বৃহস্পতিবার, ১২ই ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ১২:৫৫
Home / কওমি অঙ্গন / প্রসঙ্গ : ‘বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কমিশন’
পাঠরত কওমি শিক্ষার্থী

প্রসঙ্গ : ‘বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কমিশন’

মাসুম আহমদ ::

পাঠরত কওমি শিক্ষার্থী
পাঠরত কওমি শিক্ষার্থী

কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থাপনা, শিক্ষাদানের বিষয় ও কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা সনদের সরকারি স্বীকৃতির লক্ষ্যে সুপারিশমালা প্রণয়নের জন্য ১৫ এপ্রিল ২০১২ সতের সদস্য বিশিষ্ট ‘বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কমিশন’ গঠন করে সরকার।

হেফাজতে ইসলামের মুহতারাম আমীর হযরত মাওলানা শাহ আহমদ শফী হাফিজাহুল্লাহকে মনোনীত করা হয় কমিশনের চেয়ারম্যান। মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ দাঃ বাঃ কে কো-চেয়ারম্যান ও মাওলানা রুহুল আমীন দাঃ বাঃ কে সদস্যসচিব বানানো হয়। সাত সদস্য বিশিষ্ট ‘নেসাব ও নেযামে তা’লীম’ প্রণয়ন কমিটিও বানানো হয়।

শুরু হয় কমিশনের কার্যক্রম। ৪ জুন ২০১২ রোজ সোমবার হাজি ক্যাম্পস্থ কার্যালয়ে কমিশনের চেয়ারম্যান আল্লামা আহমদ শফী দাঃ বাঃ –এর সভাপতিত্বে প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আমার জানামতে হযরাতুল আল্লাম মাওলানা শাহ আহমদ শফী হাফিজাহুল্লাহ’র নেতৃত্বে ‘বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কমিশন’ –এর দুটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

পরবর্তীতে হযরত মাওলানা আশরাফ আলী দাঃ বাঃ –এর সভাপতিত্বে বেফাক্বের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত বেফাক্বুল মাদারিসিল আরাবিয়ার একটি বৈঠকে পাঁচটি দাবী জানানো হয়। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, (১) বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশকেই এফিলিয়েটিং ক্ষমতাসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয় করার মাধ্যমে কওমি সনদের স্বীকৃতি বাস্তবায়ন করতে হবে (২) মাওলানা আশরাফ আলী দাঃ বাঃ কে ‘কো-চেয়ারম্যান ১’ ও মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ সাহেবকে ‘কো-চেয়ারম্যান ২’ করতে হবে। (৩) মাওলানা রুহুল আমীন সাহেবকে সাধারণ সদস্য রেখে বেফাক্ব মহাসচিব মাওলানা আব্দুল জব্বার সাহেবকে কমিশনের সদস্য সচিব করতে হবে।

এরই মাঝে হেফাজতে ইসলামের আন্দোলন শুরু হয়। থমকে যায় কমিশনের কার্যক্রম।

ওদিকে কমিশন কর্তৃক গঠিত ‘নেসাব ও নেযামে তা’লীম প্রণয়ন কমিটি’ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাকে ছয়টি পর্যায়ে বিভক্ত করে এর কারিকুলাম ও অর্জিত শিক্ষা মূল্যায়নের জন্য একটি কাঠামো নির্দিষ্টকরণের মাধ্যমে খসড়া নীতি প্রণয়ন করে।

কমিশনের খসড়া নীতিতে কওমি শিক্ষাব্যবস্থাকে প্রাথমিক, নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর- এই ছয় পর্যায়ে বিভক্ত করে প্রতি পর্যায় শেষে পরীক্ষা গ্রহণ ও পরীক্ষা পাসের সনদ দেয়ার সুপারিশ করা হয়। এছাড়াও অন্তত উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত বাংলা, ইংরেজি, গণিত এবং সামাজিক বিজ্ঞান শিক্ষার পাঠ্যসূচিও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে সেই খসড়া নীতিমালা অনলাইনে দেয়া হয়, যাতে সবাই মতামত প্রদান করতে পারে। পরবর্তীতে সেই নীতিমালা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়। কিন্তু উলামায়ে কেরামের আপত্তির মুখে মন্ত্রীসভায় নীতিমালা উত্থাপিত হয়নি। (বিস্তারিত জানতে তৎকালীন জাতীয় পত্রিকা দেখতে পারেন। গুগলে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কমিশন লিখে সার্চ করলেও অনেক তথ্য পাওয়া যাবে।)

সময়ের কাটা ঘুরতে ঘুরতে উপস্থিত হয় ২০১৬। কওমি সনদের সরকারি স্বীকৃতি দেয়ার লক্ষ্যে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ আইনের খসড়া চূঁড়ান্ত করতে বিগত ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ নয় সদস্যের কমিটি গঠন করে সরকার। হযরত শায়খ আহমদ শফী হাফিজাহুল্লাহ’র নেতৃত্বাধীন পূর্ব-গঠিত ১৭ সদস্যের কমিটি সম্পর্কে নীরবতা অবলম্বন করা হয়।

৩ অক্টোবর ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশন –এর এক আলোচনায় মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ দাঃ বাঃ বলেন, ৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি অস্থায়ী। এই কথার প্রমাণস্বরূপ তিনি জানান, “নতুন কমিশন গঠিত হয়নি। পুরনো কমিশনের কার্যক্রম এগিয়ে নিতে একটি অস্থায়ী কমিটি বানানো হয়েছে মাত্র। তাই তো এতে কাউকে চেয়ারম্যান করা হয়নি। একজনকে আহ্বায়ক করা হয়েছে মাত্র”।
বাহ্যত তাঁর এই বক্তব্য সঠিক। ৯ সদস্যের যে কমিটি সরকার কর্তৃক বানানো হয়েছে, তাতে একজনকে আহ্বায়ক ও একজনকে সদস্য সচিব বানানো হয়েছে। এতে বুঝা যায়, গঠিত কমিটি অস্থায়ী।

অবশেষে ৯ অক্টোবর রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব সোহরাব হোসেন একটি প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে বলেন, ১৫ এপ্রিল ২০১২ গঠন-কৃত ‘বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কমিশন’ –এর মেয়াদ ০৯/০১/২০১৭ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে।

‘বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কমিশন’ বিষয়ে এই হচ্ছে মূল কাহিনী।

বিগত কিছুদিন যাবত অনলাইন উত্তাল। যে যার মতো পক্ষে-বিপক্ষে কথা বলছে। আজ প্রায় সবাই খুশি। কমিশন সম্পর্কে যাঁদের ধারণা নেই, তাঁরা ভাবছেন, নতুন করে কমিশন গঠিত হয়েছে। কেউ আবার জয়-পরাজয় নির্ধারণ করতে বসে গেছেন। অথচ গভীরভাবে দেখলে কমিশনের মেয়াদ বৃদ্ধি খুব বড় কোনও বিষয় নয়। এমন হওয়াটা অতিস্বাভাবিক বিষয়। ‘আক্বলমন্দ কে লিয়ে ইশারা কাফি হ্যাঁয়’। তবে সত্যিকারর্থে আনন্দের বিষয় হচ্ছে, মুরব্বীদের সম্মানজনক উপায়ে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এরচেয়ে ভালো কিছু আপাতত সম্ভব ছিলো বলে মনে হয় না।

তবে মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ সাহেবকে কো-চেয়ারম্যান ২ বানানো এবং মাওলানা রুহুল আমিন সাহেবকে সাধারণ সদস্য বানিয়ে মাওলানা আব্দুল জব্বার সাহেবকে সদস্যসচিব বানানোর যে প্রস্তাব করা হয়েছিলো, তা গৃহীত হয়নি। মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ সাহেব এখনও কো-চেয়ারম্যান ও মাওলানা রুহুল আমিন সাহেব সদস্যসচিব পদে বহাল।
(ব্যক্তিগতভাবে আমি এতে অসন্তুষ্ট নই। কারণ স্বীকৃতি বিষয়ক ইস্যুতে এখনও তাঁদের কওমি অঙ্গনের মুরব্বী মনে করি। কল্যাণকামী ভাবি। আল্লাহ্‌ তায়ালা ভালো জানেন।)

যেকোনো উপায়ে এখন ঐক্যের একটা সুযোগ যেহেতু সামনে এসেছে, আমাদের বিশ্বাস মুরব্বীগণ সবার কল্যাণ বিবেচনায় সঠিক ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। আল্লাহ্‌ তায়ালা সবকিছু সহজে সমাধান করে দিন। আমীন।

লেখক : তরুণ আলেম ও চিন্তক 

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...