মুফতি রেজাউল কারীম আবরার
শেখ সাদী নাম শুনলেই আমাদের কানে ঝংকৃত হয় একটি সুর। ‘বালাগাল উলা বিকামালিহি’। শেখ সাদীর পর পৃথিবীর এমন কোন মুসলমান নেই, যে সারা জীবনে একবার হলেও পড়েনি এই কবিতা। পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোন কবিতা মসলামদের হৃদয় রাজ্যে এভাবে আসন গাড়তে পারেনি। নবী প্রেমের কবি ছিলেন শেখ সাদী। মদীনায় গেলে পায়ে জুতা পরতেননা! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র কদম যে ভূমি মাড়িয়েছে, সে মাটিতে তিনি কীভাবে জুতা পরে চলবেন! ‘বালাগাল উলা’ দ্বারা মুসলামনদের অন্তরে চির স্মরণীয় হয়ে আছেন শেখ সাদী।
তাতারের বর্বর বাহিনী যখন মুসলমানের কচুকাটা করছে, শহরের পর শহর মাটিতে মিশিয়ে দিচ্ছে, মুসলামনদের অন্তরে যখন একথা বদ্ধমূল হয়ে গিয়েছিলো যে, তাতার বাহিনীকে কেউ পরাজিত করতে পারবেনা, শেখ সাদী সে সময়ে পরিণত যুবক। মুসলমানদের লাশ স্তুপ দেখে তিনি কষ্ট পেয়েছিলেন! এরপর থেকে শুরু হয় মানবতার জন্য কবিতা লেখা। পুরো পৃথিবী আজও মুগ্ধ শেখ সাদীতে। ‘গুলিস্তা’ দিয়ে আজও রাত জেগে থাকে কত তৃষিত আত্মা। কত পিপাসার্ত প্রেমিক পিপাসা নিবারণ করে এখনো শেখ সাদীর কবিতা থেকে।
‘মহাকালের মধু’। লিখেছেন বিজয়ের সন্তানখ্যাত কবি মুসা আল হাফিজ। শেখ সাদীর জীবন ও কবিতা নিয়ে। সত্যি বইয়ের পাতায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মধু। শেখ সাদীকে নিংড়িয়ে সকল মধু মুসা আল হাফিজ জমা করেছেন ‘মহাকালের মধু’তে। কী নেই মলাটবদ্ধ এই ‘মধুতে’। ফারসী কবিতা এবং কবিদের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস জানতে চান? ‘মহাকালের মধু’ পড়–ন। বহু রাত জেগে কিতাবে বহু মরুভূমি পাড়ি দিয়ে কবি আমাদের জন্য সংগ্রহ করেছেন সে ইতিহাস। শেখ সাদীকে আমরা চিনি ‘বালাগাউল উলা’ দিয়ে। কিন্তু কীভাবে কেটেছে তাঁর শৈশব? কোথায় কার সান্নিধ্যে থেকে তিনি হয়েছেন সর্ব কালের সেরা কবিদের অন্যতম? কেন তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে? কেন পায়ে হেটে মরু বিয়াবান পাড়ি দেওয়ার দুঃসাহসিকতা পেয়ে বসেছিল তাকে? ইতিহাসের আলোকে সবগুলোর সঠিক উত্তর পেয়ে যাবেন ‘মধু’তে। রুমি, ফখরুদ্দীন ইরাকী এবং শেখ সাদীর কবিতা নিয়ে শ্রদ্ধেয় কবি যে চমৎকার বিশ্লেষণ করেছেন, তাঁদের কবিতার খুঁটিনাটি দিক নিয়ে যেভাবে আলোচনা করেছে, তা দেখে মুগ্ধ হবে যে কোন পাঠক। সর্বশেষে যখন আপনি শেখ সাদীর কবিতার অনুবাদ পড়বেন, তখন সত্যি আপনার মনে হবে শেখ সাদীকে বাংলা ভাষার কবি বানিয়ে ফেলা হয়েছে! অনুবাদ এমনিতেই বেশ কঠিন কাজ। কারণ মূল লেখকের আবেগ, অনুভূতি অনুবাদে ফুটিয়ে তোলা বেশ কঠিন কাজ। এক্ষেত্রে আমাদের মুসা আল হাফিজ সাহেব পুরোপুরি সফল। শেখ সাদীর আবেগ এবং ভাবকে তিনি ষোল আনা ফুটিয়ে তুলেছেন বাংলা ভাষায়।
পুরো ফেব্রুয়ারীতে আমরা ‘থাপ্পড়’ নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম! কষে ‘থাপ্পড়’ চালাচালি হয়েছে পুরো মাস। কিন্তু থাপড়াথাপড়িতে কিছুটা ধুলোর আস্তরণ পড়েছে ‘মহাকালের মধুতে’। ওদেরকে এবার আমরা কষে ‘থাপ্পড়’ দিয়েছি! আগামীতে দিবো ‘লাত্থি’। কিন্তু ‘লাত্থি’ দেওয়ার জন্য প্রয়োজন শরীরে পর্যাপ্ত এনার্জি। কবি মুসা আল হাফিজ আমাদের জন্য তৈরী করেছেন খাটি মধু! আসুন মধু পান করি। অন্যকে পান করাই। লাত্থি দেওয়ার জন্য তৈরী হই! বেঁচে থাকুন মুসা আল হাফিজ। আল্লাহ আপনার কলমকে আরো শাণিত করুন। আমীন।