বৃহস্পতিবার, ১০ই অক্টোবর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ দুপুর ১:২৪
Home / কওমি অঙ্গন / বেফাকের উদ্দেশ্যহীন ওলামা সম্মেলন!

বেফাকের উদ্দেশ্যহীন ওলামা সম্মেলন!

মাওলানা কবির আহমদ আড়াইহাজারী ::%e0%a6%ac%e0%a7%87%e0%a6%ab%e0%a6%be%e0%a6%95

১৭ অক্টোবর বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ আয়োজিত জাতীয় ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলন মিরপুরস্থ আরজাবাদ মাদরাসা ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল । সফলতা-ব্যর্থতার মূল্যায়ন করতে গেলে প্রথমত বলতে হয়, লোক সমাগম ও মঞ্চ কাঁপানো বক্তৃতাই যদি সম্মেলন সফল হওয়ার যোগ্যতা হয় তাহলে সম্মেলন সফল। দ্বিতীয়ত, যেখানে সম্মেলনটি হওয়া না হওয়ার আশঙ্কায় ছিল, বেফাক সভাপতি আল্লামা আহমদ শফী উপস্থিত হওয়ার বিষয়টি ছিল সংশয়ে এবং বেফাকের অনেক নেতৃবৃন্দের উপস্থিতি নিয়েও ছিল অনেক সন্দেহ, সে দিক থেকে সম্মেলন সফল হয়েছে। তবে এ কথাও ঠিক যে, বর্তমান সময়ে হাটহাজারির হযরত বাংলার এমন এক উজ্জ্বল নক্ষত্র যিনি শুধু ঢাকা শহর কেন, পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে উপস্থিত হলে এ জাতীয় ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলন অঘোষিতভাবেই অনুষ্ঠিত হয়ে যাবে।

দুই

এত আয়োজন করে যে ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলন করা হলো এ সম্মেলনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য কি? কোন প্রয়োজনে এই সম্মেলন আয়োজন করা হলো? এ ব্যাপারে অবশ্য বেফাক নেতৃবৃন্দই ভালো বলতে পারবেন। তবে তাদের প্রচার-প্রচারণায় ও পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে যা জানতে পেরেছি তা হচ্ছে—গত ৭ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত একটি অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত বক্তব্যটি ছিল এমন—‘বেফাক সভাপতির প্রেসসচিব মাওলানা মুনির আহমদ জানান, ১৭ অক্টোবর জাতীয় ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলন সফলভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে একটি সম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করে জোর প্রস্তুতি গ্রহণের জন্যে বেফাক সভাপতি মহাসচিবকে বলেছেন। বেফাক আয়োজিত ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলনে বেফাকের বাইরে অন্যান্য আঞ্চলিক বোর্ডের প্রতিনিধি এবং কওমী মাদরাসাসমূহের জেলা পর্যায়ের শীর্ষস্থানীয় আলেমদেরকে ও কওমী সনদের বিষয়ে পরামর্শদানের জন্য আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সম্মেলনে আল্লামা শফী উপস্থিত থাকবেন বলেও জানিয়েছে।’ সভাপতি সাহেব সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে  তার দায়িত্বপালন করেছেন, কিন্ত বাকি দায়িত্বশীলরা কি তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পেরেছেন? যে লক্ষ্য-উদ্দেশ্যকে সামনে নিয়ে সম্মেলন আহ্বান করা হয়েছে, তার ধারে-কাছেও কি পৌঁছা সম্ভব হয়েছে?

তিন

মাওলানা আযহার আলী আনোয়ার শাহ, এই হযরতকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার প্রয়োজন মনে করছি না। ওলামা সম্মেলনের মঞ্চে ও সামনে যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের কাছে তিনি আমার চেয়ে বেশি পরিচিত। বেফাকের প্রথম সিনিয়র সহসভাপতি, বেফাকের সম্মেলনে কথা বলতে পারলেন না, মত প্রকাশ করতে দেয়া হলো না কেন? এই প্রশ্নের উত্তর কি বেফাক নেতৃবৃন্দ দিতে পারবেন? সম্মেলন কি বেফাকের নিয়ন্ত্রণে ছিলো না কি ছিলো না? সম্মেলন নিয়ন্ত্রণে কি বেফাক নেতৃবৃন্দ ব্যর্থ ছিলেন। এই অপমান শুধু একজন শাহ সাহেবের নয়, বরং ওলামা-মাশায়েখের অপমান করা। নিজেদের লোকদের মতামত শুনতেই এত সংকীর্ণতা! তাহলে অন্য বোর্ড বা অন্য মতের লোকদের পরামর্শ শোনার ইচ্ছা বা ধৈর্য কীভাবে হবে? যারা বাধার সৃষ্টি করলেন তারা কি ওলামা-মাশায়েখ ছিলেন? যদি হয়ে থাকেন, তাহলে এই কী তাদের আদব-আখলাকের পরিচয়? আর যদি না হয়ে থাকেন, তাহলে শাহ সাহেব হুজুর যে আশংকার কথা প্রকাশ করেছেন তাইতো প্রমাণিত হলো। আসলে হক কথা বলার লোকও কমে গিয়েছে এবং হক কথা শোনারও।

বেফাক নেতৃবৃন্দের কাছে আকুল আবেদন, আপনারা এই বিষয়ে পরিষ্কার ও স্পষ্ট বক্তব্য দিন। আপনারা স্বীকৃতি চান নাকি চান না? না চাইলে কেন চান না? আর চাইলে কিভাবে?

চার

কওমী সনদের সরকারি স্বীকৃতি বিষয়ে আমার ব্যক্তিগত অভিমত কখনো স্বীকৃতির পক্ষে ছিলো না, বরং সনদের মানের পক্ষে ছিলো। সনদের মান আর সনদের স্বীকৃতি এক কথা নয়। যা হোক, ওলামা সম্মেলনে প্রায় সকলেই সনদ স্বীকৃতীর পক্ষেই অভিমত দিয়েছেন, তবে তা অবশ্যই শর্ত সাপেক্ষে। বেফাক নেতৃবৃন্দের কাছে আকুল আবেদন, আপনারা এই বিষয়ে পরিষ্কার ও স্পষ্ট বক্তব্য দিন। আপনারা স্বীকৃতি চান নাকি চান না? না চাইলে কেন চান না? আর চাইলে কিভাবে? অনেক সময় বলতে শুনি, যদি সরকার আমাদের মত করে স্বীকৃতি দেয়, তাহলে স্বীকৃতি নেবো। এই আমাদের মত করে বলতে কি বুঝাতে চাচ্ছেন তা স্পষ্ট করুন। ব্যক্তি গোষ্ঠির স্বার্থের উর্ধ্বে উঠে জাতীয় স্বার্থকে সামনে রেখে দ্রুত একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছান। নয়তো কওমীর স্বকীয়তা বিষয়টি তো রয়েছেই সঙ্গে বেফাকের স্বকীয়তা রক্ষা নিয়েও আশংকার সৃষ্টি হচ্ছে। জাতিকে আর ধূম্রজালে রাখবেন না।

পাঁচ

বেফাক একটি অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। এবারের জাতীয় ওলামা সম্মেলসহ আমি বেফাকের অনেক সম্মেলন ও শিক্ষা সম্মেলন দেখেছি। এ সকল সম্মেলনে অনেক বক্তার আলোচনার বিষয় ও বক্তব্যের ধরন রাজনৈতিক বক্তব্যকেও হার মানায়। আসলে সমস্যা হচ্ছে রাজনৈতিক নেতারা যখন মাইকের সামনে দাঁড়ান তখন তারা পেছনের ব্যানারের কথা বেমালুম ভুলে যান যে, এটা কি রাজনৈতিক মঞ্চ না অরাজনৈতিক। এটা ইচ্ছাকৃত নাও হতে পারে, বরং তা তাদের স্বভাবসুলভও হতে পারে। অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামকে যেভাবে কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তির কারণে রাজনৈতিক বিতর্কে জড়িয়ে ফেলা হয়েছে, সেভাবে বেফাকও যদি বিতর্কের বেড়াজালে আটকে যায়, তাহলে বেফাকের অস্থিত্ব সংকটপূর্ণ হয়ে যাবে। তাই এখনই সময় বেফাককে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা।

প্রশ্ন করতে পারেন যে, আপনি বেফাককে নিয়ে মাথা ঘামানোর কে? ভাই, বেফাকের প্রতি ভালোবাসাটা আমি উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছি। যে বেফাককে ভালোবেসে আপন করে নিয়েছি, নিজের প্রতিবেশী বানিয়েছি, এখন ইচ্ছা করলেও মাথা না ঘামিয়ে থাকা সম্ভব না। বলুনতো দীর্ঘদিনের মুহাব্বত না থেকে কি থাকা যায়? আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে এক ও নেক থাকার তাওফিক দান করুন।আমিন।

লেখক: গবেষক

সূত্র: কওমি নিউজ

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...