সৈয়দ আনোয়ার আবদুল্লাহ ::
গতকাল ১২ নভেম্বর জমিয়তে উলামা হিন্দের আযোজনে ভারতের রাজস্থানের আজমেরি শরীফে অনুষ্ঠিত দু’দিনের ঐতিহাসিক সম্মেলনে প্রথম দিন অতিবাহিত হয়েছে নানা ব্যতিক্রমি সাড়াজাগানো ঐতিহাসিক আযোজনের মধ্যদিয়ে।
আজমেরিতে দেওবন্দিদের প্রথম সম্মেলন
ভারতের ২৫কোটি মুসলমানের মধ্যে অন্তত ১০কোটি মুসলমান রেজভী, মাজারপন্থি, সুন্নী নামধারী বেদআতে জড়িত। তাদের সবচেয়ে বড় প্রভাবশালী কেন্দ্রহল রাজস্থান। আজমেরি শরীফে শায়খুল মাশায়েখ হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতি রহ-এর মাজারকে ঘিরে এসব মসলকের প্রধান তীর্থস্থান হল আজমেরী। যেখানে দেওবন্দের আলেমরা সমাবেশতো দূরের কথা সাধারনভাবেও যাতায়ত করা মুশকিল। আলহামদুলিল্লাহ জানিশিনে কুতবে আলম আওলাদে রাসুল সায়্যিদ মাহমুদ মাদানীর বুদ্ধিভিত্তিক দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টার ফসল গতকালের লক্ষাধিক দেওবন্দিদের নিয়ে, সকল মসলকের প্রতিনিধিদের নিয়ে আজমেরির এই ঐতিহাসিক মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মেলন জুড়ে ছিল প্রযুক্তির ছোঁয়া
বিশ্বশান্তি সম্মেলন ও জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সাধারন সভার পুরো কার্যক্রম ছিল প্রযুক্তিনির্ভর। সমাবেশের স্টেইজে ব্যানারের বদলে ছিল পেছনে বিশাল ডিজিটাল প্রজেক্টরের স্কিন। সমাবেশের ভেতরে বাহিরে ৫০টি বড় পর্দায় সার্বক্ষণিক লাইভ অনুষ্ঠানের ব্যাবস্থা। ছিল ভারতীয় ইলেক্ট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়াতে সার্বক্ষণিক লাইভ সম্প্রচার।
বিশেষ ট্রেন ও নিরাপত্তা
মুসলমানদের এই ঐতিহাসিক সম্মেলন ভারত সরকার নানা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। সম্মেলন উপলক্ষ্যে ১১ তারিখ থেকে দেওবন্দ, দিল্লী, কলকাতা থেকে রাজস্থানের আজমেরি পর্যন্ত বিশেষ ট্টেনের ব্যাবস্থা চালু করা হয়। সম্মেলন জুড়ে সিসি ক্যামেরা ও চার স্থরের বিভিন্ন বাহিনীর নিরাপত্তাব্যবস্থা ছিল চোখে পড়ার মতো।
খাদেমদের ব্যতিক্তক্রমি অভ্যর্থনা
উলামায়ে দেওবন্দের কৃতিসন্তানদের আজমেরির খাদেম ও গদিনিশিন পীরগণ আন্তরিক অভ্যর্থানা জানান। (১২নভেম্বর ১৬ইং) সকালে প্রথম জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সভাপতি মাওলানা ক্বারি সায়্যিদ মোহাম্মদ উসমান মনসুরপুরী ও জেনারেল সেক্রেটারী সায়্যিদ মাহমুদ মাদানী, সেন্টাল শরিয়া কাউন্সিলের জেনারেল সেক্রেটারী মাওলানা মাজউদ্দীন আহমদ কাসেমি, দারুল উলুম দেওবন্দের সিনিয়র উস্তাদ শায়খুল হাদীস মাওলানা সালমান বিজনুরীসহ দেওবন্দ, সাহরানপুর, থানাভবন, মোরাদাবাদের আলেমগণসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ আজমেরি দরগাহে পৌঁছে প্রথমে তারা হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতি রহ. মাজার জিয়ারত করেন। মাজারের প্রধান খাদেম গদিনিশীন সৈয়দ মঈন সরদার চিশতি ও মাজার সেক্রটারী ওয়াহিদ হুসাইন চিশতি, আন্জুমানে গদিনিশীন পীর আরেফ হুসাইন চিশতি তাদের আন্তরিক ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে উলামায়ে হিন্দকে লাল পাগড়ী পরিয়ে দিয়ে ব্যতিক্রমি সংবর্ধনার মাধ্যমে অভ্যর্থনা জানানো হয়।
সম্মেলনের একমাত্র বাংলাদেশ প্রতিনিধি
আজমেরির ঐতিহাসিক বিশ্বশান্তি সম্মেলনে বাংলাদেশের আলেমদের পক্ষ থেকে একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত আছেন শান্তির দূত ওলীয়ে কামেল, জানেশিনে ফেদায়ে মিল্লাত শায়খুল হাদীস আল্লামা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ হাফিজাল্লাহু। তাকে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের পক্ষ থেকে বিশেষ আমন্ত্রণ জানিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মেহমান হিসেবে নেয়া হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে আজকের ২য় দিন বিশ্ব নেতাদের সম্মেলনে তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে পারেন। আজ সম্মেলনে পাকিস্থানের গ্র্যান্ড মুফতি রফি উসমানী, আরব বিশ্ব, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপ-আমেরিকার একাধিক আলেম প্রতিনিধি উপস্থিত হওয়ার কথা রয়েছে।
বিশাল মঞ্চে মাত্র তিনটি চেয়ার
এই আন্তর্জাতিক উলামা সম্মেলনের বিশাল রাজকীয় বিশ্বমঞ্চে সমস্থ উলামায়ে কেরামের জন্য সাদা গালিচার প্লেট বিছানার আযোজন করা হয়েছে। তবে সম্মেলন উপ-কমিটি ও কেন্দ্রীয় পরামর্শে সম্মানসূচকভাবে তিনজন কিংবদন্তির আলেমের জন্য বিশেষ চেয়ারের ব্যবস্থা করা হয়েছে স্টেইজের মধ্যখানে। তারা হলেন সম্মেলনের সভাপতি আমিরে হিন্দ আওলাদে রাসুল মাওলানা ক্বারী সৈয়দ উসমান মনসুরপুরী দা.বা., জমিয়তে উলামার পূর্ববঙ্গ কলকাতা রাজ্য সভাপতি মন্ত্রী মাওলানা সিদিক উল্লাহ চৌধুরী দা.বা. ও বাংলাদেশ জমিয়তে উলামায়ার সভাপতি শায়খুল হাদীস আল্লামা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ দামাত বারাকাতুহুম।
এটা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের উলামায়ে কেরামের জন্য এক বিরল সম্মাননা।
গতকাল ছিল পরামর্শ সভা
আজ মূল সম্মেলন শুরু হবে সকাল ১০টায়। চলবে একটানা বিকেল পর্যন্ত। গতকাল দিনভর ছিল খাস ও আম পরামর্শ বৈঠক। শনিবার সকালে প্রথমে আজমেরি মাজার কমিটি ও সে তরিকার খাদেমদের সাথে বৈঠক হয়। পরে সকালে ২য় দফা ভারতের নানা মসলকের পীর মাশায়েখ, সুফি দরবেশ ও আধ্যাত্মিক ব্যক্তিদের সাথে খাস পরামর্শ বৈঠক বসে।
তৃতীয় পর্যায়ে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের মজলিসে শুরার বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দুপুরে সম্মিলত বৈঠকে বসে সব মসলকের আলেমদের নিয়ে আজকের বৈঠকের জন্য শান্তি প্রস্তাব তৈরি করা হয়। পরে মূল সমাবেশেও দিনভর নানা বিষয়ে চিন্তক আলেমরা বিভিন্ন পরামর্শ তুলে ধরেন।
ব্যবসায়ীদের রাজকীয় আযোজন
রাজস্থানের ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে আলেমদের খেদমতের কোন কমতি নেই। বাহারী আয়োজনে কোন খাদ নেই। শীর্ষ আলেমদের থাকার জন্য মাজার এরিয়াতে রাজকীয় মেহমানখানা সাজানো হয়েছে। আছে বাহারী খাবারের আযোজন। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে শতাধিক গরু ও খাসি জবাই করা হয়েছে। সম্মেলন আজ দীগুন উপস্থিতি হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।