“সাংস্কৃতিক চর্চা ও বিকাশ ছাড়া জাতিয় প্রতিষ্ঠা অসম্ভব”
—কবি মুসা আল হাফিজ
মানুষের অন্যতম পরিচয়- সাংস্কৃতিক পরিচয়। চিন্তার উৎকর্ষ সাধন, ও জাতীয় প্রতিষ্ঠার জন্য বুদ্ধিভিত্তিক বিকাশ ও সাংস্কৃতিক চর্চা আবশ্যক। সমাজ সৃষ্টি হয় নানাবিধ মানুষের সম্মিলনে। সৃষ্টি হয় বহুধা বিভক্ত জাতি-বুদ্ধির ঐক্য ও সমন্নয়। কিন্তু অযাচিতভাবেই বিচ্ছিন্ন রয়ে যায় সাংস্কৃতিক বলয়! এখানে বিদ্বেষ ঘটে চিন্তার, দূরত্ব বাড়ে আচরণে এবং আনুষ্ঠানিক চিত্রে-বৈষম্যে; পাঠ চর্চায়, ইতিহাসে, শাব্দিক ও আক্ষরিক বিশ্লেষণে! জাতি হয়ে পড়ে বহুধা বিভক্ত। এসবের কারণ ও উদাহরণ অনেকাংশে চাক্ষুষ প্রমাণিত; অন্যদিকে অস্পষ্ট-দুরূহ। সেটা হলো সাংস্কৃতিক বিপর্যয়ের এক মহাকালব্যপি সৃষ্ট দুর্ঘটনা। অসহনিয় যান্ত্রিক সভ্যতায় রয়েছে কাল বৈশাখিসম, জাতিয় আদর্শ- বিধ্বংশি কাণ্ড! এসবই কেবল সাংস্কৃতিক বিপর্যয়ের ফসল।
গতকাল ৪ নভেম্বর শুক্রবার দারুল আজহার ক্যাডেট মাদরাসা সিলেট ক্যাম্পাস আয়োজিত “ইসলামী সংস্কৃতি : তাৎপর্য ও বৈশিষ্ট্য ও আজকের সমাজ” শীর্ষক সিম্পোজিয়ামে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন বিশিষ্ট কবি ও গবেষক মুসা আল হাফিজ। সন্ধ্যা ৬টায় দারুল আজহার মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সিম্পোজিয়ামে সভাপতিত্ব করেন আল আজহার ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান ও সিলেট ক্যাম্পাসের প্রিন্সিপাল হাফিজ মাওলানা মনজুরে মাওলা। স্বাগত বক্তব্য পেশ তরেন ভাইস প্রিন্সিপাল হাফিজ মাওলানা জাাকারিয়া আল হাসান।
প্রধান আলোচক তার বক্তব্যে আরো বলেন, সংস্কৃতি হলো মানুষের ব্যক্তিগত জীবনের সংস্কারকৃত রূপ। জীবনের প্রয়োজনে, সভ্যতার চরম উৎকর্ষ সাধনে জীবনের বিভিন্ন অংশে যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা হয়, সেটাই সংস্কৃতি। তিনি বলেন, সভ্যতাকে ধ্বংস করা সহজ, কিন্তু সংস্কৃতিকে ধ্বংস করা অসম্ভব। কেননা, সভ্যতা সমাজের বাহ্যিক রূপ, যা দৃশ্যমান- পরিবর্তনযোগ্য। যেমন- ঘর-বাড়ি, কাপড় চোপড়, আসবাবপত্র ইত্যাদি। অন্যদিকে সংস্কৃতি আভ্যন্তরীন- দুষ্পরিবর্তনীয়! যেমন- চিন্তা, ইচ্ছা, অভ্যাস প্রভৃতি। ইতিহাসে বহু সভ্যতাই ধ্বংস হয়ে গিয়েছে, যেমন- তাতারী, খাওয়ারিজম, মামলুক সালতানাত ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। অপরদিকে, মনস্তাত্বিক ও চরিত্রতান্ত্রিক অপসংস্কৃতির অভ্যুদয় ঘটিয়ে মূল সংস্কৃতিকে চিরতরে ধ্বংস করে দেয়ারও চক্রান্ত হয়েছে! যেমন- ভাষা ও শব্দের অপব্যবহার, চিন্তা ও ইচ্ছার বিচিত্র অবস্থা, মানসিকতা ও আচরণের দূষিত রূপায়ন প্রভৃতি মূল সংস্কৃতিকে ধ্বংসের অনানুষ্ঠানিক বিদ্রোহ! যা করেছে বৃটিশরা, করছে সাম্রাজ্যবাদীরা, তথাকথিত নিরপেক্ষবাদীরা! এসব ছোবল থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হলে প্রচুর ভাবতে হবে, বিষদ জানতে হবে- মানতে হবে। তবেই সাংস্কৃতিক আগ্রাসন থেকে হেফাজত করা যাবে কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠী, জাতি, রাষ্ট্র ও সমাজকে।
ইংরেজি শিক্ষক, অনুষ্ঠান ও সংস্কৃতি বিভাগ পরিচালক তাহের আবদুল্লাহ ও লুৎফুর রহমান নোমানের যৌথ সঞ্চালনায় সিম্পোজিয়ামে অংশগ্রহণ করেন ও অনুভূতি ব্যক্ত করেন বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন মাওলানা রেজাউল করীম জালালী, বিশিষ্ট চিকিৎসাবিদ ও সমাজসেবক ডা. নজরুল ইসলাম খাঁন, উপশহর এ ব্লক জামে মসজিদের খতীব মুফতি আবদুল্লাহ, ভাষাবিদ ও শব্দ বিশ্লেষক মাওলানা মাহবুব সিরাজী, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মাওলানা খাইরুল ইসলাম।
এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মাওলানা জিয়াউদ্দিন ইউসুফ, মাওলানা আবদুল্লাহ, সিদ্দিকুর রহমান, বাহাউদ্দিন আরমান, সাইফ রাহমান, ইসহাক আলমগীর প্রমুখ।