আন্তর্জাতিক ডেস্ক : এ মাসেই তিন বছরের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল রাহিল শরিফের। ২৮ নভেম্বর তিনি অবসরে যাবেন। ২৯ তারিখেই তাঁর স্থলাভিষিক্ত হয়ে দেশটির ১৬তম সেনাপ্রধান হবেন নতুন কেউ। সেনাবাহিনী প্রভাবিত পাকিস্তানের পরবর্তী সেনাপ্রধান কে হচ্ছেন, সবার দৃষ্টি এখন সেদিকে।
রাহিল শরিফ পাকিস্তানের প্রথম সেনাপ্রধান, যিনি সময় বাড়ানোর জন্য চেষ্টা না করে সময়মতো অবসরে যাচ্ছেন। এ বছরের জানুয়ারিতে সেনাপ্রধান রাহিলের মেয়াদ বাড়ানোর গুজব নাকচ করে দেন। তখন সেনা দপ্তর থেকে বলা হয়েছিলেন, সেনাপ্রধান যথাসময়ে নভেম্বরে অবসরে যাবেন।পাকিস্তানের আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের পরিচালক আসিম বাজওয়া বলেছেন, অবসর নেওয়ার এক সপ্তাহ আগে সেনাপ্রধান বিদায়ী পরিদর্শন শুরু করেছেন। সোমবার লাহোর সেনাঘাঁটি পরিদর্শন করেছেন রাহিল শরিফ। সেখানে তিনি বিপুলসংখ্যা সেনা এবং রেঞ্জার্সদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন।
৫ লাখ ৫০ হাজার সেনাসদস্যের দেশ পাকিস্তানে সাধারণত একজন তিন তারকা জেনারেলকে সেনাপ্রধান নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে এ ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতা তেমন কোনো গুরুত্ব বহন করে না। এর আগে দুজনকে ডিঙিয়ে ২০১৩ সালে রাহিল শরিফকে সেনাপ্রধান করা হয়েছিল।
নওয়াজ শরিফ এর আগে প্রধানমন্ত্রী থাকার সময়ে ১৯৯১ সালে জেনারেল আসিফ নেওয়াজ জানজুয়া, ১৯৯৩ সালে জেনারেল ওয়াহিদ কাকার, ১৯৯৮ সালে জেনারেল পারভেজ মোশাররফ এবং ২০১৩ সালে রাহিল শরিফকে সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন। এর আগে দেশটির সাবেক স্বৈরশাসক জেনারেল জিয়া সাতজনকে সেনাপ্রধান নিয়োগ দিয়েছিলেন।
কীভাবে সেনাপ্রধান হয়
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী তিনজনের একটি তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠান। তিনি ওই তালিকা থেকে একজনকে দেশটির পরবর্তী সেনাপ্রধান নিয়োগ করেন।
দৌড়ে কে কে এগিয়ে?
পরবর্তী সেনাপ্রধান হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছেন চিফ অব জেনারেল স্টাফ লে. জেনারেল জুবায়ের মেহমুদ হায়াত, বাহাওয়ালপুরের কমান্ডার লে. জেনারেল জাভেদ ইকবাল রামদি, লে. জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া এবং মুলতান কমান্ডার লে. জেনারেল ইশফাক নাদিম আহমেদ।
জুবায়ের মেহমুদ হায়াত ২০১৫ সাল থেকে সেনাবাহিনীর রাওয়ালপিন্ডি সদর দপ্তরের চিফ অব জেনারেল স্টাফের দায়িত্ব পালন করছেন। নওয়াজ শরিফ এবং অর্থমন্ত্রী ইসাহাক দারের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতাও রয়েছে তাঁর। তবে তিনি গোলযোগপূর্ণ কোনো এলাকায় কাজ করেননি। ২০১৪ সালে ইমরান খান এবং তাহির উল কাদরির ডাকা বিক্ষোভের সময় নিদ্রাহীন রাত পার করে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
জাভেদ ইকবাল রামদি দেশটির দক্ষিণের বাহাওয়ালপুরের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কোনো কোনো খবরে বলা হয়েছে, তিনি নওয়াজ শরিফের পছন্দের একজন। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, তাঁর পরিবারের অনেক সদস্যের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের অনেকের বেশ ভালো যোগাযোগ আছে।
কামার জাভেদ বাজওয়া সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের মহাপরিদর্শক হিসেবে কাজ করছেন। এর আগে রাহিল শরিফ এই বিভাগে কাজ করেছেন। জাতিসংঘ মিশনেও কাজ করেছেন।
ইশফাক নাদিম আহমেদ পূর্বাঞ্চলের শহর মুলতানের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সোয়াত এলাকার অভিযান চালানোর অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ইশফাক জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চতুর্থতম ব্যক্তি।
ইশফাক নাদিম পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমির ৬২তম লং কোর্সের মাধ্যমে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন।
পূর্বসূরি কায়ানির মতো রাহিল শরিফের স্বাভাবিক অবসরকে সম্মানজনক হিসেবেই দেখা হচ্ছে। এ দুজনের কেউই তাঁদের মেয়াদ বাড়াতে সম্মত হননি এবং দেশটির রাজনীতিতে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করেননি। সূত্র: ডন এবং ইকোনমিক টাইমস।