মঙ্গলবার, ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ১১:৩৯
Home / প্রতিদিন / স্বাধীন শক্তিশালী নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন চায় যুক্তরাষ্ট্র

স্বাধীন শক্তিশালী নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন চায় যুক্তরাষ্ট্র

ডিকাব টক অনুষ্ঠানে বার্নিকাট

বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে স্বাধীন, শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বলেছেন, আগামী দিনে সবাই যাতে স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারেন সে জন্যেই এটা প্রয়োজন।

তিনি রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে সেখানকার পরিস্থিতির পরিপূর্ণ, আনুষ্ঠানিক ও স্বচ্ছ তদন্তের দাবি করেন। মার্কিন রাষ্ট্রদূত জানান, বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা খাতে একটি লজিষ্টিক সাপোর্ট চুক্তি করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।

মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট সোমবার ধানমণ্ডিতে অবস্থিত ইএমকে সেন্টারে কূটনৈতিক সংবাদদাতাদের সংগঠন ডিকাব আয়োজিত ‘ডিকাব টক’ অনুষ্ঠানে একথা বলেছেন।

ডিকাব সভাপতি আঙ্গুর নাহার মন্টির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারন সম্পাদক পান্থ রহমান। এই অনুষ্ঠানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ – যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক, যুক্তরাষ্ট্রে নতুন সরকার, সামরিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা, রোহিঙ্গা ইস্যূ এবং বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনসহ বিভিন্ন ইস্যূতে খোলামেলা অভিমত ব্যক্ত করেন।

বাংলাদেশে আগামী সাধারণ নির্বাচন সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশে আগামী সাধারণ নির্বাচনের বিষয়ে আমাদের আগ্রহ আছে। এক্ষেত্রে, আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্যকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি প্রশ্নবোধক কোনও নির্বাচন করতে চান না। তার এই বক্তব্যকে বাস্তবে রুপান্তরের প্রথম পদক্ষেপ হবে নির্বাচন কমিশন গঠন। নির্বাচন কমিশন গঠনে একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। স্বাধীন, শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে যাতে সবাই নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন।

তিনি বলেন, রাখাইন রাজ্যে সহিংস ঘটনার নিন্দা জানায় যুক্তরাষ্ট্র। রাখাইন রাজ্যে কেউই যাবার অনুমতি পাচ্ছেন না। রাখাইন রাজ্যে কী ঘটছে তার একটি পূর্ণাঙ্গ, আনুষ্ঠানিক, স্বচ্ছ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। আমরা একই সঙ্গে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ডের ওপর হামলার নিন্দা জানাই।

প্রসঙ্গত, গত ৯ অক্টোবর সীমান্ত চৌকিতে সমন্বিত হামলায় মিয়ানমারের নয়জন বর্ডার গার্ড ও পাঁচজন সেনা সদস্যের মৃত্যুর জের ধরে রোহিঙ্গা অধ্যূষিত অঞ্চলে নির্বিচারে গণহত্যা, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, ধর্ষনের মতো ঘটনা ঘটছে।

তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে বাংলাদেশ যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন চেয়েছে এটাকে স্বাগত জানাই। আমরা সকল সমমনা দেশগুলো এটা নিয়ে কাজ করব। রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিবিড় ও সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে যুক্তরাষ্ট্র।

মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে আমরা বার্মার (মিয়ানমার) ওপর চাপ দিচ্ছি। বার্মাকে সকল নাগরিকের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা থাকতে হবে। রোহিঙ্গা ইস্যূ নিয়ে বার্মার সঙ্গে বাংলাদেশ যে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করছে, যুক্তরাষ্ট্র তার প্রতি খুবই শ্রদ্ধাশীল। রোহিঙ্গা ইস্যূ নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থানের ভূয়সী প্রশংসা করে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ সতর্কতার সঙ্গে সুচিন্তিত অবস্থান নিয়েছে। রোহিঙ্গাদের অবশ্যই তাদের নিজেদের দেশে বাড়িঘরে ফিরে যাওয়া উচিত।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে অভিবাসন সংক্রান্ত সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যা, শরণার্থী ও অভিবাসন বিষয়ক সহকারী মন্ত্রী অ্যান রিচার্ড আসছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বার্মার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছেন। কেননা দেশটির নতুন সরকার মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে অঙ্গীকার করেছে। আমরা মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে মিয়ানমারের নতুন সরকারের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করতে বদ্ধপরিকর। আমরা বার্মার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করে থাকি। আমরা গোটা পরিস্থিতি মনিটর করে থাকি’।

প্রতিরক্ষা সহায়তা সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে একটি লজিস্টিক সাপোর্ট চুক্তি করতে চাই। বাংলাদেশ রাজি থাকলে এই চুক্তি সই করা যায়। এটা কোনও একতরফা সামরিক অভিযান সংক্রান্ত বড় ধরনের প্রতিরক্ষা চুক্তি নয়। এই চুক্তির আওতায় প্রশিক্ষণ, জ্বালানী সরবরাহ, বিনিময়, মহড়া প্রভৃতি হতে পারে। এসব সহযোগিতা নিয়মিত হয়ে থাকে। সেগুলো কখন কীভাবে হবে তার একটা রুপরেখা চুক্তিতে থাকবে। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আগামী ৫ থেকে ৭ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিরক্ষা সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। সেখানেও এই বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। প্রকৃতপক্ষে প্রতিটি সংলাপেই আমরা এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা করি। তথ্য আদান-প্রদান করি।

মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক অতীতের যে কোনও সময়ের চেয়ে বর্তমানে অনেক বেশি জোরদার রয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি তার সফরকালে শক্তিশালী বার্তা দিয়ে গেছেন যে, বাংলাদেশের অগ্রগতিকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করে।

জঙ্গিদের হত্যা সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে বার্নিকাট বলেন, সন্দেহভাজন জঙ্গি নিহত হলে তদন্তে তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়া কঠিন হয়ে যায়। তবে অভিযান চলাকালে জঙ্গিকে জীবিত অবস্থায় আটক করা সমানভাবে কঠিন। সন্দেহভাজনকে কারাগারে পাঠানোই ভাল। যুক্তরাষ্ট্রেও সন্দেহভাজনরা ক্রসফায়ারে মারা যায়। এখন ব্যাপার হল, কী পরিস্থিতিতে তারা মারা গেল। সন্ত্রাস দমনে দুই ধরনের ব্যবস্থা আছে। এক ধরনের ব্যবস্থা হল, পুলিশের অ্যাকশন, গ্রেফতার। আরেক ধরনের ব্যবস্থা হল, সহিংস উগ্রবাদ মোকাবেলা করা। এখানে নিরাপত্তার জন্যে যে কঠোর পরিশ্রম করছে তাতে আমি সন্তোষ্ট। আমাদের নিরাপত্তা তাদের ওপর নির্ভর করে। তবে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে যা ঘটছে তাতে নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে সন্তোষ্ট হওয়ার মতো বিলাসিতা আমরা দেখাতে পারিনা। আমাদের অবশ্যই নজরদারির মধ্যে থাকতে হবে।

মুসলিম অভিবাসীদের ব্যাপারে ট্রাম্প প্রশাসন বৈষম্যমূলক আচরণ করবে কিনা জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, এই ধরনের কোনও তথ্য আমার কাছে নেই। ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট আছেন বারাক ওবামা। তারপর আমরা নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নীতি দেখতে পাব। তবে যুক্তরাষ্ট্রে ২০০ বছরের ইতিহাসে ক্ষমতা পরিবর্তন হয়েছে; আগামীতেও একই পদ্ধতিতেই হবে। যুক্তরাষ্ট্রের অনেক মৌলিক মূল্যবোধ আছে। সেখানে অভিবাসন বিষয় দেখাশোনা করে অভিবাসন সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট বিভাগ। তাদের আইনে ধর্ম, বর্ণ কিংবা জাতিগত বৈষম্যের কোনও সুযোগ নেই।

বাংলাদেশের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থাকায় বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ থাকা উচিত বলে অভিমত জানিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, দু’দেশের বাণিজ্য বাংলাদেশের পক্ষে। তবে বাংলাদেশে বোয়িং এয়ারক্রাফট বিক্রি করে, জ্বালানী খাতে ও শেভরনের বিনিয়োগের মাধ্যমে সেটা পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা আমাদের আছে। তবে এটা ঠিক যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বাংলাদেশ বিনিয়োগ করলে যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রসর প্রযুক্তি সম্পর্কে জানতে পারবে।

টিকফা সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে বার্নিকাট বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির পরামর্শে আমরা টিকফা বৈঠক স্থগিত করেছি। যুক্তরাষ্ট্রে নতুন প্রশাসন দায়িত্ব গ্রহণের পর এই বৈঠক হবে। তখন অনেক বেশি ফলপ্রসূ হবে এই বৈঠক।

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...