খতিব তাজুল ইসলাম::
ইকরা বাংলাদেশের সাথে এটুআই প্রজেক্ট‘র চুক্তি স্বাক্ষর একটি ইতিবাচক সম্ভাবনা বলেই আমরা ধরেনিতে পারি। কওমি শিক্ষার্থীদের কারিগরি প্রশিক্ষণ দিতে সরকারি অনুদানে পরিচালিত এটুআই‘র সমঝোতা স্বাক্ষর খুবই গুরুত্বপুর্ণ বিষয়। ২৩ জানুয়ারি ২০১৭ প্রধানমন্ত্রীর কার্যলয়ে অনুষ্ঠিত এই সমঝোতা স্বাক্ষর কওমি শিক্ষার্থীদের মাঝে কারিগরি প্রশিক্ষণ ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে ইকরা বাংলাদেশের সাথে যে চুক্তি হয়েছে তাতে বলা হয়েছে শিক্ষার্থীরা কর্ম দক্ষ হয়ে গড়ে উঠবে। কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধিপাবে।
প্রথম কথা হলো সরকারি দান অনুদান কি কওমি মাদ্ররাসা গ্রহন করতে পারে? আসলে গম চাল ডাল জায়গা জমি সহ অসংখ্য দান খয়রাত কওমি মাদরাসা গ্রহন করছে। সমাজ কল্যাণ বিভাগের নতিপত্র ঘাটলে তার হাজার হাজার প্রমাণ আপনি পেয়ে যাবেন। সরাকারি অর্থ জনগণেরই অর্থ। জনগণের টেক্সের পয়সা থেকেই সরকার দান খয়রাত করে। তাই সরকারি প্রতিটি পয়সায় এদেশের প্রতিটি নাগরিকের অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত। সরকার যে অনুদান দিবে বা দিচ্ছে তা পক্ষান্তরে কওমি শিক্ষার্থীদের পাওনা অধিকারই দিচ্ছে। এখানে লুকোচুরি খেলার কোন অবকাশ আছে বলে মনে করিনা। স্কুল কলেজ ভার্র্সিটি ময়লা আমলা কামলা অফিস আদালত সকলে লুটেপুটে খাবেন জনগণের গোদাম থেকে। আর স্বকীয়তার অজুহাত দেখিয়ে এদশের ২০লক্ষ আলেম উলামা ছাত্র শিক্ষকদের সরিয়ে রাখা হবে বঞ্চিত করা হবে তা কখনো মেনে নেয়া যায়না।
অতএব কারিগরি সহায়তা চুক্তি ইহা কওমি শিক্ষার্থীদের পাওনাই দিচ্ছে। আর যতটুকু দিবে তা কমই হবে বলে প্রতীয়ামান হচ্ছে। কারণ ইকরা বাংলাদেশ পেল বাকিরা বঞ্চিত রয়েগেল তা খুবই দুঃখজনক।
এবার আসি দ্বীতিয় কথায় যে এই প্রজেক্টের মাধ্যমে কওমি মাদরাসাকে কি কারখানা’য় রূপান্তরিত করা হবে? কারখানা একজিনিস আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আরেক জিনিস। তাহলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কারিগরি প্রশিক্ষণ বলতে কি বুঝায়? কিংবা কি সহায়তা বা প্রশিক্ষণের প্রয়োজন? কোন পাগলই বিশ্বাস করবেনা যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভিতর কল কারখানা সাবান ফেক্টরী বিস্কুট ফেক্টরি বসানো হবে বা তার কর্মি কর্মকর্তা কারিগার ইত্যাদি বানানো হবে? মূলতঃ প্রাইমারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তার উপযুগী শিক্ষা উপকরণ, নিন্নমাধ্যমিকে তাদের উপযুগী এবং উচ্চবিদ্যালয়ে তাদের উপযুগী শিক্ষা উপকরণ সাপ্লাই। কওমিতে কিতাব ছাড়া অন্য কিছুর সাথে ছাত্রদের কোন পরিচিতি নেই বা করিয়ে দেয়া হয়না বা সুযোগ নেই বা আয়োজন নেই। তাই তাদের না জানা ও জ্ঞান না থাকার মানে এইনা যে প্রয়োজন নেই। আজকাল কম্পিউটার আইপেড প্রজেক্টার ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম ও তার ব্যবাহার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লাজিম বা আবশ্যকীয়। আমাদের কওমিতে না আছে কোন সমৃদ্ধ লাইব্রেরী না লেব্রেটরী। তাই কারিগরি শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ নিয়ে চিতকার চেচামেচি করার আগে তার জরুরত ও উপযুগিতা নিয়ে ভাবা দরকার। বর্তমান জামানায় সকল আসাতেজা হাদীস ফিক্বহ তাফসিরের হউক তাকে কম্পিউটার জানা খুব প্রয়োজন। তাই ২৫ হাজার কওমি মাদরাসায় ছাত্রদের আগে আসাতেজায়ে কেরামের জন্য কম্পিউটার প্রশিক্ষণ জরুরি। এভাবে জিসিএসি ১০ম মেট্রিক বা এসএসি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জরুরতে জিন্দেগীর পাঠ উপযুগী বইয়ের পাঠের সাথে কিছু প্রশিক্ষণ দরকার। যেমন আমরা যখন জুনিয়র ক্লাসে পড়েছি তখন কর্তৃপক্ষ আমাদের জন্য সেলাই বিদ্যুৎ ড্রাইভিং ইত্যাদি কোর্সের ইন্তেজাম করেছিলেন। খন্ডকালীন সময়ে ছাত্রদের জন্য বিভিন্ন প্রকার প্রজেক্টের সাথে পরিচিত করা যেতে পারে। যেমন মৎস চারাগাছ পশুপালন সবজি বাগান ইত্যাদি বিষয়ে লাইট প্রশিক্ষণ। তাতে মন ও মননের উন্নতি হবে। ভবিষ্যৎ প্লান নির্ধারণে নিয়ামক ভুমিকা পালন করবে।
কপাল পোড়া বোর্ডগুলো এখনো একহতে পারছেনা। হিংসা আর বোগজ আদাওত, পদ ও কুরশি আমিত্ব কিবির নাফসানিয়াত আমাদের বিক্ষীপ্ত করে রেখেছে। তবুও বলি ইকরা বাংলাদেশ যখন সমঝোতা চুক্তি করেছে আপনারাও বিচ্ছিন্ন ভাবে হলেও সমঝোতা সই করুন। নিজেদের অধিকার আদায় করে নিয়ে আসুন। শিক্ষা উপকরনের সরঞ্জাম দিয়ে আপন আপন প্রতিষ্ঠানকে সমৃদ্ধ করুন। ওদের সাথে বসুন কথা বলুন। নিজস্ব প্রজেক্ট প্রোফাইল জমা দিয়ে কাংখিত অধিকার অর্জন করুন। নিল নিল গেল গেল বলে অযথা গলা বাজাবেন কেন? আমাদের মাঝে কিছু অতি উৎসাহী আছেন দেখবেন নিজেরা ফাড়ি পথে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় কামাই করে এখন ইকরা বাংলাদেশের কারিগরি প্রশিক্ষণের সমঝোতা চুক্তি নিয়ে নসীহা ঝাড়ছেন। বলছেন সরকার কওমিতে ঢুকার পথ খুঁজছে? আর আমরা দেখি তিনি সরকারের পেটের ভিতর ঢুকে দুধ মধু আহরণে ব্যস্ত। সাংসদ হয়ে সংসদে গিয়ে রাজা হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন মাঠে ময়দানে রাজনীতিতে সরগরম থেকে। কথা সাহিত্যিক রশীদ জামীলের সেই উদাহরণ আবারও মনে পড়ে গেল ‘ঠকুর ঘরে কে রে? আমি কলা খাইনা’র মত।