কুতায়বা আহসান
– ঝুপরির ভেতর সবাই কাঁদছিল। কিছুক্ষণ যাবার পর হঠাৎ জাবির বিন মুগীস একটু কেশে উঠলেন। কাশির আওয়াজ উঠতেই একযোগে সবার কান্না থেমে গেল। সবাই উন্মুখ হয়ে উঠলো তিনি কী বলেন শুনবেন।
– জাবির বিন মুগীস ডুবন্ত যাত্রীর মতো ক্ষীণ কন্ঠে বলতে লাগলেন: আমি মারবো কীভাবে ভাই! আমি নিজেই তো মারা যাবার পথে। তোমাকে পুড়িয়ে ছাই করত নিশ্চিহ্ন করি কীভাবে এই কিছুক্ষণের মধ্যে আমি নিজেই তো কালের ইতিহাস থেকে মুছে যাবার পথে। হাসান! তুমি আমার শজরায়ে নসবের শেষ ও একমাত্র সদস্য। তোমার নিশ্চিহ্নতা আমি চাইতে পারি কী করে? মৃত্যু আমার সামনে নৃত্যরত। জীবনের আয়নায় আমি জিন্দেগানির যাবতীয় কর্মের প্রতিবিম্ব দেখতে পাচ্ছি। আমি মারা যাবার পর আমার লাশ কোথায়ও নিয়ে যাবে না। আলবাশারাতের এই সমুদ্র তটেই আমাকে দাফন করে দেবে। যেন ভবিষ্যতের উথাল পাতাল সময়ে যদি কোনো নকীব নবজীবনের কোনো পয়গাম নিয়ে তাকবীরের আওয়াজ বুলন্দ করে এদিকে আসে তাহলে আমার রুহ যেন সেই কালজয়ী মুজাহিদদের ইস্তেকবাল জানাতে পারে। যদি মিল্লাতের সমৃদ্ধির চিন্তায় খানাবদুশদের মতো কোনো যাত্রীদল এদিকে ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য রাহবর হয়ে আসে তাহলে আমার আত্মা যেন তাদের সালাম জানাতে পারে। যদি ভবিষ্যতে কওমের কোনো মুসা বিন নুসাইর কোনো তারেক বিন যিয়াদকে প্রেরণ করে থাকেন তাহলে আমার আত্মা যেন সবার আগে তাঁকে খোশ আমোদেদ জানাতে পারে। যেন আমার কবর সেই মহান মুজাহিদদের ঘোড়ার খুরার ধুলিকনা বুকে ধারণ করে ফখর করতে পারে।
– কথাগুলো বলতে বলতে জাবির বিন মুগীসের কন্ঠ ক্ষীণ হয়ে আসছিল। তাঁর ঠোঁট নড়ছিল কিন্তু আওয়াজ উচ্চারিত হচ্ছিল না।
– ঝুপরিতে তখন নিষ্প্রাণ নিস্তব্ধতা ছেয়ে গিয়েছিল। কেউ কোনো কথা বলতে পারছিল না।
– কতক্ষণ এভাবে কেটে যাবার পর হঠাৎ জাবির বিন মুগীস তাঁর সমস্ত শক্তি একত্রিত করে কলেমায়ে শাহাদত পাঠ করতে লাগলেন। কয়েকবার পাঠ করার পর ধীরে ধীরে তাঁর আওয়াজ ক্ষীন থেকে ক্ষীনতর হয়ে আসতে লাগলো। অবশেষে ক্ষীন হতে হতে আওয়াজটা একেবারে লীন হয়ে গেল। তাঁর মাথাটাও একদিকে হেলে পড়ল।
– দাদুর ইন্তেকাল হয়ে গেছে বুঝতে পেরে হাসান ক্রুসু লাশের বুকে ঝাপিয়ে পড়ে মায়ের কোল থেকে কেড়ে নেয়া শিশুটির মতো ডুকরে ডুকরে কাঁদতে লাগলেন। কেউ তাঁকে প্রবোধ দেয়ার সাহস করতে পারলেন না। মুনযির বিন যুবাইর চাইলেন তাঁকে প্রবোধ দিবেন কিন্তু কীভাবে কী বলবেন বুঝতে না পেরে চুপ থেকে গেলেন। তিনি প্রবোধ দিবেন কি, নিজেকেই সামলে রাখতে পারছিলেন।
– মা’আয দু রানের ফাঁকে মুখ লুকিয়ে কাঁদছিল। হঠাৎ করে হাসানকে আকুল কান্নায় ভেঙে পড়তে শুনে মুখ তুলে থাকাল। হাসান ক্রুসুর মুখের দিকে তাকিয়ে সে নিজেকে সামলে রাখতে পারছিল না। তাঁর দৃষ্টিটা তখন জাবির বিন মুগীসের নিষ্প্রাণ কায়ায় স্থির হয়ে গেল। মনে মনে কিছু একটা উপলব্ধি করে সে মুনযির বিন যুবাইরের দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।
– মুনযির বিন যুবাইর অশ্রুরুদ্ধ কন্ঠে বললেন, হ্যাঁ বেটি! তোমাদের দাদু চলে গেছেন।
– ইবনে যুবাইরের কথা শেষ হবার আগেই মা’আয জাবির বিন মুগীসের দু’টো পা ধরে আকুল কান্নায় ভেঙে পড়ল।
– জাবির বিন মুগীস ছিলেন একজন প্রবীন ও বুযুর্গ ব্যক্তিত্ব। পুরো ওয়াদির নরনারীরা তাঁকে আলাদা শ্রদ্ধার চোখে দেখতো। মিল্লাতের আযীম ফরযন্দ হাসান ক্রুসুর দাদু হিসেবেও ওয়াদি বাসীর কাছে ছিল তার মর্যাদার আলাদা একটা অবস্থান। রাতের ভেতরেই পুরো ওয়াদিতে তাঁর মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়ল।
– হাসান ক্রুসু আর মা’আয কাঁদতে কাঁদতে একসময় নেতিয়ে পড়ল।
– মুনযির বিন যুবাইর তখন নিজেকে সামলে নিয়ে হাসানকে তার দাদুর বুকের উপর টেনে নামাতে নামাতে বললেন: ওঠো হাসান! আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করো। ঝঞ্জা বিক্ষুব্ধ জীবনেও যে তোমার দাদুর অন্তিম শয়ানে উপস্থিত হতে পেরেছো। তাঁর সাথে কথা বলতে পেরেছো, তাঁর দোয়া নেয়ার সৌভাগ্য অর্জন করতে পেরেছো এর জন্য আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় কর।
– রাতটা কোনোভাবে কেটে গেল। ভোর হতেই মানুষ দলে দলে তাঁদের শ্রদ্ধেয়জনকে আখেরি দেখা দেখার জন্য এবং তাঁর জানাযায় অংশ গ্রহণের জন্য সৈকতের দিকে আসতে লাগলো।
– আসলেন আদনানী কবিলার সরদার সা’দ বিন সালামা। তাঁরসাথে এলো তাঁর একমাত্র মেয়ে নুবায়রাও। সরদার কা’ব বিন আমিরও আসলেন। তাঁর সাথে আসলো ছেলে মুগীরা বিন কা’ব, মেয়ে নাবিল এবং স্ত্রী মাইসুনাও।
– রাতেই সংবাদটি নৌবহরে অবস্থিত কাকাদের কাছে পৌঁছে গিয়েছিল। সুতরাং তিনি রাতের অন্ধকারেই বহরটাকে একটি খাড়িতে লুকিয়ে রেখে ভোর হতেই সকল মাল্লা ও সৈনিকদের নিয়ে জানাযায় অংশগ্রহণের জন্য চলে আসলেন।
– দুপুরের আগেই জাবির বিন মুগীসকে জেলে পল্লীর কবরস্তানে দাফন করা হয়। সরদার কা’ব সহ নেতৃস্থানীয় সবাই তখন হাসানকে ঘিরে রেখেছিলেন। কাকাদও সেখানে ছিলেন। তাঁর মধ্যে একটা অস্থিরতা কাজ করছিল। হাসান বুঝতে পারলেন কাকাদের অস্থিরতার কারণ। তিনি তাঁর দিকে তাকিয়ে বললেন, বন্ধু কাকাদ! কুদরতই বোধহয় আমাকে এদিকে টেনে এনেছিল যাতে আমা আমার দাদুর সাথে আখেরী মোলাকাত করতে পারি। মুহতারাম ভাই যা কিছু হবার ছিল তা হয়ে গেছে। এবার আপনি সবাইকে প্রস্তুতির নির্দেশ কিছুক্ষণের ভেতরই আমরা আমাদের অভিযানে বেরিয়ে পড়ব।
– কাকাদ হাসান ক্রুসুকে কিছু বলতে যাবেন এর আগেই বাসিত দৌড়ে এসে বলল: মুহতারাম কাপ্তান! খানম আপনাকে স্মরণ করছেন।
– হাসান বাসিতকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে বললেন: খানম কে? একটু খোলাসা করে বলুন।
– আপনাকে কাহতানি সরদার কা’ব-এর স্ত্রী মাইসুনা ডাকছেন। দেখুন! তিনি ওদিকে একটি গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তাঁর সাথে রয়েছে তাঁর বড় মেয়ে নাবিল।
– হাসান ক্রুসু বাসিতকে কিছু বলতে যাবেন তার আগেই তাকিয়ে দেখলেন কাকাদের মুখে মুচকি হাসি খেলা করছে। এরপর তিনি হাসানের কাঁধ চাপরিয়ে বললেন: যাও বন্ধু! তিনি যে ব্যাপারে কথা বলতে চান আমি সেটা আন্দাজ করতে পারছি। মুনযির বিন যুবাইর এ ব্যাপারে আমাকে বিস্তারিত বলেছেন। যাও। গিয়ে নবজীবনের পয়গাম নিয়ে এসো।
– হাসান ক্রুসু কোনো কথা বললেন না। তিনি নীরবে বাসিতকে অনুসরণ করে যেতে লাগলেন। কাছে গিয়ে বাসিত একদিকে সরে দাঁড়ালেন। হাসানক্রসু তখন হিজাবের অন্তরালে থাকা মহিলাদ্বয়ের দিকে অগ্রসর হয়ে বললেন: আপনারা আমাকে ডেকেছিলেন?
– নাবিল তার জায়গায় রইল। মাইসুনা কিছুটা এগিয়ে এসে বললেন: হ্যাঁ বাপ! আমি তোমাকে একটু কষ্ট দিয়েছি। প্রথমেই আমি তোমাকে বলছি এটা মনে করো না যে, তোমার দাদুর অন্তর্ধানে কেবল তুমিই একা কষ্ঠ পাচ্ছ। আলবাশারাত ওয়াদির প্রত্যেকটা নারী পুরুষ তোমার ব্যথায় সমব্যথী। বেটা! সম্ভবত তিনিই ছিলেন এ পৃথিবীতে তোমার সবকিছু। তাঁর সুবাদে এই আলবাশারাতের সাথে ছিল তোমার একটা সম্পর্কের বাঁধন। সেই বাঁধনটা আজ কেটে গেছে। জানি না, তোমাকে আর কখনো আলবাশারাতে পাব কী না। সেই কারণে আমি তোমাকে দুটো কথা বলতে চাই। যদিও আমি জানি, আমি যা বলতে চাচ্ছি এই মুহুর্তটা সে কথাগুলো বলার সময় নয়, উচিৎও নয়, তথাপি কিছু বাধ্য বাধকতার জন্য তোমাকে কষ্ট দিচ্ছি, বিব্রত করছি।
– মাইসুনা তার কথার ধারা জারি রেখে বললেন: বেটা হাসান! কেউ যদি কোনো বিয়াবানে একটা গাছের চারা লাগায় জীবনে একবারও না হয় সে ঐ জায়গায় ফিরে আসে। দেখতে চায় তার লাগানো চারা বৃক্ষে রূপান্তরিত হচ্ছে কি না।
– বেটা আমি জানি! তুমি আর তেমার সাথীরা আগুন আর রক্তের দরিয়া থেকে কওমের জন্য একটু প্রশান্তি একটু আযাদি নিয়ে আসার জন্যে সর্বাদাই প্রত্যাশি। অস্তিত্ব আর নাস্তিত্বের মধ্যে সদা ঝুয্যমান তোমরা রক্তের বিনিময়ে কওমকে নিরাপত্তা দিতে চাও। তোমরা কওমের চশম চেরাগ। তোমরাই কওমের ধ্রুবতারা। কওম অপলক তোমাদের দিকেই তাকিয়ে থাকে।
– আমি দু’আ করছি আল্লাহ যেন তোমাকে এবং তোমার সাথীদেরকে মৃত্যুর কবল থেকে বাঁচিয়ে দীর্ঘদিন কওমের খেদমত করার তাওফিক দান করেন।
– বেটা! আমি জানি কিছুক্ষণের মধ্যেই তুমি এখান থেকে চলে গিয়ে জীবন মৃত্যুর খেলায় জড়িয়ে পড়বে। আমি তোমাকে কেবল এটুকু বলতে চাই, তুমি কখনো এটা মনে করবে না, তোমার দাদুর ইন্তেকালের পর এ সরজমিনের সাথে তোমার সম্পর্কের সুতো কেটে গেছে। বেটা! হাসান! এ কেবল আমার একার কথা নয় মনে করো এটা পুরো আলবাশারাতবাসীর জযবার বহিঃপ্রকাশ। তুমি যখনই এ ভূখণ্ডে আসবে একবার হলেও আমাদের হাবেলির দ্বারে কড়া নাড়বে। তোমার জন্য আমাদের হাবেলির দ্বার সর্বক্ষণ খোলা থাকবে।
– বেটা হাসান! আমাদের হাবেলির এক সদস্য তোমার জন্য তার হৃদয়ে ভালোবাসার একটি চারাগাছ লাগিয়ে রেখেছে। সে তোমাকে আপন করে পেতে চায়। তোমার দিলরুবা হবার জন্য কাঙ্গাল হয়ে আছে।
– আমার এ কথাটার ইশারা মা’আযের দিকে। তুমিও বোধহয় জানো সে তোমাকে কতটুকু ভালোবাসে। দেখ সে সমুদ্রের তটে দাঁড়িয়ে একা একা কেঁদে চলছে। তাঁর অন্তরে একদিকে যেমন তোমার দাদুর ইন্তেকালের সদমা কাজ করছে তার চেয়েও বড় সদমা হয়ে কাজ করছে “তুমি কিছুক্ষণের মধ্যেই এখান থেকে চলে যাচ্ছ”। তোমি চলে যাবার পর তোমার স্মৃতিকে বুকে ধারণ করে সে আজীবন মিটমিটে তারকারাজীর মতো ইশকের তারা হয়ে জ্বলতে থাকবে।
– বেটা আমার আখেরি গোজারেশ তুমি যখনই এ ওয়াদিতে পা দেবে, আমাদের হাবেলিতে অবশ্যই পা রাখবে। মা’আয তার ভবিষ্যতটা তোমার সাথে জুড়ে নিয়েছে। সে সুবাদে তুমি যখনই তাকে তোমার সাথে করে নিয়ে যেতে চাইবে আমার স্বামী কিংবা পরিবারের কেউই না করবে না। বরং এটিকে তারা মা’আযের জন্য খুশনসীবী মনে করবে।
– মাইসুনা এপর্যন্ত বলে একটু থামলেন। এরপর গভীরভাবে হাসানের দিকে তাকিয়ে বললেন: বাবা হাসান! আমার যা বলার ছিল শেষ। যদিও জানি একথাগুলো এই মুহূর্তে বলা উচিৎ হয়নি, তথাপি আর কবে এ সুযোগ পাব জানি না বিধায় কথাগুলো বলতে বাধ্য হলাম। আমার বাপ! আশা করি মনে কোনো দু:খ নেবে না।
– মাইসুনার কথা শেষ হওয়া মাত্র হাসান ক্রুসু কতক্ষণ বড় বিনয়ের সাথে তাঁর দিকে তাকিয়ে রইলেন: এরপর বললেন:
– আম্মু! আপনি এ কেমন কথা বলছেন। মা’আয একজন খুবসুরত লাড়কি। তার আবেদনকে যে কোনো পুরুষ আপন জীবনের জন্য সৌভাগ্যের কারণ মনে করতে পারে। রুখসতের পূর্বে আমি আপনাকে আশ্বাস দিয়ে বলতে চাই— আমি জীবনেও আপনাদেরকে ভুলতে পারবো না।
– হাসান ক্রুসু কথাটা বলে নীরব হতেই প্রথমবারের মতো নাবিল তাকে খেতাব করে বলল: মুহতারাম ভাই! আমি জানি ভাই বোনদেরকে কখনো ভুলে থাকতে পারে না। আপনি এটা মনে করবেন না, আলবাশারাত ওয়াদিতে কেবল মা’আযই আপনাকে ভালোবাসে। বরং আপনি প্রতিটি আলবাশারাতবাসীর হৃদয়ে অবস্থান করছেন। আপনি তাদের প্রতিটি রাতের সোনালি স্বপ্নের সাথী। এ ওয়াদিতে কেবল মা’আযই আপনার অপেক্ষায় থাকবে না, একজন বোন হিসেবে আমিও আমার ভাইয়ের জন্য প্রতি ভোরে ও সন্ধ্যায় পতীক্ষা করে যাব।
– ভাই! আমার একটা বিনীত আরজ, আশা করি মনে কিছু নেবেন না। আপনি দেখতে পাচ্ছেন পানির কিনারে দাঁড়িয়ে মা’আয কেমন অসহায়ত্বের প্রহর পাড়ি দিচ্ছে। আমার বিনীত নিবেদন, চলে যাবার আগে আপনি একটু তাঁর কাছে যান। দুটো কথা বলে তাকে সান্ত্বনা দিন। যাতে পরবর্তী দিনগুলো সে এই আশ্বাসের উপর কাটিয়ে দিতে পারে। নতুবা জীবনটা তার উপর একটা দুর্বিসহ বোঝা হয়ে ওঠবে।
– হাসান ক্রুসু মা ও মেয়েকে সালাম বিদায়ী সালাম জানিয়ে তাঁর ঘোড়ায় চড়ে বসলেন। এরপর তিনি মা’আযের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলেন। তবে তাঁর চলার গতি দেখে মনে হচ্ছিল মা’আয তাঁর উদ্দেশ্য নয়। তিনি ওর পাশ কেটে যেন কাকাদের কাছে চলছেন।
– হাসান তাঁর ঘোড়াটিকে সেভাবেই দৌড়িয়ে মা’আযের কাছে গিয়ে হঠাৎ করে একটু থামলেন। এরপর ঘোড়ার উপর থেকেই বললেন: যে বালিকা আমার উষর বিরান মরু আত্মায় ভালোবাসার গোলাবের চারা লাগাতে চায় আমি দীলের গভীর থেকে সেই বালিকার শুকরিয়া আদায় করছি। আমি সেই বালিকার শুকরিয়া আদায় করছি, যে তার দীলের হাসীন উম্মিদের সাথে আমাকে বেঁধে নিয়েছে। যে আমাকে তার দীলের হীরে উজ্জ্বল আসনে বসার অনুমতি প্রদান করছে।
– মা’আয এতক্ষণ ওখানে দাঁড়িয়ে আকুল হয়ে কাঁদছিল। অশ্রুতে তার দু গাল ভেসে যাচ্ছিল। হাসানকে তার দিকে এগিয়ে আসতে দেখে নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়েছিল। এরপর হাসানের মুখে চিরকাঙ্ক্ষিত কথাগুলো শুনে তাঁর চেহারায় আনন্দ খেলে গেল। সে বলে উঠল: আর সে বালিকা প্রতি ভোরে শালিরের চূড়ায় দাড়িয়ে তাঁর স্বপ্নপুরুষের জন্য অপেক্ষা করে যাবে।
– জবাবে হাসান ক্রুসু কোনো কথা না বলে কেবল একটা মুচকি হাসি দিয়ে কাকাদের দিকে এগিয়ে গেলেন। এরপর তাঁরা তাঁদের সাথীদের নিয়ে নৌবহরে উঠে সমুদ্রের বুকে হারিয়ে যেতে লাগলেন।