বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ বিকাল ৩:১১
Home / অনুসন্ধান / ভিক্ষার টাকায় মসজিদ নির্মাণ!

ভিক্ষার টাকায় মসজিদ নির্মাণ!

ইকবাল হাসান জাহিদ ::

%e0%a6%ad%e0%a6%bf%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%b7%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%9f%e0%a6%be%e0%a6%95%e0%a6%be
৩০০ কোটি টাকায় বাড়ি নির্মাণ করে যারা হাইলাইটস হয়েছেন মিডিয়ায়, এই শতাব্দীতে তাদের নিকট নিশ্চয়ই ভিক্ষাবৃত্তি করে মসজিদ নির্মাণের সংবাদ খোশখবরী হওয়ার কথা না। মেছোবাঘ কোনোদিন সিংহকে স্বীকার করে না, বনে তার চেয়ে ভালো রাজা আছে বলে। কোটি মানুষের ভিড়ে একজন দরিদ্র মহিলা ভিক্ষাবৃত্তি করে একটা মসজিদ গড়ার ইচ্ছা করে বাস্তবায়ন করেছে এইটা খুব সাধারণ খবর হিশেবে মিডিয়াগুলো সরব না হলেও মানুষ হিশেবে এই মহান ব্যক্তি গিনেজ বুকেই নাম লেখানোর উপযুক্ত।

প্রতিমাসে ১০/১৫ হাজার টাকা রোজগার করে আমাদের মতো ইসলামের নামেমাত্র খাদেমরা একটি মসজিদ কেনো মসজিদের একটা টয়লেট তৈরি করে দেয়ার ইচ্ছা পোষণই করি না। হয়তো সক্ষমতা আছে অথবা নেই। কিন্তু এই মহৎ চিন্তা লালন করাই তো মহতি মানুষের পরিচয়। অন্যদিকে যারা মাসে ১/২ লাখ টাকা ইনকাম করে ১০/২০ হাজার টাকা মসজিদে দান করে এভারেস্ট জয়ের মতো তৃপ্তির ঢেকুর তুলে বেহেশতের সার্টিফিকেট নিয়ে বসে থাকেন তাদের জন্যও আজকের নিউজটি শিক্ষণীয়।

চার বছর আগে স্বামী মারা যায় কালুজান বেওয়ার। চার সন্তান থাকলেও তারা মায়ের কোনো খোঁজ নেয় না। তাই বেঁচে থাকার তাগিদেই ভিক্ষাবৃত্তি শুরু করেন ৭০ বছর বয়সী কালুজান। বয়স্ক ভাতা আর বাড়ি বাড়ি ভিক্ষা করেই সংসার চলে তার। ভিক্ষা করলেও তার জীবনের শেষ ইচ্ছে ছিল স্বামীর রেখে জায়গায় একটি মসজিদ নির্মাণ করবেন। সেই ভাবনা থেকেই টাকা জমানো শুরু করেন। বয়স্ক ভাতা আর ভিক্ষে করে জমানো সেই টাকা দিয়ে মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু করেন। ইতোমধ্যে মসজিদটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে।

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার তরফপুর ইউনিয়নের শীরঘাটা গ্রামে নির্মিত এই মসজিদটিতে মুসুল্লিরা এখন নিয়মিত নামাজ পড়ছেন। বিনা বেতনে একজন ইমামও রাখা হয়েছে।

কালুজানের সঙ্গে কথা হলে বৃদ্ধা জানান, ভিক্ষা ও বয়স্ক ভাতার টাকায় সংসার চালানো পর যে টাকা উদ্বৃত্ত হতো সেই টাকা তরফপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব ফজলুর রশিদ বাজেদের কাছে জমা রাখতেন। এরপর সেই জমানো টাকা দিয়ে স্বামীর রেখে যাওয়া শেষ সম্বল ২৪ শতাংশ জমির উপর মসজিদটি নির্মাণ করেন।

বজলুর রশিদ জানান, বয়স্ক ভাতা ও ভিক্ষার টাকা তিনি দীর্ঘদিন ধরে তার কাছে জমাতে থাকেন। এভাবে খেয়ে না খেয়ে দুই লাখ চার হাজার টাকা জমা করেন কালুজান। এলাকাবাসী তাকে জমানো টাকা দিয়ে স্বামীর নামে খরচ (মানুষ খাওয়ানো) করার পরামর্শ দেন। কিন্তু তাদের কথায় কান দিয়ে কালুজান তার মনের কথা সবাইকে জানান। পরে তার স্বামীর রেখে যাওয়া ২৪ শতাংশ জমিতে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়।

বজলুর রশিদ আরও জানান, ইতোমধ্যে মসজিদ ঘরের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। জমানো টাকা শেষ হয়ে যাওয়ায় ঘরের ফ্লোর পাকা করা সম্ভব হয়নি। তরফপুর-মির্জাপুর-বাঁশতৈল যাওয়ার রাস্তা সংলগ্ন জমির পাশে মসজিদটি নির্মিত হওয়ায় এলাকার লোকজন ছাড়াও পথচারীরাও নামাজ পড়ছেন। একজন ইমামও রাখা হয়েছে। তবে বর্তমানে তাকে বেতন দিতে হয় না।

মসজিদের মোমবাতি ও আগরবাতিসহ আনুষাঙ্গিক খরচও বৃদ্ধা কালুজান বেওয়া বহন করছেন বলে জানালেন বজলুর রশিদ।

লেখক : কবি ও সমালোচক

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

পুলিশি নির্যাতনে হত্যার বিচার চাইবেন কার কাছে?

ডক্টর তুহিন মালিক: (১) মাত্র ১০ হাজার টাকার জন্য সিলেটে পুলিশ ফাঁড়িতে যুবককে রাতভর নির্যাতন ...