শুক্রবার, ১১ই এপ্রিল, ২০২৫ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ২:৪২
Home / খোলা জানালা / ওয়াজের বিনিময় নেব কি নেব না

ওয়াজের বিনিময় নেব কি নেব না

সাইফুল ইসলাম রিয়াদ ::

শীতে চাই উষ্ণতা: শীত মানেই লেপকেন্দ্রিক জীবন। শীতের তীব্রতায় হীম হয়ে আসে শরীর। উষ্ণ রাখতে কতো উপাদানই না খুঁজি আমরা। মিষ্টি রোদেলা দুপুরেও কাঁথামুড়ি দিয়ে থাকতে হয় আমাদের। দুধের সরের মত নেমে আসা শুভ্র চাদরের কুয়াশা ঘিরে রাখে অপরূপ প্রকৃতির কোমল অঙ্গ। কনকনে শীত, হাড় ভাঙা কাঁপুনি তোলে জবুথবু করে রাখে আস্ত মানুষটাকে। মানুষগুলো নেহায়েত দূর্বল হয়ে পড়ে শৈত্যপ্রবাহের প্রকোপে। শীতের প্রচণ্ডতা দূর করতেই যত চেষ্টা-প্রচেষ্টা।

উষ্ণীয় রূপ: এই প্রচেষ্টার ধারাবাহিক এবং অন্যতম রূপ হল-نصيحة الموسم বা সিজনাল লেকচার। এই উপাদানটি আমাদের রক্তকণিকায় শিহরণ জাগাতে সাহায্য করে। তাই গ্রাম-গঞ্জের শীত ওয়াজেই বিদূরিত হয়।

নসিহতের এ ঋতু: শীতকালেই ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন বেশি হয়ে থাকে। তাই এটিকে ‘ওয়াজের মৌসুম’ও বলা যেতে পারে। কেননা গরমকালে আবহাওয়া থাকে বৈরী। প্রকৃতির পরিবেশ অনুকূল থাকে না। প্রতিকূল পরিবেশে সময় ও স্থানভেদে অনুষ্ঠান অনেকাংশেই সার্থক হয়ে উঠে না।

ওয়াজের কী প্রয়োজন: এজগতের সবকিছুই ধান্ধা। এতে আত্নার প্রশান্তিদায়ক কিছুই নেই। আল্লাহ থেকে গাফেল অন্তর সর্বদা অস্থিরতায় নিমজ্জিত। মানবতার নবি রাসূলে আরাবি সা. বলেন- حب الدنيا رأس كل خطيئة “পার্থিব আকর্ষণ সকল গুনাহ’র উৎস।” এই ধোঁকার পৃথিবী মানুষকে অাল্লাহ’র স্মরণ থেকে উদাসী বানিয়ে দেয়। অন্তর কলুষিত করে তোলে। বস্তুত দুনিয়া হল- যে বস্তুর মধ্যে নফসের প্রাপ্তি রয়েছে এবং পরকালে তার উত্তম কোন প্রতিদান নেই। বক্তব্যের মাধ্যমে শ্রোতারা পরকালের দিশা ফিরে পায়। দুনিয়াবিমুখ হয়। হৃদয় সিঞ্চিত হয় মাওলার প্রেম-ভালোবাসায়। হেদায়াতের নূর অন্তরে প্রবিষ্ট হয়। অজানা জ্ঞান জানা যায় অতি সহজে।

নসিহত প্রাপ্তির উৎস: দীনি জ্ঞান আহরণের পাঁচটি মাধ্যম রয়েছে- ক. কুরআন ও হাদিস। খ. ইজমায়ে ফুকাহা ও কিয়াস। গ. মসজিদ ও মাদরাসা। ঘ. ইসলামি গ্রন্থাদি। ঙ. ওয়াজ-নসিহত।

সত্যকথা: বক্তার জনপ্রিয়তা যদি হয় আকাশচুম্বী, বাজেট হয় উর্ধ্বগতি! পারিশ্রমিক এতোটাই তুঙ্গে যে, শ্রোতারা তার মন খুশির নিমিত্তে মৃতপ্রায়। বক্তার এহেন কম্মে আয়োজকবৃন্দ চাঁদাবাজি করতে বাধ্য। জুতার তলা ক্ষয় করতে হয় মানুষের দ্বারেদ্বারে ঘুরে। মানুষের ঘর-দোর এবং দোকান-পাট অস্থির ওদের আক্রমণে।

নসিহত রেট: প্রকৃত দাঈ আলেম মানুষের কল্যাণে নিজেকে নিবেদিত করবে আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে। কোন আলেম যখন ওয়াজকে তার জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করে, তখন স্বাভাবিকভাবে ও পেশাগত স্বার্থে এমন কিছু উপায় ও কৌশল গ্রহণ করে, যা ওয়াজের প্রভাব নষ্ট করে দেয়- ক. বক্তার হাদিয়ার নামে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা। খ. শ্রোতাদের মুগ্ধ ও আকৃষ্ট করার জন্য কথায়, সুরে ও বচনভঙ্গিতে লৌকিকতা ও কৃত্রিমতা আনা। পবিত্র কুরআনে সূরা ইয়াসিনের ২১নং আয়াতে ওয়াজের জন্য দুটি শর্ত আরোপ করা হয়েছে। ১.ওয়াজের পারিশ্রমিক না নেওয়া। ২.বক্তা নিজে তার ওয়াজের ওপর আমল করা। এ আয়াত ছাড়াও কুরআনের আরও কিছু আয়াতে ওয়াজের পারিশ্রমিক না নেওয়ার বিষয়টি পরিষ্কার ভাষায় উল্লেখ করা হয়েছে। প্রখ্যাত সাহাবি কাব ইবনে মালেক রা. পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন, ‘যে ব্যক্তি ঐশী জ্ঞানের দ্বারা মানুষকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন।’ -তিরমিজি : ২৬৫৪

শ্রোতাদের মধ্যে ওয়াজের প্রভাব বিস্তারের জন্য এমন বক্তাদের দাওয়াত করা উচিত যারা ওয়াজের পারিশ্রমিকের প্রতি অনাগ্রহী, শ্রোতাদের মুগ্ধ করার প্রতি নির্লিপ্ত। একান্তভাবে আল্লাহকে খুশি করার আশায় ইসলামের সেবা করার মন নিয়ে উম্মাহর দরদে নসিহতকারীই উত্তম। তবে বক্তার পরিবহণ খরচ এবং পারিপার্শ্বিকতা লক্ষ্য করে হাদিয়া প্রদান দোষের নয়; বরং আমাদের মাযহাব মতে জায়েজ।

জালিম হবো কেন: আলেমদের উচিত, লোকদের উপর অর্থকড়ির বোঝা চাপিয়ে না দেয়া। সহনশীল চুক্তিবদ্ধ হওয়া সকলের জন্যই উপকারী। বয়ান হোক মানবতার সমাধানে। জীবন নিবেদিত হোক দ্বীনের মশাল জ্বালানোর প্রচেষ্টায়।

লেখক : সহ-সম্পাদক আওয়ার ইসলাম

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি কল্যাণ ট্রাস্ট- বাস্তবতা ও প্রয়োজনীয়তা

খতিব তাজুল ইসলাম: ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...