মাওলানা আবদু কাদের সালেহ :
আলেম সমাজের এক অনন্য নক্ষত্র মাওলানা মনসুরুল হক খান চলে গেলেন । বড় এক মধুর মানুষ ছিলেন তিনি । কথা বলতেন খুব মোলায়েম করে । বলার সময় এক অন্তর কাড়াহাসি খেলে যেতো তাঁর ঠোঁটে । আসলে হাসিটা চলে যেতোনা ;লেগেই থাকতো তাঁর মুখে । ছোট ছোট বাক্যে কথা বলতেন বড় মায়াভরা আওয়াজে । গালভরা দাড়ি আর গোলাকার এক চৌকস মুখাবয়ব ছিল তাঁর । এরই মধ্যে পানরাঙা ঠোঁটে তাঁকে মনে হতো জগতের একজন হৃষ্ঠ ও পরিতৃপ্ত মানুষ ।
জীবনকে অর্থ বিত্তের পেছনে ব্যয় করেননি বলে ব্যক্তিজীবনে তাঁর টানাপোড়েন ছিল। কিন্তু এ ব্যাপারে তিনি ছিলেন নির্বিকার। অনেক মাদ্রাসা ও দ্বীনি প্রতিষ্ঠান তাঁর হাতে গোড়াপত্তন ও প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। কিন্তু কোথাও তিনি রুটি রোজগারকে অবলম্বন বানাননি। স্বভাবে নিভৃতচারী ও প্রচারবিমূখ ছিলেন। আলেম হিসেবে খুব উঁচু মাপের ছিলেন। বৃহত্তর ময়মনসিংহের ইত্তেফাকুল উলামার মহাসচিব ছিলেন তিনি। গতবার ময়মনসিংহ ইত্তেফাকুল উলামার যে মহা সম্মেলন হয়ে গেল তার প্যান্ডাল প্রস্তুতির তদারকিতে তাঁকে সর্বশেষ দেখি ফেসবুকের কল্যানে। যেহেতু আমি প্রবাসী , তাই দেশে গেলেই দেখা হতো মাত্র। তখন ক্ষনিকের সাক্ষাৎ হলেও ঘরোয়া আলাপ জুড়ে দিতেন। তিনি মানুষকে সম্মান দিতে জানতেন। তাঁর বিনয় ছিল এমন যে তা কখনো আমাকে লজ্জিত করতো।
মানুষ তাঁর মনের জগতে কতটুকু উপরে উঠলে এ রকম অকপট বিনয় দেখাতে পারে? এটা প্রায়সই আমরা গভীরভাবে দেখিনা। তাঁর মধ্যে বিনয় ছিল কিন্তু কোন প্রকার চিত্তদৌর্বল্য ছিলনা। সেই শুরুর দিন থেকেই তিনি খেলাফত মজলিসে ছিলেন। কোন সময়ই তার মধ্যে পদ পদবীর বাহার বা আকাংখা দেখা যায়নি।
মাওলানা মনসুরুল হক খান ক’দিন থেকেই অসুস্থ ছিলেন। প্রবাসে থেকেও তাঁর কথা আমার প্রায়ই মনে হতো।
গত পাঁচদিন আগেও কেন্দ্রীয় মহাসচিবের সাথে মাওলানা মনসুরুল হক খান সম্পর্কে কথা হয়। তখনো কেউই ভাবিনি তিনি এ ভাবে চলে যাবেন। আল্লাহর ফায়সালাই চুড়ান্ত। কিন্তু আমি ভাবি, তিনি মহাকাশের এক দূরবর্তী নিহারিকা ছিলেন। যার আলোর প্রক্ষেপ পৃথিবী বক্ষে পুরোটা হয়তো আসেনি; কিন্তু বিজ্ঞানীরা জানেন তার বড়ত্ব ও বিশালত্ত পৃথিবী থেকে লক্ষগুন বেশী।
খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মাওলানা মনসুরুল হক খান ছিলেন ইসলামী আন্দোলন ও ইলমে দ্বীনের নক্ষত্র মেলার মধ্যে এক উজ্জল নিহারিকা।
তিনি যেমন প্রিয় ভাষী ও হাস্যবদনী ছিলেন তেমনি আল্লাহ তাঁকে জান্নাতেও হাসিমুখে রাখুন হৃদয়ভাঙা আকুতি নিয়ে মহামহিমের দরবারে এই মোনাজাত করি ।