শনিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ দুপুর ২:১০
Home / কওমি অঙ্গন / কওমী মাদরাসাঃ পরিচিতি ও স্বীকৃতি

কওমী মাদরাসাঃ পরিচিতি ও স্বীকৃতি

এহতেশামুল হক ক্বাসিমী :

নশ্বর ধরায় যুগে যুগে যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে সে গুলোর মাঝে অন্যতম ও সর্বোত্তম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ক্বওমী মাদরাসা। এর নির্মাতা ও প্রতিষ্ঠাতা হলেন মহান আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে প্রেরিত মানবতার অগ্রদূত হযরত মুহাম্মাদ সা.।
মক্কার সাফা পাহাড় এর অদূরে দারে আরকাম হলো দ্বীনি শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র প্রথম মাদরাসা। আর মদীনার মসজিদে নববীর আহলে সুফফার দরসগাহ হলো ইসলামের দ্বিতীয় মাদরাসা। দ্বীনি জ্ঞানে পরিপূর্ণ প্রখ্যাত ছাহাবায়ে কেরাম ছিলেন এই মাদরাসারই ফসল। যার অমীয় সূধা পান করে তৃপ্ত হয়েছেন, ইবনে আব্বাস (রা.) ইবনে মাসউদ (রা.) আবূ হুরাইরা (রা.) সহ সকল সাহাবায়ে কেরাম। সৃষ্টি হয়েছেন ইমাম মালেক রহ, ইমাম আবু হানীফা রহ., ইমাম শাফেয়ী রহ., ইমাম আহমদ রহ.সহ প্রমুখ আইম্মায়ে কেরাম। যে কারখানা থেকে তৈরি হয়েছেন ইবনে সিনা, ইমাম গাজালীর মত দার্শনিক, আলেমে দ্বীন ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত । তারা এক দিকে যেমন চারিত্রিক মাধুর্যতা দিয়ে ইসলামের সৌন্দর্য সকলের নিকট ফুটিয়ে তোলে দ্বীন ইসলামের প্রচার প্রসারের কাজ আঞ্জাম দিয়ে গেছেন। অপর দিকে সর্ব প্রকার ইসলাম বিরোধী ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা এবং বাতিলের মুখোশ উম্মোচন করার জন্য সর্বদা তারা ছিলেন সজাগ-সচেতন ও নিবেদিত প্রাণ। ইসলামের পতাকা সমুন্নত রাখার জন্য তারা জীবন বাজি রেখে সংগ্রাম করে গিয়েছেন। দারুল উলূম দেওবন্দ ও কওমী মাদরাসা মূলতঃ সে ধারারই উত্তরাধীকারী এক বিশ্বজয়ী প্রতিষ্ঠান।

এই মাদরাসার পরিচয় দিতে গিয়ে দারুল উলূম দেওবন্দের সম্মানিত প্রাক্তন মুহতামিম হাকীমুল ইসলাম কারী তৈয়্যব সাহেব রহ. বলেন, এ প্রতিষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ধর্মীয় দিক থেকে মুসলমান, আক্বীদা গত দিক থেকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত, মাযহাবের দিক থেকে হানাফী, মাশরাবের দিক থেকে সূফী, দর্শনের দিক থেকে আশআরী ও মাতুরিদী, তরীকার দিক থেকে চিশতী ও নকশবন্দী, চিন্তা ধারার দিক থেকে ওয়ালী উল্লাহী, মূলনীতির দিক থেকে কাসেমী,ফুরুআতের দিক থেকে রশীদী, সামগ্রীক দিক থেকে মাহমুদী, নিসবতের দিক থেকে দেওবন্দী। বস্তুতঃ এটাই কওমী মাদরাসার পূর্ণাঙ্গ পরিচয়।
আর এটা কোনো নতুন চিন্তা ধারা বা মতবাদের নাম নয়। বরং সাহাবায়ে কেরামেরই মত ও পথ অনুস্বরণ ও সে পথে চলার শিক্ষার প্রাণ কেন্দ্রের নামই কওমী মাদরাসা।

দুই
রাসূলু সা. এর যুগ থেকে নিয়ে সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীনের যুগ পর্যন্ত ইসলামকে ধ্বংস করার জন্য ইয়াহুদী খৃষ্টানরা হাজার চক্রান্তের জাল পাতে।
দেখতে দেখতে তারা পরবর্তী যুগে তাদের হীন মিশনের কিছু সফলতা লাভ করে। ভাসকো দামাগার নেতৃত্বে তৎকালীন বিশ্বের সবচেয়ে সমৃদ্ধ নগরী বাংলা পাক ভারত উপমহাদেশের পথ আবিস্কার করে এ দেশের রাজন্যবর্গের খিয়ালীপনার সুযোগে ইয়াহুদী খৃষ্টানরা বিভিন্ন স্থানে কুটির স্থাপন করে এবং ছলে বলে কলে কৌশলে নারী ও বিশ্বাসঘাতকতার যোগ সাজশে তারা এ উপমহাদেশের মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে নিজেদের অধীনে নিতে থাকে।
শুধু তাই নয় একে একে উপমহাদেশের সমস্ত রাষ্ট্রগুলোকে নিজেদের দখলে নিয়ে যায় এবং নিজেদের মনগড়া পদ্ধতিতে দেশ চালাতে থাকে। এক পর্যায়ে এদেশের মানুষের মাঝে বিরাজমান ইসলামী তাহযীব-তামাদ্দুন ও সভ্যতায় মারাত্মক ধ্বংস নেমে আসে।
তবে মুসলমানগণ তাঁদের বর্বর শাসন ক্ষমতা বেশি দিন মেনে নিতে পারেনি। তখন ওলামায়ে কেরাম নববী সুন্নাতের আলোকে ইসলামের সামাজিক, রাজনৈতিক সকল বিধি-বিধানকে বিশ্লেষণ করে ইসলামের রুপ রেখা ও তাগুতি শক্তিকে রুখবার জন্য এক কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন এবং আজাদী আন্দোলনের ডাক দেন। তবে এ দেশীয় কুচক্রী মহলের ষড়যন্ত্রে সেই আন্দোলন ব্যর্থ হয়। আর নেমে আসে নেতৃত্বদানকারীদের উপর অকথ্য নির্যাতন ও নিপীড়নের স্ট্রিম রুলার। হাজারো মানুষ কালপানীর নি:সহ অত্যাচারে শিকার হন। চট্টগাম থেকে খায়বার পর্যন্ত গ্রান্ড ট্রাংক রুডের দু’পাশের একটি বৃক্ষ শাখাও এমন ছিলনা যাতে উলামায়ে কেরাম বা সাধারণ মুসলমানের লাশ ঝুলেনি। ফলে নেতৃত্বের জন্য সিপাহসালার ছিল অনেক অভাব। তখন উলামায়ে কেরাম এলমে দ্বীন, এলমী নববীকে টিকিয়ে রাখার জন্য ও তা মানব সন্তানের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য এবং উপমহাদেশকে ইয়াহুদীদের আগ্রাসন থেকে মুক্তি করার জন্য প্রত্যয়ী আত্মত্যাগী সিপাহসালার তৈরির মহান লক্ষ্যে এক প্রতিষ্ঠান তৈরির অনুভব করেন। এ কঠিন মুহুর্তে রফিউদ্দীন রহ.এর স্বপ্ন যুগে রাসূল সা. নির্দেশিত স্থানে কাসেম নানুতবী রহ.এর নেতৃত্বে ১৮৬৬ খৃষ্টাব্দের ৩০ শে মে মোতাবেক ১৫ ই মুহাররম ১২৮৩ হিজরীতে ভারতের সাহরানপুর জেলার দেওবন্দ নামক এলাকায় ঐতিহাসিক ছাত্তা মসজিদ প্রাঙ্গণে একটি ডালিম গাছের ছায়ায় প্রচলিত ধারার সর্ব প্রথম কওমী মাদরাসা দারুল উলূম দেওবন্দের গোড়া পত্তন করা হয়।
সে চিন্তা ধারা নিয়েই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আমাদের কওমী মাদরাসাগুলো। যা কেড়ে নিয়েছে মানুষের অন্তর, গেথে গেছে হৃদয়ের গহীনে, স্থান করে নিয়েছে মানুষের হৃদয় আসনে। মানুষের তাহজীব তামাদ্দুনে তার অবদান অবর্ণনীয়।

তিন
১৭৫৭ সালে পূর্বে ৮০ হাজারের উপরে কওমী মাদ্রাসায় ছাত্র অধ্যয়ন করতো। এ সমস্ত খালেস দ্বীনি প্রতষ্ঠান থেকে বিজ্ঞ আলিম, মুহাদ্দিস, মুফতী, মুনাজির তথা মহান আল্লাহর পথে দাওয়াত দানকারীদের এক উল্লেখযোগ্য বিশাল জামাত প্রতিনিয়ত বের হচ্ছেন। কিন্তু কওমী মাদ্রাসাসমূহ থেকে পাস করা ছাত্রদের দাওরায়ে হাদীসের সনদের রাষ্ট্রীয় কোনো স্বীকৃতি ও মান নেই। একটি স্বাধীন দেশের জন্য এটা শুধু পরিতাপের বিষয় নয়, লজ্জাজনকও বটে। বেফাকুল মাদারিস ও সম্মিলিত কওমী মাদরাসা কমিশন কর্তৃক প্রদত্ত দাওয়ায়ে হাদিসের সনদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি না থাকার কারণে এক দিকে লাখ লাখ ইলমে নববীর ধারক-বাহক দ্বীনি ছাত্রদের মেধা ও প্রতিভার অবমূল্যায়ন হচ্ছে, অন্যদিকে মেধা অপচয় ও পাচার হয়ে যাচ্ছে। সাথে সাথে জাতিও প্রতারিত হচ্ছে। দেশ ও জাতির সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও প্রাশাসন, বিচার, শিক্ষা, প্রতিরক্ষাসহ প্রতি সেক্টরের দ্বার কওমী মাদ্রাসা পড়ুয়াদের জন্য আজ রুদ্ধ, অর্গলযুক্ত। অত্যন্ত সুকৌশলে এদেরকে যবনিকার অন্তরালে রাখা হয়েছে। অনেকে হয়তো মনে করতে পারেন যে, শিক্ষার ক্ষেত্রে ডিগ্রি ও সনদ মূল বিবেচ্য বিষয় নয়, জ্ঞানই বিবেচ্য। এ বক্তব্য সন্দেহাতীতভাবে সত্য। তবে এ সত্যকেও অস্বীকার করা যাবে না যে, জ্ঞান তথা প্রতিভার অবমূল্যায়ন হলে নতুন সৃষ্টিধর্মী প্রতিভার জন্ম হয় না। বাজারে যে পদার্থ ও দ্রব্যের চাহিদা কম, তার উৎপাদন হ্রাস পেতে বাধ্য। বর্তমানে বস্তুবাদী শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষিতরাই সমাজ ও রাষ্ট্রীয় অবকাঠামোর নিয়ন্তা ও চালিকা শক্তি। একই দেশে পাশাপাশি দু’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের মধ্যে পর্বত প্রমাণ বৈষম্য বিদ্যমান। এক জাতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শাসক, বিচারক হচ্ছেন, অপর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে হচ্ছেন শাসিত ও মগলুব। এ দৃশ্য অসহ্য ও হৃদয়ে আঘাত হানার মতো। যা মেনে নেওয়া যায় না।

চার
পাকিস্তানের ওলামায়ে কেরাম উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বেফাকুল মাদারিসের সভাপতি মরহুম হযরত মাওলানা মুফতী মাহমুদ (রহ.)-এর প্রাণন্তকর প্রয়াস ও সংগ্রামের মাধ্যমে তাঁদের দাওরায়ে হাদীসের সনদের বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএ আরবী ও ইসলামিয়াতের সমমানের স্বীকৃতি আদায় করে নিয়েছেন।
পাঞ্জাবের গভর্নর ১৯৮৬ সালের ২০ মার্চ জারিকৃত এম ও (গণশিক্ষা) ৯-৮/৮৪ নম্বরের এক নোটিফিকেশনে ইসলামাবাদস্থ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নোটিফিকেশনের নং ৪১৮/একা ৮৪/৬ ভুল্যম ৭/২২৭ তারিখ ০৩/০২/১৯৮৫ উদ্ধৃতি সনদ দিয়ে ঘোষণা করেন যে, দ্বীনি মাদ্রাসা সমূহের বেসরকারি বোর্ডকর্তৃক প্রদত্ত দাওরায়ে হাদিসের শাহাদাত “আল-জামিয়া ফি উলুমিল আরাবিয়াহ্ ওয়াল ইসলামিয়াহ্” এমএ আরবী ও ইসলামিয়াত বিষয়ে শিক্ষকতা ও উক্ত বিষয়দ্বয়ে উচ্চতর গবেষণা করার ক্ষেত্রে সমমান পাবে। শিক্ষকতা ছাড়া অন্য যে কোনো বিভাগে চাকরির বেলায় উক্ত সনদধারীকে আরবী ও ইসলামিয়াত ছাড়া স্নাতক পর্যায়ে অতিরিক্ত যে কোনো দুইটি বিষয়ে পাস করতে হবে। ফলে পাকিস্তানি কওমী মাদ্রাসা পড়ুয়া মেধাবী ছাত্র ভাইয়েরা উলুমুত-তাওহীদ, উলুমুল-কোরআন, উলুমুল-হাদীস, উলুমুল-কানুন ওয়াশ-শরীয়াহ্, উলুমুত-তারীখ আল-ইসলামিয়া ওয়াস সাকাফাহ প্রভৃতি বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণার জন্য মক্কার উম্মুল কোরা বিশ্ববিদ্যালয়, কায়রোর আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামাবাদের আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, রিয়াদের ইমাম মুহাম্মদ বিশ্ববিদ্যালয়, ত্রিপলীর দাওয়াহ কলেজ ও কুয়ালালমপুরের আন্তর্জাতিক ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সুযোগ পাচ্ছেন। এ সুযোগ গ্রহণ করে পাকিস্তানের কওমী মাদ্রাসার ছাত্রগণ সেনা বাহিনী, প্রশাসন, বিচার ও শিক্ষা বিভাগের প্রতিনিধিত্ব করার ব্যাপক সৌভাগ্য লাভ করে প্রতিভার স্ফুরণ ঘটাচ্ছেন সর্বত্র। প্রক্ষান্তরে ভারতের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম দেওবন্দের ফাজিল সনদ এবং লক্ষনৌউর দারুল উলুম নদওয়ার আলমীয়ত সনদ ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃত। উক্ত প্রতিষ্ঠান দ্বয় থেকে পাস করা ছাত্রগণ আলী গড় বিশ্ববিদ্যালয়, জামেয়া মিল্লিয়া দিল্লী, এলাহাবাদ করাচী কাশ্মীর ওসমানীয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স অধ্যয়নের সুযোগ লাভ করছেন।

পাঁচ
বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক স্বীকৃতি আমাদের জন্মগত নাগরিক অধিকার। কোনো হাদিয়া বা তোহফা নয়। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা এখনো সরকারিভাবে অস্বীকৃত। প্রদত্ত সনদও অগ্রহণযোগ্য। যারা এ শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষা লাভ করেন তারা কি এদেশের নাগরিক নয়? যে কোনো নাগরিকের শিক্ষা-দীক্ষাসহ সব নাগরিক অধিকার বাস্তবায়ন কি সরকারের দায়িত্ব নয়? স্বাধীনতার পরবর্তী সরকারগুলো কি কোন খবর নিয়েছেন, সরকারের কানা কড়ি ব্যয় বিনে সম্পূর্ণ জনগণের অর্থানুকূল্যে পরিচালিত এ শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষাপ্রাপ্তরা সরকারি স্বীকৃতি পাবার যোগ্য কি-না? প্রকৃতপক্ষে এরাই নির্ভেজাল খালেস ইসলামী শিক্ষার ধারক-বাহক ও অকৃত্রিম দেশ প্রেমিক সু-নাগরিক। সরকারিভাবে নিয়ন্ত্রণমূলক শর্ত জুড়ে দেয়া হলে কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা তার ঐতিহ্য ও স্বতন্ত্র হারাবে। তা কিন্তু বাংলার তৌহিদী জনতার কাম্য নয়। তাবে হ্যাঁ সরকারি পৃষ্টপোষকতায় দ্বীনি শিক্ষায় শিক্ষিত দ্বীনদার বুদ্ধিজীবী, প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞ আলমে দ্বীন, ওলমা-মাশায়েখে সমন্বয়ে নতুন ক্যারিকুলাম প্রণয়নের কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে তা বিবেচ্য বিষয় হতে পারে। কওমী মাদ্রাসার মূল ক্যারিকুলাম “দরসে নেজামী” দারুল উলুম দেওবন্দসহ পাক-ভারত উপমহাদেশের সকল মাদ্রাসায় পরিবর্তিত ও পরিমার্জিত এবং পরিশীলিত সুষম হয়েছে। মৌলিক বিষয়াবলী বহাল রেখে ও অপ্রয়োজনীয় বিষয়াবলী বাদ দিয়ে ইসলামী চাহিদার ভিত্তিতে যুগ চাহিদার প্রেক্ষিতে বহু নতুন বিষয় সন্নিবেশিত করা হয়েছে। প্রয়োজনে কমিশন গঠনের মাধ্যমে আরও সুবিন্যস্ত সুষম করা যেতে পাবে। স্বতন্ত্রভাবে বাংলাদেশ কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড নামে একটি শিক্ষা বোর্ডও গঠন করা যেতে পারে। এ বোর্ডের অধীনে বিভিন্ন আঞ্চলিক বোর্ডের অধিভুক্ত শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন স্তরের পরীক্ষা নেয়া হবে। কওমী বলয়ের সাংগঠনিক অবকাঠামো চোখে পড়ার মত না হলেও তাদের রয়েছে এক বিশাল বেমেছাল জনশক্তি। আর এদের শিক্ষার মূল উৎস হচ্ছে এদেশের কওমী মাদ্রাসা সমূহ। কওমী মাদ্রাসা সমূহকে স্বীকৃতি দিয়ে সুবিধাজনক স্থানে একটি অ্যাফেলিয়েটিং ক্ষমতাসম্পন্ন স্বতন্ত্র কওমী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে মাদ্রাসা শিক্ষার উচ্চস্তরের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসমুক্ত স্বচ্ছ, সুন্দর, চরিত্রবান সালেহীন সমৃদ্ধ জাতি গঠন করা সম্ভব।
এদেশের কওমী মাদ্রাসাগুলোয় উচ্চশিক্ষার দ্বার অবারিত করা এবং নৈতিক শিক্ষার ভিত্তি শক্তিশালী করার মাধ্যমে দেশে নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন, সুষম, দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির প্রচেষ্টায় সরকার এগিয়ে আসবে সেটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা এবং সময়ের দাবি।

ছয়
শিক্ষা খাতে রাষ্ট্রের আগ্রহ দক্ষ মানব শক্তির পূর্বশর্ত। পৃথিবীর বহু সভ্যতার ভৌগোলিক অবস্থাগত বিলুপ্তি হলেও মানবিক বা দার্শনিক সম্পদ অবিনাশী হয়ে আছে কেবলমাত্র শিক্ষা ও সংস্কৃতির কারণেই। মুসলমানদের আত্মশুদ্ধির সময় এসেছে। সময়টা অল্প, কিন্তু মূল্যবান। নিজের ভাগ্য নিজেকেই পরিবর্তন করতে হয়।
মানকুলাত এবং মাকুলাতরে সমন্বয়ে দ্বীনি শিক্ষা যত দিন অব্যাহত ছিল তত দিন পৃথিবীতে মুসলিম উম্মাহর স্থান ছিলো সর্ব শীর্ষে। ইতিহাস সাক্ষী! রাসূল (সা.)-এর সময় থেকে পরবর্তী সহস্র বছর কাল জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখায় মুসলিম উম্মাহ্ এমন অপরাজয়ে উৎকর্ষ লাভ করেছিল এবং তা অব্যাহত গতিতে চলছিল তৎকালীন বিশ্বে নয়, আধুনিক প্রেক্ষাপটেও বিস্ময় ও সম্ভ্রম জাগিয়ে তোলে। হযরত উমর ফারুক (রহ.) সর্বশ্রেষ্ঠ রাষ্ট্র নায়ক, খালিদ বিন ওয়ালিদ শ্রেষ্ঠতম সমর কুশলী, তারিক বিন জিয়াদ, মুহাম্মদ বিন কাসিম ছিলেন দিগজ্বয়ী সিপাহসালার। হযরত আবু হানীফা (রহ.) শুধুমাত্র ইমামে আজম নন; তিনি ছিলেন সমসাময়িক বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম নগর পরিকল্পনাবিদ যার তত্ত্বাবধানে গড়ে উঠেছিল বাগদাদ নগরী।
মুসলিম উম্মাহ যদি আবার তার হৃত গৌরব ফিরে পেতে চায়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক গণমুখী ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা সময়ের দাবী। দ্বিতীয় আর কোনো পথ নেই। আলামা ইকবাল বলেছেন “মুসলমান যদি নতুন করে সততা ইনসাফ হেকমত ও হিম্মতের সবক গ্রহণ করতে পারে, সে আবার সম্মানে পৃথিবীর নেতৃত্বে আসীন হবে।
অতএব কোনো দিকে ভ্রুক্ষেপ  না করে সকল প্রতিবন্ধকতা পরাভূত করে ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থাকে প্রয়োগিক রূপ দান করতেই হবে। কওমী সনদের সরকারী স্বীকৃতি দিয়ে দেশ, জাতি ও ধর্মীয় অধিকার রক্ষা করতে হবে। যতই কাল ক্ষেপণ করা হবে দেশের দশের ও মানবতার ততই ক্ষতি হবে।

লেখক : তরুণ মুহাদ্দিস ও কলামিস্ট

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...