অনলাইন ডেস্ক :: শেষ হাসি ট্রাম্পেরই। অনেক জরিপের ফল ও বিশ্লেষকদের আভাস উল্টে দিয়ে হোয়াইট হাউসের উত্তরাধিকারী নির্বাচিত হলেন রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী চার বছর বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পকেই বেছে নিল মার্কিন জনগণ। পরাজয় মেনে নিয়ে ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়েছেন হিলারি।
সিএনএনের দেওয়া তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত পাওয়া ভোটের ফলাফলে ট্রাম্প পেয়েছেন ২৮৯ ইলেকটোরাল কলেজ ভোট। আর হিলারি পেয়েছেন ২১৮টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট। সর্বমোট ৫৩৮টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের মধ্যে প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য প্রয়োজন ২৭০ ভোট। পপুলার ভোটও বেশি পড়েছে ট্রাম্পের পক্ষে। তিনি পেয়েছেন পাঁচ কোটি ৮২ লাখ ১০ হাজার ৬৯৭ ভোট। আর হিলারি পেয়েছেন পাঁচ কোটি ৭৭ লাখ ৫৫ হাজার ৪৬৮ ভোট। প্রদত্ত ভোটের ৪৭ দশমিক ৮ শতাংশ পেয়েছেন ট্রাম্প। বিপরীতে হিলারি পেয়েছেন ৪৭ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট। বিভিন্ন সংস্থার জরিপে বলা হয়, এবারের নির্বাচনে প্রায় ৫৪ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট পদ ছাড়াও মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের ৪৩৫ আসনের সবগুলোতে ও উচ্চকক্ষ সিনেটের ১০০ আসনের মধ্যে ৩৪ আসনের নির্বাচনে ভোট দেয় মার্কিনরা। ফলাফলে দেখা যায়, আগে থেকে রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণে থাকা প্রতিনিধি পরিষদ তাদের হাতেই থাকল। নিউইয়র্ক টাইমসের তথ্যমতে, শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকানরা ২৩৬ আসন পেয়েছে। ডেমোক্র্যাটরা পেয়েছে ১৯১ আসন। আর সিনেটে রিপাবলিকানরা ৫১ আসন পেয়েছে। এখানে ডেমোক্র্যাটরা পেয়েছে ৪৭ আসন। প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণ পেতে প্রয়োজন হয় ২১৮ আসন। অন্যদিকে সিনেটের নিয়ন্ত্রণ পাওয়া যায় ৫১ আসন পেলেই। সব মিলিয়ে প্রেসিডেন্ট পদ, কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেট, নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ—সবই পেলেন রিপাবলিকানরা।
এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্প আলাবামায় ৯, আরকানসাসে ৬, ফ্লোরিডায় ২৯, জর্জিয়ায় ১৬, আইডাহোতে ৪, ইন্ডিয়ানায় ১১, আইওয়াতে ৬, কানসাসে ৬, কেনটাকিতে ৮, লুইজিয়ানায় ৮, মিসিসিপিতে ৬, মিজৌরিতে ১০, মন্টানায় ৩, নেব্রাস্কায় ৫, নর্থ ক্যারোলাইনায় ১৫, নর্থ ডাকোটায় ৩, ওহাইওতে ১৮, ওকলাহোমায় ৭, সাউথ ক্যারোলাইনায় ৯, সাউথ ডাকোটায় ৩, টেনেসিতে ১১, টেক্সাসে ৩৮, ইউটাহতে ৬, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ায় ৫, ওয়াইওমিংয়ে ৩টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পেয়েছেন।
এএফপি জানায়, হিলারি ক্যালিফোর্নিয়ায় ৫৫, কলোরাডোতে ৯, কানেটিকাটে ৭, ডেলাওয়ারে ৩, হাওয়াইতে ৪, ইলিনয়ে ২০, মেরিল্যান্ডে ১০, ম্যাসাচুসেটসে ১১, নিউজার্সিতে ১৪, নিউ মেক্সিকো ৫, নিউইয়র্কে ২৯, অরেগনে ৭, রোড আইল্যান্ডে ৪, ভারমন্টে ৩, ভার্জিনিয়ায় ১৩, ওয়াশিংটনে ১২, ওয়াশিংটন ডিসিতে ৩টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পেয়েছেন।
ভোটের প্রাথমিক ফল প্রকাশের শুরু থেকেই ট্রাম্প ও হিলারি হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছিল। তবে পরে অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে যায়, হোয়াইট হাউসের উত্তরসুরি হচ্ছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাই পূর্ণাঙ্গ ফল প্রকাশের আগেই হিলারির সমর্থকদের মুষড়ে পড়তে দেখা যায়। কাঁদতে দেখা যায় অনেক সমর্থককে। সিএনএন অনলাইনের প্রতিবেদনে জানানো হয়, নিউইয়র্কে হিলারির প্রচারণা সদর দপ্তরের পরিবেশ বদলে গেছে। তাঁর সমর্থকেরা কাঁদছেন। বিষণ্ন মনে অনেকে বাড়ি ফিরছেন।
নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরুর দিকে বেশির ভাগ জরিপেই এগিয়ে ছিলেন হিলারি। তবে নির্বাচনের দিনকয়েক আগে হিলারি-ট্রাম্প হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস মেলে। একপর্যায়ে দু-একটি জরিপে এগিয়েও যান ট্রাম্প। তবে বেশির ভাগ বিশ্লেষকের রায় ছিল হিলারির পক্ষেই। কিন্তু সব হিসাব উল্টে দিয়ে অবিশ্বাস্য চমক দেখিয়ে জয় পেলেন ট্রাম্প।
পরাজয় মেনে নিলেন হিলারি:
সিএনএন জানায়, ট্রাম্পকে ফোন করে অভিনন্দন জানিয়েছেন হিলারি। জয়ের পর ট্রাম্প নিউইয়র্কে নিজের নির্বাচনী সদর দপ্তরে সমর্থকদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণের শুরুতে হিলারি তাঁকে অভিনন্দন জানানোয় হিলারিকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বিভেদ ভুলে ঐক্যের ডাক দেন। বলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সব মানুষের প্রেসিডেন্ট। এদিকে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাতে হিলারি ক্লিনটন কিছু বলবেন না বলে ডেমোক্রেটিক দলের প্রচার শিবিরের প্রধান জন পোদেস্তা জানিয়েছেন। তবে বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবেন হিলারি।
বিশ্ব নেতাদের অভিনন্দন:
ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ‘গঠনমূলক সংলাপ’ প্রত্যাশা করেছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান ফেদেরিকা মোগেরিনি বলেন, ‘ট্রাম্পের জয়ের পরও ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্র একসঙ্গে কাজ করে যাবে।’ ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়ে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে দুই দেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় থাকবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। তিনি দুই দেশের মধ্যকার সমস্যার সমাধানকল্পে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত আছেন বলে জানান।