অনলাইন ডেস্ক : গ্রীক দেবী থেমিসের ভাস্কর্যকে ‘মূর্তি’ আখ্যা দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে তা সরিয়ে পবিত্র আল কুরআনের প্রতিকৃতি বা সুরা যিলযালের ম্যুরাল স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন সিলেট-৩ আসনের জাতীয় পার্টি দলীয় সংসদ সদস্য ইয়াহইয়া চৌধুরী।
ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে সাংসদ ইয়াহইয়া চৌধুরী লিখেন, সুপ্রিমকোর্টের সামনে গ্রীক মূর্তি স্থাপন এদেশের সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক। এমনকি রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের সাথেও সাংঘর্ষিক। এটা সংবিধানের ১২ এবং ২৩ অনুচ্ছেদের সম্পূর্ণ বিরোধী।
তিনি এ ভাস্কর্যকে মূর্তি আখ্যা দিয়ে এটা সরকারের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র আখ্যা দিয়ে আরও লিখেন, যদি কোন ধর্মীয় স্থাপনা বা এ ধরনের কোনকিছুর মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার সুযোগ থাকে তবে পবিত্র আল কুরআনের প্রতিকৃতি অথবা সূরা যিলযালের এই দুটি আয়াতের ম্যুরাল স্থাপন করা হোক।
ইয়াহইয়া চৌধুরী ফেসবুকে লিখেন-
“সুপ্রিম কোর্টের সামনে গ্রীক মূর্তি স্থাপন বাংলাদেশের কোন ধর্মের সংস্কৃতি নয়; এমনকি বাঙ্গালী সংস্কৃতিও নয়; বরং এটা গ্রীকদের সংস্কৃতি, ইউরোপীয় সংস্কৃতি।
সুপ্রিমকোর্টের সামনে গ্রীক মূর্তি স্থাপন এদেশের সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক এমনকি রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের সাথেও সাংঘর্ষিক। এটা সংবিধানের ১২ এবং ২৩ অনুচ্ছেদের সম্পূর্ণ বিরোধী।
১৯৪৮ সালে সুপ্রিম কোর্ট প্রতিষ্ঠার পর থেকে যখন কোন মূর্তি ছিল না। তখন কি সুপ্রিম কোর্টে ন্যায়বিচার হয় নি? বাংলাদেশের কোন সমাজেই গ্রীক দেবীর মূর্তি স্থাপন সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। মূর্তি ন্যায় বিচারের প্রতীক গ্রীকদের ধর্মে বা অন্য কোন ধর্মে হতে পারে; কিন্তু মুসলমানদের ধর্মে নয়। এদেশ শতকরা ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশ এবং রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। সেখানে ৯২ ভাগ মুসলমানদের উপর অন্য ধর্ম চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা চরম ধৃষ্টতা। তাহলে সর্বোচ্চ বিচারালয়ে মূর্তি স্থাপনের খাহেশ কাদের স্বার্থে?
এটা সরকারের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র। সরকার বিরোধীদের আন্দোলনের সুযোগ করে দিতেই এ ষড়যন্ত্র। অবিলম্বে এটা অপসারণ করতে হবে।
আর যদি কোন ধর্মীয় স্থাপনা বা এধরনের কোন কিছুর মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার সুযোগ থাকে, তবে পবিত্র আল কুরআনের প্রতিকৃতি অথবা সূরা যিলযালের এই দুটি আয়াতের ম্যুরাল স্থাপন করা হউক।
{فَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ (7) وَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَرَهُ}
(অর্থাৎ কেউ বিন্দু পরিমাণ সৎকর্ম করলে বিচার দিবসে তার জন্য যেমন পুরস্কৃত করা হবে ঠিক তেমনি কেউ বিন্দু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তারও জবাবদিহি করতে হবে।)
অতএব, আমাদের আদালতে কর্মরত মাননীয় বিচারপতি, আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থিরা এই আয়াতের মর্মার্থ উপলব্ধি করে বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা করেন নিঃসন্দেহে ন্যায়বিচার সুপ্রতিষ্ঠিত হবে।
এদিকে সাংসদ ইয়াহইয়া চৌধুরীর এ পোস্ট ফেসবুকে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। অনেকেই একে সমর্থন করলেও কেউ কেউ এর বিরোধিতা করেছেন।
মিজানুর রহমান খান নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারী প্রশংসা করে লিখেন, আপনি যে দেশ জাতি ও ইসলামের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন, এই পোস্ট তার জ্বলন্ত প্রমাণ। আল্লাহ আপনা উত্তম বদলা দান করুন।
মুক্ত বাংলা নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেন, সবই ভোটের ধান্দা। জাতীয় পার্টি নয়, এগুলো হলো হেফাজতি এমপি। ইয়াহিয়া সাব এখনও মোল্লাদের আসল রূপ দেখে নাই। আফগানিস্তান, মধ্যপ্রাচ্য থেকেও কোন শিক্ষা নেই নাই।
শোভন রেজা প্রশ্ন রেখে লিখেন, সহিহ আল বুখারি হাদিস নং ২১৯ অনুযায়ী নারী নেতৃত্বে কেউ উন্নত হতে পারবে না। আপনার মতামত? বর্তমান প্রধানমন্ত্রী একজন নারী, আর তাঁর সাফল্য মাথায় রেখে বলবেন।
শান্তনু আদিব প্রশ্ন রেখে লিখেন, সংবিধানের ১২ আর ২৩ নং অনুচ্ছেদের কেমনে বিরোধী তাহা একটু খুইলা বলেন।
মুহাঃ আখতার উদ্দীন লিখেন, এমপি সাহেবকে ধন্যবাদ।
আবু রায়হান তানিম সমালোচনা করে লিখেন, এমন লোকও আমাদের সংসদে এমপি হয়। যে ভাস্কর্য আর মূর্তির পার্থক্য বুঝে না। যে হেফাজতি মৌলবাদ লালন করে। হায় আফসোস।
উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্টের সামনে থাকা থেমিসের ভাস্কর্য অপসারণের দাবি জানিয়েছে হেফাজতে ইসলামসহ প্রায় সবকটি ইসলামপন্থী দল। হেফাজতের এ দাবির প্রেক্ষিতে এ ধরনের বক্তব্যকে গুরুত্ব দেয়ার কিছু নেই বলে মনে করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি বলেছেন, ভাস্কর্য এবং মূর্তির পার্থক্য না বুঝে বিভিন্ন বক্তব্য দেয়া হচ্ছে।
ভাস্কর্যটিতে দাঁড়িপাল্লা ব্যবহার করা হয়েছে ন্যায়বিচারের সূচক হিসেবে। দণ্ড বা শাস্তির সূচক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে তলোয়ার। আর চোখ বাঁধা রাখা হয়েছে, এর অর্থ হচ্ছে নিরপেক্ষভাবে বিচার করতে হবে। রোমান আইন থেকেই আমাদের বিচারের বিষয়ের উৎপত্তি। সেজন্যই অন্যান্য দেশের মতো এই ভাস্কর্য করা হয়েছে, মন্তব্য তাঁর।