ড. আবদুস সালাম আজাদী ::
এটা একটা মারাত্মক প্রশ্ন যা উম্মাত কে ৪টা ধারায় বিভক্ত করে দেয়।
আমাদের নবী (স) যখন সাহাবা (রা) গণকে গড়ে তুলছিলেন তখন এই প্রশ্ন অনেক বার উঠেছে। তিনি সাহাবাগণকে ঐক্যের পথেই রেখেছেন। সাহাবাগণের সময়ে একই অবস্থা ছিলো।
সমস্যা দেখা দেয় খাওয়ারিজদের উত্থানের পর থেকে। তারা মুসলিম সমাজের বিভাজন কে বিশাল গর্তের মধ্যে ফেলে দেয়। তারা বলেই বসে, ‘হয় মুসলিম না হয় কাফির’। কুরআন ও হাদীস তথা আল্লাহর হুকুম মানবা, তাহলে মুসলিম। ভুল করলে, পাপ করলে, হুকুমের একটু বরখেলাপ করলে কাফির হবা। ‘হয় মুমিন না হয় কাফির’।
বিপদ হয়ে গেলো; ভুল করে ফেললেই তাকে কাফির আখ্যা দিয়ে জবাই করা শুরু হলো। এই কারণেই আলী (রা) কে শহীদ হতে হতে হয়, মুয়াওয়িয়া (রা) কে ছুরির আঘাৎ এর মুখোমুখি হতে হয়।
হক পন্থী আলিমগণ জেগে উঠলেন। ঈমানের গণ্ডিকে ব্যাপক করলেন।
কিন্তু আরেক চিন্তার জন্ম হলো যা মুসলিম উম্মাহ কে শুধু বিভক্ত করেনি, ইসলামের চিরন্তন ব্যাখ্যার বিপরীতে যুক্তিবাদিতার দর্শন তৈরি করে। বলা হলো ঈমান ও কুফরির মাঝখানে আরেকটা স্তর আছে। এর নাম মানযিলাহ বায়না মানযিলাতায়ন। দুই প্রান্তের মাঝামাঝি। এরা বললোঃ যারা কুরআন ও হাদীসের উপর চলতে যেয়ে ভুল করে, কবীরা গুনাহ করে, ওরা দুনিয়াতে মু’মিন। কিন্তু আখিরাতে কাফির।
এই দর্শন বড় মারাত্মক হয়ে দেখা দেয়। এরা কুরআন হাদীসের অথরিটিকেও চ্যালেঞ্জ করে বসে। কারণ কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের চিন্তার কাছে কুরআন ও হাদীস বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। এরা মু’তাযিলার দোষ নিয়ে এখনো জীবিত আছে আমাদের মাঝে।
খুব স্বাভাবিক ভাবেই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত নামে একটা মেথোডোলজিস্ট গ্রুপ হক্ব পন্থীরূপে আবির্ভূত হলো। যারা মেইন স্টিম মুসলিম এর মূল দার্শনিক দলে পরিণত হয়। এদের গন্ডিতে কোন ব্যক্তি, দল বা মাযহাব বড় ছিলো না, এদের নিকট হক্ব ছিলো কুরআন ও সহীহ হাদীসএর সরাসরি শিক্ষা।
এরা মুমিন এর সীমানা কে বিশাল করেন। ঈমান দার ভুল করলেও, কিংবা কবীরা গুনাহ করলেও, অথবা কুরআন হাদীসের কিছু কথা মেনে না চললেও তাকে মুমিন হিসেবেই দেখতে চাইলেন। তারা মুমিনের পরে বিশেষণ দিলেন কামিল বা পূর্ণ, ‘আসী বা পাপী, ফাসিক বা প্রকাশ্য পাপাচারী। মুনাফিক ফিল আ’মাল বা কোন মুমিনের মধ্যে নিফাকি আসতে পারে কিন্তু সে মুনাফিক নয় মুমিন, কুফর দূনাল কুফর, মানে কোন মানুষের মধ্যে কুফরি কাজ আসতে পারে কিন্তু তাকে কাফির বলা যাবেনা।
এটা ছিলো এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। আমি তো মনে করি আহলুসসুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের মেথোডোলজি তৈরি না হলে উম্মাতের অধিকাংশ হতো ইসলামের বাইরে।
এই মেথোডলোজির যেসব ‘নিব্রাস’ বা পথ দেখানোর আলো আমাদের মাঝে এসেছে তা হলো আবূ হানীফার ‘আলফিকহ আলআকবার’, তার মাযহাবের ‘আক্বীদাহ তাহাওয়ীয়াহ’ এবং এর ই পথ ধরে পরবর্তী গণের বলিষ্ঠ কলম। এই পথের শ্রেষ্ঠ ইমাম আজ ইমাম ইবন তাইমিয়্যাহকেই মানতে হয়, তিনিই আহলুসসুন্নাহ ওয়াল জামাআত কে এক বলিষ্ঠ দার্শনিক পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন। আমাদের কে সহজ ও ক্লীয়ার এক যুক্তিগ্রাহ্য ইসলামের ব্যাখ্যা উপহার দিয়ে গেছেন। রাহিমাহুমুল্লাহু জামীয়ান।