখ্যাত মুফতি হাবিবুর রহমান আজমি দাঃবাঃ৷ হুজুরের মুখে হজরতের রহ. এর আত্নজীবনী শুনে বড্ডো বিস্মিত হয়েছিলাম৷ মানুষ কত না মুখলেস ও মুহসেন হয়!

শেষ কথা
হজরত আবদুল হক আজমি রহ. স্বীয় সত্তাই ছিলো সবধরনের ইলমের সমন্বয়৷ যার মাধ্যমে পুরো মুসলিমজাতির কল্যাণ নিহিত ছিলো৷ তার অবস্থান বড় একজন আলেম এবং যুগের অন্যতম মুহাদ্দিসেই ছিলো না; বরং আমল, তীক্ষ্ম মেধা, অন্তর্দৃষ্টি ও জিহাদের গুরুত্বসম্পন্ন উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন৷ এমন এক ব্যক্তির মৃত্যু সবার জন্য বড় এক হারানো৷ যার শূন্যতা ফিরে পাওয়া অাদৌ সম্ভব নয়৷ আল্লাহ তায়ালা হজরতের সমস্ত খেদমত কবুল করে জান্নাতুল ফেরদৌসের সুউচ্চ স্থান নসিব করেন৷

লেখক : শিক্ষার্থী: দারুল উলুম দেওবন্দ, ভারত

আরও পড়ুন : আকাবির আসলাফ- ৪৪ : মাওলানা আব্দুন নূর সিদ্দিকী চিশতী (রহ.)’র জীবন চরিত

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...