বৃহস্পতিবার, ২৮শে মার্চ, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ বিকাল ৪:৫৫
Home / খোলা জানালা / রাজনীতির তেলেসমাতি!

রাজনীতির তেলেসমাতি!

চলছে তৈলমর্দন ও তেলেসমাতির খেলা


education_komashisha

লাবীব আবদুল্লাহ ::

৯০ এর দশকে ইসলামী ধারার রাজনীতিতে ছিলো সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদ, পরে ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটি এবং নানা মোর্চা ও পরিষদ। রাজপথে মিছিল মিটিং এবং প্রায় প্রতিদিন আল্লামা শায়খুল হাদীস আজিজুল হক ও আল্লামা ফজলুল হক আমিনী রহ এর ভাষণ, বয়ান, বিবৃতি। ইসলামপন্থীরা পড়তেন দৈনিক ইনকিলাব। ইসলামী নিউজগুলোর ভালো কভারেজ দিতো। শূণ্য দশকের শুরুতে ফাতওয়া রক্ষার আন্দোলন।  আলোচনা, বিবৃতি, মিটিং এবং গোলটেবিল বৈঠক। মাওলানা মুহিউদ্দীন খান রহ এর মদীনা ভবন থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক মুসলিম জাহানে ইসলামী ধারার রাজনৈতিক বিশ্লেষণ ও নিউজ থাকতো। মধ্যপ্রাচ্যে ইঙ্গ মার্কিন হামলার পর মুসলিম জাহানের জন্ম। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মুকাররমের উত্তর ও দক্ষিণ গেইটে প্রায় প্রতি জুমআবারে থাকতো রাজনৈতিক প্রোগ্রাম। প্রতিবাদ মিছিল। ইসলামবিরোধী কোনো কিছু ঘটলেই শায়খুল হাদীস, আমিনী, খান ও পীর সাহেব চরমোনাইয়ের যৌথ কর্মসূচি।

আবেগী ও উত্তাল জনতার মিছিলে মিছিলে উত্তপ্ত হতো ঢাকার রাজপথ। তসলিমা নাসরিনের বিরুদ্ধে আন্দোলন।  আন্দোলন সালমনা রুশদীর স্যাটানিক ভার্সেসের বিরুদ্ধে। প্রতিবাদ ও লংমার্চ বাবরি মসজিদের অবমাননার বিরুদ্ধে আফগান, ইরাক ও কাশ্মিরের পক্ষে মিছিল। দেশে ইসলামের বিপক্ষে আহমদ শরীফ মার্কা লোক কিছু বললে ইসলামপন্থীদের হুংকার। ওয়াজ মাহফিলে আমিনী রহ এর আগমন মানে হাজার হাজার জনতার অংশগ্রহণ। পলন্টনের ময়দানে মহাসমাবেশ। সারা দেশের প্রতিবাদী জনতার জমায়েত। কর্মসূচি ঘোষণা। সেইসব দিনগুলো ছিলো এক ধরণের। মিডিয়ায় ইসলামের পক্ষে নানা নিউজ।

মাত্র দশ বছর পর চিত্র ভিন্ন। সেই জিয়ো পয়েন্ট, সেই পল্টন ময়দান, সেই বায়তুল মুকাররমের উত্তর-দক্ষিণ গেইট সবই যেন নীরব। নৈঃশব্দ। সেই কণ্ঠ, সেই প্রতিবাদ সেই আঙ্গুলের গর্জে ওঠা সব থমকে আছে। থেমে গেছে সব।

এখন চিত্র অন্যকিছুর। প্রতিযোগিতা কে কত প্রিয় শাসকের দরবারে তা প্রমাণ করার কসরত। পীঠ বাঁচানোর নানা আয়োজন। সেই ইনকিলাব পরে দৈনিক আমার দেশ এরও আগে দৈনিক আজাদ সব যেন মৃত। আমাদের সেইসব মনীষীদের সংগ্রামী ভূমিকা কোথায় আজ? কোথায় সেই গর্জন ও অর্জন?

দুই
কওমী মাদরাসা ধারার দলগুলো ইসলামের ইস্যু নিয়ে সরব থাকতো। নির্বাচন মুখ্য ছিলো না। চার পাঁচটা সিট পেতো জাতীয় নির্বাচনে। কিন্তু জনতার বিশাল অংশের সাপোর্ট থাকতো ইসলামের পক্ষে। জনতার মিছিল থাকতো ইসলামপন্থীদের সাথে। সেই সংগ্রামী আলেমগণ আজ নেই আমাদের মাঝে। পরের হালত ও পরিস্থিতি আমাদের বাধ্য করেছে চুপ থাকতে। চুপ থাকাও ভালো। কিন্তু এখন কী হচ্ছে ইসলামপন্থীদের মাঝে? যাদেরকে কোনো সংগ্রাম ও আন্দোলনে কখনও দেখা যায়নি তারাই এখন কওমীদের স্বার্থ উদ্ধারে সরব। এই সরব আরও নীরব করবে ইসলামপন্থীদের। যেমন নীরব আলিয়ার শিক্ষকরা। আপনি সরকারের চাকুরি করবেন, জাহেরে বাতেনে সুবিধা নেবেন আবার তাদের নেওয়া ইসলামবিরোধী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদও করবেন তা হবে না। নুন খাইলে গুণ গাইতেই হবে৷

ইসলামপন্থীরা রাজপথ থেকে নিজস্ব অঙ্গনে কাজ করতো সেটিও ভালো। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে রাজনীতির নানা কূটচালে দাবার গুটি হয়ে যাচ্ছে কিছু হকপন্থী হিসেবে পরিচিত মাওলানারা। চেহারা এতদিন লুকিয়ে রাখলেও এখন নেকাব উন্মেচিত। হাজার বছরের ঐতিহ্যের শিক্ষাধারা কওমী মাদরাসায় রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকলেও এই কওমী মাদরাসা নিয়ে চলছে নানা দাবাখেলা।

এই খেলায় দক্ষ একদল মাওলানা নানা স্বপ্ন দেখছেন। চোখে চশমাটিও রঙ্গীন। বর্ণিল চশমায় কত্ত স্বপ্ন তাদের। কিন্তু কওমী মাদরাসা নিয়ে আগামীতে অন্যরাও খেলবে ফুটবল। এই ফুটবল খেলার বলটি হবে একদল মাওলানা।
বৃটিশ একদল মুমতাজুল মুহাদ্দীসিন বানিয়ে ছিলো। এ সময়ের বৃটিশরা বানাবে গ্রান্ড ইমাম, গ্রান্ড মুফতী!

কওমী মাদরাসা নিয়ে চলছে রাজনীতির তেলেসমাতি।
তেল, তৈলমর্দনও আছে এই তেলেসমাতির সাথে। আমাদের সংগ্রামী আকাবিরে কেরামের সম্মানিত সাহেবজাদারাও তৈলমর্দনে এগিয়ে। নীরবে। নিভৃতে চলছে তেলেসমাতি ও তৈলের কায় কারবার। বুদ্ধিমানের কাজ হলো এইসবের দর্শক হয়ে খেলার গ্যালারিতে থাকা। আমাদের ইসলামপন্থীরা কেউ কেউ সেই পথেই আছেন। খেলা শেষ হবে তখন আবার গ্যালিরও থাকবে না।

তিন

কওমী মাদরাসায় রাজনীতি নিষেধ কিন্তু কওমী মাদরাসা নিয়ে রাজনীতি চলেছে চলছে এবং চলবে৷

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...