কমাশিসা কওমি সনদ স্বীকৃতি ডেস্ক: শ্রদ্ধেয় মামুনুল হ্ক সাহেব! আপনার একটি লেখা আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। কওমি সনদের স্বীকৃতি আপনিও চান। তবে দারুল উলূম দেওবন্দকে যেভাবে ভারত সরকার এমএ’র মান দিয়ে স্বীকৃতি দিয়েছে সেভাবে করে। কিন্তু এই তথ্যটির কোন প্রমাণ আপনি পেশ করেননি। আমাদের আনুসন্ধানের ফলাফল হলো, ভারত সরকার দারুল উলূম দেওবন্দকে আদৌ কোন স্বীকৃতি দেয়নি। হ্যাঁ, এতটুকু স্বীকৃতি আছে যে, ঐতিহ্যবাহী দ্বীনী এই প্রতিষ্ঠান তার নিজস্ব গতিতে চলবে। যেভাবে বাংলাদেশও কওমি মাদরাসাগুলো চলছে। কিন্তু এমএ বা অনার্সের মর্যাদা সরকারিভাবে দেয়া হয়েছে এমন তথ্য আপনি কোথায় পেলেন? যদি আপনার কাছে কোনো প্রমাণ থাকে দয়া করে উপস্থাপন করলে জাতি একটি বিভ্রান্তি থেকে বাঁচবে। আর যদি না থাকে তাহলে এমন কল্পকাহিনী বলার আসল উদ্দেশ্য কী? আপনার মতো চোখ কান খোলা ব্যক্তি এমন অদৃশ্য কথা বলে বেড়ানো খুবই হাতাশাজনক!
আপনি লিখেছেন-
“সেই প্রেক্ষিতে কওমী মাদরাসার ওলামাদের সাথে বিভিন্নভাবে সম্পর্ক রাখা দুটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করে ৷
একটি হল মরহুম সৈয়দ আলী আহসান রাহ. প্রতিষ্ঠিত দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় ৷ (এখন বন্ধ রয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি)
আর অপরটি হল ফখরে বাঙ্গাল হযরত তাজুল ইসলাম রাহ.’র ঘনিষ্ট সহচর বহু গ্রন্থপ্রণেতা আল্লামা আব্দুল খালেক রাহ.এর ছেলে এবং ফরিদাবাদ মাদরাসার সাবেক নায়েবে মুহতামিম ফজলুর রহমান রাহ.’র ভ্রাতুষ্পুত্র আবুল হাসান মুহাম্মদ সাদেক প্রতিষ্ঠিত এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ ৷
উভয় বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামিক স্টাডিজে কওমী দাওরার সনদে অনার্স কোর্সে ছাত্র ভর্তি করছে ৷সুতরাং জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে বি.বি.মঞ্জুরি কমিশনের এই সার্কুলারের মাধ্যমে দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, বর্তমানে বাংলাদেশে সীমিত পরিসরে হলেও কওমী মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থা রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত ৷ যদিও সেটা কোনো সুস্পষ্ট রূপরেখার উপরে নেই ৷
কিন্তু কওমী মাদরাসার যে মূল দাবী সেটা হল, কওমীর নিজস্ব বোর্ডের সনদকে সর্বজনীনভাবে এম এ ইসলামিয়াতের মান দিতে হবে ৷ আর বেফাকের বিশেষ দাবী হচ্ছে আল্লামা আহমদ শফী হাফিজাহুল্লাহ ঘোষিত দারুল উলূম দেওবন্দের আদলে স্বীকৃতি, যাতে সরকারের সাথে কোনো প্রকার দাপ্তরিক সম্পর্ক থাকবে না ৷
জামাতের আমলাদের দ্বারা সৃষ্ট মতবিরোধ ও বিতর্ককে পাশ কাটিয়ে কোনো কর্তৃপক্ষ গঠন ছাড়া সরাসরি কওমী বোর্ডের সনদকে ভারত কিংবা পাকিস্তানের মত করে স্বীকৃতি কি দিবে বাংলাদেশ সরকার?
চল্লিশ লক্ষ কওমী জনতার তো সেটাই প্রাণের দাবী!”
দুটি বিশ্ববিদ্যালয় যদি কওমির টাইটেলের সনদকে এমএ বা অনার্সের মান দিয়েই রাখে তাহলে সেটা দারুল উলূম দেওবন্দের মতোই হয়ে গেল না? ভারতের আলীগড় ও জামেয়া মিল্লিয়া স্বতঃস্ফূর্তভাবে দেওবন্দের সনদকে এমএ’র মান দিয়েই রেখেছে। যেখানে ভারত সরকার বা বাংলাদেশ সরকারের রিকগনিশনের কোনো হাত নেই। দারুল উলূম দেওবন্দের মতো স্বীকৃতিতো আমাদের আছেই। দেওবন্দের কোন বোর্ড নেই। তাহলে বোর্ডের মাধ্যমে দেওবন্দের মত স্বীকৃতি চাই কথাটার কোনো মূল্য আছে? অনর্থক কথা বলে জাতিকে বিভ্রান্তিতে ফেলার কোন মানে আছে? আপনি পাশ কাটিয়ে আধুনিক ইউনিভার্সিটি থেকে ডিগ্রী নিয়ে নিজে সেখানে খেদমতে নিয়োজিত আছেন। স্যার স্যার বলে ছাত্র-ছাত্রীরা আপনাকে সম্বোধন করছে। তাতে আশা করি আপনার চেতনায় আঘাত লাগছে না। ঠিক তেমনিভাবে আমরা চাই পাশ কাটিয়ে নয়; কওমি অঙ্গন থেকে লেখাপড়া করে আমাদের সন্তানরা এই সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয় বিনা বাধায় বিচরণ করুক।
‘ভারতের মত করে চাই’ বলে যে কথাটি বলেছেন, সেটার ব্যাখ্যা আশাকরি দিবেন। জাতি আপানার ব্যাখ্যার অপেক্ষায়।