অনলাইন ডেস্ক : ছোট অঙ্কের রেমিট্যান্স পাঠাতে এখন ব্যাংকের বদলে বিকাশের ব্যবহার বেশি হচ্ছে। এতে বৈধ উপায়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে। এ কারণে বিকাশের ক্যাশ আউট (অর্থ উত্তোলন) বন্ধ করে দেওয়ার জন্য এক জোট হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে দাবি জানিয়েছে দেশের শীর্ষ ২০ রেমিট্যান্স আহরণকারী ব্যাংক।
রবিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকে রেমিট্যান্স নিয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এই দাবি জানান ওই ২০টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকেরা। তারা বাংলাদেশ ব্যাংককে জানিয়েছেন, বিকাশের মাধ্যমে হুন্ডি চক্রই রেমিট্যান্স প্রবাহ কমিয়ে দিয়েছে। এ জন্য অনেকে অভিন্ন নেটওয়ার্ক স্থাপনে বিকাশকে ব্যবহারেরও প্রস্তাব দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী বলেন, ‘বৈঠকে শীর্ষ ২০ রেমিট্যান্স আহরণকারী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকেরা বিকাশের ক্যাশ আউট বন্ধ করার দাবি তুলেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাণিজ্যিক ব্যাংকের দাবির প্রেক্ষিতে বিকাশের মাধ্যমে অর্থ উত্তোলনের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। আগে যেটা ২৫ হাজার টাকা ছিল, সেটা এখন ১০ হাজার টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে।’
অবশ্য প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি ও কাস্টমার সার্ভিস বিভাগে শত শত অভিযোগও জমা পড়েছে। এছাড়া কিছু অসাধু ব্যাক্তি, প্রতিষ্ঠান ও হুন্ডিচক্র বিদেশে নিজেদের বিকাশ এজেন্ট পরিচয় দিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অবৈধ মাধ্যম ব্যবহার করে টাকা পাঠাতে প্ররোচিত করছে।
তবে বিকাশের সঙ্গে এইসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কোনও সম্পর্ক নেই বলে বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন বিকাশের মুখপাত্র জাহেদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের বাইরে বিকাশের কোনও এজেন্ট বা বুথ নেই। এইসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়ে আটটি দেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলিতে চিঠি দিয়েছে বিকাশ।’
জাহেদুল ইসলাম আরও বলেন, ‘বিকাশের লোগোকে যেন কেউ অননুমোদিতভাবে ব্যবহার করতে না পারে সে লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শক্রমে সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, বাহরাইন, কুয়েত, ওমান, কাতার, সিঙ্গাপুর ও মালয়শিয়াতে বাংলাদেশের নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতদের সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে অনুরোধ করা হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ২১ জুলাই বাংলাদেশে প্রথম মোবাইলে আর্থিক সেবা দিতে ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিকাশের যাত্রা শুরু হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান এর কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।
জানা গেছে, বর্তমানে ছোট অঙ্কের টাকা (রেমিট্যান্স) পাঠাতে কেউ আর ব্যাংকিং চ্যানেলে যাচ্ছেন না। প্রবাসীরা খুব সহজে ও স্বল্প সময়ে বিকাশের মাধ্যমে অর্থ পাঠিয়ে দিচ্ছেন। এ কারণে ছোট অঙ্কের রেমিট্যান্স পাঠাতে ব্যয় ফ্রি করা যায় কিনা বা ব্যাংকগুলো যেসব নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠায় তাদের চার্জ বেশি কিনা, এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বৈঠকে।
এস কে সুর চৌধুরী বলেন, ‘কোনও ব্যাংক ছোট অঙ্কের রেমিট্যান্সে বিনিময়মূল্য নির্ধারণে বিশেষ প্রণোদনা দিতে চায়। তাদের অতিরিক্ত সেই ব্যয় সমন্বয়ে যা খরচ হবে তা ব্যাংকের করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) খাতে দেখানোর সুযোগ দেওয়া হবে।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই ডেপুটি গভর্নর আরও বলেন, ‘অর্থনীতিতে রেমিট্যান্সের বিশাল অবদান রয়েছে। এর ইতিবাচক ধারা যেন অব্যাহত থাকে সেজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক সক্রিয় রয়েছে। এ লক্ষ্যে বৈধ উপায়ে রেমিট্যান্স পাঠাতে ব্যাংকগুলোকে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া অ্যাপস তৈরি করে বিকাশের মাধ্যমে অর্থ পাঠানোর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’ তিনি জানান, বিকাশ এতদিন হুন্ডির অভিযোগ অস্বীকার করলেও দূতাবাসগুলোর নজরদারিতে এর সত্যতা মিলেছে। এই ধরনের কাজে জড়িত থাকায় এরই মধ্যে ২৫ জনকে জরিমানাও করেছে একটি দেশ।
এর আগে বিকাশকে লেনদেনে আরও সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। সম্প্রতি বিকাশ ও ব্যাংকের ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এক বৈঠকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বিকাশের বৈঠকে আমরা বিকাশকে আরও সচেতন হতে বলেছি।’ সূত্র. বাংলা ট্রিবিউন।
ইআম