মুহাম্মাদ নাজমুল ইসলাম :
৯. আফগানিস্তানের বাদশা যখন দারুল উলূম দেওবন্দে!
বলছিলাম ১৩৭৭ হিজরী’র কথা।তৎকালিক আফগানিস্তান’র বাদশা মুহাম্মদ জাহির শাহ দারুল উলূম দেওবন্দ আগমণ করেন।আগমন উপলক্ষে তার সম্মানার্থে দারুল উলূম দেওবন্দে এক জলসার আয়োজন করা হয়। উক্ত সভায় প্রায় বিশ হাজার লোকের সমাগম ঘটে। লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় পুরো দেওবন্দ এলাকা।
মুহাতারাম বাদশা জাহির প্রথমে একে একে দারুল উলূমের সকল আঙিনা ঘুরে দেখেন। একদম শিক্ষাভবন থেকে নিয়ে মাতবাখ, ওজুখানা, গোসলখানা, লাইব্রেরি, মসজিদ ইত্যাদি। দেখে তাঁর চক্ষু শীতল করেন। তারপর হাজির হোন মাজলিসে। শুরু করেন তার অনুভূতিঘেরা বক্তৃতা।
শুরুতেই হামদ ও সালাত পাঠ করেন। তারপর বলেন, “আমি আজ আমার স্বপ্নপুরি দারুল উলূম দেওবন্দে আসতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। এবং পাশাপাশি আমি আজ অনেক আনন্দিতও। দারুল উলূম দেওবন্দের সুঘ্রাণ আফগানের প্রতিটি বালুকণায় মিশে আছে। এখানের উলামা-তালাবার প্রতি আফগানীদের রয়েছে অকুণ্ঠ ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা। আমি মন থেকে আপনাদের শ্রদ্ধা করি। ভালোবাসি। কাছে টানি। আর আফগানে একথাই শুধু প্রসিদ্ধ না যে, দারুল উলূম একটি বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান; বরং এটাই সবাই বলতে বাধ্য যে দারুল উলূমই হলো আফগানের জমিতে ইলম সরবরাহের উৎস। এখান থেকেই শিক্ষালাভ করে বহু হক্কানী আলেমেদ্বীন আফগান গিয়ে ইলমের আলোকরশ্মী জ্বালাচ্ছেন। যা আজঅবধি চলমান। তাদের ছোঁয়ায় হাজারো মানুষ সঠিক দিশা পাচ্ছে। আফগানের আকাশে বাতাসে ‘ক্বালাল্লাহ ক্বালা রাসূলুল্লাহ সা’র সুর ভাসছে। মানুষের মাঝে ইলমী জযবা তৈরী হচ্ছে। তাই উলামায়ে দেওবন্দের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ না শুধু বরং চিরকৃতজ্ঞ”।
এই ছিলো তাঁর লালিত স্বপ্নপুরিতে দাঁড়িয়ে অনুভূতিঘেরা কিছু কথা। কিন্তু এখানেই শেষ না। এবার জানালেন তার ইচ্ছার কথা। স্বপ্নের কথা। ভালোবাসার কথা। তা কী! তিনি দারুল উলূম একটা গেইট করে দেবেন। কতৃপক্ষ যেন মনযূর করে। তাকে সে সুযোগটা করে দেয়া হয়, যাতে অন্তত দারুল উলূমের একটা ইটে হলেও তার দানের অংশীদারিত্ব থাকে। মনযূরি হলো। শুরু হলো গেইট নির্মাণের কাজ। তিনতলা বিশিষ্ট একটা নান্দনিক গেইট করলেন। মনকাড়া, অসাধারণ। চোখজুড়ানো, মনমাতানো। যেটা আজ তার নামকরনেই স্মৃতিস্বরূপ “বাবু জাহির”হিসেবেই প্রসিদ্ধ। প্রতিটা তলায় রয়েছে পাঁচ-ছজন বিশিষ্ট থাকার রুম।বর্তমানে দারুল উলূমের উলূমুল হাদিস বিভাগ রয়েছে এ গেইটেরই তৃতীয় তলায়। পাশাপাশি থাকছে প্রায় শ’খানেক ছাত্রের ছাত্রাবাস।
এই ছিলো এক প্রকৃত বাদশাহ’র বাদশাহি। চিন্তা আর চেতনা। স্বপ্ন আর ইচ্ছা। ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা। আশা আর আকাঙ্ক্ষা। অতীত আর ভবিষ্যৎ। দোয়া করি আল্লাহ তার কবরকে জান্নাতের টুকরো বানিয়ে দিন।আমিন।
সুত্র: ইখলাস কা তাজমহল,দারুল উলূম দেওবন্দ’ ধারাবাহিক অনূবাদ। পৃষ্ঠা: ১১০।
১০. এ কি বললেন মি.বালিওয়াল!
একবার ইউ.পি (উত্তরা প্রদেশ) সংসদে উত্তাপিত বাজেটের উপর বক্তৃতা করতে গিয়ে মি.বালিওয়াল আক্ষেপের সুরে বললেন: “আমাদের স্কুল থেকে শিক্ষাপ্রাপ্ত ছাত্রগুলো নিষ্কর্মাই-ই হয়। আর এ বিষয়টি যখন তারা নিজেরা বুঝতে পারে তখন তারা সুসাইট (আত্মহত্যা) করা ছাড়া আর কোন রাস্তা খুজে পায় না। কারণ তাকে জীবনের মূল্যবোধ সম্পর্কে কিচ্ছুই শেখানো হয় নি। সে জীবনের মূল্য কী বুঝবে? তার কাছে তো জীবনের কোনো মূল্যই থাকে না।
কিন্তু এর বিপরীতে আমার নির্বাচনী এলাকা হলো দেওবন্দ শহর। সেখানে দারুল উলূম দেওবন্দ নামে একটা দ্বীনি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যার ছাত্ররা একদম নরমাল খাবার খেয়ে এবং নরমাল কাপড় পরিধান করে দিনাতিপাত করে জ্ঞানার্জন করে এবং যখন তারা শিক্ষার্জন থেকে ফারেগ হয় তখন তারা দেশের একজন দরদী নেতা হয়ে যায়।
সরকারের উপর তো বুঝা হয়-ই না; বরং নিজেই অন্যদের অভিবাক হয়ে যায়। (সুত্র:মাহেনামায়ে দারুল উলূম:নভে:৯৪)
পুনশ্চ:
মি.বালিওয়াল একজন হিন্দুবাদী হওয়ার পরও সত্যটা বুঝতে দেরী করলেন না।
আর আমি?
আপনি???
আমরা???
সুতরাং!আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অকর্মাদের সমালোচনা, মাথাব্যথা মোটেও গ্রাহ্য না।
লেখক : শিক্ষার্থী, দারুল উলূম দেওবন্দ