শুক্রবার, ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ সকাল ৬:২৬
Home / প্রতিদিন / মৃত্যুর আগে যা বলে গেলেন ইসলামে দীক্ষিত ক্যাথলিক যাজক

মৃত্যুর আগে যা বলে গেলেন ইসলামে দীক্ষিত ক্যাথলিক যাজক

লন্ডন: রোমান ক্যাথলিক যাজক ইদ্রিস তৌফিক। প্রায় ১৫ বছর আগে তিনি কিসের টানে ইসলামে ধর্মান্তরিত হন তার সেই অভিজ্ঞতা সবার সঙ্গে শেয়ার করেছেন।
তিনি ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অসুস্থতাজনিত কারণে যুক্তরাজ্যে মারা যান। তিনি বেশ কয়েক বছর যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন স্কুলে ধর্মীয় শিক্ষার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
পড়ুন তার সেই আশ্চর্যজনক কাহিনী যা তিনি মৃত্যুর আগে নিজের জীবন সম্পর্কে লিখে গেছেন: ‘আমি একজন যাজক হিসেবে কয়েক বছরমানুষের সেবা করেছি এবং তা আমি উপভোগ করেছি। যাইহোক, এর পরেও ভিতরে ভিতরে আমি খুশি ছিলাম না এবং আমার
কাছে কেবল মনে হয়েছে, সেখানে কিছু একটা সঠিক নয়। সৌভাগ্যবশত এবং আল্লাহর ইচ্ছায় আমার জীবনে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা কাকতালীয়ভাবে আমাকে ইসলামের পথে নিয়ে যায়।’
‘আমার ধারনা ছিল মিশর হচ্ছে পিরামিড, উট, বালি এবং খেজুর গাছের দেশ। আসলে আমি মিশরের হূর্ঘদায় একটি সফরে গিয়েছিলাম।এটা মিশরের প্রধান পর্যটন কেন্দ্র এবং দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। শহরটি লোহিত সাগর উপকূলে অবস্থিত।’
‘এটা অনেকটা ইউরোপীয় কিছু সমুদ্র সৈকতের অনুরূপ যা আমাকে বিস্মিত করেছিল। আমি প্রথমে বাসযোগে কায়রো যাই। সেখানে আমি আমার জীবনের সবচেয়ে বিস্ময়কর একটি সপ্তাহ অতিবাহিত করি। প্রথমবারের মতো আমি সেখানে ইসলাম ও মুসলমানদের সান্নিধ্যে
আসি। সেখানে আমি খেয়াল করলাম মিশরীয়রা কতটা ভদ্র ও ভাল মানুষ কিন্তু খুবই শক্তিশালী।’
‘ওই সময় মুসলমানদের সম্পর্কে সব ব্রিটিশদের মতোআমার চিন্তাধারাও ছিল একই রকম। মুসলিমরা হচ্ছে বোমাবাজ ও যোদ্ধা যা মিডিয়া ও টিলিভিশন থেকে বারবার শুনে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। অন্য সবার মতো আমারও ধারনা ছিল, ইসলাম একটি অশান্তির ধর্ম। তবে কায়রোতে এক সপ্তাহ অতিবাহিত করার পর আমি আবিষ্কার করলাম ইসলাম কতটা সুন্দর ও শান্তির ধর্ম।’
‘মসজিদ থেকে আজানের শব্দ শুনতে পেয়ে রাস্তায় পণ্য বিক্রি করা অত্যন্ত সাধারণ মানুষগুলো তাদের বেচাকেনা ফেলে রেখে আল্লাহ দিকে তাদের মুখ নির্দেশ করে মুহূর্তের মধ্যে নামাজে দাঁড়িয়ে যেতে দেখেছি। আল্লাহর প্রতি তাদের দৃঢ় বিশ্বাস আমাকে মুগ্ধ করে। মৃত্যুর পর স্বর্গ লাভের প্রত্যাশায় তারা নিয়মিত নামাজ পালন, রোজা পালন, অভাবগ্রস্তকে
সাহায্য করা এবং মক্কায় গিয়ে হজ পালনের স্বপ্ন
দেখে।’
‘সেখান থেকে প্রত্যাবর্তনের পর আমি আমার পুরানো পেশা ধর্মীয় শিক্ষার কাজে ফিরে যাই। ব্রিটিশ শিক্ষা ব্যবস্থায় একমাত্র বাধ্যতামূলক বিষয় হচ্ছে ধর্ম শিক্ষা অধ্যয়ন। আমি খ্রিস্টান, ইসলাম, ইহুদীধর্ম, বৌদ্ধ এবং অন্যান্য ধর্ম সম্পর্কে শিক্ষা দিতাম। তাই প্রতিদিন আমাকে এসব ধর্ম সম্পর্কে পড়তে হতো। আমার ছাত্রদের অনেকে ছিল আরবের মুসলিম শরণার্থী। অন্য কথায়, ইসলাম সম্পর্কে শিক্ষা দিতে গিয়ে আমি এ ধর্ম সম্পর্কে আমি অনেক কিছু শিখতে পারি।’
‘সাধারণত কিশোর-কিশোরী বয়সে অনেক ছেলে-মেয়েই কিছুটা দুষ্ট প্রকৃতির হয়ে থাকে। কিন্তু এই আরব মুসলিম শরণার্থী শিশুরা ভাল মুসলামানের উদাহরণ স্থাপন করে। এই ছাত্র-ছাত্রীরা ছিল খুবই ভদ্র এবং দয়ালু। তাই তাদের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব গভীর হতে থাকে। রমযান মাসে নামাজের জন্য আমার শ্রেণীকক্ষ তারা ব্যবহার করতে পারবে কিনা সেসম্পর্কে তারা আমার মতামত জিজ্ঞাসা করে।’
‘সৌভাগ্যবশত কেবল আমার রুমটিতেই কার্পেট বিছানো ছিল এবং কার্পেটের ওপর শিশুদের মাসব্যাপী নামাজ পড়ার অনুমতি দেই। আর আমি প্রতিদিন পিছে বসে তাদের প্রার্থনা পর্যবেক্ষক করতাম। এটা আমাকে তাদের সঙ্গে রমজানের রোজা রাখতে উৎসাহ যুগিয়েছিল। যদিও আমি তখনো পর্যন্ত মুসলিম ছিলাম না।’
‘একবার ক্লাসে পবিত্র কোরআনের একটি অনুবাদ আবৃত্তি করতে গিয়ে আমি একটি আয়াতে পৌঁছাই। এতে বলা আছে, {আর যখন তারা আমার রাসূলের মাধ্যমে যা অবতীর্ণ হয়েছে তা শোনে, তখন তুমি দেখতে পাবে তাদের চোখে অশ্রু টলমল করছে কারণ তারা সত্যের স্বীকৃতি দিয়েছে} (কোরআন ৫:৮৩)’
‘আমি আবেগে বিস্মিত হয়ে যাই। আমি অনুভব করলাম আমার চোখে অশ্রু ছলছল করছে এবং আমি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তা আড়াল করতে কঠোর চেষ্টা করলাম।’
‘পরেরদিন আমি আন্ডারগ্রাউন্ডে যাই এবং সেখানে গিয়ে খেয়াল করলাম মানুষ ইসলাম সম্পর্কে কতটা আতঙ্কগ্রস্ত। ব্রিটেনে মানুষের এই ধরনের মনোভাবে আমি ভয় পেয়ে যাই। ওই সময়ে পশ্চিমারা এই ধর্ম নিয়ে ভয় পেতে শুরু করে এবং তারা এটিকে সন্ত্রাসবাদের জন্য দায়ী করে।’
‘তবে মুসলমানদের সঙ্গে আমার আগের অভিজ্ঞতার কারণে আমাকে একটি ভিন্ন দিকে নিয়ে যায়। আমি ভাবতে শুরু করি, কেন ইসলাম? কেন আমরা কিছু মানুষের সন্ত্রাসীদের কর্মের জন্য ধর্ম হিসেবে ইসলামকে দোষারোপ করি। যখন কিছু খ্রিস্টান একই কাজ করছে; তখন কেন কেউ খ্রিস্টধর্মকে সন্ত্রাসবাদের ধর্ম বলে অভিযুক্ত করে না?’
‘এই ধর্ম সম্পর্কে জানতে আমি একদিন লন্ডনের সবচেয়ে বড় মসজিদে যাই। লন্ডনের কেন্দ্রীয় মসজিদের প্রবেশ পথে আমি ইউসুফ ইসলামকে পাই। তিনি ছিলেন একজন পপ গায়ক। সেখানে বৃত্তাকারে বসে ইসলাম সম্পর্কে কিছু মানুষের কথা বলা শুনলাম। একটা সময় আমার মন
আমাকে জিজ্ঞাসা করতে থাকে, ‘তুমি কি সত্যিই
একজন মুসলিম হতে চলেছ?’
‘সেখানে আমাকে একজন বললেন, মুসলমানেরা এক আল্লাহর ওপর বিশ্বাস করে, প্রতিদিন পাঁচবার প্রার্থনা করে এবং রমজান মাসে রোজা পালন করে।
আমি তাকে এই বলে থামিয়ে দিলাম, আমি এর সবই বিশ্বাস করি এবং এমনকি রমজানে আমি রোজাও রেখেছি।’
‘তখন তিনি আমাকে বললেন, ‘তাহলে আপনি কিসের জন্য এখনো অপেক্ষা করছো? কি আপনাকে এ পথে আসতে বাধা দিচ্ছে?’
আমি বলেছিলাম, ‘না, আমি ধর্মান্তরিত হতে মনস্থ করিনি।’
‘সেই মুহূর্তে মসজিটিতে আযান দেয়া হলে সবাই প্রস্তুত হয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে নামাজে দাঁড়িয়ে যায়। আর আমি পিছে বসে অনবরত ক্রন্দন করতে লাগলাম। তারপর আমি নিজেকে বললাম, ‘আমি মূর্খের মতো কি করছি?’
‘তাদের নামাজ শেষ হলে আমি ইউসুফ ইসলামের কাছে যাই এবং তাকে অনুরোধ করি আমাকে কালেমা শিক্ষা দেয়ার জন্য; যাতে আমি ইসলামে ধর্মান্তর হতে পারি।
তিনি প্রথমে আমাকে ইংরেজিতে কালেমার অর্থ
ব্যাখ্যা করে শোনান। পরে আমি তার সঙ্গে সঙ্গে
আরবিতে এটি পাঠ করি। এর অর্থ হচ্ছে, ‘আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর রাসূল।’
‘কালেমা পাঠ করার পরে আমি আমার চোখের পানি ধরে রাখতে পারি নি।’

সংগৃহীত পোস্ট

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...